ইসলামে নারী অধিকার এবং সম্মান । এম ডি আলী

ইসলামে নারী অধিকার এবং সম্মান ।
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
-- ইসলাম নারীকে কেমন চোখে দেখে অথবা ইসলামের মধ্যে নারী অধিকার কেমন এই সম্পর্কে উপলব্ধি অনুধাবন করতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে তৎকালীন আরবের অবস্থা ও নারীদের অবস্থা কেমন ছিলঃ আমরা এই বিষয় অমুসলিম ঐতিহাসিক ও দার্শনিক পক্ষান্তরে মুসলিম ঐতিহাসিকদের সোর্স থেকেও তথা উভয় দিক থেকেই জানবঃ
* ইসলাম বিদ্বেষী লেখক Robert Spencer তার The Truth About Muhammad এর page=34 লিখেনঃ পৌত্তলিক আরব ছিল রুক্ষভূমি । সেখানকার লোকজন মরুভূমির মতো অত্যন্ত একরোখা ও কর্কশ মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠত, রক্তপাত শত্রুতা যুগের পর যুগ ধরে চলত । সেখানকার নারীদের অযোগ্য মনে করা হত । কন্যা শিশুকে হত্যা ছিল তাদের কাছে অতি সাধারন ব্যাপার । নারীরা সমাজের বোঝা হিসেবে বিবেচিত হত ।
* অমুসলিম ঐতিহাসিক Edward Gibben তাঁর বিক্ষাত বই The Decline And Fail Of The Roman Empire,2/50 - তৎকালীন আরব জাতির বর্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ তাদের এই আদিম বর্বর ব্যাবস্থা ছিল সমাজ ছিল কলঙ্ক , এ ব্যাবস্থার শিল্পকলা, আইন কানুন , ভাষা ও জ্ঞান বিবর্জিত মানুষরূপী পশুগুলোকে অন্যান্য ইতর জীব থেকে আলাদা করা কঠিন ।
* লেখক S,M, Imamuddin তাঁর Apolitical History Of The Muslims বইতে লিখেনঃ আরব সমাজে তৎকালীন নারীদের কোন নির্দিষ্ট অবস্থান ছিল না , তাদের জীবন ও সম্মান ছিল খুবই সামান্য অথবা মূল্যহীন।
* সুরা নাহল ১৬:৫৮-৫৯ আয়াতঃ যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করা হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় । আর সে থাকে দুঃখ ভারাকান্ত । তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হল তার লজ্জায় সে নিজের লোকদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায় । সে ভাবে অপমান সহ্য করেও তাকে জীবিত রেখে দেবে , নাকি মাটির নিচে পুতে ফেলবে ? জেনে রাখ, কত নিকৃষ্ট তাদের সিদ্ধান্ত।
* সুরা তানভীর ৮১:৮,৯ আয়াতঃ যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যা সন্তানকে জিজ্ঞেস করা হবে কি অপরাধে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে ।
* সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৩১ আয়াতঃ অভাব অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না । আমিই তাদের রিজিক দেই এবং তোমাদেরকেও নিশ্চয় হত্যা করা মহাপাপ ।
* সুরা হুজরাত ৪৯:১৩ আয়াতঃ নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তিই আল্লাহ্‌র কাছে উত্তম ভাল মর্যাদাবান যে অধিক আল্লাহ্‌কে ভয় করে।
--মা হিসেবে নারীকে সম্মানঃ এমন কি অমুসলিম হলেও মায়ের সাথে উত্তম ব্যাবহার করাঃ
*সহিহ বুখারি , হাদিস নং ৫৯৭১ আছেঃ আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক লোক নবী মুহাম্মদ (সা) কে প্রশ্ন করল হে আল্লাহ্‌র রাসুল , আমার কাছে কে উত্তম ব্যাবহার পাওয়ার বেশি হকদার ? তিনি বললেন, তোমার মা । লোকটি বলল তারপর কে ? নবীজি (সা) বললেন তোমার মা । লোকটি আবার বলল তারপর কে ? নবী (সা) বললেন তোমার মা । সে আবার বলল তারপর কে ? নবীজি (সা) বললেন তোমার বাবা ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৭২, সহিহ হাদিসঃ এক ব্যাক্তি নবী (সা)কে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি জিহাদে যাব ? তিনি বললেন, তোমার কি পিতামাতা আছে ? সে বললঃ হ্যাঁ । নবী (সা) বলেন, তাহলে তাদের সেবা করার মাধ্যমে জিহাদ করো ।
*সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৭৯, সহিহ হাদিসঃ আসমা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময় নবী (সা) এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী (সা) এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম । আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম । আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যাবহার করবো ? নবী (সা) বলেন, হ্যাঁ । তোমার মায়ের সাথে উত্তম ব্যাবহার করো ।
* তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলেও আদেরকে বিরক্তি সূচক কিছু বলো না। এবং তাদেরকে ভর্র্ৎসনা করো না; তাদের সাথে কথা বলো সম্মান সূচক নম্র কথা।”তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় কর।” পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর । আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।
= সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:২৩
= সূরা লোকমান ৩১:১৪
= সূরা নিসা ৪:৩৬
= সূরা আনকাবূত ২৯:৮
--স্ত্রী হিসেবে নারীকে সম্মানঃনিজ স্ত্রীকে কাজে সাহায্য করাঃনিজ স্ত্রীর পরিবারের খোজ খবর নেয়াঃস্ত্রীর উপর অযথাই রাগ না করাঃপরিবারের জন্য সম্পদ খরচ করাঃ নিজ স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেয়াঃস্ত্রীকে ভালবাসাঃস্ত্রীর সাথে ভাল ব্যাবহার করাঃ
