মহাবিশ্ব কয়দিনে সৃষ্টি হয়েছে ? কুরআন কি ভুল ?

মহাবিশ্ব কয়দিনে সৃষ্টি হয়েছে ? কুরআন বনাম বাইবেল ...
ধন্যবাদান্তেঃ Response To Anti Islam - https://bit.ly/2XunVtu
আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে রাখুন - https://bit.ly/2VVS44A
আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাযিল করেছেন এবং তিনি একে সুরা ইয়াসিনের ২ নম্বর আয়াতে বলেছেন বিজ্ঞানময় অথবা প্রজ্ঞাময় কুরআনের কসম ! এবং সারা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ আজ অবধি কেউই এই কুরানে থাকা সাইন্টিফিক আয়াতের ভুল দেখাতে পারেনি । পক্ষান্তরে বাইবেলে কোন ভুল নেই এই দাবি যদিও খ্রিষ্টান মিশনারী অথবা চার্চ কর্মীরা করে থাকে তবুও এটা সাধারণ খ্রিষ্টান দের জন্য শান্তনা মাত্র ।
আর তাই সেই সুবাদে দেখে নেয়া যাক পৃথিবী ৬ দিনে সৃষ্টি হয়েছে নাকি ছয়টি কাল বা সময়ে ।
কুরআন কি বলে পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি হয়েছে ?
আল্লাহ বলেন ,
⦁ إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًا وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتٍۭ بِأَمْرِهِۦٓ أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَٰلَمِينَ
⦁ নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।[১]
কিন্তু বিজ্ঞান বলে পৃথিবী সৃষ্টি হতে মিলিওন মিলিওন বছর লেগেছে ।
মূলত এই আয়াতে ব্যাবহার করা হয়েছে ( أَيَّامٍ ) আইয়াম শব্দ যার একবচন হল ( يَوْمٍ ) ইয়াওম [২]। আইয়াম শব্দ দিয়ে বুঝানো হয় একাধিক দিক অর্থাৎ সেটি এক দিন অথবা ছয়দিন অথবা ১০০ দিন । তবে শুধুমাত্র দিন নয় এর দ্বারা বুঝানো হয় period বা সময়কাল [৩] ।
অর্থাৎ আমরা যদি এই আয়াতকে সাজাই তাহলে আয়াতটি দাঁড়াবে
⦁ আল্লাহ পৃথিবীকে ছয়টি সময়কালে সৃষ্টি করেছেন ।
এবং অনেকে আছে যারা নিচের এই হাদিস দিয়ে প্রমাণ করতে চান যে , আল্লাহ এর দ্বারা ছয়টি সময়কাল নয় বরং ছয়দিন বুঝিয়েছেন হাদিসটি হলঃ
⦁ সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৯৭,ইসলামিক সেন্টার ৬৮৫১)[৪]
এইটা দ্বারা তারা প্রমাণ করতে চায় যে , আল্লাহ সেখানে সময়কাল বুঝায়নি বরং বুঝিয়েছেন একটি Single দিন । কিন্তু ব্যাপারটা এরকম না । মূলত ব্যাপারটা হল আল্লাহ শুরু সৃষ্টি শুরু করেছেন শনিবার থেকে এবং শনি থেকে রবিবার এই দুইয়ের মাঝে বাবধান ছিল বিশাল লম্বা ঠিক রবি - সোম ; সোম - মঙ্গল ; মঙ্গল - বুধ ; বুধ - বৃহস্পতিবার ; বৃহস্পতিবার - শুক্রবার এই প্রতিটির মাঝের সময় ছিল বিশাল । এবং এই দাবি পোক্ত করা যায় স্বয়ং প্রাচীন স্কলারদের ভাষ্য অনুযায়ী ।
সবার আগে কথা বলব হাদিসটির অথেন্টিসিটি নিয়ে আসুন কি বলা আছে এই হাদিস সম্পর্কে
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া তে বলা হয়েছে
⦁ ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমার হাত চেপে ধরে বললেনঃ
⦁ خلق الله التربة يوم السبت وخلق الجبال يوم الأحد وخلق الشجر يوم الإثنين وخلق المكروه يوم الثلاث وخلق النور يوم الأربعاء وبث الدواب يوم الخميس وخلق أدم بعد العصر يوم الجمعة أخر خلق خلق في آخر ساعة من ساعات الجمعة فيما بين العصر إلى الليل.
