ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন-- (১৬ থেকে ২০)
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন--১৬
লেখকঃ সাব্বির আহমেদ সজীব
মানুষ কি শিম্পাঞ্জী ও বানরের আত্মীয়?
মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর জিনোমিক সিমিলারিটি মাত্র ২৯.৮% - আধুনিক বিজ্ঞান বিবর্তন তত্ত্বকে সমর্থন করে না।
কয়েক দশক ধরে, মানুষের কাছে প্রচার করা হচ্ছে যে, আমরা জিনতাত্ত্বিকভাবে ৯৮ শতাংশ সিমিলার শিম্পাঞ্জীর সাথে। এই দুর্বল যুক্তিটি বিবর্তনের সত্যতা মানুষকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। আধুনিক বিজ্ঞান এই ধারণা সমর্থন করে? আসুন পরীক্ষা করি।
জেনেটিক মিলের তুলনা তথাকথিত "প্রোটিন কোডিং জিন" উপর ভিত্তি করে হয়, যা মোট ডিএনএ এর মাত্র ১.৫%। কিন্তু জেনেটিক সমীকরণটি যদি ১০০% এর মধ্যে করা হয়, তবে আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জী ও বানরের সিমিলারিটির আর্গুমেন্ট শুভঙ্করের ফাঁকি বৈ কিছুই না। মানুষের জিন এনকোডিং প্রোটিনগুলো ক্যাঙ্গারু, ইঁদুর, শূকর, বাদুড় এবং অন্যান্য প্রাণীর সাথে অনেক বেশি সিমিলার কারণ একই উপায়ে সেল তার ডিএনএ-এর সেকশন ব্যবহার করে।
বিজ্ঞানের পরিক্ষীণ থেকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ মেকানিজমগুলো জানা যায়, তা প্রাণীদের মোর্ফোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য, হাড়ের সাইজ, আকৃতি এবং অন্যান্য যেসব কারণ ও প্রভাব লক্ষণীয় সেইসব ম্যাকানিজম সমূহ তা নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশ করে (আগে ধারণা করা হতো এগুলো বিবর্তনের জিনগত ক্রমপরিবর্তন)। কিন্তু জিন সিকোয়েন্স, এমনকি প্রোটিন এনকোডিং জিন, মোর্ফোলজি নিয়ন্ত্রণ করে না। মাথার খুলি এবং কঙ্কালের আকৃতি এবং আকার হস্টোনের এপিজেনেটক মার্কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, বিশেষত এসিটিএলেশন / ডেসিটাইলেশন এবং মেথিলেশন মার্কার। ডিএনএ কম্প্রেশন প্রোটিন যার চারপাশে ডিএনএ ইন্টারভোভেন হয়, যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থানে সংকুচিত হয়ে ব্যাপক তথ্য ধারণ করতে সক্ষম। এপিজেনেটিক মার্কারগুলো হস্টোনের সাথে যুক্ত হতে পারে যা একটি জৈবিক ডাটাবেস এবং একটি অ্যাড্রেসিং সিস্টেম হিসাবে কাজ করে। তারা প্রোটিন প্রোডাকশন মেশিনগুলোকে কন্ট্রোল এবং রেগুল্যাট করে যা সঠিক ডিএনএ স্ট্রেচ নির্বাচন করেন pre-mRNA এর জন্য। এরা alternative splicing ম্যাকানিজমকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
হিস্টোনের সন্নিবেশ ভ্রূণের ডিভেলপম্যান্টের সময় IncRNA অণুর সাথে সম্পর্কিত থাকে। তাই যদি আমরা সত্যিই শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের সাদৃশ্য তুলনা করতে চাই, তাহলে আমাদের lncRNA অণুর সিমিলারিটি তুলনা করা প্রয়োজন।
কিন্তু এর প্রকৃত সত্য হচ্ছে:
মানুষের এবং শিম্পাঞ্জির lncRNA অণুর মিল শুধুমাত্র ২৯.৮%!!! তাই শিম্পাঞ্জীর সাথে ডিএনএ সিমিলারিটি কখনোই বিবর্তনবাদ প্রমাণ করেনা।
উক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারি যে, কেন অঙ্গ transplants বা রক্ত সঞ্চালন শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষে কাজ করেনা। মানুষের এপিজিনোম শিম্পাঞ্জী থেকে ৩০% এরও বেশি পৃথক। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানীদের গবেষণার মতে, আমাদের Y ক্রোমোজোম শিম্পাঞ্জীর তুলনায় 'অনেক অনেক' ভিন্ন। বিজ্ঞান জানেনা কোন ম্যাকানিজমগুলো বা কোন ধরণের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বানর জাতীয় এপস থেকে মানুষের বিবর্তন ঘটতে পারে। বিবর্তনবাদীদের বিবর্তন প্রমাণের জন্য প্রয়োজন "useful genetic mutations" কিন্তু তা পাওয়া যায় না। কিন্তু দ্রুত মানুষের জিনগত অবনতির প্রমাণ হিসাবে বিজ্ঞান আমাদের ২,০৩, ৮৮৫ রোগ সৃষ্টিকারী জিনোমিক পরিবর্তন দেখাচ্ছে। গত ৫০০০ বছরে মানুষের জিনোমের মধ্যে ৭৩% পরিবর্তন ঘটেছে।
তাই বর্তমানে বিবর্তনবাদ বিজ্ঞান পাড়ায় প্রশ্নের সম্মুখীন। কোনো র্যান্ডম পরিবর্তন উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে পারেনা, আমরা পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি।
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন-১৭
নাস্তিকবাদের অসারতা!
