মাছি’ প্রসঙ্গে বিশ্বনবীর (সা.) এর সেই কথাটিই মেনে নিল আধুনিক বিজ্ঞান।

পোস্ট কপি ফ্রম ডেইলি ইনকিলাব নিউজ পেপার
মাছি’ প্রসঙ্গে বিশ্বনবীর (সা.) এর সেই কথাটিই মেনে নিল আধুনিক বিজ্ঞান।
প্রায় ১৪০০ বছর আগে নাজিল হওয়া আল কোরআনের বিশ্লেষণ করে মানুষ মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছেছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগে মাছি প্রসঙ্গে যে কথাটি বলেছিলেন, তা আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে।
বুখারী ও ইবনে মাজাহ হাদীসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কারো পাত্রে মাছি পতিত হয় সে যেন উক্ত মাছিটিকে ডুবিয়ে দেয়। কেননা তার একটি ডানায় রোগজীবাণু রয়েছে, আর অপরটিতে রয়েছে রোগনাশক ঔষধ’(বুখারী)।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم -: «إِذَا وَقَعَ الذُّبَابُ فِي شَرَابِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْمِسْهُ، ثُمَّ ليَنْزِعْهُ، فَإِنَّ فِي أَحَدِ جَنَاحَيْهِ دَاءً، وَفِي الْآخَرِ شِفَاءً» أَخْرَجَهُ الْبُخَارِيُّ ،
وَأَبُو دَاوُدَ، وَزَادَ: «وَإِنَّهُ يَتَّقِي بِجَنَاحِهِ الَّذِي فِيهِ الدَّاءُ»
আবূ হুরাইরা (রাঃ)
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের ‘কারো পানীয় বস্তুর মধ্যে মাছি পড়ে তখন সে যেন তাকে তাঁর মধ্যে ডুবিয়ে দেয়। তারপর তাকে বাইরে ফেলে দেয়। কেননা ওর এক ডানায় রোগ আর অন্য ডানায় আরোগ্য রয়েছে।’ আবূ দাঊদে (অতিরিক্ত শব্দ) এসেছে; ‘মাছি তার জীবাণু যুক্ত ডানাটি (প্রথমে পানীয়ের মধ্যে ডুবিয়ে) তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।
সহিহ বুখারি হাঃ৩৩২০,৫৭৮২,
সুনান আবু দাউদ হাঃ৩৮৪৪,
বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ১৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
শিক্ষাঃ শুষ্ক খাবারে মাছি পড়লে, মাছিকে খাবারে ডুবানো যাবে না। [অবশ্য ডুবানো সম্ভবও না।] বরং খাবারের যেখানে মাছি পরেছে তার আশে-পাশের কিছু অংশ ফেলে দিতে হবে। শুধু মাছিই নয় অন্যান্য পোকা-মাকড়ের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। [তবে হারাম যেমন-বিচ্ছু এই হুকুমের অধীন নয়] [বিস্তারিত]
ইবনে হাজার [রাহঃ] বলেন, “কোন পাখা প্রতিষেধক বহন করে, তা আমি দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের মধ্যে কিছুই খুঁজে পাই নি। তবে কেউ কেউ বলেন যে, মাছি নিজেকে বাম পাখা দ্বারা রক্ষা করে আর তাই বলা যেতে পারে যে, ডান পাখায় প্রতিষেধক আছে।… কেউ কেউ বলেন, এখানে বিষ হচ্ছে অহংকার যা মানুষকে খাবার ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তাই মাছিকে ভাল করে খাবারে ডুবিয়ে জোরপূর্বক নিজেকে খেতে বাধ্য করার মধ্যেই নিরাময় আছে”।