⦁ অর্থাৎ “আল্লাহ তা'আলা মাটি শনিবার দিন, পাহাড়-পর্বত রবিবার দিন, গাছপালা | সোমবার দিন ও অপ্রীতিকর বস্তুসমূহ মঙ্গলবার দিন সৃষ্টি করেছেন, বুধবারে নূর (জ্যোতি) সৃষ্টি " করেন এবং কীট-পতঙ্গ ও ভূচর জন্তু সমূহকে বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আদমকে সৃষ্টি করেছেন জুমআর দিন আসরের পর। আদমই সর্বশেষ সৃষ্টি, যাকে জুমআর দিনের সর্বশেষ প্রহরে আসর ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।
⦁ ইমাম মুসলিম (র) ও নাসাঈ (র) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসাঈ (র) তার তাফসীরে বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন আমার হাত চেপে ধরে বললেন:
⦁ يا أبا هريرة إن الله خلق السموات والأرض وما بينهما في ستة ايام ثم استوى على العرش يوم السابع وخلق التربة يوم السبت.
⦁ | অর্থাৎ—“হে আবু হুরায়রা! আল্লাহ আকাশসমূহ, পৃথিবী এবং এগুলাের মধ্যস্থিত বস্তুরাজি দু'দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর সপ্তম দিনে তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেছেন।
⦁ উল্লেখ্য যে, ইব্‌ন জুরায়জের এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। 'আলী ইবন মাদীনী, বুখারী ও বায়হাকী প্রমুখ এ হাদীসটির সমালোচনা করেছেন। ইমাম বুখারী (র) তার আত-তারীখে। বলেন; কারো কারো মতে, হাদীসটি কা'ব আল-আহবার (রা)-এর এবং তাই বিশুদ্ধতর। অর্থাৎ এ হাদীসটি কা'ব আল-আহবার থেকে আবু হুরায়রা (রা)-এর শ্রুত হাদীসসমূহের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা দুজন একত্রে বসে হাদীস আলোচনা করতেন। ফলে একজন অপরজনকে। নিজের লিপিকা থেকে হাদীস শোনাতেন। আর এ হাদীসটি সেসব হাদীসের অন্তর্ভুক্ত যেগুলাে। আবু হুরায়রা (রা) কাব (রা)-এর লিপিকা থেকে সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কোন কোন রাবী। ভুলক্রমে ধারণা করেছেন আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া।
⦁ থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং রসূলুল্লাহ (সা) আবু হুরায়রার হাত চেপে ধরেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
⦁ | আবার এর পাঠেও ভীষণ দুর্বলতা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো এই যে, তাতে আকাশ | মণ্ডলী সৃষ্টির উল্লেখ নেই, আছে শুধু সাতদিনে পৃথিবী ও তার অন্তর্বর্তী বস্তুসমূহের সৃষ্টির উল্লেখ । আর এটা কুরআনের বর্ণনার পরিপন্থী। কেননা পৃথিবীকে চার দিনে সৃষ্টি করে। তারপর দু’দিনে দুখান থেকে অকিাশসমূহকে সৃষ্টি করা হয়েছে। দুখান হলো, পানি থেকে।
ইবনে কাথিরের তাফসীরে বলা আছে ,
⦁ ইবন আবু হাতিম ও ইবন মাবিয়া স্ব স্ব তাফসীরে এই সব আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফ ও নাসাঈ শরীফে বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃত করিয়াছেন। ইন জুরায়জের সনদে উহা বর্ণিত হইয়াছে।
⦁ তা বলেন, 'আমাকে ইসমাঈল ইবন উমাইয়া, আইউব ইন খালিদ হইতে, তিনি উম্মে সালমার গোলাম আব্দুল্লাহ ইব্‌ন রাতে' হইতে ও তিনি আৰু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণনা করেন ?
