তোমরা কি অনুধাবন করো না ?


তোমরা কি অনুধাবন করো না ?
লিখেছেনঃ রেজাউল ইসলাম

Part 1:
শান্তির ধর্ম যুদ্ধ করতে বলে কেন?
যুদ্ধ!! কী বিভৎস!!!
যুগে যুগে পুরো মানব ইতিহাসে কতশত যুদ্ধ হয়েছে। কতশত লক্ষ কোটি মানুষ মরেছে। মরেছে অপরাধী, নিরপরাধীদেরও সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। তবে কেন? মানুষ যুদ্ধ কেন করে? যুদ্ধ কারা করে? হ্যাঁ...... যুদ্ধ মূলত রাজা বাদশারা, জামিদার, জাগিরদারেরা করে। তাদের ক্ষমতার জন্যে, রাজ্য বিস্তারের জন্যে। তাদের উচূ উচূ প্রাশাদ, ইমারত নির্মানের জন্যে, শান-সওকাত, প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্যে।আর তারাই যুগে যুগে তাদের ক্ষমতার বলে সাধারন মানুষকে প্রজা(দাস) বানিয়ে রাখে। শ্রম তারাঁ দেয় আর তার বিহদাংশ নিয়ে যায় সে লুটেরা।স্বার্থ মূলত তাদের, আর জীবন দিয়েছে অন্যরা, তাদের মধ্যে কিছূ সংখ্যক এমন যাদের ক্ষণিক স্বার্থ ছিল আর অধিকাংশই নিরীহ, যাদের কোনই স্বার্থ ছিলনা- নিরীহ, নিরপরাধ।
এরপর দুনিয়াতে মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে প্রেক্ষাপটে হাজির পশ্চিমা সাধুরাতারা পূর্বের সেসব পুরনো রাজাবাদশাদের যুগকে কবর দিয়ে দেয়।তারা আমাদের সভ্যতা শেখানোর দায়ভার নিজেদের কাধে তুলে নিয়ে আমাদেরকে গণহারে হত্যা করে- তাদের কাছ থেকে সভ্যতা না শিখতে চাওয়ার অপরাধে। সে যাই হোক, আমরাতো ছারপোকা, আমাদেরকে মারলেই কী আর বাঁচালেই কী। তবে সমস্যা হলো সে নরপিশাচের দলে নিজেরাও নিজেদেরকে হত্যা করেছে কোটি কোটি সংখ্যায়........ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ, কমিউনিষ্টরাও বিগত শতাব্দীতে মানুষ মেরেছে কোটি দশেক। আবার শয়তানের সে জাতপাতরা আমাদেরকে হত্যা করছে পৃথিবীর বহু দেশে দেশে। ধ্বংস করে চলেছে আমাদের নগর বন্দর। আর এখন তো তাঁরা এক মহা পরিকল্পনা গ্রহন করেছে, এ ধরনী ধ্বংস করেই ছাড়বে তাদের প্রযুৃক্তিগত উৎকর্ষতায় তৈরীকৃত উন্নতমহা অস্ত্র দ্বারা। আসলেই যুদ্ধ কী বিভৎস!!!
এরপর এদের অর্থনৈতিক অন্যায় তো এক কথায় হৃদয় বিদারী। পুরো মানব জাতিকে আজ দাবিয়ে রেখেছে তাঁরা তাদের পূজিবাদের থাবার মধ্যে। যাদের যন্ত্রনার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে রাত দিন শ্রম দিয়ে চলেছে সারা দুনিয়ার মানবকুল।অধিকাংশ মানুবকুলকেই তাঁরা ঠেলে দিয়েছে দারিদ্রের নির্মম যাতাকলে।অার তারা বসে বসে আয়েশ করছে। ওয়াল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, পেপার কারেন্সি, ইকোনমিক্যাল ট্রিটি, সুদ ভিক্তিক অর্থনীতি, মাল্টিন্যাশনাল কম্পানী, গ্লোবালাইজেশন...... এসবই হলো তাদের এক একটি মরণফাদ।
তবে যুদ্ধ কি সত্যিই এতোটা বিভৎস??
