বিজ্ঞানের সুন্দর ! মাহদি ইসলাম প্রিন্স

This is the beauty of the science!
বিজ্ঞান এভাবেই নতুন কিছু অবজার্ভ করে অথবা একই জিনিসকে ভিন্ন দিক থেকে অবজার্ভ করে। সে অনুসারে তার থিওরী এমনকি বিজ্ঞানের পুরো প্যারাডাইমকেই চেইঞ্জ করে ফেলে, যেটাকে আমেরিকার বিখ্যাত দার্শনিক Thomas Kuhn 'paradigm shift' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
Central dogma সম্পর্কে মলিকুলার বায়োলজিতে যারা পড়েছি, তারা সবাই জানি যে,
Translation হলো রাইবোসোমের mRNA থেকে protein তৈরী করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অনুসারে রাইবোসোম mRNA তে অবস্থিত জেনেটিক কোডের প্রতিটি কোডন (পরপর তিনটি নাইট্রোজেন ক্ষারক) থেকে একটি করে অ্যামিনো এসিড কোড করে এবং সবগুলোকে পলিমারাইজ করে প্রোটিন তৈরী করে, যা প্রাণীদেহে নানাপ্রকার কাজ করে।
এই ট্রান্সলেশনের জন্যে রাইবোসোমের একটি নির্দিষ্ট রিডিং ফ্রেইম আছে, যা শুরু হয় mRNA এর AUG (স্টার্ট কোডন) থেকে এবং শেষ হয় UAA/UAG/UGA (স্টপ কোডন) দিয়ে। একে in-frame ট্রান্সলেশন বলে।
যদি এই ফ্রেইমে একটু ঝামেলা অর্থাৎ মিউটেশান (frameshift mutation) হয়, তাহলে একদম উলটাপালটা প্রোটিন তৈরী হয় যা একটি কোষের জন্যে বিধ্বংসীও হতে পারে। অর্থাৎ এই ফ্রেইম একেবারেই নির্দিষ্ট।
কিন্তু রিসেন্ট একটা স্টাডির মূলভাব অনুসারে বলতে হচ্ছে যে, ট্রান্সলেশন সম্পর্কে আমরা যা জানি, তা এর থেকেও অনেক বেশি জটিল। বরং জিন থেকে প্রোটিন তৈরীর পুরো প্রক্রিয়াটিই আস্ত একটা রহস্য। বিখ্যাত পিয়ার রিভিউড জার্নাল Cell- এ স্টাডিটির পেপার পাব্লিশ হয়েছে [১]। সেখানে একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে,
ট্রান্সলেশনের জন্যে রাইবোসোমের নির্দিষ্ট কোনো রিডিং ফ্রেইমের প্রয়োজন হয় না। বরং তা mRNA এর যেকোনো স্থান থেকে প্রোটিন ট্রান্সলেট করতে পারে কোনোরূপ স্টার্ট এবং স্টপ কোডন ছাড়াই। এমনকি স্টপ কোডন পেরিয়েও রাইবোসোম প্রোটিন ট্রান্সলেট করতে পারে। এটাকে বলা হয় out of frame translation।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই out of the frame translation এর মাধ্যমে সাধারণ in frame translation এর তুলনায় এত বেশি পরিমাণে প্রোটিন তৈরী হয় যে, এক্সট্রিম অবস্থায় সে প্রোটিনগুলোর পরিমাণ, পুরো একটি কোষের বাকি জিনগুলো থেকে তৈরী হওয়া মোট প্রোটিনের অর্ধেক হয়ে যায়। ভাবা যায়?
এই স্টাডি বিজ্ঞানমহলে এখন অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরী করছে।
-ডিএনএ তে অবস্থিত জিনের কোডগুলো কি আসলেই ফিক্সড? নাকি এতে অবস্থিত যে জেনেটিক ইনফরমেশন, তা আমাদের চিন্তার তুলনায়ও অত্যাধিক জটিল?
-রাইবোসোম কিভাবেই বা বোঝে যে কোন জায়গা থেকে কোন প্রোটিন তৈরী করা শুরু করা উচিত?
-একই কোড থেকে তৈরী হওয়া এতগুলো প্রোটিনের কাজগুলো কি? এগুলো কি সব কোষের বর্জ্য? নাকি এগুলোর মধ্যেই আছে জীবনধারণের উপাদান?