⦁ “রাসূল (সা) আমার হস্ত ধারণ করিয়া বলিলেন- আল্লাহ তা'আলা শনিবার মাটি সৃষ্টি করিলেন, রবিবারে পাহাড় সৃষ্টি করিলেন, সােমবারে গাছ-পালা সৃষ্টি করিলেন, মঙ্গলবারে অপ্রিয় বস্তু সৃষ্টি করিলেন, বুধবারে আলো সৃষ্টি করিলেন, বৃহস্পতিবারে প্রাণীকুল সৃষ্টি করিলেন এবং আদমকে শুক্রবার আসরের পূর্ব সৃষ্টি করিলেন। উহা ছিল শুক্রবার দিবসের শেষ প্রহর অর্থাৎ আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়।” [ সহীহ মুসলিমের শর্তে হাদীসটি গরীব' শ্রেণীভুক্ত। আলী ইবনুল মাদানী হাদীসটির নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলিয়াছেন। ইমাম বুখারী ও কতিপয় হাদীস সংরক্ষকও একই অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। তাহারা উহাকে কাবের বক্তব্য বলিয়া স্থির করিয়াছেন। আবু হুরায়রা (রা) কা'ব আল-আহর হইতে উহা শুনিয়াছেন। কোন কোন বর্ণনার সহিত ইহার কিছু কিছু সাদৃশ্য থাকার কারণে হাদীসটিকে 'মার করিয়া ফেলিয়াছেন। ইমাম বায়হাকী এই
⦁ অভিমত লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। তাফসির ইবন কাসির (ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা বাকারাহর ২৯ নং আয়াতের তাফসির।
মূলত আমার লেখার প্রথম দাবি সেই একটাই ছিল যে , আইয়াম শব্দ দিয়ে সময়কাল বুঝানো হয় এবং আল্লাহ উপরোক্ত আয়াতে ৬ দিন বলে নির্দিষ্ট ৬ টি দিন বুঝাচ্ছেন না । বরং ৬ টি সময়কাল বুঝাচ্ছেন ।
আমরা মানবজাতিরা দিন - রাতের হিসেব করে থাকি চাঁদ - সূর্যের উপর নির্ভর করে । কিন্তু চাঁদ সূর্য সৃষ্টি হওয়ার আগে দিন রাতের হিসেব ছিল আলাদা । অর্থাৎ সেই ৬ দিন হচ্ছে আল্লাহর হিসেবে মানুষের হিসেবে না । এবং এই কথা আধুনিক নয় বরং প্রাচীন স্কলাদের দ্বারাও প্রমাণিত ।
Ibn al-Jawzi (may Allah have mercy on him) said:
⦁ What is meant by the words “in Six Days” is the equivalent of that, because the day is known by the rising and setting of the sun, but there was no sun at that time…[৫]
অর্থাৎ সেই সময়ে চাঁদ সূর্য সৃষ্টি হয়নি তাই নিশ্চয়ই সেই ছয়দিন হচ্ছে আল্লাহর হিসেবে ছয়দিন । আমাদের হিসেবে নয় ।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন ,
⦁ আল্লাহ আমাদের বলেন তিনি আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন ৬ দিনে । হতে পারে এই ৬ দিন হচ্ছে বর্তমান অর্থাৎ আমরা যেভাবে দিন রাত বিবেচনা করি ২৪ ঘন্টা হিসেবে সেরকম আবার হতে পারে এটি তার থেকেও বেশি সময়কাল , এবং কিছু স্কলার বলেছেন এটা দিয়ে অর্থাৎ এই একদিন দিয়ে এক হাজার বছরও বুঝানো যেতে পারে ।
তবে সব শেষে তিনি ( ইবনে তাইমিয়া ) বলেন ,
⦁ এতে কোন সন্দেহই নেই যে , আসমান ও যমীন সৃষ্টির পূর্বে যেভাবে সময় নির্ধারণ কিংবা দিন নির্ধারণ করা হত সেটা ভিন্ন ছিল এখনকার সময় নির্ধারণ করার থেকে ।[৬] ( সংক্ষেপিত )
অর্থাৎ এথেকেই বুঝা যায় যে , সেই ৬ দিন যেটা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে সেটা আল্লাহর কাছে ছয়দিন মানুষের কাছে তার চেয়েও বেশি হতে পারে । তবে এই বিষয়ে আল্লাহ সর্বজ্ঞ ।
