আল্লাহ কি আসমানকে আটকিয়ে রেখেছেন, যাতে তা যমীনের উপর পড়ে না যায় ?

ধন্যবাদান্তে - মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
প্রশ্নঃ আল্লাহ কি আসমানকে আটকিয়ে রেখেছেন, যাতে তা যমীনের উপর পড়ে না যায় ?
জবাবঃ
প্রথমত একটা কথা এই যে , আকাশ কোন শক্ত পদার্থ না যে , সেটা পৃথিবীর উপর ভেঙ্গে পড়বে । এরমানে এই যে , কুরআনে ভুল বলা আছে ? অবশ্যই না । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত বান্দা এবং রাসুল ।
প্রথমত পবিত্র কুরআনের সুরা হাজ্জ এর ৬৫ নাম্বার আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে ,
⦁ أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَيُمْسِكُ السَّمَاءَ أَنْ تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَحِيمٌ
⦁ তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, যমীনে যা কিছু আছে এবং নৌযানগুলো যা তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণ করে সবই আল্লাহ তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। আর তিনিই আসমানকে আটকিয়ে রেখেছেন, যাতে তাঁর অনুমতি ছাড়া তা যমীনের উপর পড়ে না যায়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি বড়ই করুণাময়, পরম দয়ালু। [ 1 ]
এই আয়াতের ব্যাখ্যা অনেকে করেছেন তবে অন্যতম সবচেয়ে অথেনটিক ওয়েবসাইট Islam Web এর মাঝে এরকম প্রশ্ন করা হলে তারা এর প্রতিত্তরে বলে ,
প্রশ্নঃ
বিসমিল্লাহ। আমার একটি প্রশ্ন ছিল। আল্লাহ কেন সুরা হজ এর ৬৫ নং আয়াতে বললেন – “...এবং তিনিই আকাশকে ধরে রাখেন যাতে তা পৃথিবীর উপর তাঁর অনুমতি ছাড়া পতিত না হয় ...” ? এটা তো অসম্ভব ব্যাপার যে আকাশ পৃথিবীর উপর পতিত হবে। আমাকে ব্যাপারটি বুঝতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ।
উত্তরঃ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগতসমূহের মালিক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসুল।
আমরা নিশ্চিত নই কেন আপনি ভাবছেন যে আকাশের পৃথিবীর উপর পতিত হওয়া অসম্ভব, যেখানে আমরা প্রায়ই পৃথিবীর উপর উল্কাপাত হতে দেখি। এ ছাড়াও আমরা সময়ে সময়ে ধুমকেতুর আগমন দেখি, যার মধ্যে অনেকগুলোই বিশাল আকৃতির। এর মধ্যে কোনোটি যদি পৃথিবীর উপর পতিত হয়, তাহলে তা পৃথিবীর মানুষের জন্য ভয়াবহ দুর্যোগের কারণ হবে।
কুরআনে “তিনিই আকাশকে ধরে রাখেন যাতে তা পৃথিবীর উপর তাঁর অনুমতি ছাড়া পতিত না হয়” – এ দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু এবং গ্রহকে পৃথিবীর উপর পতিত হওয়া থেকে বিরত রাখা। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহবশত এদেরকে পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়া থেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে এগুলোকে পৃথিবীর উপর পড়তে দিতে পারতেন।
আল্লাহ বলেছেন,
أَفَلَمۡ يَرَوۡاْ إِلَىٰ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِن نَّشَأۡ نَخۡسِفۡ بِهِمُ ٱلۡأَرۡضَ أَوۡ نُسۡقِطۡ عَلَيۡہِمۡ كِسَفً۬ا مِّنَ ٱلسَّمَآءِۚ إِنَّ فِى ذَٲلِكَ لَأَيَةً۬ لِّكُلِّ عَبۡدٍ۬ مُّنِيبٍ۬ (٩)
অর্থঃ “তারা কি তাদের সামনে ও তাদের পেছনে আকাশ ও পৃথিবীতে যা আছে তার প্রতি লক্ষ্য করে না? যদি আমি ইচ্ছা করি তাহলে তাদেরকে সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশ থেকে এক খণ্ড তাদের উপর নিপতিত করব, অবশ্যই তাতে রয়েছে আল্লাহমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য নিদর্শন।”
(আল কুরআন, সাবা ৩৪ : ৯)
ইবন আশুর(র.) তাঁর তাফসিরে (আত তাহরির ওয়াত তানওয়ির) বলেছেন, “ “অথবা আকাশ থেকে এক খণ্ড তাদের উপর নিপতিত করব” – এই কথার অর্থ হচ্ছে, এক খণ্ড মহাজাগতিক বস্তু (পতিত হওয়া)।”
[বক্তব্য সমাপ্ত]
