নিজের আপন ছেলের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছিল নবী মোহাম্মদ (সা) ?

প্রশ্নঃ নিজের আপন ছেলের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছিল নবী মোহাম্মদ (সা) ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
উত্তরঃ কখনোই প্রমান করতে পারবেন না যায়েদ (রা) রাসুল (সা) এর আপন ছেলে সন্তান ছিল - চ্যালেঞ্জ দিলাম । এটাও প্রমান করতে পারবেন না যে , "ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছিল" আবার চ্যালেঞ্জ দিলাম । ইসলাম বিদ্বেষীরা এই টপিকে যত অশ্লীলতার মিথ্যা দাবি করে বানিয়ে বানিয়ে বলে তারা রেফারেন্স হিসেবে "ইবনে ইসহাক, আল ওয়াকেদি , ইবনে সাদ এবং ইবনে জারির আত তাবারি থেকে বর্ণনা দেখায় । ইবনে জারির তাবারি থেকেই বেশি দেখায় কিন্তু ইবনে জারির আত তাবারি (রহ) তাঁর বইয়ের শুরুতেই তথা ভুমিকাতে পরিষ্কার লিখেছেনঃ আমি পাঠকদের সতর্ক করতে চাই যে , কিছু মানুষ আমার নিকট যে খবর বর্ণনা করেছেন সেটাই আমি এই বইতে লিখেছি, আমি যাচাই বাচাই ছাড়াই গল্পগুলার উৎস হিসেবে বর্ণনাকারীদের ধরে নিয়েছি । যদি কেউ আমার বইতে কোন ঘটনা পড়ে ভয় (ভুল) পেয়ে যান , তাহলে তার জানা উচিৎ যে , এই ঘটনা আমাদের থেকে আসেনি । কারন আমরা যা পেয়েছি তাই লিখেছি ।
তাফসীরে ইবনে কাসির, ১৫/৮০৫ পৃষ্ঠায়ঃ ইবনে কাসির (রহ) ইবনে জারির আত তাবারি (রহ) এর ঐ নীতির সমালোচনা করে লেখেন , ইমাম ইবনে জারির (রহ) এমন অনেক কিছুই বহু আসার বর্ণনা করেছেন যা সঠিক নয় , যেগুলো বর্ণনা করাও উচিৎ নয় বলেই আমরা তা ছেড়ে দিলাম । কারন এগুলোর মধ্যে একটিও প্রমানিত ও সঠিক নয় ।
* ইসলাম বিদ্বেষীরা তাবারি, ইবনে ইসহাক এবং সোর্স থেকে যেই কথা গুলো বলে তা ভিত্তিহীন নিঃসন্দেহে আর উক্ত ঘটনার কোন সঠিক প্রমানও নাই । কারন উক্ত সনদে এক লোকের নাম আল ওয়াকেদি যাকে মুহাদ্দিসিনে কেরাম মিথ্যাবাদী বলেছেন । তার বর্ণিত কিছুই গ্রহণ যোগ্য না । "মিযানুল ই"তেদাল ফি নাকদির রিজাল"৬/২৭৩ পৃষ্ঠায়ঃ ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ) বলেন যে, সে মিথ্যাবাদী , যে কিনা হাদিস বানাতো । ইমাম দাউদ (রহ) বলেনঃ আমার কোন সন্দেহ নাই যে, সে বনোয়াট হাদিস বর্ণনা করে । "তাহযিব আত তাহযিব" গ্রন্থে ইমাম আন নাওয়ায়ী (রহ) বলেন, মুহাদ্দিসিনের ইজমা আছে যে, সে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য ।
মুল ঘটনা ধাপে ধাপে জেনে নেইঃ
* তাফসীরে ইবনে কাসির, ১৫/৮০৫ পৃষ্ঠায়ঃ রাসুল (সা) সর্ব প্রথম যায়েদ (রা) পয়গাম নিয়ে জয়নাব বিনতে জাহশ (রা) এর কাছে যান বা হাজির হন । প্রথমে আপত্তি করলেও পরে মেনে নেন ।
* তাফসীরে ইবনে কাসির, ১৫/৭৩৮ পৃষ্ঠায়ঃ প্রথমে পালক পুত্রকে নিজের রক্তের সন্তান মনে করা হত যা ছিল ভুল তাই এই প্রথাকে ইসলাম বাতিল করে দেয় । পরবর্তীতে রাসুল (সা) যায়েদ (রা) কে নিজের পুত্র বলে সম্বোধন করেননি বরং বলেছিলেন তুমি আমার ভাই ও বন্ধু ।
* সিরাতে মস্তফা, ৭২৮ পৃষ্ঠায়, মাও ইদ্রিস কান্ধলভি (রহ): হযরত যায়েদ (রা) ও জয়নাব (রা) মধ্যে মনমালিন্য দেখা যায় । পরে যায়েদ (রা) রাসুলের কাছে বার বার জয়নাব (রা) কে তালাক দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, রাসুল (সা) বিয়ে ভাঙতে নিষেধ করেন এবং বলেন , তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো ।