Dar’ Ta‘aarud al-‘Aql wa’n-Naql কিতাবে তিনি একবারে সহজ সরল এক স্টেটমেন্ট দেন এবং বলেন ,
⦁ আল্লাহ আমাদের বলেন তিনি আসমান ও যমীনের মাঝে যা আছে তা সৃষ্টি করেছেন ৬ দিনে । এবং সেই দিন বলতে বুঝায় ( সময়কাল ) ; (পর্যায়কাল) যেটা নির্ধারিত হয়েছিল অন্য কিছু দ্বারা যেটা চাঁদ এবং সূর্য থেকে নয় ( ভাবানুবাদ ) [৭]
অর্থাৎ মোট কথা হল যে , আসল বা মোট কত সময় সেটা কেউই জানেনা তবে সেটা ৬ দিন নয় যাকে আমরা ২৪ ঘন্টা হিসেবে বিবেচনা করে থাকি আর এই কারণে Ibn al-Jawzi একে “far-fetched” বা কষ্টকল্পিত বলেছেন । [৮]
অন্য রেওয়াতে এসেছে ,
⦁ এটার মানে হল পরকালের দিন , সময়কাল যা দুনিয়া থেকে অনেক বেশি হতে পারে সেটা এক হাজার বছর বা তার চেয়েও বেশি এবং কোন সহীহ রেওয়াত পাওয়া যায়না এই সম্পর্কে যেটা এর Actual সময় মাপবে [৮] ।
এবং আরও বলা আছে , Ibn Ashur, Tahrir wa Tanwir এ
⦁ অবশ্যই মহান সৃষ্টিকর্তার কোন দরকারই ছিলনা জরুরিভাবে বা তাৎক্ষনিক ইউনিভার্স সৃষ্টি করা । যেহেতু এটি তার সৃষ্টিঃ ১ সেকেন্ড এবং ১০০০০০০ বছর তার কাছে সেই একই । (সংক্ষেপিত)
( Ibn Ashur, Tahrir wa Tanwir source: https://bit.ly/2PoRPMX)
অর্থাৎ এই লম্বা আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে , প্রাচীন সকল স্কলার এবং বিভিন্ন অথেনটিক ডিকশনারী থেকে যে , এই আইয়াম শব্দ দিয়ে সময়কাল বা পর্যায়কাল বুঝানো হয়েছে হতে পারে সেটা একহাজার বছর , এক লক্ষ বছর , ৫০ হাজার বছর কিংবা মিলিওন বছর । প্রতিটি স্কলার বহু বছর পুরনো এবং কিছু কিছু স্কলারদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যারা প্রায় ১০০০ বছরও পুরনো ।
সুরা ক্বফ এর ৩৮নং আয়াতে যে أَيَّامٍ (আইয়াম) এর কথা বলা আছে তা অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার দিন হওয়া সম্ভব নয়। কারণ সে সময়ে সূর্য তৈরি হয়নি; কাজেই সৌর দিনের হিসাব এখানে অবান্তর। সুরা হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫ তে হাজার বছরের 'দিন' এবং সুরা মাআরিজ ৭০:৪ এ ৫০ হাজার বছরের 'দিন' এর কথা উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য যে, হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫তে أَلْفَ سَنَةٍ বা ‘হাজার বছর’ এর 'দিন' এর কথা উল্লেখ আছে; যা দ্বারা যেমন নির্দিষ্টভাবে ১০০০ বছর বোঝাতে পারে, আবার ‘হাজার বছর’ তথা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে। কুরআনে শব্দটির ব্যবহারের এই বৈচিত্র্য দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে যে-- يَوْمِ (ইয়াওম) শব্দটির অর্থ ব্যাপক; এ দ্বারা যে কোন সময়কালের দিনই বোঝাতে পারে। এ দ্বারা ২৪ঘণ্টা, ১ হাজার বছর, ৫০,০০০ বছর এমনকি হাজার বছর বা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে। মোট কথা, শব্দটি দ্বারা যে কোন time period বা পর্যায়কাল/সময়কাল বোঝাতে পারে।
বাইবেল কি বলে পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি হয়েছে ?