* সুরা নিসা ৪:১৯ = তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। আর তোমরা তাদের অপছন্দ করো তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ্‌ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০৩৯, সহিহ হাদিসঃ এক লোক আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করেন, নবী (সা) নিজ গৃহে কি কাজ করতেন ? তিনি বলেন, তিনি পারিবারিক কাজকর্মে বাস্ত থাকতেন । যখন সালাতের সময় উপস্থিত হত তখন উঠে সালাতে চলে যেতেন।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০৭৯, সহিহ হাদিসঃ আয়েশা (রা) বলেন , আমার জ্ঞান হবার পর থেকেই আমি আমার বাবা-মাকে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত পেয়েছি । আমাদের উপর এমন কোন দিন যায়নি , যে দদিনের দু প্রান্তে সকালে ও বিকালে রাসুল (সা) আমাদের নিকট আসতেন না । একদিন দুপুর বেলা আমরা আবু বকর (রা) এর কক্ষে উপবিষ্ট ছিলাম । একজন বলল এই যে রাসুল (সা) ! । তিনি এমন সময় এসেছেন যে সময় তিনি আমাদের এখানে আসেন না । আবু বকর (সা) বলেন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাঁকে এ মুহূর্তে নিয়ে এসেছে । নবী (সা) বললেন আমাকে মক্কা থেকে বহির্গমনের আদেশ দেয়া হয়েছে ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬১১৪, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেন, প্রকৃত বীর সে নয় , যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় , বরং সেই আসল বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে ।
* সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৪৪, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেন তোমরা যা খাবে স্ত্রীদেরকেও তাই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে , তাদেরকেও তা পরিধান করাবে । তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না ।
* সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৪৬, সহিহ হাদিসঃনবী (সা) বলেছেনঃ যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম না।
*সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৫, সহিহ হাদিসঃরাসুল (সা) বলেছেনঃমানুষ স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদাক্বাহ হয়ে যায়।
*সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’
* সুনানে আন নাসায়ি,স্ত্রীকে ভালবাসা অধ্যায়, হাদিস নং ৩৯৩৯ এবং ৩৯৪০, হাসান সহিহঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃপার্থিব বস্তুর মধ্যে স্ত্রী ও সুগন্ধী আমার নিকট পছন্দনীয় করা হয়েছে এবং নামাযে রাখা হয়েছে আমার নয়নের প্রশান্তি।
--কন্যা হিসেবে নারীকে সম্মানঃ
* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭০, হাসান হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেন কোন ব্যাক্তির দুটি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের সাথে উত্তম ব্যাবহার করলে যতদিন তারা একত্রে বসবাস করবে , তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে ।
* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৬৯, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেন কারো তিনটি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারন করলে । যথাসাধ্য তাদের পানাহার করালে ও পোশাক আশাক দিলে , তারা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের থেকে অন্তরায় হবে।
* রিয়াদুস সলিহিন, হাদিস নং ৬৯৮, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ যদি আধখানা খেজুর দান করে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পার তবুও বাঁচ। যদি কোন ব্যক্তি এটাও না পায়, তাহলে সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে।
* রিয়াদুস সলিহিন, হাদিস নং ৬৯৯, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ ভাল কথা বলাও সাদকাহ।
--পরিবারের সাথে আচরনঃ
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৫৯ এবং ৬০৩৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন নবী (সা) স্বভাবগত ভাবে অশালীন কথা বলতেন না,ইচ্ছা করে তিনি অশালীন কথা বলতেন না,অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না । তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব চরিত্র উত্তম সেই তোমাদের মধ্যে সর্বউত্তম।
* সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৪১৭৭, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ যে তার পরিবারের কাছে ভাল ।
* জামে আত তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৩, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেন, সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম যার নিকট কল্যাণ কামনা করা যায় এবং যার ক্ষতি হতে মুক্ত থাকা যায়। আর সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট যার নিকট কল্যাণের আশা করা যায় না এবং যার ক্ষতি হতেও নিরাপদ থাকা যায় না।
