মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহর আরশ পানির উপর কিভাবে থাকে ?
আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে রাখুনঃ https://bit.ly/2VVS44A
বিগ ব্যাং বা মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহর আরশ পানির উপর কিভাবে থাকে ? অর্থাৎ বিগ ব্যাং এর পূর্বে পানি ?
লিখেছেনঃ আফিফ আলী সাদাফ
উত্তরঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃ তাঁর প্রেরিত রাসুল ।
আল্লাহ বলেন ,
⦁ وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۗ وَلَئِنْ قُلْتَ إِنَّكُمْ مَبْعُوثُونَ مِنْ بَعْدِ الْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُبِينٌ
⦁ আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলে সর্বোত্তম। আর তুমি যদি বল, ‘মৃত্যুর পর নিশ্চয় তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’, তবে কাফিররা অবশ্যই বলবে, ‘এতো শুধুই স্পষ্ট যাদু’।
১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ, দিন-রাত খরচ করলেও তা কমে না। তোমরা কি দেখ না যে, আসমান ও যমীনের সৃষ্টি সময় থেকে আজ পর্যন্ত তিনি কত বিপুল পরিমাণে খরচ করেছেন? তবুও তার ডান হাতের কিছুই কমেনি। আর তার আরশ পানির উপর অবস্থিত ছিল। তাঁর অন্য হাতে রয়েছে ইনসাফের দাঁড়িপাল্লা, সে অনুসারে বৃদ্ধি-ঘাটতি বা উন্নতি অবনতি ঘটান।[বুখারীঃ ৭৪১৯] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "শুধু আল্লাহ্ই ছিলেন, তাঁর পূর্বে কেউ ছিল না। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর এবং তিনি যিকর বা ভাগ্যফলে সবকিছু লিখে নেন এবং আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেন। [বুখারীঃ ৩১৯১] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত সৃষ্টি জগতের তাকদীর লিখে রেখেছেন। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর"। [মুসলিমঃ ২৬৫৩]
মোট কথা, কুরআনের ২১টি আয়াতে আরশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সহীহ হাদীসেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরশের বিভিন্ন বর্ণনা দিয়েছেন। সে সমস্ত হাদীস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌছেগেছে। মূলতঃ আরশ হলো আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি। সেটা প্রকাণ্ড ও সর্ববৃহৎ সৃষ্টি। আরশের সামনে কুরসী একটি রিং এর মতো, যেমনিভাবে আসমান ও যমীন কুরসীর সামনে রিং এর মতো। আরশের গঠন গম্বুজের মত। যা সমস্ত সৃষ্টি জগতের উপরে রয়েছে। এমনকি জান্নাতুল ফেরদাউসও আরশের নীচে অবস্থিত। আরশের কয়েকটি পা রয়েছে। মূসা আলাইহিসসালাম হাশরের মাঠে তার একটি ধরে থাকবেন। এ আরশের বহনকারী কিছু ফিরিশতা রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ঘোষণা দিচ্ছেন যে, কিয়ামতের দিন তারা হবেন আট। [সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৭] তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন মত রয়েছে যে, আরশের বহনকারী ফিরিশতাগণ কি আট জন নাকি আট শ্রেণী নাকি আট কাতার। এ আয়াতে বর্ণিত পানির উপর আরশ থাকার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ তা'আলার আরশ কোন কিছু সৃষ্টি করার আগে পানির উপর ছিল। এর দ্বারা পানি আগে সৃষ্টি করা বুঝায় না। তবে এখানে পানি দ্বারা দুনিয়ার কোন সমুদ্রের পানি বুঝানো হয়নি। কেননা, তা আরো অনেক পরে সৃষ্ট। বরং এখানে আল্লাহর সৃষ্ট সুনিদিষ্ট কোন পানি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, ইবনে কাসীর প্রণীত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া প্রথম খন্ড ]
* তাফসীর আবু বাকার যাকারিয়া হুদ ১১ ।
*Conclusion: আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি হল আরশ (এখতেলাফি বিষয় ) । এরপর আল্লাহ বাদবাকি অন্যান্য জিনিস সৃষ্টি করেছেন তবে আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর ইবনে কাথির এবং আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে জানা যায় সেই পানি হচ্ছে ভিন্ন রকম যা পৃথিবীর পানি থেকে ভিন্ন কেননা, তা আরো অনেক পরে সৃষ্ট। বরং এখানে আল্লাহর সৃষ্ট সুনিদিষ্ট কোন পানি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।
এখন ঘটনার আরও ভিতরে যাওয়া যাক । এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে , আল্লাহর আরশ তাহলে কোথায় ছিল ? এই বিষয়ে একটি হাদিস পাওয়া যায় সেটি হলঃ