নাস্তিকবাদ এমন একটি মতবাদ যেখানে স্রষ্টা শুধুমাত্র কাল্পনিক চরিত্র, মানুষের অজ্ঞতার অন্যরূপ। নাস্তিকদের মতে বিজ্ঞানের যুগে স্রষ্টাকে বিশ্বাস করা অজ্ঞতা ও মূর্খতা বৈ কিছু নয় আর স্রষ্টাকে অস্বীকার করাই বিজ্ঞানমনা, জ্ঞানী, বিজ্ঞানী ইত্যাকা ইত্যাদি।
আমার লেখাগুলোতে অল্প জ্ঞানে, স্বল্প পরিসরে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো নাস্তিকতা কতটা অসার ও অযৌক্তিক একটা মতবাদ। মূল আলোচনার আগে নাস্তিকদের দেয়া উক্তির উল্টো চিত্রটা দেখি। নাস্তিকদের উক্তি, "আমরা(আস্তিক) যা জানিনা সে স্থানে স্রষ্টাকে বসায়" অর্থাৎ আমাদের অজ্ঞতার নাম স্রষ্টা। কিন্তু আমি মনে করি, আস্তিকরা জেনে, বুঝে ও উপলব্ধি করেই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়। আর নাস্তিকতা মানেই প্রমাণ, নিদর্শন, লজিক ইত্যাদি থাকার পরেও না বুঝে, না জেনে স্রষ্টাকে অস্বীকার করে অর্থাৎ নাস্তিকতা মানেই মূর্খতা।
নাস্তিকতা মানে কেন মূর্খতা তা নিন্মে সংক্ষেপে আলোচনা করি।
নাস্তিকরা সর্বদা নিজেদের জ্ঞানী ও বিজ্ঞানের অনুসারী বলে দাবী করে তার প্রমাণসরূপ সার্টিফিকেট স্রষ্টায় অবিশ্বাস ও বিজ্ঞানে বিশ্বাস। কিন্তু নির্বোধরা জানেনা স্রষ্টা ও বিজ্ঞানে কোনো বৈপরীত্য নেই বরং একে অপরের পরিপূরক। যেমনটি আল কোরআনে সূরা আল ইমরানের ১৯১ নাম্বার আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, "জ্ঞানী তারাই যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা করে।" অর্থাৎ কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে বলেন।
এখানে নাস্তিকরা বলবে স্রষ্টাকে প্রমাণ করতে বিজ্ঞানের প্রয়োজন কিন্তু বিজ্ঞানে স্রষ্টাকে প্রয়োজন নেই। তারমানে মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে স্রষ্টার পরিকল্পনা নেই, রয়েছে বিজ্ঞানের!! উক্তিটা অল্পবুদ্ধির পরিচায়ক ছাড়া কিছু নয়। কারণ বিজ্ঞান মানেই প্রকৃতি নির্ভর পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান। তাই বিজ্ঞানের স্রষ্টা প্রয়োজন, স্রষ্টার নয়। বিজ্ঞানের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা আমরা স্রষ্টার নিদর্শন, মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হব।
মূল আলোচনায় আসি..!!
বিজ্ঞানের বদৌলতে বর্তমানে আমরা অনেক জটিল জটিল উদ্ভাবন তৈরি করেছি। যার জন্য প্রয়োজন হয়েছে ল, তথ্য, ফাংশন, পরিকল্পনা ইত্যাদি যা এসেছে বুদ্ধিমান মাইন্ড থেকে। সামান্য একটা দেশলাইকাঠি ও নিজে নিজে অস্তিত্বে আসতে পারেনি, প্রয়োজন হয়েছে বুদ্ধিমান মাইন্ড।
আর এই বিশাল মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে গেলো 'বাই চান্স' দ্বারা!! যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক!!
বিজ্ঞানের প্রাপ্ত জ্ঞান বলে, ক্রিয়েশনের জন্য ক্রিয়েটর প্রয়োজন, ল এর জন্য ল-গিভার প্রয়োজন, ইনফরমেশনের জন্য বুদ্ধিমান মাইন্ড ও পরিকল্পনার জন্য পরিকল্পনাকারী প্রয়োজন। আমাদের তৈরি জটিল জটিল আবিষ্কারের চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি জটিল সৃষ্টি রয়েছে আমাদের এই মহাবিশ্বে। আর তা 'বাই চান্স' সৃষ্টি বলে মেনে নেয়া বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও প্রমাণের বিপরীত অর্থাৎ অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক। যেমন আজ কথা বলবো ফ্যাক্টরি নিয়ে।
ফ্যাক্টরি....
উইকিপিডিয়া থেকে দেখা যাক ফ্যাক্টরি বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
"A factory (previously manufactory ) or manufacturing plant is an industrial site, usually consisting of buildings and machinery, or more commonly a complex having several buildings, where workers manufacture goods or operate machines processing one product into another.
সাধারণত ফ্যাক্টরি বলতে শিল্প সাইটকে বুঝানো হয় যা সাধারণত বিল্ডিং-এর গঠিত এবং যাতে থাকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটারাইজড সিস্টেম। যেখানে অসংখ্য শ্রমিক উৎপাদনের কাজ করে বিভিন্ন মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে। পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয় জটিল প্রোসেসিং সিস্টেম। যদি নাস্তিকদের বলা হয় একটা ফ্যাক্টরি 'বাই চান্স' সৃষ্টি হয়েছে তাহলে তারা স্বপ্নেও চিন্তা করবেননা। কিন্তু বিপরীত স্রষ্টার ক্ষেত্রে!!