আল্লাহই সর্বোত্তম অবগত।
মূল লেখার লিঙ্কঃ http://www.islamweb.net/emainpage/index.php…
এখন আবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে , আচ্ছা মেনে নিলাম যে , কুরআনে উল্কাপিন্ডের কথা বা আলোকময় কোন বস্তুকে আল্লাহ পতিত হওয়ার থেকে বাঁচান । কিন্তু সেখানে বলা হয়েছে আটকিয়ে রাখেন বা স্থির রাখেন কিন্তু আমরা জানি যে , উল্কাপিন্ড বা নক্ষত্ররা গতিশীল তারা স্থির নয় । তাহলে এভাবেও তো কুরআন ভুল হচ্ছে । কিন্তু ব্যাপারটা এরকম না সেই আরবি আয়াতে ব্যাবহার করা শব্দ ( يُمْسِكُ ) ইউমসিকু এর অনেক অর্থ আছে যার মধ্যে কিছু অর্থ নিচে দিচ্ছি ,
⦁ ( يُمْسِكُ ) - ধারণ রাখা , আনুগত্যে রাখা , পরিচালিত করা , স্থির , আটকিয়ে রাখা , আয়ত্তে রাখা ইত্যাদি । [5] (Wikitionary - ( يُمْسِكُ ))
এছাড়া নাসার ( Nasa ) এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করা হয় যার ছবি সহ আমি নিচে দিয়ে দেব । সেখানে বলা হয়েছে অর্থাৎ সেই আর্টিকেলের শিরোনাম ছিল
(The Sky is Falling)
চিন্তা করেন নাসা ( Nasa ) এর মত ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে যে , The Sky is Falling । সেখানে Bill Cooke বলেছেন যে , হাজার , হাজার নক্ষত্র , মিটিওর , উল্কা ইত্যাদি চাঁদ কে প্রতিনিয়ত আঘাত করছে । এবং তারা পৃথিবীতেও আঘাত করছে কিন্তু পৃথিবীর Atmosphere এর কারণে সেগুলো ভস্ম হয়ে যায় । [ 6 ]
এখন আমরা যদি অনুবাদ নির্ভর হয়ে আক্ষরিকভাবে ধরেও নেই যে , সেখানে বলা হয়েছে আকাশ তবুও সেটাকে ভুল প্রমাণ করা যাবেনা । কেননা , সেখানে আকাশ বলা হলেও প্রকৃত অর্থে উল্কাপিন্ড বা মিটিওরই হবে এবং যারা আরব তারা এটা ঠিকই বুঝে । আরবি গ্রামারে একে (Magaz Morasl) (Posted metaphor) বলা হয় । যেটা নিয়ে রিসার্চ ফাউন্ডেশনে গাদা গাদা বই আছে । যেটা আরবি শাস্ত্রে খুবই জনপ্রিয় তরিকা বা বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি যেটাকে ইংরেজিতে Rhetoric বলা হয় । [7 ]
উদাহরণ স্বরূপ যদি বলি , সুরা নুরের ৩৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ,
⦁ আল্লাহ আসমান ও যমীনের আলো, তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত হল যেন একটি তাক- যার ভিতরে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি হচ্ছে কাঁচের ভিতরে, কাঁচটি যেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা প্রজ্জ্বলিত করা হয় বরকতময় যায়তুন গাছের তেল দ্বারা যা পূর্বদেশীয়ও নয়, আর পশ্চিমদেশীয়ও নয়। ( সংক্ষেপিত )
এখন প্রশ্ন হল আল্লাহ কি হারিকেন যাকে ইংরেজিতে Lamp বলে ? মোটেও না । যেহেতু এখানে কাঁচ বলা হয়েছে এই কাঁচ দিয়ে কাফেরদের বুদ্ধিমত্তার তুলনা করা হয়েছে । কাঁচ দিয়ে যেমন আলো অন্ধকার ভিতর বাহির দেখা যায় কিন্তু আলো স্পর্শ করা যায়না । ঠিক কাফের রাও ভিতর বাহির আলো অন্ধকার দেখতে পারে ( আলো অন্ধকার দিয়ে ইমান বুঝানো হয়েছে ) কিন্তু তারা ইমান কে স্পর্শ করতে পারেনা বা গ্রহণ করতে পারেনা । এর মানে আল্লাহ কি হারিকেন বা Lamp ? উত্তর হল না । এটিই হচ্ছে আরবি শাস্ত্রের (Posted Metaphor)
ঠিক কুরআনের ক্ষেত্রেও যদি আমরা আক্ষরিক অনুবাদকেই ধরে নেই ( বিদ্রঃ আমরা শুধু ধরে নিচ্ছি নাস্তিকদের বুঝাবার জন্য ) তাহলে সেখানে আকাশ পতিত দিয়ে মিটিওর বা উল্কাপিন্ডই বুঝানো হয়েছে ।
