দেন মহর কি নারীর জন্য অপমান নাকি সম্মানের ? এম ডি আলী
প্রশ্নঃ বিয়েতে দেন মহোরানা কি একটি নারীর দেহের মূল্য ? দেনমোহরের মাধ্যমে বিয়ে হল একপ্রকার বেশ্যাবৃত্তি ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
উত্তরঃ এক কথায় উত্তর হলঃ প্রশ্নকর্তা আসলেই দেন মোহর বিষয় কিচ্ছুই জানে না কারন উপরের প্রশ্নের সাথে আসলে দেন মোহর এর কোন সম্পর্ক নাই । আচ্ছা যাই হক , আসুন এবার ইসলামের দেন মোহর আইন সম্পর্কে জেনে নেই ।
দেন মোহর কাকে বলেঃ
* এরাবিক ডিকশনারি অনুযায়ীঃ দেন মোহর শব্দটি আরবি মুল শব্দ "আজর" থেকে এসেছে যার অর্থ হল হল শর্ত মোতাবেক কর্ম সম্পাদনের উপর অতিরিক্ত মূল্যপ্রাপ্তি বা পুরস্কার । ইংরেজিতে এটি খুব সহজেই এটি প্রকাশ করা যায় যা আমরা "এক্সট্রা বোনাস" বলে জানি। এইখান থেকে এটি প্রমাণিত হল যে দেন মোহর কোন ভাবেই স্ত্রীর দেহের মূল্য হতে পারে না ।
*বিবাহ বন্ধন উপলক্ষে স্বামী বাধ্যতামূলক ভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা রুপা, বা সম্পত্তি আকারে সেই মাল প্রদান করেন তাকেই মোহর বলে । দেন মোহর স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য ।(১)
*বিয়েতে মোহর নির্ধারণের নিয়ম করা হয়েছে, যাতে স্বামী বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক খতির ঝুঁকিতে থাকে এবং এমন কোন প্রয়োজনে যখন তখন স্বামী যেন নারীর উপর অবিচার না করে ।এ জন্য মোহর নির্ধারণের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা আছে।মোহর দ্বারা বিয়ে ও ব্যাভিচারের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায় । (২)
*:মোহর নারীর অধিকার, তা চাওয়া দোষের নয় । একটি প্রচলিত ভুল হল, নারীরা মোহর চাওয়া বা চেয়ে নেয়াকে দোষের মনে করে আর ভাবে যদি কেউ এমন করে তাহলে তার বদনাম হয় । মনে রাখা উচিৎ,নিজের অধিকার চাওয়া বা আদায় করা যখন শরিয়তের দৃষ্টিতে দোষের নয় তখন শুদু প্রথা প্রচলনের কারনে তা দোষের ভাবা গুনাহ মুক্ত নয় । (৩)
দেন মহোরানা দিয়ে বিয়ে করাঃ
*আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ এবং তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সন্তুষ্টচিত্তে মাহ্র পরিশোধ কর। (৪)
* আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইব্নু ‘আওফ (রাঃ) কোন এক মহিলাকে বিয়ে করলেন এবং তাকে মাহ্র হিসাবে খেজুর দানার পরিমাণ স্বর্ণ দিলেন। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মুখে বিয়ের খুশির ছাপ দেখলেন তখন তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন; তখন সে বললঃ আমি এক নারীকে খেজুর আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে বিয়ে করেছি। ক্বাতাদাহ আনাস থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘আবদুর রহমান বিন ‘আওফ (রাঃ) খেজুরের দানা পরিমাণ স্বর্ণ মাহ্র হিসাবে দিয়ে কোন মহিলাকে বিয়ে করেন। (৫)
* নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি বিয়ে কর একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হলেও । (৬)
*রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সকল শর্তের চেয়ে বিয়ের শর্ত পালন করা তোমাদের অধিক কর্তব্য এজন্য যে, এর মাধ্যমেই তোমাদেরকে স্ত্রী অঙ্গ ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়েছে । (৭)
* আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃআমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবাহে মাহর কী পরিমাণ ছিল? তিনি বললেন, তাঁর বিবিগণের মাহরের পরিমাণ ছিল বারো উকিয়্যাহ্ ও এক নাশ্। তিনি বললেন, তুমি কি জান এক নাশ্ এর পরিমাণ কতটুকু? আমি বললাম, ‘না’। তিনি বললেন, এক নাশ্ এর পরিমাণ হল আধা উকিয়্যাহ্। সুতরাং মোট হল পাঁচশত দিরহাম। এ ছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণীগণের মাহর । (৮)
* আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন মহিলা বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। কিন্তু তার সাথে তার স্বামী সহবাস করলে তবে সে তার লজ্জাস্থান হালাল মনে করে সংগত হওয়ার কারণে তার নিকট মোহরের অধিকারী হবে। যদি অভিভাবকগণ বিবাদ করে তাহলে যে ব্যক্তির কোন অভিভাবক নেই তার ওয়ালী হবে দেশের শাসক। (৯)
অনেক ইসলাম বিদ্বেষী দাবী করেঃ দেনমোহরের মাধ্যমে বিয়ে হল একপ্রকার বেশ্যাবৃত্তি; এটি মিথ্যা কথা ।
কারন এই ক্ষেত্রে আমরা বলবঃ "বেশ্যা" শব্দখানা তো মানুষের দেওয়া। ইসলামিক মানদণ্ডে একে ব্যভিচার বলে। তবে দেনমোহরের সাথে একটা জিনিস যুক্ত আছে যেটা পতিতাবৃত্তিতে নেই। সেটা হল দেনমোহরে স্বামী তার বিবির দায়িত্ব নিতে হয় যেটা ইসলামে বাধ্যতামূলক। এতে নারী পায় মর্যাদা, সম্মান, নিরাপত্তা, অধিকার। এগুলোর কোনোটাই পতিতাবৃত্তিতে নেই। সেখানে নেই কোনো দায়িত্ব, নেই কোনো অন্তরের ভালবাসা, নেই কোনো মান-অভিমান। আছে শুধু পশুর ন্যায় জৈবিক লালসা।
এক্ষেত্রে দেনমোহর যেহেতু কেবল জৈবিক লালসাকে উপস্থাপন করছে না, তাই এর সাথে আরও তিনটি বিষয় জড়িতঃ-
১) দেনমোহর যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘোষণা করছে।
২) দেনমোহরের মাধ্যমে বিবাহিত জীবনের শুরুতে স্বামী তার বিবিকে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে কিছু উপহার প্রদান করছে।
৩) বিবির সারা জীবনের দায়িত্ব ও ভরণপোষণ নেওয়ার জন্য নিদর্শন হিসেবে কিছু অর্থ প্রদান করছে যাতে এটা প্রকাশিত হয় যে, সে তার প্রিয়তমার দায়িত্ব নিতে চলেছে।
এখন এটা আপনার ইচ্ছা আপনি কোন ধরণের জীবন বেছে নেবেন!
উপরোক্ত বিশুদ্ধ তথ্য প্রমানের আলোকে আজকে আমরা শিখলামঃ
১/ দেন মোহর হল স্ত্রীর জন্য উপহার স্বরূপ ।
২/ দেন মোহর হল স্ত্রীর অর্থনৈতিক অধিকারের একটি তাই এই অধিকার চেয়ে নেয়া দোষের কিছুই না।
৩/ যদি কোন দাম্পত্য সম্পর্কে বিগ্ন ঘটে এই ক্ষেত্রে দেন মোহর হল স্ত্রীর
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সহায়ক। যা স্বামী দিতে বাধ্য ।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সহায়ক। যা স্বামী দিতে বাধ্য ।
৪/ দেন মোহর আল্লাহ্র হুকুম ও তাঁর রাসুল (সা) এর একটি সুন্নাহ । স্বামী তার স্ত্রীর জন্য সহবাসের ক্ষেত্রে হালাল হবে যখন সে দেন মহর দিবে । যেমন এক হাদিসে রাসুল (সা) বলেছেন যে স্ত্রীর কোন অঙ্গ স্বামীর জন্য হালাল না যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী দেন মহর দিবে । উদাহরণ সরপ এই হাদিসঃ জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১০২, সহিহ হাদিসঃ আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন মহিলা বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। কিন্তু তার সাথে তার স্বামী সহবাস করলে তবে সে তার লজ্জাস্থান হালাল মনে করে সংগত হওয়ার কারণে তার নিকট মোহরের অধিকারী হবে। যদি অভিভাবকগণ বিবাদ করে তাহলে যে ব্যক্তির কোন অভিভাবক নেই তার ওয়ালী হবে দেশের শাসক।
৫/ দেন মহর মানে স্ত্রীর দেহের মূল্য অথবা এটি বেশ্যাবৃত্তি এইসব ভুল কথা বা ডাহা মিথ্যা কথা যার সাথে "দেন মোহর" এর কোন সম্পর্ক নাই ।
রেফারেন্স সমাচারঃ
১/ ই:ফা,দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম,পৃষ্ঠাঃ৪০২,দেন মোহর অধ্যায়।
২/ মুসলিম বর-কণে ইসলামী বিয়ে,আশরাফ আলী থানভি (রহ)অনুবাদঃআতাউর রহমান খসরু,পৃষ্ঠাঃ১৫০,এবং আল মাসালিহুল আকলিয়া, পৃষ্ঠাঃ ২১০ দেখুন ।
৩/ মুসলিম বর-কণে ইসলামী বিয়ে,আশরাফ আলী থানভি (রহ)অনুবাদঃআতাউর রহমান খসরু, পৃষ্ঠাঃ১৫৯ ।
৪/ সূরা-নিসা ৪ অধ্যায়, ৪ নং আয়াত ।
৫/ ihadis.com, বুখারি, হাদিসঃ ৫১৪৮, হাদিস সহিহ।
৬/ ihadis.com বুখারি, হাদিসঃ ৫১৫০, সহিহ হাদিস ।
৭/ ihadis.com, বুখারি, হাদিসঃ ৫১৫১, হাদিস সহিহ ।
৮/ ihadis.com, মুসলিম, হাদিসঃ ৩৩৮০, সহিহ হাদিস ।
৯/ ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১১০২, সহিহ হাদিস ।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.