আমরা জানি আমাদের শরীর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেল দ্বারা তৈরি, রয়েছে ফাংশন, সূক্ষ্ম ফাংশনাল সিস্টেম। কিন্তু আপনারা যদি ট্রিলিয়ন সংখ্যা থেকে একটি সেলের একটা ক্ষুদ্র অংশ নিয়েও চিন্তা করেন তাতেও স্রষ্টার নিদর্শন উপলব্ধি সম্ভব।
একটা ক্ষুদ্র সেলের প্রোটিন প্রোডাকশন সিস্টেম ফ্যাক্টরি মত কাজ করে যা আমাদের তৈরি ফ্যাক্টরির চেয়ে বহুগুণ বেশি জটিল। এই বিষয়ে মাইকেল ডেন্টন তার বই Evolution: A Theory In Crisis এ বলেন, 'The cell is a veritable micro-miniaturized factory containing thousands of exquisitely designed pieces of intricate molecular machinery, made up altogether of one hundred thousand million atoms, far more complicated than any machine built by man and absolutely without parallel in the non-living world.
Molecular Biology জার্নালে রিভিউ করা হয়, Ribosome: Lessons of a molecular factory construction.
sciencemag -এ বলা হয়েছে, There are millions of protein factories in every cell. Surprise, they’re not all the same...
www.sciencemag.org/…/there-are-millions-protein-factories-e…
Phys এ বলা হয়েছে, Scientists ratchet up understanding of cellular protein factory..
An international research team in untangling another mystery related to ribosomes -- those enigmatic jumbles of molecules that are the protein factories of living cells.
https://m.phys.org/…/2010-12-scientists-ratchet-cellular-pr…
প্রত্যেকটি সেলে অসংখ্য মলিকুলার ফ্যাক্টরিস রয়েছে, যেখানে রয়েছে জটিল মলিকুলার মেশিন। যা পরস্পর সূক্ষ্ম ও জটিল কার্য সম্পন্ন করে থাকে। সেল ফ্যাক্টরিস আমাদের নির্মিত ফ্যাক্টরিস থেকে অনেক বেশি জটিল ও সূক্ষ্ম। নাস্তিকরা যেখানে আমাদের নির্মিত ফ্যাক্টরিকে 'বাই চান্স' কল্পনা করতেও নারাজ সেখানে সেলের জটিল ও সূক্ষ্ম ফ্যাক্টরিস কোনো ইন্টেলিজেন্স মাইন্ড ছাড়া 'বাই চান্স' বলে বিশ্বাস করে যা অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক!! যা নাস্তিকবাদের অজ্ঞতার মুখোশ থেকে বেরিয়ে আসলেই বুঝা সম্ভব এবং স্রষ্টার নিদর্শন ও মহিমা উপলব্ধি করা সম্ভব।
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন--১৮
মিউটেশনের ছলাকলা।
বর্তমানে নাস্তিকবাদ প্রচারের অন্যতম বিষয় হচ্ছে ডারউইন ইভল্যুশন আর ডারউইনকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন নিও-ডারউইনিজম। ডারউইনিজম ও নিও-ডারউইনিজম উভয়কে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন মিউটেশন। মিউটেশন যে শুধুমাত্র বিবর্তনবাদকে টিকিয়ে রাখবে তা নয় বরং নাস্তিকবাদকে টিকিয়ে রাখতেও মিউটেশনের গুরুত্ব অপরিহার্য। ডারউইনবাদ ছাড়াও নাস্তিক হওয়া যায় কিন্তু তাদের বিজ্ঞান-মনষ্ক নাস্তিক বলা যায়না।
দেখা যাক, মিউটেশন বিজ্ঞান-মনষ্ক নাস্তিকদের প্রয়োজন মেটাতে পারে কিনা?
বায়োলজির সংজ্ঞা অনুযায়ী, 'mutation is the permanent alteration of the nucleotide sequence of the genome of an organism, virus , or extrachromosomal DNA or other genetic elements.