জ্ঞানবিজ্ঞানের যখন অগ্রগতি হলো, যখন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জীবাণু সম্পর্কে জ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে বর্ণিত হচ্ছে, মাছি মানুষের শত্রু, সে রোগজীবাণু বহন করে এবং স্থানান্তরিত করে। মাছির ডানায় রোগজীবাণু রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।’ তাই যদি হয় তাহলে কিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগজীবাণু বহনকারী মাছিকে ডুবিয়ে নেয়ার আদেশ করলেন? অনেকে বলে, মাছির ডানায় জীবাণু থাকাই সম্ভব না। তাদের এটা পড়তে বলব।
এ ব্যাপারে একটি রচনা সংযুক্ত করছি,
মারভেল কমিক্স Ant-Man নিয়ে চরিত্র সৃষ্টি করলেও Fly-Man নামে কোন চরিত্র কেন সৃষ্টি করল না? আপনি হয়তো বলবেন, “Dude, are you mad? Fly is filthy. And you want to create a superhero named ‘Fly-Man’? That’s nasty right?” জ্বী, আপনি সঠিক nasty। ১৯৮৬ সালে মাছি নিয়ে একটি হরর ছবি বের হয়েছিল বটে। তাই বলে, প্রশ্নটা কোন বাতুলের মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত বলে ভাবলেও, প্রশ্নটা আসলে যৌক্তিক। আসলে রেড কমিক্সের সৃষ্টি Fly-Man নামের একটি সুপারহিরো চরিত্র আছে!
আপনি এখন মনে করতে পারেন, হরর মুভিটা রেড কমিক্স থেকে বেশি logical। আমার মনে হয় আপনার এরকম চিন্তা করার কারণ একটু মনোবিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করলেই ভাল। ছোটবেলা থেকে আমরা মাছির খারাপ দিকগুলো শুনে শুনে এখন আর ভাল কিছু আছে বলে বিশ্বাস করতে পারি না। অবশ্য আপনাকে দোষ দিচ্ছি না। আর WHO কেন মাছিকে আমাদের চোখে ভিলেন হিসাবে উপস্থাপন করল, সে ধরনের অভিযোগ তোলার ইচ্ছাও আমার নেই। কারন মাছির যে রহস্যময় অজানা কথাগুলো আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব, তা আসলে রহস্যাবৃত! যতদূর জানি, মাছির এই অদ্ভূত বৈশিষ্ট্যের সফল প্রয়োগ কোন বিজ্ঞানী করে দেখাতে পারে নি। তাই WHO মাছি থেকে দূরে থাকতে বলে ভুল করে নি।
যারা মূল আলোচনা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন, তাদের এখনই বলে দিচ্ছি, “মাছি কিন্তু anti-bacterial বস্তু বহন করে। কান পেতে শুনে নিন। আবার কাউকে কিছু বলবেন না যেন। সেই anti-bacterial বস্তুটি আসলে কি তা জানা যায় নি। কাজেই, এখনও সময় আছে। প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করার সুবর্ণ সুযোগ আমাদের আছে। শুধু একটু ল্যাবে সময় দিলেই হবে”। বিশ্বাস না হলে নিচের কিছু গবেষণার খবর পড়েই দেখুন।
১৯২৭ সাল,
Rockefeller Foundation প্রকাশিত Journal of Experimental Medicine (1927), খন্ড ৪৩-এর ১০৩৭ পৃষ্ঠায় বলা আছে,
“কিছু বিশেষ রোগের জীবাণুর কালচারে মাছি দেয়া হয়। কিছু সময় পর, যখন মাছি কিছু জীবাণু ভক্ষণকারী বস্তু, ব্যাক্টেরিওফায, গঠন করল, জীবাণুগুলো মারা গেল এবং কোন চিহ্নই আর বাকি থাকল না। যদি এই মাছি থেকে কোন স্যালাইন দ্রবণ তৈরি করা সম্ভব হয়, হতে পারে তা ব্যাক্টেরিওফায বহন করবে, যা রোগসৃষ্টিকারী চারটি জীবাণু দমন করতে পারবে এবং আরও চারটি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের উৎকর্ষ সাধন করবে”।
১৯৯৪ সাল,