কেননা এ লোকেদের কাছে আপনি সাম্য, প্রেম, সমতা ও ন্যায়বিচারের বানী শুনায়েন........ আপনার কি মনে হয় কোন কাজ হবে?? না হবে না। এটিই দুনিয়ার বাস্তবতা।এক্ষেত্রে আপনার তবলা ধ্বনি অকার্যকর। তাই যুদ্ধ সব সময়ই খারাপ নয়। কেননা এখানে যে নিয়ম চলছে তাকে বলা হয় যোগ্যতমের বিজয়(সার্ভাইবাল অব ফিটিষ্ট)। আপনি এখানে ভালো করতে চাইলেও বিজয়ী হয়েই সেটা করতে হবে আর খারাপ করতে চাইলেও বিজয়ী হতে হবে। এ অন্যায় অবিচার পূর্ণ রাষ্ট ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে কতিপয় মানুষের স্বার্থ জড়িত আছে। এদেরকে বলা হয় স্ট্যাটাস কো(সুবিধাভোগী শ্রেণী)। আপনি যত উন্নত ও ন্যায়বিচার পূর্ণ জীবন ব্যবস্থায়ই তাদেরকে দেখান না কেন তারা মানবেনা। মানবজাতির প্রতি অন্যায় অবিচার তারা চালিয়েই যাবে।কেননা এ অন্যায় ব্যবস্থায় তাদের উন্নতির চাবিকাঠি। তাই যুদ্ধ এতো জরুরী। অন্যায় যুদ্ধ থেকে মানুষকে বাঁচাতে ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ। আর যারা সে যুদ্ধ করে তারাই শ্রেষ্ট মানুষ। তাদেরকে আমারা মুজাহিদ বলি।
ইসলামই হলো স্রষ্টা প্রদত্ত সে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা সত্যিকারার্থে মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাই যুদ্ধের প্রয়োজন। অন্যায়কারী, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ একটি শান্তির পৃথিবী গড়ার নিমিত্তে। এখন এ আয়াতটি পড়ুন, আশাকরি বুঝতে পারবেনঃ
আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ(ন্যায়বিচার) প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।পবিত্র কোরআন, সূরা হাদিদ, সূরা নং-57, আয়াত নং 25
তাই শান্তির ধর্ম যুদ্ধ করতে বলে, কেননা এটি সত্যি সত্যিই শান্তির ধর্ম!!

part:

ধর্মহীনতার অভিশাপঃ
আমরা যে ধরনীতে বসবাস করছি তার ইতিহাসকে যদি এক কথায় ধর্মের ইতিহাস বলা হয় তাহলে হয়তো ভূল বলা হবেনা। কেননা ধর্ম এমনই এক বিষয় যা প্রতিটি যুগে ও প্রতিটি সভ্যতায় মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে এসেছে। যদিও আমরা জানি যে, সে ইতিহাসের সবটুকুই সুন্দর নয়। ধর্মের নামে মানুষের সাথে অন্যায় অবিচারও কম করা হয়নি।
তবে বিগত দেড় দুশ বছরের সময়কাল ঠিক যেন এ রূপ রেখার উল্ট চিত্র প্রকাশ করছে। ধার্মিকতার যুগ যেন ধুয়ে মুছে গেছে আর ধর্মহীনতা ছেয়ে গেছে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। ধর্মহীনতার এ নতুন যুগ মূলত শুরু হয়েছিল পশ্চিম থেকে, তারপর এটি বিস্তৃত হয়ে আজ এক বৈশ্যিক সভ্যতায় পরিণত হয়েছে। আর এ নতুন সভ্যতা মানব জাতির উপর এমন এক গভীর ও ঘন অন্ধকার চাপিয়ে দিয়েছে যা মানব ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। কেননা ধর্ম