অর্থাৎ মিউটেশন হল একটি অর্গানিজম, ভাইরাস, এক্সট্রাক্রোমোজোসোমাল ডিএনএ ও অন্যান্য জেনেটিক উপদানের জিনোমে নিউক্লিওটাইডের স্থায়ী পরিবর্তন।'
মিউটেশনের ফলে ডিএনএ ও আরএনএ জিনোমের বেমেরামতযোগ্য ক্ষতি হতে পারে ও রেপ্লিকেশন প্রসেসে ত্রুটির সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট থেকে জানি বেশিরভাগ মিউটেশন ক্ষতিকর কিছু মিউটেশন কোনো প্রভাব ফেলেনা নগণ্য সংখ্যক মিউটেশন উপকারী। এই নগণ্য উপকারী মিউটেশন দিয়ে বিবর্তনবাদীরা বিবর্তনবাদকে প্রমাণিত হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে থাকে। জীবের বিভিন্ন ফাংশন ও ফাংশনাল অর্গান তৈরি হতে প্রয়োজন মাল্টিপল মিউটেশন এবং এই মাল্টিপল মিউটেশন একই জিনোম অঞ্চলে বার বার উপকারী মিউটেশন হিসেবে ঘটতে হবে। কিন্তু মিউটেশন হচ্ছে এলোমেলো পরিবর্তন যা যেকোনো স্থানে ঘটতে পারে। তাই এখানে প্রশ্ন থাকে এই নগণ্য উপকারী মিউটেশন কিভাবে একটি ফাংশন বা ফাংশনাল অর্গান সৃষ্টি করবে যখন তা এলোমেলো পরিবর্তন? যদি কোনো একটা ফাংশনের কিছু অংশ বিবর্তিত হয়েও যায় তা কিভাবে কাজ করবে পরবর্তী মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সময়টাতে? কারণ জীব দেহে প্রায় সব ফাংশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ফাংশনের বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় হলে জীবের মৃত্যু অনিবার্য। আমাদের অনেকের ধারণা ডিএনএ কোডের কোন একটা বেইস পেয়ার পরিবর্তিত হয় আর তা ক্ষতি বা উপকারী হয়। কিন্তু বিষয়টা এতটা সহজ নয়।
আমরা জানি, ডিএনএ-তে চারটি লেটারস রয়েছে, A, G, T ও C এর তিনটিকে একত্রে বলা হয় কোডন। এই চারটি লেটারসকে সাজালে ৬৪ কোডনস পাওয়া যাবে। প্রতিটা কোডন একটি এমিনো এসিডকে কোড করে।
অনেকের ধারণা বা পূর্বধারণা মিউটেশনের ফলে জিনোমে কিছুটা পরিবর্তন আসে ফলে প্রজাতিতে ভেরিয়েশন তৈরি হয় এবং এক সময় তা আলাদা প্রজাতি(নতুন ফাংশনাল অর্গান গঠন করে) সৃষ্টি করে। বিষয়টা তেমন নয়। এ নিয়ে শেষ দিকে আলোচনা করব।
উপরে বলছিলাম ডিএনএ-এর পরিবর্তন নিয়ে আর এই পরিবর্তন নাকি এক প্রজাতিকে অন্য প্রজাতি করে দেয়। যা শুধুমাত্র মিউটেশনের ছলাকলা। কারণ জিনোমে শুধু জেনেটিক কোড থাকেনা থাকে আরো কিছু কোডিং সিস্টেম। আর এই কোডিং সিস্টেমগুলো খুবই জটিল। যা চিন্তা করলেই একজন প্রোগ্রামার অপরিহার্য তা মেনে না নেয়ার উপায় থাকেনা। কারণ যদি কোনো প্রোগ্রামার না থাকতো তাহলে এলোমেলো পরিবর্তনে কোনো ক্ষতি হতোনা কারণ এখানে একই কেমিকেলের কম্বিনেশন হচ্ছে মাত্র। তাই প্রোগ্রামের জন্য প্রোগ্রামার থাকাটা যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক।
এখন জিনোমে অন্যান্য কোডিং সিস্টেম নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।
এই কোডিং সিস্টেমগুলো নিয়ে বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই জানেনা। এই কোডিং সিস্টেমসমূহ হল--
১। এপিজেনেটিক কোডিং সিস্টেম (হিস্টোন কোড ও ডিএনএ মেথিল্যাশন)
২। স্প্লিসিং কোডিং সিস্টেম
৩। সুগ্যার কোডিং সিস্টেম
৪। নন-রাইবোজোমাল কোডিং সিস্টেম।
এমন আরো অনেক কোডিং সিস্টেম রয়েছে যার সবগুলো আলোচনা অনেক কঠিন কারণ বিজ্ঞান এখনো অনেক কিছুই জানতে পারেনি। আমি এখান থেকে এপিজেনেটিক ও স্প্লিসিং কোডিং সিস্টেম নিয়ে সংক্ষেপে বলবো।
এপিজেনেটিক কোডিং সিস্টেম: এপিজেনেটিক কোডিং সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে হিস্টোন কোড ও ডিএনএ মেথিল্যাশন। ইউকারিয়োটিক জীবের জন্য এপিজেনেটিক কোডিং সিস্টেম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এপিজেনেটিক ও ক্যান্সারকে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলা হয়।
হিস্টোন কি?
হিস্টোন হল অ্যাল্কালাইন প্রোটিন। যা ডিএনএ-এর জন্য নাটাই হিসেবে কাজ করে। একটি নাটাইয়ে যেমন অনেক লম্বা সুতা পেঁচিয়ে রাখা হয় ঠিক তেমনি হিস্টোন ডিএনএ-কে পেঁচিয়ে রাখে কারণ আমাদের ডিএনএ মিলিয়ন মিলিয়ন বেইস পেয়ারস নিয়ে গঠিত। ডিএনএ এবং হিস্টোনের এই সহবস্থানের ফলে গঠিত কাঠামোই ক্রোমাটিন। ক্রোমাটিনে সাধারণত পাঁচ প্রকার হিস্টোন প্রোটিন পাওয়া যায়, সেগুলো হল-- H1/H5, H2A, H2B, H3, H4 এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকমের নন-হিস্টোন ক্রোমোজোমাল প্রোটিন। H2A, H2B, H3 ও H4 -কে বলে কোর হিস্টোন আর H1/H5 - কে বলা হয় লিংকার হিস্টোন। একাদিক হিস্টোন