University of Tokyo এর Professor Juan Alvarez Bravo বলেন, “শীঘ্রই আমরা দেখতে পারব যে, অনেক রোগের কার্যকরী প্রতিষেধক মাছি থেকে নিঃসরণ করা হবে”। [১]
২০০০ সাল,
University of Bath এর Department of Biology and Biochemistry থেকে R. J. Dillon উল্লেখ করেছেন, “মানবদেহের রোগ ও পরজীবী সৃষ্টিকারী অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা রোগবাহক পোকা-মাকড়ের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে তা নিয়ে কিছু গবেষণা করা হয়েছে। Gnotobiotic পোকামাকড়কে (Greenberg et al, 1970) Musca domestica [মাছি] এবং Lucilia sericata এর মাইক্রোবায়োটার ব্যাক্টেরিয়াল প্যাথোজেন দমনকারী ক্ষমতা আছে বলে প্রমাণ পেশ করা হত”। [২]
২০০২ সাল,
অস্ট্রেলিয়ার Macquarie University এর Department of Biological Sciences থেকে একটি দল house fly, sheep blowfly, vinegar fruit fly এবং Queensland fruit fly নিয়ে গবেষণা করেন। প্রত্যেক প্রজাতির মাছির শরীরে anti-bacterial বস্তু পাওয়া গেছে। ইথানলে মাছিকে ডুবিয়ে anti-bacterial বস্তুটি নিংড়ে নেয়া হয়, এরপরে মিশ্রণটিকে ফিল্টার করে অশোধিত নির্যাস অর্জন করা সম্ভব হয়। E.coli, Golden Staph, Candida (a yeast) সহ অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়ার মিশ্রণের মধ্যে অশোধিত নির্যাস প্রয়োগ করা হয়। আর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই antibiotic ক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। Ms Clarke বলেন, “আমরা এখন anti-bacterial বস্তুটি সনাক্ত করার চেষ্টা করছি”। [৩]
ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি Glaxo Smith Kline অনেক দিন থেকেই মাছি থেকে ওষুধ বানানোর চেষ্টা করছে। [৪]
২০০৫ সাল,
শরীর তো বটেই মাছির লালা কিন্তু একেবারে খারাপ না। অবাক হচ্ছেন? Auburn University এর কিছু গবেষক মাছির লালা-তে এক ধরণের প্রোটিন খুজে পেয়েছেন যা ক্ষত ও ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী ফাটল নিরাময়ে কাজ করে। [৫]
২০০৬ সাল,
২০০২ সালের গবেষণার কথা আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, কারন সেখানে গবেষক বলেছিল যে, তারা এমন একটি জায়গায় প্রতিষেধক খুঁজছেন , যেখানে কেউ খুঁজে দেখে নি। ২০০৬ সালে একই চেষ্টা করা হয়। তবে এবারের ঘটনা রাশিয়ায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মাছি এমন কিছু বহন করে যা ওষুধের জগতে আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে।[৬]
২০০৭ সাল,
মাছি থেকে হৃদ রোগের ওষুধও তৈরি করা সম্ভব। কারন মাছি আর মানুষের হৃদপিন্ডের কিছু মিল আছে কিনা! [৭] একই বছরে Stanford University ঘোষণা করে যে, মাছি থেকে নাকি এমন বস্তু পাওয়া গেছে যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়! [৮]
২০১০ সাল,
ড, জামাল হামিদ তার ছাত্রদের নিয়ে উক্ত হাদিসের উপর একটি গবেষণা করেন। সেখানে Salmonellas sp + proteus sp.