⦁ অর্থাৎ- “আল্লাহ ছিলেন, তার আগে কিছুই ছিল না, তখন তার আরশ ছিল পানির উপর । আর স্মারকলিপিতে সব কিছু লিপিবদ্ধ করে পরে তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেন।ইমাম আহমদ (র) আবু রাযীন লাকীত ইবন আমির আকীলী (র) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করার আগে আমাদের প্রতিপালক কোথায় ছিলেন ? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ মেঘমালার দেশে-যার উপরেও শূন্য, নিচেও শূন্য, তারপর পানির উপর তিনি তার আরশ সৃষ্টি করেন।
⦁ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া প্রথম খন্ড ।
*Conclusion: অর্থাৎ হাদিস - তাফসীর দ্বারা আমরা জানতে পারলাম যে , আল্লাহর আরশ ছিল মেঘমালার দেশে যার উপরেও শুন্য এবং নিচেও শুন্য এবং তাঁর উপর ছিল পানি তবে সেটা পৃথিবীর পানি নয় বরং বিশেষ এক পানিকে উদ্দেশ্য করে বলা এবন তাঁর উপর ছিল আরশ ।
এবং মহাশূন্য বা মহাবিশ্ব কখন সৃষ্টি হয় সেটাও হাদিস থেকেই বলা যায় হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে ,
⦁ ইবন জারীর (র) আরো বলেন যে, কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের প্রতিপালক কলমের পর যা সৃষ্টি করেছেন তাহলো কুরসী। তারপর কুরসীর পরে তিনি 'আরশ' সৃষ্টি করেন। তারপর মহাশূন্য ও আঁধার এবং তারপর পানি সৃষ্টি করে তার উপর নিজের আরশ স্থাপন করেন। বাকি। আল্লাহ তা'আলা ভালো জানেন।
⦁ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া প্রথম খন্ড
*Conclusion: অর্থাৎ প্রথমে মেঘমালার দেশ এরপর মনে রাখার বিষয় যে , মেঘমালার দেশেই আরশ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এরপর মহাশূন্য , আধার তারপর মনে রাখার বিষয় তারপর পানি সৃষ্টি করে তাঁর উপর আরশ স্থাপন করা হয়ছিল । তাহলে আমরা যদি নাস্তিকদের দাবী মেনেও নেই এরপরেও তারা ভুল ! কেননা হাদিস অনুযায়ী মহাশূন্যর পরে পানি সৃষ্টি করে এরপর আরশ স্থাপন করা হয়েছিল । ইসলামি মিথলজি বলে যে , পানি যখন সৃষ্ট হয় সেই পানি পৃথিবীর পানি থেকে ভিন্ন । কিন্তু নাস্তিক সমাজ তাদের আত্মগোড়ামি স্বভাবের কারণে তা মানতে নারাজ হবে এটাই স্বাভাবিক । তাই তাদের দাবি হাতে রেখে যদি আমরা সেই পানি ( যার উপর আরশ ছিল ) সেটাকে দুনিয়ার পানিই মেনে নেই এরপরেও তারা ভুল থেকেই যায় কেননা , হাদিস অনুযায়ী জানা যায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির পরে আল্লাহ পানির উপর আরশ স্থাপন করেন । আর সাইন্স মতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পরেই পানি সৃষ্টি হয় ।
⦁ (বিদ্রঃ উপরোক্ত ব্যাখ্যা নাস্তিক সমাজের দাবি হাতে রেখেই করা হয়েছে । এরসাথে ইসলামি মিথলজি যায়না যেহেতু নাস্তিক সমাজ পূর্বের ব্যাখ্যা মানতে অস্বীকার হবে তাই তাদের দাবি অনুযায়ী তাদেরকে ভুল প্রমাণের জন্য উপরোক্ত ব্যাখ্যা করা হয়েছে । এটাকে কেউ সিরিয়াসলি নেবেন না । )
এখন আরেকটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেটি হল , মেঘমালার দেশ কোথায় ছিল ?
এই ব্যাপারে আল্লাহ সর্বজ্ঞ । যেহেতু হাদিস থেকে জানা যায় আল্লাহ যখন মেঘমালার দেশে আরশ স্থাপন করেন তাঁর নিচেও শুন্য ছিল আর উপরেও শুন্য ছিল । এবং সেই আরশ ছিল মেঘমালার দেশে।
এখন প্রশ্ন হল মেঘমালার দেশ কোথায় ছিল ? মূলত এই ব্যাপারে আল্লাহ সর্বজ্ঞ কেননা বিগ ব্যাং শুধু মহাবিশ্বর ব্যাখ্যা করতে পারে এর উপরে বা এর বাহিরের সৃষ্টি সম্পর্কে বিগ ব্যাং ব্যাখ্যা করেনা । এবং আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের মহাবিশ্বর মাত্র ৪% আবিষ্কার করতে পেরেছে আরও ৯৬% বাকি আছে । তাই সেই বিজ্ঞান দ্বারা মহাবিশ্ব পেরিয়ে সৃষ্টির পূর্বের মেঘমালার দেশ অথবা সাত আসমান আবিষ্কার করে আল্লাহর অস্তিত্ব নির্ণয় করা সুদূর স্বপ্নের ব্যাপার । এবং অনেকে মহাবিশ্বকে সাত আসমানের অন্তর্ভুক্ত করেন অথবা এই ভেবে থাকেন যে , পৃথিবী সাত আসমানের নিকটবর্তী আসমানের অন্তর্ভুক্ত যা চরম মাপের অজ্ঞতা । তাদের জন্য নিচের দুটি লিঙ্ক দেয়া হল যা অত্যন্ত অথেনটিক ওয়েবসাইট ।
অর্থাৎ সাত আসমান , মেঘমালার দেশ মহাবিশ্ব যাকে আমরা বলে থাকি তা থেকে অনেকগুনে আলাদা এবং বিজ্ঞান দ্বারা সেটা আবিষ্কার করা কখনই সম্ভব না । এবং আশা করি উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে প্রমাণিত হয় যে , বিগ ব্যাং এর আগে পানি কিভাবে হল এই সম্পর্কিত প্রশ্ন সমাধান হয়েছে । বিগ ব্যাং এর আগে যে , পানির কথা বলা হচ্ছে সেটা মহাশূন্যে নয় বরং মেঘমালার উপরে বা মেঘমালার দেশে এবং সেই পানি পৃথিবীর অক্সিজেন , হাইড্রোজেন মিশ্রিত পানি নয় । এবং সেই মেঘমালার দেশ তখন কোথায় ছিল এই ব্যাপারে আল্লাহ ভালো জানেন আশা করি উত্তর পেয়েছেন ।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.