পরস্পর একত্রিত হয়ে তৈরি করে অকটোমার। যার চারপাশে ডিএনএ পেঁচিয়ে থাকে। প্রতিটা হিস্টোনে এন ও সি টার্মিনাল নামক একটা লেজের মত অংশ থাকে যা হিস্টোন মডিফিকেশনে সাহায্য করে। লেজের সঙ্গে নানারকম অণু যুক্ত বা বিচ্যুতি ঘটতে পারে যা তাদের ত্রিমাত্রিক গঠনটা পালটে দিতে পারে ফলে ক্রোমাটিনের গঠনের পরিবর্তন হয়। অতএব, জেনেটিক কোডের মত, ডিএনএ-এর কোন অংশে কোন হিস্টোন আছে, তা তালিকা করে হয় হিস্টোন কোড। যেমন, কয়েক প্রকার হিস্টোন মডিফিক্যাশন হচ্ছে -- mono-methylation, di-methylation, tri-methylation ও acetylation যেখানে lysine ও arginine residues মেথিল্যাটেড হয়ে জিন এক্সপ্রেশন কন্ট্রোল করে। যেমন-- লাইসিনস মেথিল্যাশন H3K4 ও H3K36 করাল্যাইট হয় ট্রান্সক্রিপশনাল এক্টিভিশনের সাথে। অর্থাৎ জিনের সুইচ অফ অন নির্ভর করে হিস্টোন মডিফিকেশনের উপর। যেমনটা উপরে বললাম তা আরেকটু ক্লিয়ার করলে এইভাবে বলা যায়, যখন কোন জিন প্রোটিন সংশ্লেষণ করবে তখন হিস্টোন এনজাইম সেই জিনটাকে উন্মুক্ত করে আরএনএ এনজাইমকে বসার জন্য। কাজ শেষ জিনটাকে ব্লক করার জন্য ব্যবহার হয় আরেকটি হিস্টোন এনজাইম। যদি জিন এক্সপ্রেশনে সামান্য হেরফের হলেই নানান রোগ সৃষ্টি হতে পারে অর্থাৎ মিসরেগুলেট মেথিল্যাশনে ক্যান্সারের মত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
হিস্টোন ডিএনএ-কে পেঁচিয়ে রাখা, ডিএনএ রেপ্লিকেশন, ডিএনএ রিপেয়ার, জিন এক্সপ্রেশন ও কোষ বিভাজনের মত কাজে অংশগ্রহন করে।
ডিএনএ মেথিল্যাশন....
আমরা জানি ডিএনএ-তে আছে A, G, T ও C এদের C সবসময় জোড়া বাধে G এর সাথে আর A বাধে T এর সাথে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ডিএনএ সিকোয়েন্সে থাকবে অসংখ্য CG বেইস পেয়ারস। এই বেইস পেয়ারসকে CpG island বলা হয়। এই CpG island-এ মিথাইল গ্রুপ C-এর সাথে ইন্টারেক্ট করে। কিন্তু CpG-তেই যে মিথাইল বসে পড়ে, তা নয়। তারা জায়গা বুঝে বসে, জায়গা বুঝে ছেড়ে যায় অর্থাৎ একটা বুদ্ধিমান মাইন্ডের মত কাজ করে। যার ব্যাখ্যা র্যান্ডম বা ম্যাটারলিস্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়না। তাই এই এক্ষেত্রেও তৈরি করতে হবে এপিজেনেটিক কোডিং ম্যাপ।
উপরে বলেছিলাম, হিস্টোন প্রোটিন এনজাইম প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য একটা অংশকে উন্মুক্ত করে এই উন্মুক্ত অঞ্চলকে বলা হয় প্রোমোটার রিজন। মেথিল্যাশনের একটা বড় কাজ হল এইসব প্রোমোটারের উন্মুক্ত অঞ্চল বন্ধ করে দেওয়া। এর জন্য তারা ওই প্রোমোটার অঞ্চলটায় গিয়ে CpG-এর সঙ্গে জুড়ে যায়। এমন একগুচ্ছ মিথাইল বসে থাকার ফলে ঐ এনজাইম আর বসার জায়গা পায় না, ফিরে যায়। ফলে ওই জিনটার কাজকর্মও থেমে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় সাইলেন্সিং। এখন প্রশ্ন আসতে পারে সাইলেন্সিং এর প্রয়োজন কেন?
সাইলেন্সিং জীবের জন্য অপরিহার্য। কারণ আমাদের শরীরে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেল রয়েছে যার একটা আরেকটা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর কারণ হচ্ছে সাইলেন্সিং। আমাদের সব সেলে একই জিন আছে তথাপি এক কোষ মাসল তো অন্যটা ব্লাড এর কারণ হচ্ছে মাসল সেলের জন্য মাসল জিন একটিভ থাকলে ব্লাড সেলের জিন ইনএক্টিভ বা সাইলেন্স থাকে। যদি তা না হতো সম্পূর্ণ সিস্টেমটাতে জগাখিচুড়ী লেগে যেতো। আবার কোষ বিভাজন ও মিউটেশনের সময় মিথাইল গ্রুপস বিভিন্ন ম্যাকানিজমের কাজেও বাধা দেয়। ফলে সে যে C-এর সাথে জুড়ে থাকে, তা বদলে গেলে ঠিক করা মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে সৃষ্টি হয় ক্যান্সার। মিউটেশনের ফলে জীবের পরিবর্তনের যে দাবী চালু আছে তা সম্পূর্ণ ভুল কারণ এটাও নির্ভর করে এপিজেনেটি কোডের উপর।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট থেকে দেখা যায়, জেনেটিক কোডের মত এপিজেনেটিক কোড পরস্পর সমান, সূক্ষ্ম ও জটিল ফাংশনালিটির।
নিচে কয়েকটা রিসার্চের লিংক দিলাম দেখে নিতে পারেন।
১। https://m.medicalxpress.com/…/2017-10-important-mechanism-e…
Throughout the entire lifespan of an organism, the genetic information has to be read correctly to ensure that genes are active at the right time and in the right cells. If these processes are defective, cells acquire the wrong identity – which can ultimately lead to cancer.