বাইবেল স্পষ্ট ই বলে যে , পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি হয়েছে । যা বাইবেল দিয়েই প্রমাণ করা সম্ভব । বাইবেলে বলা আছে ,
⦁ כִּ֣י שֵֽׁשֶׁת־יָמִים֩ עָשָׂ֨ה יְהוָ֜ה אֶת־הַשָּׁמַ֣יִם וְאֶת־הָאָ֗רֶץ אֶת־הַיָּם֙ וְאֶת־כָּל־אֲשֶׁר־בָּ֔ם וַיָּ֖נַח בַּיֹּ֣ום הַשְּׁבִיעִ֑י עַל־כֵּ֗ן בֵּרַ֧ךְ יְהוָ֛ה אֶת־יֹ֥ום הַשַּׁבָּ֖ת וַֽיְקַדְּשֵֽׁהוּ׃ ס
⦁ কারণ প্রভু সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে এই আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এর মধ্যস্থিত সব কিছু বানিয়েছেন এবং সপ্তমদিনে তিনি বিশ্রাম নিয়েছেন। এইভাবে বিশ্রামের দিনটি প্রভুর আশীর্বাদ ধন্য – ছুটির দিন। প্রভু এই দিনটিকে বিশেষ দিন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন।[৯]
এখানে বলা হচ্ছে যে , প্রভু ছয়দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন । এখন অনেক বাইবেল এপলজিস্ট দাবি করে এই যে , এই ছয়দিন বলতে ছয়কাল বুঝানো হচ্ছে বা লম্বা সময় । এবং এই দাবি পোক্ত করতে তারা নিম্নলিখিত চরণটি দেখায় সেটি হল ,
⦁ কিন্তু প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা এই একটা কথা ভুলে য়েও না য়ে প্রভুর কাছে এক দিন হাজার বছরের সমান ও হাজার বছর একদিনের সমান।[১০]
এই আয়াত দিয়ে তারা বুঝাতে চায় যে , ঈশ্বরের কাছে একদিন তোমাদের কাছে একহাজার বছরের সমান । আচ্ছা আমরা যদি এভাবে ধরেও নেই যে , ১দিন এক হাজার বছরের সমান তাহলে ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ৬ দিনে তাহলে (১০০০ * ৬) = ৬০০০ বছর । তাও ভুল কেননা বিজ্ঞানমতে পৃথিবীর বয়স প্রায় চার মিলিওন বছর বা ৪০ লক্ষ বছর । যা বাইবেলের সাথে কখনই মিলে না ।
অনেকে আবার একে উপমা বলে চালায় তাদের জন্য এই বইয়ের লিঙ্ক দিলাম তারা শিখে নেক উপমা কাকে বলে https://bit.ly/2ZmovLG
এখন আসুক জেনে নেয়া যাক ঈশ্বর স্বয়ং দিনকে কি হিসেবে ধরে নিয়েছেন যার বর্ণনা জেনেসিস এর মাঝে পাওয়া যায় ।
⦁ ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।”সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।[১১]
এখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে , দিন - রাত্রির হিসেবে বাইবেল এর ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন যাকে আজ আমরা ২৪ ঘন্টা হিসেবে বিবেচনা করি । আসুন এরপরে কি বলা হচ্ছে ,
⦁ ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন। [১২]
অনেকে এই দাবি করতে পারেন যে , এখানে দিন গুলো ২৪ ঘন্টা নয় বরং ঈশ্বরের হিসেবে দিনগুলো পরিচালিত হয় অর্থাৎ সেটা লম্বা সময় । কিন্তু ব্যাপারটা এরকম না । এরকম দাবি করা মানে বাইবেল বিকৃত করা । বরং বাইবেল নিজেই জেনেসিস এ বলে দিচ্ছে
⦁ ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।”সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
এখানে স্পষ্ট দৃশ্যমান যে , দিন - রাত্রির মাধ্যমেই প্রথম দিন হয়েছে । এবং এই সমস্ত ঘটনা পৃথিবীর অভ্যন্তরেই ঘটছে (আশা করি এই নিয়ে খ্রিষ্টান দের কোন অভিযোগ হবেনা) । আর পৃথিবীর ভিতরে দিন রাত্রি বলতে ২৪ ঘন্টাকেই বুঝায় লম্বা কোন সময়কে নয় ।
অনেক এপলজিস্ট বলেন যে , জেনেসিস এ পৃথিবী বলতে সকল মহাজাগতিক বস্তু বুঝানো হয় এবং আকাশ বলতে সমগ্র মহাবিশ্ব তাদের এইক ভন্ডামি যুক্ত দাবির খন্ডিতরুপ এখানে দেয়া আছে আপনারা পড়ে আসতে পারেন https://bit.ly/2XBgPDP । আশা করি উত্তর পেয়েছেন ।
তথ্যসূত্রঃ
১ সুরা আরাফ ৭:৫৪
২ https://en.wiktionary.org/wiki/%D8%A3%D9%8A%D8%A7%D9%85
৩ https://www.almaany.com/…/%D8%A3%D9%8E%D9%8A%D9%91%D9%8E%…/…
৪ https://hadithbd.com/show.php
৫ Zaad al-Maseer (3/211)
৬ Majmoo‘ al-Fataawa (18/235)
৭ Dar’ Ta‘aarud al-‘Aql wa’n-Naql (1/69)
৮ https://islamqa.org/hanafi/seekersguidance-hanafi/31925
৯ ◄ Exodus 20:11 ►
১০ ২ পিতর ৩:৮
১১ জেনেসিস ১:৫


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.