Type, Coynebacterium Dephtheroid type, E Coli type, Staphylococcus sp. type নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। আর সকল ক্ষেত্রেই মাছির ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধী গুণাগুণ পাওয়া গেছে। [বিস্তারিত]
২০১৩ সাল,
ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগের বিরুদ্ধে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াবিহীন প্রাকৃতিক নিরাময় মাছি থেকেই উদঘাটন করা সম্ভব। [৯]
যাই হোক, আমি এতোটুকুই তথ্য পেয়েছি। আসল কথা হল, নোবেল কিন্তু হাতের মুঠোয়। শুধু এখন সেই রহস্যময় anti-bacterial বস্তুটি খুঁজে বের করতে পারলেই হল।
এছাড়াও একটি খুব সুন্দর রিসার্চ পেপার আছে যা ২০১৪ সালের, আমি এখানে সেটার কথা উল্লেখ করি নি। নিজেই পড়ুন। এখানে বলা হয়েছে যে, মাছির ডান ডানা থেকে তৈরি দ্রবণে জীবাণুর বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয় নি। হারাম নয় এমন পোকার ক্ষেত্রেও একই মাসয়ালা। তাছাড়া আরও কিছু পোকা একইভাবে রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে। [যেমন] [এছাড়াও] সেই চৌদ্দশ বছর পূর্বে এই ক্ষুদ্র জীবাণু দেখার শক্তি মানুষের ছিল না। অথচ রাসূল (স:) সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং সে সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং ঐ বিপদজনক দিক বর্ণনা করেছেন যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
আরেকবার হাদিসটি দেখা যাক
হাদিসটি পড়ে কয়েকটি জিনিস জানা যায়-
১] মাছি রোগ বহন করে। [হাদিসের শব্দগুলো হল- 'এক ডানায় রোগ']
- ১৪০০ বছর আগে কি করে জানা সম্ভব ছিল যে, মাছির শরীরে আণুবীক্ষণিক জীবাণু আছে?
২] মাছির মধ্যে আরোগ্য রয়েছে।
- এটা আজকের বিজ্ঞানীরাও বলেন। [রেফারেন্স- ১,২,৪,৫,৬,৭,৮,৯]
৩] মাছির এক ডানায় রোগ প্রতিরোধী কিছু না কিছু আছে।[রেফারেন্স- ২০১০,২০১৪ এর ঘটনা]
৪] রোগ প্রতিরোধী বস্তু সংগ্রহ করতে হলে, মাছিটিকে ডুবিয়ে দিতে হয়। [রেফারেন্স- ৩]
তার মানে এই না যে, আপনি মাছি ডুবিয়ে ডুবিয়ে খাবেন। রাসূল [সাঃ] স্পষ্ট বলেছেন যে, ‘এক ডানায় রোগ আছে’। আর রোগ আসার আগেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। মাছি যেন পানীয়তে না পতিত হয়, এজন্য সতর্ক থাকা উচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কলসিগুলোর মুখ ঢেকে দাও,
মশকের (চামড়ার তৈরী পানির পাত্র) মুখ বেঁধে
দাও এবং
পাত্রগুলো উপুড় করে রেখে দাও।
(আবু দাউদ; আল আদাবুল মুফরাদ]
তবে যদি মাছি পতিত হয়েই যায়, তাহলে এই কাজ করতে হবে।
——————————————————
[১] The ointment in the fly: antibiotics, The Economist, December 3, 1994।
[২] http://www.faculty.ucr.edu/…/syste…/digestion/plenuryrd.html
[৩] Danny Kingsley , The new buzz on antibiotics, www.abc.net.au, 1 October 2002. http://www.abc.net.au/science/articles/2002/10/01/689400.htm
[৪] Joanne Clarke, Michael Gillings and Andrew Beattie, 2002. Hypothesis-driven drug discovery. Microbiology Australia, pp: 8-10.
[৫] Protein in Fly Saliva Speeds Healing of Incisions, Wounds, Auburn University, 23 Jan 2005.
[৬] The fly effect: Russian scientists invent new medicine with the help of flies, St. Petersburg State University, 2006
[৭] Fruit Flies May Pave Way To New Treatments For Age-related Heart Disease, Burnham Institute, 2007
[৮] Fruit Fly Insight Could Lead To New Vaccines, Stanford University, March 11, 2007.
[৯] Parlan, 2013. Flies for antibiotics, www.naturalhealthyliving.com.


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.