জিন এক্সপ্রেশন বা মিসরেগুল্যাট মেথিল্যাশনের ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
২। https://www.sciencedaily.com/releas…/2017/…/170223101841.htm
A lack of methyl groups in the gene body leads to an incorrect gene activation and, as a consequence, may lead to the emergence of cancer.
একটি মিথাইল গ্রুপের ঘাটতির জন্যেই ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।
Cancer Genetics and Epigenetics: Two Sides of the Same Coin?
More recently, intriguing evidence has emerged that genetic and epigenetic mechanisms are not separate events in cancer; they intertwine and take advantage of each other during tumorigenesis.
বর্তমান এভিডেন্স অনুযায়ী জেনেটিক ও এপিজেনেটিক ম্যাকানিজম ক্যান্সারে আলাদা বিষয় নয়। অতএব জেনেটিক ও এপিজেনেটিক একই কয়েনের এপিঠ-ওপিঠ।
লেখাটা বড় হয়ে যাবে বলে রেফারেন্সগুলো কমিয়ে সংক্ষেপ করলাম।
জীব দেহে প্রতিনিয়ত মিউটেশন ঘটে থাকে ফলে ডিএনএ ড্যামেজ হয় কিন্তু তারা রিপেয়ার করার জন্য আছে মেকানিক এনজাইম যারা বুদ্ধিমান মাইন্ডের মত ডিএনএ রিপেয়ার করে থাকে। যদি ডিএনএ রিপেয়ার ফাংশন ডিজাবল হয়ে যায় তাহলে সৃষ্টি হয় ক্যান্সার ও বিভিন্ন রকম ডিজিজস। জেনেটিক ও এপিজেনেটিক প্রসেসে সামান্য পয়েন্টার মিউটেশনও ক্যান্সার বয়ে নিয়ে আসতে পারে ক্যান্সার।
সবগুলো কোডিং সিস্টেম আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই শুধু স্প্লিসিং কোডিং সিস্টেমটা সংক্ষেপে দেখা যাক---
এই বিষয়ে ন্যাচারে বলা হয়---
১। www.nature.com/nat…/journal/v465/n7294/full/nature09000.html
Alternative splicing misregulation is often involved in human disease.
অলটারনেটিভ স্প্লিসিং-এর মিসরেগুল্যাশনও মানুষের ডিজিজের সাথে সম্পৃক্ত।
২। https://genomebiology.biomedcentral.com/arti…/10.1186/gb4150
Exon identity crisis: disease-causing mutations that disrupt the splicing code..
মিউটেশনের ফলে স্প্লিসিং কোডের ডিসরাপট হলে ডিজিজ সৃষ্টি হয়।
অতএব বলা যায় যে, জীব দেহের জিনোম সূক্ষ্ম ও জটিল প্রোগ্রামিং সিস্টেমে আবদ্ধ। যেখানে রয়েছে কনশাস্যাবল ম্যাকানিজম। যা র্যান্ডম ও ম্যাটারলিস্টিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, জেনেটিক, হিস্টোন ও মেথিল্যাশন পরস্পর সম্পৃক্ত ও প্রোগ্রামড ফলে একটা ব্যতীত সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম নষ্ট হতে পারে। কিন্তু শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে যে ভ্রূণ তৈরি হয়ে সেখানে বাবার কাছ থেকে হিস্টোন কোড আসেনা এবং নিষিক্ত কোষ মিথাইল মুক্ত করে কিন্তু পরে পুনরায় প্রোগ্রামটি তৈরি হয়।
এখন নাস্তিকদের জন্য প্রশ্ন---
মুক্ত হয়ে যাওয়া প্রোগ্রামটির কপি কোথায় থাকে? প্রোগ্রামটি কে সংরক্ষণ করে? নাস্তিকদের জন্য চিন্তার রসদ রেখে গেলাম।
এখন বর্তমান কিছু এভিডেন্স দেখা যাক মিউটেশন নিয়ে---
১। We estimate that developmental disorders caused by DNMs have an average prevalence of 1 in 213 to 1 in 448 births, depending on parental age. Given current global demographics, this equates to almost 400,000 children born per year.
২১৩ ও ৪৪৮ শিশুর মধ্যে একটি শিশু জন্মগতভাবে ডিসঅর্ডার হয়।
২,০০,০০০ উপরে ডিজিজস সৃষ্টি হয়েছে মিউটেশনের ফলে।
তাহলে বলা যায়, জীবের জিনোম জটিল ও সূক্ষ্ম প্রোগ্রামিং সিস্টেম যার একটু হেরফের হলেই প্রোগ্রামটিকে নষ্ট করে দেয়। এমন জটিল ও সূক্ষ্ম প্রোগ্রামিং সিস্টেম র্যান্ডম ও বাই চান্স তৈরি হতে পারেনা। বিজ্ঞানের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সমস্ত প্রোগ্রামের প্রোগ্রামার থাকাটাই যৌক্তিক।
নাস্তিকদের একটা প্রশ্ন উঠে আসে প্রায়ই--- বিবর্তন সম্ভব না হলে বিজ্ঞানীরা কেন বিবর্তন সাপোর্ট করে? স্কুলে কেন পড়ানো হয়?