কে বাতিল করার সাথে সাথে তারা বাতিল করে দিয়েছে সকল প্রকার নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানব প্রেম, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা।
নারী স্বাধীনতার নামে এটি নারীজাতিকে ঘর থেকে বাহির করেছে। যারা একসময় ছিল মা, বোন, কন্যা ও প্রিয়তমা স্ত্রী- আজ তারাই এখন পুরুষের যৌন চাহিদা মেটাতে প্রেমিকা, পর্ণস্টার, উলঙ্গ, বিজ্ঞাপনের মডেল, বেশ্যা, ধর্ষিতা, জারজ সন্তানের জননী, লেসবিয়ান, সিনেমার নায়কা, গায়কা, নর্তকী ইত্যাদি। যুগে যুগে পুরুষেরাই পরিবারের সকল অর্থিক প্রয়োজন সেটাকে শ্রম দিতো, আর নারীরা সভ্যতার আরেক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ সংসার, সন্তান জন্মদান ও তাদের দেখাশুনা করতো। আর এখন এ বর্বরেরা নারীর উপর সে দায়ভার তো চাপিয়েই রেখেছে, সাথে এ সকল কাপুরুষের দল নারীকে ঠেলে দিয়েছে অর্থ উপার্যনের কঠিন পথে। আর তারা এখন রয়েছে ভীষণ আয়েশে। মানব সভ্যতা বোধ করি এমন পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ আর কখনো দেখেনি।
এর অর্থনৈতিক অন্যায় তো উপরের সে অন্যায়কেও ছাড়িয়ে গেছে। পুরো মানব জাতিকে আজ দাবিয়ে রেখেছে কতিপয় পূজিপতি রাক্ষসের দল। যাদের যন্ত্রনার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে রাত দিন শ্রম দিয়ে চলেছে সারা দুনিয়ার মানবকুল। অার তারা বসে বসে আয়েশ করছে। ওয়াল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, পেপার কারেন্সি, ইকোনমিক্যাল ট্রিটি, সুদ ভিক্তিক অর্থনীতি, মাল্টিন্যাশনাল কম্পানী, গ্লোবালাইজেশন...... এসবই হলো তাদের এক একটি মরণফাদ।
আর সর্বোশেষে তাদের পলিটিক্যাল ও মিলিটারী সিস্টেম তো আক্ষরিকভাবেই সারা দুনিয়াকে ধ্বংস করে চলেছে। এ নরপিশাচের দল গত পাচশত বছরে কী এমন অন্যায় নেই যা করেনি....... সারা দুনিয়াকে কোলনাইজ করে তাদের হত্যা করেছে, তাদের ধনসম্পদকে লুটপাট করেছে, তাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে।তারা হত্যা করেছে সে সময়ে বিশ কোটি নেটিভ মানুষকে আমেরিকা ও অস্ট্রিলিয়াত। বিগত শতাব্দীতে তারা প্রায় দশ কোটি মানুষকে হত্যা করেছে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে, কমিউনিষ্ট নাস্তিকেরা হত্যা করেছে আরো দশ কোটি মানুষকে সে সময়কালে, গত ত্রিশ বছরে তারা হত্যা করেছে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মুসলিমকে আর ধ্বংস করেছে তাদের বহু দেশ ও কত শত শহর নগরী। আর আজ তারা পরিকল্পনা করছে এক মহা যুদ্ধের, যে যুদ্ধে তারা তাদের যোগ্যতার সর্বোচ্চটি প্রমান করার সুযোগ পাবে। তারা তাতে তাদের পারমানবিক শক্তির মহরা দিবে.........আর ধ্বংস করে ছাড়বে দুনিয়ার স্থল, বন্দর, শহর, নগর সবকিছু....সবকিছুই......................
ধীক ধর্মহীনতাকে!! ধীক নাস্তিকতাকে!!!