আর ঠিক নাসা ( Nasa ) এর ওয়েবসাইটেও বলা হয়েছে "The Sky is Falling" On the Moon. কিন্তু চাঁদের তো কোন বায়ুমন্ডল বা আকাশ নেই তাহলে আকাশ পড়লো কি করে ? এরমানে Nasa বিজ্ঞানীরা উন্মাদ ? পাগল ? মোটেও না এখানে আকাশকে মিটিওর বুঝাবার স্বার্থে ব্যাবহার করা হয়েছে । এখন এটি বুঝলাম কি করে ? আসুন উত্তরটা নাসার বিজ্ঞানীই বলে দেবেন তিনি বলেন অর্থাৎ Bill Cooke বলেন , "Every day, more than a metric ton of meteoroids hits the Moon," এই মিটিওর বা উল্কা কেই তিনি আকাশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । এছাড়া উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে জ্যোতির্বিদ্যায় আকাশ কে খ-গোলক ও বলা হয়। এবং এটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে বুঝানো যেতে পারে যেমন আবহাওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এছাড়া আকাশ হচ্ছে মানুষ চক্ষুর উপরে পৃথিবীর বাহিরে এবং ভিতরে যা আছে সব আকাশের অংশ (Oxford Dictionary ) এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে আকাশকে নক্ষত্রমন্ডলেও ভাগ করা যায় বা বুঝানো যায় । এছাড়া নাসার বিজ্ঞানীরা এটি মানে আকাশ ব্যাবহার করেছেন সৌন্দর্যের জন্য তারা চাইলে ডাইরেক্ট মিটিওর ব্যাবহার করতে পারতো কিন্তু করেনি । কেন করেনি ? যাতে করে লেখাটা পড়তে আকর্ষণীয় লাগে । ঠিক তেমনি কুরআনেও আল্লাহ আকর্ষণীয় করার জন্য এই শব্দ গুলো ব্যাবহার করেছেন যদিও সেই শব্দের আরও একাধিক অর্থ আছে যেটা আমরা সেই আয়াতেই আসসামা শব্দ দিয়ে প্রমাণ পাই যার অর্থ মহাকাশও হয় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও হয় আবার উল্কাও বুঝায় । After all Allah knows the best .
এছাড়া আমরা যদি একে আক্ষরিকভাবে বিবেচনাও করি তারপরেও একে ভুল বলে প্রমাণ করা কখনই সম্ভব না নাস্তিককূলের জন্য । আসুন আকাশ সম্পর্কে গবেষণা কি বলছেন ,
আকাশ (ইংরেজি Sky) হল ভূপৃষ্ঠ থেকে বাইরের দিকে অবস্থিত অংশবিশেষ। বায়ুমণ্ডল এবং মহাশূন্যও এর অংশ। জ্যোতির্বিদ্যায় আকাশ কে খ-গোলক ও বলা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এটিকে একটি কাল্পনিক গোলক কল্পনা করা হয় যেখানে সূর্য, তারা,চাঁদ এবং গ্র। হসমূহকে পরিভ্রমণ করতে দেখা যায়। খ-গোলক কে সাধারনত বিভিন্ন নক্ষত্রমণ্ডলে ভাগ করা হয় সাধারনত আকাশ শব্দটি ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে যেকোনো বিন্দু নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর অর্থ এবং ব্যবহার ভিন্নও হতে পারে। যেমন, আবহাওয়ার ক্ষেত্রে আকাশ বলতে কেবলমাত্র বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকের অধিক ঘন অংশ কে বোঝায়। [ উইকিপিডিয়া]
অর্থাৎ জ্যোতির্বিদ্যায় আকাশকে " খ " গোলক বলা হয় । এবং " খ " গোলক কে বিভিন্ন নক্ষত্রমন্ডলে ভাগ করা যায় । এবং আকাশ শব্দটি ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে যেকোনো বিন্দু নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর অর্থ এবং ব্যবহার ভিন্নও হতে পারে। এই দ্বারা এই বুঝা যাচ্ছে যে , পরিস্থিতি অনুযায়ী আকাশ বলতে নক্ষত্র বুঝানো যেতে পারে , পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও বুঝানো যেতে পারে আবার মহাকাশও বুঝানো যেতে পারে । অর্থাৎ এক কথায় পরিস্থিতি অথবা প্রসঙ্গ দেখে আমাদের বিবেচনা করতে হবে কোথায় কোন অর্থটি বসবে । আর কুরাআনেও ঠিক আকাশ দিয়ে নক্ষত্রই বুঝানো হয়েছে ( সূত্রঃ উইকিপিডিয়া )
তথ্যসূত্রঃ
1. সুরা হাজ্জ আয়াত ৬৫
2. সুরা সাবা আয়াত ৯
3. IslamWeb.com Fatwa No: 373417
4. [ Freytag, Georg (1837), “مسك”, in Lexicon arabico-latinum praesertim ex Djeuharii Firuzabadiique et aliorum Arabum operibus adhibitis Golii quoque et aliorum libris confectum (in Latin), volume 4, Halle: C. A. Schwetschke, page 179 ]
5. Nasa / https: //science.nasa.gov/science-news/science-at-nasa/2006/28apr_skyisfalling/ অথবা Nasa.com / The Sky is Falling
6. সুরা নুর আয়াত ৩৫
7. Wikipedia / Sky




No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.