জবাব: বিবর্তন কোনো একটির নির্দিষ্ট মত নয় বিবর্তন বায়োলজিক্যাল ব্যাখ্যার একটি প্যাকেজ। যেখানে রয়েছে, স্পেসস ভেরিয়েশন, জীব ডাইভারসিটি, জেনেটিক ভেরিয়েশন ও ডাইভারসিটি, জিন পুলে পরিবর্তন, ন্যাচারাল সিলেকশন, মিউটেশন, কমন ডিসসেন্ট(UCA) ইত্যাদি। UCA বিবর্তনের একটা অংশ মাত্র যা হাইপোথিসিস মাত্র। কিন্তু অন্যান্য বিষয়গুলো বিবর্তন দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞান প্রকৃতি নির্ভর তাই সর্বদা প্রকৃতিগত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে যদিও তা হাইপোথিসিস হয়। যেমন প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে অসংখ্য হাইপোথিসিস রয়েছে কিন্তু বিজ্ঞান এখনো জানেনা কিভাবে প্রাণের
উৎপত্তি হয়েছে। যদি জানতেও পারে তা শুধু মাত্র ব্যাখ্যা কিন্তু সৃষ্টির পিছনে অবশ্যই একজন স্রষ্টা থাকবে। মিউটেশনের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান কিছু উপকারী মিউটেশন দিয়ে ও মিউটেশন মডেল দিয়ে জীব বৈচিত্র্য ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা লস অফ ফাংশন ও জিন রিকম্বিনেশন মাত্র।
ডারউইন ইভল্যুশনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো মিউটেশনের ফলে কিছু ত্রুটি তৈরি হয় এর ফলে জীবের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন আসে ফলে এক জেনারেশন পূর্ব জেনারেশন থেকে কিছুটা ভিন্ন হয় এবং তা ধীরে ধীরে অন্য প্রাণীতে বিবর্তিত হয়।
কিন্তু এটা বর্তমানে ভুল প্রমাণিত হয়। কারণ রি ভেরিয়েশন নির্ভর করে এপিজেনেটিকের উপর অর্থাৎ জিনেটিক সিমিলারিটি ১০০ হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। যেমন---
২। মুখের বৈশিষ্ট্য.... https://www.theguardian.com/…/2013/oct/24/faces-moulded-jun…
৩। স্কালের ভিন্নতা... http://genesdev.cshlp.org/content/23/14/1625.full
৪। চুলের ভিন্নতা... https://en.wikiversity.org/wi…/Genes/Expressions/Hair_colors
৫। স্কিন ও চোখের ভিন্নতা... http://www.dailymail.co.uk/…/First-identical-twins-differen…
সুতরাং মিউটেশন ধীরে ধীরে পার্থক্য তৈরি করে এর কোনো অপরিহার্যতা নেই।
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন। -- ১৯
ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স।
অনেকেই মনে করে ব্যাকটেরিয়ার নতুন নতুন ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি মানেই ইভল্যুশন প্রমাণিত হওয়া, এই দাবীটি বিশেষ করে নাস্তিকরা করে থাকে। এতে সন্দেহ নেই ব্যাকটেরিয়া তাদের জন্য ক্ষতিকর পরিবেশে প্রতিরোধ-ক্ষমতা তৈরি করে। ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হওয়াকে সাধারণ ইভল্যুশন বা মাইক্রো ইভল্যুশনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। কিন্তু এই ইভল্যুশনকে কখনোই চোখ অথবা কানের মত জটিল অঙ্গ তৈরি হওয়ার মতো ইভল্যুশন নয়। তথাপি অনেকেই বিশেষ করে নাস্তিকরা মনে করে এটা কোনভাবে ডারউইনের ফিশ টু ম্যামল এবং লিজার্ড টু বার্ড-এর মত ফিলসোফিক্যাল সিনারিও প্রমাণ করে। তারা বিশ্বাস করে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ম্যাকানিজম দৈবাৎ মিউটেশনে নতুন ডিএনএ তথ্য অর্জন করে। কিন্তু রেজিস্ট্যান্স সাধারণত এইভাবে তৈরি হয় না। আর নতুন বডি প্ল্যানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জিনোমে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত যত বিলিয়ন সময়ই দেয়া হোক না কেন তা ব্যাক্টেরিয়াম ফ্ল্যাজেলাম বা ফিশ টু ম্যামল সিনারিও প্রমাণ হওয়া সম্ভব নয়।
ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স কিভাবে তৈরি হয়? এতে কি কোন নতুন তথ্য যোগ হয়? ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে একটি এনজাইম প্রোডাকশনের সময় এতে লস অফ কন্ট্রোল (মিউটেশন), প্লাজমিডে থাকা জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল পরস্পর ট্রান্সফারের মাধ্যমে (হরাইজন্টাল ট্রান্সফার), ট্রান্সপোসন (ডিএনএ-এর স্থান পরিবর্তন)। (১) উদাহরণ স্বরূপ, ব্যাকটেরিয়ার পেনিসিলিন রেজিস্ট্যান্স আলোচনা করা যাক---
পেনিসিলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি জন্য ব্যাকটেরিয়া একটি জটিল এনজাইম তৈরি করে এই এনজাইমকে বলা হয় পেনিসিলিন্যাজ যা পেনিসিলিনকে ভেঙ্গে ফেলে বা নষ্ট করে দেয়। (২) পেনিসিলিন্যাজ তৈরি জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যাটেরিয়াতেই থাকে। কোন এক সাধারণ দৈবাৎ মিউটেশনের মাধ্যমে এর জটিল তথ্য যোগ হওয়া অসম্ভব। এই এনজাইমের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে প্লাজমিডে যাকে বলা হয় মোবাইল ডিএনএ এলিমেন্ট। (৩) ব্যাকটেরিয়া পরস্পর এই ডিএনএ এলিমেন্ট ট্রান্সফার করতে পারে যাকে বলা হয় ‘হরাইজন্টাল জিন ট্রান্সফার’। (৪) একইভাবে, মিউটেশনের ফলে পেনিসিলিন্যাজ সংশ্লেষে লস অফ কন্ট্রোল হয়ে ‘সো মাচ গ্রেটার অ্যামাউন্টস’ এনজাইম সংশ্লেষ করতে পারে। এতে ব্যাকটেরিয়া পেনিসিলিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-ক্ষমতা তৈরি করে ফেলতে পারে। (৫)