Part 3
সুখঃ
বোধকরি দুনিয়ার সব থেকে কাঙ্খিত শব্দ। তবে দুঃখের বিষয় হলো, এটি আবার দুনিয়ার সব থেকে দুষ্প্রাপ্য বস্তুও বটে। দুনিয়ার সকল মানুষই এর পেছনে দিনাতিপাত করছে। কত যে ছুটো-ছুটি, দৌড়-ঝাপ।কেউ টাকার পেছনে, কেউ শিক্ষা, কেউ ক্যারিয়ার, কেউ ক্ষমতা, সুন্দরী নারী, আবার কেউ বা যশ কিংবা খ্যাতির দিকে। তবে যে বিষয়টি আমাদেরকে মর্মাহত করে তা হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা দেখি যে, যে ব্যক্তিগুলি তাদের জীবনে এসব থেকে মোটামুটি অর্জন করেছে তারাই আবার দুনিয়ার সব থেকে দুঃখি মানুষ।ঘুমের ঔষুধ তাদেরই বেশি প্রয়োজন হয়। আমি জানি না বিল গ্রেইস্ট সুখী মানুষ কিনা........কেউ তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
তবে কি আমরা মরিচিকার পেছনে ছুটছি? হয়তোবা। প্রকৃত সুখ তবে কোথায় পাই? অাসুন তবে সুখের স্রষ্টাকে জিজ্ঞেস করি...........
নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে(সূরা- আর রদ, আয়াত- ২৮)
তবে আল্লাহর স্মরনে্ই সুখ বা প্রশান্তি। তাই সুখী হওয়ার জন্যে জীবনে অতকিছুর দরকার নেই, শুধু এ ছোট্র কিছুর দরকার। কে যেন সুখের একটি সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছিলেন, “তুমি তোমার জীবনের ডিকশনারী থেকে এ শব্দগুলি মিটিয়ে দাও- অাশংকা, ভয়, সংশয়, হতাশা, তখন তোমার মধ্যে যে অবস্থা বিরাজ করবে সেটিই হলো সুখ।আর আপনি এটি কিভাবে করবেন? বিশ্বাস করুন যে, আল্লাহ আপনার রব, আর তিনি এখানে আপনার পরীক্ষা নিচ্ছেন, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন........... আর আপনার সাথে যা কিছুই ঘটছে তা সবই তার স্মরনে আছে এমনকি তারই ঈশারায় ঘটছে আর তিনি আপনার মঙ্গলকামী। তাহলে ভয় বা দুঃখ কিসের? আবার অনেক ক্ষেত্রে খারাপের মধ্যেও ভালো নিহিত থাকে আর ভালোর মধ্যে থারাপ। আর যদি তেমনটি নাও হয়, তবুও এখানে যা কিছু খারাপ ঘটে তা তো আপনার বন্ধূর(আল্লাহই মুমিনের প্রকৃত বন্ধু) কাছ থেকেই ঘটে? তাই না? আপনি আপনার বন্ধুর উপর অখুশি হবেন? তিনি হয়তো তার প্রতি আপনার বিশ্বাস ও ভরসার গভীরতা মাপতে চাচ্ছেন। অার আপনাকে তিনি ছেড়ে যাবেন না কখনো........ আপনি এখানে যা কিছুই হারান না কেন তিনি তার জন্যে আপনাকে দিবেন তার লক্ষ-কোটি গুন বেশি, একেবারে সুদে আসলে।
তাই যে সত্যিকারার্থেই আল্লাহর উপর বিশ্বাস করেছে, তার উপর ভরসা করেছে, তার ভয় কী! তার মধ্যে থেকে তখন সমস্ত সেসব মিটে গেছে- অাশংকা, ভয়, সংশয়, হতাশা। আর তখন সে হয়েছে এ জগতে প্রকৃত সুখী। আর এটিই হলো জগতে সুখী হওয়ার একমাত্র পথ।
নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে(সূরা- আর রদ, আয়াত- ২৮)

Part 4:
জীবনের উদ্দেশ্য কি?
কিছুই না। কামায় করো, খাও-দাও, ফুর্তি করো..........তারপর মরে যাও।
তবে অামাকে মাফ করবেন, আপনার জীবন একটি কচ্ছপের জীবনের চেয়েও নিকৃষ্ট। আসুন তুলনা করি............