* সুরা আহযাব, ৩৭ আয়াতঃ আল্লাহ্‌ বলেনঃ আল্লাহ্‌ যাকে অনুগ্রহ করেছেন আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন । তাকে যখন আপনি বলেছিলেন তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দেও এবং আল্লাহকে ভয় করো । আপনি অন্তরে এমন বিষয়ে গোপন রাখছিলেন যা আল্লাহ্‌ প্রকাশ করে দেবেন । আপনি লোক নিন্দার ভয় করছিলেন অথচ আল্লাহ্‌কেই অধিক ভয় করা উচিৎ । অতপর যায়েদ যখন জয়নাব এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে সব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে ।
* ইফাঃ সহিহ বুখারি, ১০/৫৫৬-৫৫৭ পৃষ্ঠা , হাদিস নং: ৬৯১৫: হযরত জয়নাব (রা) নবী সহধর্মিণীর কাছে এই বলে গৌরব করতেন যে , তোমাদেরকে বিবাহ দিয়েছে তোমাদের পরিবার পরিজন আর আমাকে স্বয়ং আল্লাহ্‌ সাত আসমানের ওপরে বিয়ে দিয়েছেন ।
উপরের বিশুদ্ধ তথ্যগুলা সামনে রেখে আমরা মজবুতভাবে দাবি করতেই পারি যেঃ
১/ বিজ্ঞান না শুদু সাধারণত সবাই জানে, "পালক পুত্র" নিজের আপন পুত্র না । তাই "নবিজি (সা) তাঁর আপন ছেলের বউকে বিয়ে করেছেন" এই কথা মিথ্যা , ভুল এবং ভিত্তিহীন । আর আপনি যদি এই কথার সাথে একমত না হন তাহলে প্রমান করুন অন্যের ছেলে কিভাবে নিজের রক্তের সন্তান হয় ? বিশুদ্ধ ইতিহাস ইতিহাস থেকে এটাও প্রমান করুন "যায়েদ (রা) রাসুল (রা) এর রক্তের আপন সন্তান ছিলেন" ?
২/ ইবনে ইসহাক, আল ওয়াকেদি, ইবনে সাদ এবং ইবনে জারির আত তাবারি থেকে যে হাদিস গুলা দ্বারা ইসলাম বিদ্বেষী মিথ্যাবাদীরা মিথ্যাকথা বলে সে হাদিসগুলো জাল । তাই জাল হাদিস দিয়ে কোন দাবি করলে তা নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য হবে না । বাতিল । সোজা হিসাব ।
৩/ প্রাচিন যুগে অন্যের ছেলেকে মানুষ প্রথমে নিজের রক্তের সন্তান ভাবত যা ছিল মিথ্যা তাই আল্লাহ্‌ নবীর মাধ্যমে এই মিথ্যাচার সরাসরি চিরতরে অফ করে দেন ।
৪/ হযরত যায়েদ (রা) নিজেই জয়নাব (রা) কে "তালাক" দেন । তাই জয়নাব (রা) আর যায়েদ (রা) এর স্ত্রী থাকেন না । রাসুল (রা) ও জয়নাব (রা) দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে যায়েদ (রা) আপত্তির প্রশ্নই আসেন না যেহেতু তিনি নিজেই আগে তালাক দেন জয়নাব (রা)কে । ইদ্দত শেষে, আল্লাহ্‌র হুকুমে রাসুল (সা) জয়নাব (রা) কে বিয়ের প্রস্তাব দেন , এরপরে উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে হয় । স্বামী স্ত্রী পবিত্র সম্পর্ক ।
৫/ "মুসনাদে আবু হাতিম" গ্রন্থে কুরানের এই আয়াতঃ অন্তরে যে বিষয় গোপন করেছিলেন" এ দ্বারা বুঝানো হয়েছে জয়নাব (রা) যে রাসুলের স্ত্রী হবেন এ কথা বহু আগেই আল্লাহ্‌ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন । কিন্তু রাসুল (সা) এ কথা প্রকাশ করেননি বরং তিনি যায়েদ (রা) কে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে বলেছিলেন । তাই আল্লাহ্‌ এ আয়াত দ্বারা বুঝালেন রাসুল যতই গোপন রাখুক না কেন আল্লাহ্‌ তা প্রকাশ করে দিবেন । এছাড়া রাসুল (সা) কে স্বয়ং আল্লাহ্‌ সংশোধন করেছেন এই বলে যে "আপনি লোক নিন্দার ভয় করছিলেন অথচ আলাহকেই বেশি ভয় করা উচিৎ" । হযরত মুহাম্মদ (সা) একজন মানুষও ছিলেন তাই তাঁর মাঝে এই খেয়াল আশা স্বাভাবিক তাই আল্লাহ্‌ তাঁকে সংশোধন করে দিলেন ।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.