--খালা ফুফু সহ ইত্যাদি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় অটুট রাখাঃ
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৮৪, সহিহ হাদিসঃরাসুল (সা) বলেছেন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৮০, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) তাঁর সাহাবীদের বলেছেন যাকাত দিতে, পবিত্র থাকতে এবং রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৯৮৫, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায় সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে ।
--ইয়াতিম নারীদের সম্মানঃবিধবা নারীকে সম্মানঃ
* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭৮, হাসান হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেন, হে আল্লাহ্‌! আমি দু দুর্বলের অর্থাৎ ইয়াতিম ও নারীর অধিকার নষ্ট করা নিষিদ্ধ করেছি ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০০৬, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেন, যে লোক বিধবা ও মিসকিনদের ভরন-পোষণের ব্যাপারে চেষ্টা করে , সে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীর মত অথবা সে ঐ ব্যাক্তির মত , যে দিনে সিয়াম পালন করে ও রাতে ইবাদতে দাড়িয়ে থাকে ।
--নারী হক বা পুরুষ হক বা ইত্যাদিকে পানি পান করানোঃনারীদের সাথে এমনকি প্রতিটি ক্ষেত্রেই নম্র ব্যাবহার করাঃনারীদেরকে ভাল উপদেশ প্রদান করাঃ
* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৮৪, হাসান হাদিসঃ সাদ বিন উবাদাহ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুল (সা)কে জিজ্ঞাসা করলাম কোন প্রকারের দান সর্বউত্তম ? নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন পানি পান করানো ।
*সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৮৭, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেন যে ব্যাক্তি নম্র স্বভাব থেকে বঞ্চিত, সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত ।
* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৮৮, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেন, আল্লাহ্‌ হলেন রফিক তথা নম্র , তিনি নম্রতা পছন্দ করেন । তিনি নম্রতার সাথে দ্বীনের দাওয়াত দানকারীকে যে পরিমান সওয়াব দান করেন, কঠোরতা প্রদর্শনকারীকে তদ্রুব দান করেন না ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬১২৫, হাদিস সহিহঃ রাসুল (সা) বলেছেন তোমরা নম্র হও এবং কঠোর হয়ও না। শান্তি দান করো , বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৩৩১, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ তোমরা নারীদেরকে উত্তম নসিহাত প্রদান করবে । কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশি বাকা । তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে আর যদি ছেড়ে দেও তাহলে সবসময় তা বাকাই থাকবে । কাজেই নারীদেরকে নসিহাত করতে থাক ।
--প্রয়োজনে নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারবেঃ
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫২৩৭, সহিহ হাদিসঃ আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন এক রাতে উম্মাহাতুল মু"মিনিন সওদা বিনত জামআ (রা) কোন কারনে বাইরে গেলেন । উমার (রা) তাঁকে দেখে চিনে ফেললেন । তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! হে সাওদা! তুমি নিজেকে আমাদের নিকট হতে লুকাতে পারোনি। এতে তিনি নবী (সা) এর নিকট ফিরে গেলেন এবং উক্ত ঘটনা তাঁর কাছে বললেন । তিনি তখন আমার ঘরে খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশতওয়ালা একখানা হাড় ছিল । এমন সময় তাঁর কাছে ওহী অবতীর্ণ হল। ওহী শেষ হলে নবী (সা) বললেনঃ আল্লাহ্‌ তা"লা প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাইরে যাবার অনুমতি দিয়েছেন ।
--শিক্ষা জ্ঞান অর্জনে নারীঃ
* ইসলামে নারী, লেখিকা ফাতেমা আলী, ঢাকাঃমদিনা পাবলিকেশন,১৯৯৫, পৃষ্ঠাঃ ৩৫ -৪১, এছাড়াঃ নারী শিক্ষা সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী, সম্পাদনা , ডঃ আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া, পৃষ্ঠা: ৩ = ইসলামের প্রাথমিক যুগে জ্ঞানচর্চার যে প্রবাহ শুরু হয়, নারীরাও সেখানে শামিল হয়েছিল । পরবর্তীতে আব্বাসিয় ও উমাইয়া যুগে নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে ।
--নারী পুরুষ পার্থক্য না করে উভয়কেই সমভাবে জ্ঞানঅর্জনের আদেশ দিয়েছে। কুরানের নির্দেশ তাইঃ
* সুরা আলাক ৯৬:১ = সকলকেই আদেশ দিচ্ছে পড়তে ।
* সুরা সোয়াদ ৩৮:২৯ = কুরানের আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো এবং বুদ্ধিমানগন উপদেশ গ্রহণ করে।
* সুরা বাকারা ২: ১৬৪ = অনুধাবন করো ।
* সুরা যুমার ৩৯:৯ = যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সম্মান ?