এক. একটি কচ্ছপ একজন মানুষের চেয়ে অধিক জীবনকাল পেয়ে থাকে।
দুই. কচ্ছপকে জীবিকা নির্বাহের জন্যে অতবেশি শ্রম দিতে হয়না যতটা শ্রম একজন মানুষকে দিতে হয়।
তিন. কচ্ছপের ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল অত হাই নয়, তাই জীবনের জটিল জিজ্ঞাসা বা ধাধাঁগুলি তাকে বিরক্ত করেনা। সে এ ক্ষেত্রে টেনশন মুক্ত নির্ঝন্ঝাট জীবন যাপন করে।
চার. কচ্ছপের যদিও শারীরিক কষ্ট আছে কিন্তু তার কোন মানষিক কষ্ট নেই। জীবনের কঠিন যে মানষিক যন্ত্রনাগুলি যা মানুষকে তিলে তিলে জ্বালিয়ে চলে....... সে এসব থেকে মুক্ত।
আর এখন আমাদের কোন নাস্তিক ভাই বলতে পারে যে, “না না না...... আমরা মানুষেরা অনেক বেশি মানবিক, আমারা মানুষের উপকার করি, সাহায্য সহযোগিতা করি, আমাদের মানবীয় গুনাবলি আছে, নীতি নৈতিকতা আছে- তাই আমরা কচ্ছপের চেয়ে উন্নত।
আসুন তহলে এ দাবীরও কিছুটা পোষ্টমর্টেম করি,
কচ্ছপও কি তার নিজের প্রজাতির উপকার করে না? অবশ্যই করে। সে সন্তান জন্ম দেয়, তাদেরকে লালন পালন করে, সেবা যত্ন করে, আবার প্রকৃতির একটি অংশ হওয়াতে সে কোন না কোনভাবে পরিবেশেরও উপকার করে যাতে মানুষের উপকার হয়।
আবার অসুন, এর একটি উল্ট দিকও দেখি,
মানুষ যতটা ধ্বংস করে, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হত্যা করে, লুটপাট, ধর্ষন, অত্যাচার, মানুষের অধিকার হরন করে, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি করে, তারা তো এখন এমন যে সারা দিনিয়াকে এখন তাদের পারমনবিক অস্ত্র দ্বারা ধ্বংস করে ছাড়বে!!! কোন কচ্ছপ কি কখনো এতোটা নিকৃষ্ট হতে পারবে??????????????
তাই মানুষ কোন দিক থেকেই একটি কচ্ছপের চেয়ে শ্রেষ্ট নয়। তবে শুধুমাত্র একটিই উপায় আছে আমাদের শ্রেষ্ট হওয়ার....... যদি আমাদের জীবন অনন্ত অসীমকালব্যাপী হয়, যদি আমাদের মধ্যে ভালো লোকগুলি এ্যটলিস্ট সে অনন্ত জীবনে উন্নত-সূখী সমৃদ্ধ জীবন যাপান করে। আর সে জন্যে তাকে অতি অবশ্যই একজন ভালো মুসলিম হতে হবে। নতুবা আর কোন পথ বাকী নেই।
তাই আমাদের নাস্তিক ভায়েরা হয় কচ্ছপের চেয়ে নিকৃষ্ট হোক, নতুবা একজন ভালো মুসলিম হয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হোক......... পছন্দ তাদের নিজেদের।

Part 5:
আখিরাতের ভয় ও নৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সমাজঃ
আজকের দুনিয়াতে যত মিথ্যা, দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার-অত্যাচার, হত্যা, লুন্ঠন, অশ্লিলতা, নোংরামী, মানুষের অধিকার হননের যে ছরাছড়ি আমাদের পুরো সমাজ এমনকি পুরো দুনিয়া জুড়ে তা বোধ হয় দুনিয়ার ইতিহাসে আর কোন সমাজে বা সভ্যতায় কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। তবে প্রশ্ন জাগে যে, কেন?