প্রথমদিকে, পেনিসিলিন প্রয়োগে ব্যাকটেরিয়া অধিক পরিমাণে মারা যেত কিন্তু যাদের প্লাজমিড ডিএনএ ধারণ করতো তারা বেঁচে যেত। পরবর্তীতে এই ডিএনএ অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াতে ট্রান্সফার করতে থাকে, ফলে পেনিসিলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। (6) ব্যাকটেরিয়াতে যতভাবে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় তার অধিকাংশই তৈরি হয় এই প্লাসমিডবাহিত ডিএনএ এলিমেন্ট ও পেনিসিলিন্যাজ সংশ্লেষের সময় এর লস অফ কন্ট্রোলের মাধ্যমে। কিন্তু ডারউইন মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশন কোনোভাবেই ‘হরাইজন্টাল ডিএনএ ট্রান্সফার’ ও প্লাজমিডে উক্ত ডিএনএ এলিমেন্টের তথ্য ব্যাখ্যা করতে পারে না। (৭) সো পেনিসিলিন্যাজ নামক এনজাইমের জন্য প্রয়োজনীয় ‘স্পেসিফাইড কমপ্লেক্স ইনফরমেশন’ বা ‘স্পেসিফিক সিকোয়েন্স’ কিভাবে ন্যাচারাল সিলেকশন ও দৈবাৎ মিউটেশনের মাধ্যমে এলো? তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এবং পেনিসিলিন্যাজ নামক এনজাইমের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য অলরেডি ব্যাকটেরিয়াতে থাকার ফলে ডারউইনের ফিলোসফিক্যাল সিনারিও-কে সত্য বলে প্রচার করা সম্পূর্ণ ভুল।
৫। Carl Wieland, Antibiotic Resistance in Bacteria, Nihilo Technical Journal, 8:1 (1994), p. 5.
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন। ---২০
একজন ডিজাইনার।
নাস্তিকদের যখন প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল?
জবাবে তারা নানান তালবাহানা করে প্রশ্নটি এড়িয়ে যায়। কারণ তারাও জানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রাণের উৎপত্তি আদৌ সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও পরিক্ষা থেকে সেটা অনেকটা স্পষ্ট।
প্রাণের উৎপত্তির জন্য প্রয়োজন fully functional DNA, RNA, ATP, enzymes ও অন্যান্য প্রোটিন. যদি এইসব কম্পোনেন্টসের কোনো একটা অনুপস্থিত থাকে বা সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে প্রাণের উৎপত্তি অসম্ভব।
এখান থেকে প্রশ্ন থাকে প্রাণ সৃষ্টির আদিতে কোনটা আগে এসেছে, ডিএনএ, আরএনএ নাকি প্রোটিন? কারণ তিনটাই সমভাবে পরস্পর নির্ভরশীল।
আবার ডিএনএ-কে যদি জেনেটিক হার্ডওয়্যার মনে করি তাহলে এপিজিনোম হচ্ছে সফটওয়্যার।
অর্থাৎ প্রাণ সৃষ্টির পিছনে রয়েছে সূক্ষ্ম প্রোগ্রামিং সিস্টেম। যেমনটা ভেন্টর বলেন, “Life is basically the result of an information process, a software process. Our genetic code is our software, and our cells are dynamically, constantly reading that genetic code."
অর্থাৎ প্রাণ সৃষ্টির পিছনে রয়েছে সূক্ষ্ম প্রোগ্রামিং সিস্টেম। যেমনটা ভেন্টর বলেন, “Life is basically the result of an information process, a software process. Our genetic code is our software, and our cells are dynamically, constantly reading that genetic code."
প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন তা হল---
১। নন লিভিং ম্যাটারিয়াল থেকে কিভাবে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার জেনারেট করবে যা অর্গাজিমের জন্য প্রয়োজন?
২। একটি র্যান্ডম ন্যাচারাল চান্স কমিউনিকেশনের জন্য কিভাবে আরবিট্রারি প্রোটকল ডেভেলপ করেছিল এবং প্রত্যেক সেলে হাজারও কম্পিউটার সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়েছে?
৩। শুধুমাত্র কেমিস্ট্রির এমন ফাংশনালিটি প্রোডিউস করতে পেরেছিল কি?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞানীরা ন্যাচার্যালিস্টিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তারা ব্যাখ্যা করতে পারে না কিভাবে ন্যাচারের পক্ষে এমন একটা সিস্টেম প্রডিউস করা সম্ভব। কারণ এটা শুধুমাত্র কেমিস্ট্রি নয়, সূক্ষ্ম প্রোগ্রামিং সিস্টেম। ইনফরমেশন কোডিং সিস্টেম যা র্যান্ডম ন্যাচারাল চান্স প্রোডিউস করতে পারে না, তার জন্য প্রয়োজন ইন্টেলিজেন্ট সোর্স। আর ইন্টেলিজেন্ট সোর্স-ই একজন ডিজাইনার বা স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.