* সুরা ফাতির ৩৫:২৮ = আল্লাহ্‌র বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে।
-- বয়স্ক নারীদের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করাঃ
* হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৫৫, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ সে লোক আমার উম্মতের দলভুক্ত নয় , যে ব্যাক্তি আমাদের বড়দের সম্মান দেয় না , ছোটদের স্নেহ করে না এবং আলেমের অধিকার দেয় না।
উপরের সমস্ত বিশুদ্ধ তথ্য হাতে নিয়ে আমরা দেখলাম ইসলামঃ
১/ তৎকালীন আরবে নারীদের কোন মর্যাদা ছিল না এমনকি তাদের মূল্যহীন মনে করা হত।
২/ কুরআনে কন্যা সন্তান হওয়াকে সুসংবাদ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং কন্যা সন্তানদের হত্যা করা নিষেধ বলেছে।
৩/ যে আল্লাহকে বেশি ভয় করবে সেই আল্লাহ্‌র কাছে বেশি উত্তম এখানে নারী পুরুষ আলাদা করা হয়নি।
৪/ মা হিসেবে নারীকে সম্মান দেয়া হয়েছে এমন কি অমুসলিম হলেও মায়ের সাথে উত্তম ব্যাবহার করতে হবে।
৫/ স্বয়ং আল্লাহ্‌ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন তার পিতা-মাতার প্রতি উত্তম সদ্ব্যবহার করতে।
৬/ স্ত্রী হিসেবে নারীকে সম্মানঃনিজ স্ত্রীকে কাজে সাহায্য করাঃনিজ স্ত্রীর পরিবারের খোজ খবর নেয়াঃস্ত্রীর উপর অযথাই রাগ না করাঃপরিবারের জন্য সম্পদ খরচ করাঃ নিজ স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেয়াঃস্ত্রীকে ভালবাসাঃস্ত্রীর সাথে ভাল ব্যাবহার করা ।
৭/ কন্যা হিসেবে নারীকে সম্মান দেয়া হয়েছে যে কারো কন্যা সন্তান হলে সে যদি এদের উত্তম যত্ন করে তাহলে এই আমল তাঁকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে ।
৮/ পরিবারের সাথে উত্তম আচরন করতে হুকুম দিয়েছে ইসলাম । সেই উত্তম যার চরিত্র উত্তম।
৯/ খালা ফুফু সহ ইত্যাদি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় অটুট রাখা, এদের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা ।
১০/ ইয়াতিম নারীদের সাহায্য করা এমনকি বিধবা নারীদের ভরন পোষণ দেয়া ইসলামে ভাল একটি আমল।
১১/ নারী হক বা পুরুষ হক বা ইত্যাদিকে পানি পান করানোঃনারীদের সাথে এমনকি প্রতিটি ক্ষেত্রেই নম্র ব্যাবহার করাঃনারীদেরকে ভাল উপদেশ প্রদান করা ।
১২/ প্রয়োজনে নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারবে ।
১৩/ নারী পুরুষ পার্থক্য না করে উভয়কেই সমভাবে জ্ঞানঅর্জনের আদেশ দিয়েছে এটাই ইসলামের কথা।
১৪/ বয়স্ক নারীদের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করতে বলেছে ইসলাম ।
টিকাঃ উপরোক্ত হাদিস গুলি ihadis.com থেকে নেয়া ।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.