ইভেন যে রাইবোসোমকে আমরা আগে কেবল প্রোটিন তৈরীর কারখানা হিসেবে জানতাম, সেই রাইবোসোম আমাদের জিন এক্সপ্রেশনেও সাহায্য করে। একেবারে রিসেন্ট আরেকটা স্টাডি ঠিক একই কথা বলেছে [২]।
স্টাডি বলছে, যে mRNA টা DNA থেকে ভালোভাবে প্রোসেস হয়েছে, রাইবোসোম সেটাকে স্ট্যাবিলিটি দেয় আর যেটা ভালোভাবে প্রোসেস হয়নাই, সেটাকে নষ্ট করে ফেলে। কিন্তু কিভাবে এমন কাজ করছে, সেটা এখনও ক্লিয়ার না।
এমনকি আমরা বই পড়ে যে জেনেটিক কোডগুলোকে এতকাল ধরে ইউনিভার্সাল (অর্থাৎ সকল ইউক্যারিওটে UCC=সেরিন GUU=ভ্যালিন) বলে আসতাম, সেই কোডগুলোও আসলে ইউনিভার্সাল না [৩]। ভিন্ন ভিন্ন স্টাডির কোয়ালিশনের মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, জেনেটিক কোড ইউনিভার্সাল না, বরং একেকটা প্রাণীর ক্ষেত্রে একেকরকম। এমনকি এক প্রাণীর ক্ষেত্রেও একেকরকম।
যারা ডারউইনিয়ান বিবর্তনতত্ত্বের জিনঘটিত প্রমাণ হিসেবে জেনেটিক কোডের ইউনিভার্সালিটিকে দাঁড় করান, তাদের জন্যে এই স্টাডি মারাত্মকভাবে হতাশাজনক।
বিখ্যাত Evolutionary Biologist Richard dawkins তার "The Greatest Show On Earth: The Evidence For Evolution বইতে genetic code এর universality কে ডারউইনিয়ান এভোলুশনের "The most compelling evidence of all" বলে আখ্যায়িত করেছিলেন [৪]।
আবার ট্রান্সলেশন যে প্রায় সবসময় স্টার্ট কোডন AUG দ্বারা শুরু হয়, সেটাও গতবছর ভুল প্রমাণ করেছে আরেক স্টাডি [৫]। অর্থাৎ AUG এখন একমাত্র start codon নয়। এখানে দেখানো যে, non-AUG ট্রান্সলেশন প্রত্যেকটা ইউক্যারিয়টে প্রায় ঠিক সেই পরিমাণেই হয়, যে পরিমাণ AUG স্টার্ট কোডন দ্বারা ট্রান্সলেশন হয়। এমনকি এই non-AUG এর জায়গায় যদি AUG- Translation হয়, তাহলে তা ক্যান্সারের সূত্রপাত ঘটায়।
একটু চিন্তা করে দেখুন তো। যে বিজ্ঞানের জোরে একটা সময় কোষকে আকস্মিক দুর্ঘটনার ফলে (abiogenesis) তৈরী হওয়া
নিছক একটা bubble of fluid বলে হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছিল, সে বিজ্ঞানের জোরেই কিন্তু এই ক্ষুদ্র কোষ দিনের পর দিন এতটাই জটিল থেকে জটিলতর অবস্থায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে, একটা সুস্থ সাধারণ এবং নিউট্রাল মস্তিষ্কে এখন এই ভাবনাটাই আসতে বাধ্য হবে যে, এরকম সুক্ষ্ম এবং জটিল ডিজাইনের পেছনে অবশ্যই এবং সুস্পষ্টভাবে কোনো না কোনো ডিজাইনার অর্থাৎ বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাত আছে বা থাকা প্রয়োজন। আপনার হাতের স্মার্টফোনের ডিজাইনারের অস্তিত্ব থাকতে পারলে আপনার স্মার্ট চিন্তাভাবনার, যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার কমপ্লেক্স যন্ত্র মস্তিষ্কের নিউরনের নিউক্লিয়াসের ডিএনএর জিনের ডিজাইনারের অস্তিত্ব থাকবে না, তা কি করে হয়?
একটা কোষের মধ্যে বিদ্যমান বুদ্ধিমত্তার যদি আরও প্রমাণ চান, তাহলে এই ভিডিওটি দেখে আসতে পারেন [৬]।
সাইন্সে ব্যবহৃত যে ডেটা দিয়ে কেউ ইউনিভার্সকে নিছক এলোমেলো প্রক্রিয়ার ফল বলে ডিজাইনারের অস্তিত্ব বাতিল করে দেয়, সেই একই ডেটা দিয়ে কেউ ডিজাইনারের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়।
Same data==> different interpretations==> opposite conclusion...
এরপরেও যদি বলতে চান, এরকম কোটি কোটি কোষ দিয়ে গঠিত জটিল এবং বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি মানুষ কেবল এলোমেলো প্রক্রিয়ায় সংগঠিত হওয়া নিছক র‍্যান্ডম মিউটেশান হেতু বিবর্তনের ফল, তাহলে বলবো,
You may be scientific. But are not rational anymore. You are just being guided by your blind-faith.
------------------------------------
Photo- Bacterial flagellar motor vs outboard motor


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.