আমারf এর সহজ যে ব্যাখ্যা করতে পারি সেটা হলো- ধার্মিকতার অবক্ষয়, মানুষের সাথে ধর্মের সম্পর্কের অবনতি।
মানুষের নিজেদের অন্তরেই প্রকৃতিকভাবেই এ বোধ রয়েছে যে- সে জানে কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ। আর এ বোধশক্তি সবার মধ্যেই রয়েছে সে অস্তিক হোক অথবা নাস্তিক। আর এ বোধ অর্জনের জন্যে তাকে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জন করতে হয়না। এটি স্রষ্টা প্রদত্ত। যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতালা পবিত্র কোরআন মাজিদে বলেছেন,
অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেনপবিত্র কোরআন, সূরা আস-শামস, সূরা নং-91, আয়াত নং-08
ভালো মন্দের এ বোধ তো তার মধ্যে ইনহেরিটেন্টলি রয়েছে। তবে যে সমস্যাটা সব থেকে বড় হয়ে এ ক্ষেত্রে দেখা দেয়, সেটা হলো, মানুষ মন্দকে ছেড়ে এ ভালোর উপর কীভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে? সে কোন পরশ পাথর যার ছোঁয়ায় তার নৈতিক মূল্যবোধের উন্নতি সাধান হবে? যখন আমরা জানি যে, অনেক সময় ভালো কাজ করে লোকসান বহন করতে হয় আর খারাপ কাজ করে দুনিয়াতে উন্নতি সাধন হয়!! একজন ফার্সী কবি তাই যথার্থয় বলেছেন,
এ অমানত, পারতো লানাত, আপতে রাঞ্জে আফতাম,
অওর এ খেয়ানাত পারতো রাহমাত, আপতো গাঞ্জে আফতাম।
হে অমানতদারিতা, তোমার প্রতি অভিশাপ! তোমার কারনে তো আমাকে শুধু দুঃখই পোহাতে হয়েছে।
আর হে অসততা, তোমার প্রতি রহমত হোক! তোমার কারনে আমি খাজানা পেয়েছি।
এটিই দুনিয়ার বাস্তবতা। সত্য বলেন, আপনার বন্ধুও আপনাকে পছন্দ করবে না। সম্পর্ক ছিন্ন হবে। মিথ্য বলে বরং এখানে ভালো থাকা যায়। তাহলে এখানে আমরা যেটি দেখি সেটি হলো, গঙ্গা উল্ট দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে কোন্ সে শক্তি যা মানুষকে সে কাঙ্খিত ভালোর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখবে, এর সকল দুঃখ দুর্দশা সহ্য করার পরও?
ইমানুয়েল কান্ট, আধুনিক কালের একজন বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক। তিনি স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে যত যুক্তি উত্থাপন করা হয় সে সকল যুক্তিকে থন্ডন করে একটি বই লিখেন যার শিরোনাম ছিল, “এ ক্রিটিক অব পিওর রিজিওনতিনি সেখানে দেখানোর চেষ্টা করেন যে, যুক্তি দিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বকে প্রমান করা সম্ভব নয়। কেননা যুক্তি যুক্তিকে খন্ডন করে দেয়।
এরপর তিনি আরো একটি পুস্তক লিখেন যার নাম, “এ ক্রিটিক অব প্র্যাক্টিক্যাল রিজিওনতিনি সেখানে দেখান যে, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ভালো-মন্দের বোধ রয়েছে। তবে সে মূল্যবোধের উপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্যে তার কিছু মোটিভেশনের প্রয়োজন আছে। আর তিনি দুনিয়াতে এ উদ্দেশ্য পূরনের জন্যে যত মোটিভেশনগুলি রয়েছে তার প্রতিটি নিয়েই এক এক করে বিশ্লেষন করেন আর তিনি সেখানে এটি দেখানো প্রয়াস পান যে, এ গুলোর কোনটিই স্থায়ীভাবে মানুষকে ভালোর পথে পরিচালনা করতে প্রেরণা দিতে ব্যর্থ। আর এ কার্য সম্পাদনে মাত্র একটি বিষয়ই এমন আছে যার প্রেরণায় মানুষ স্থায়ীভাবে ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে- আর সেটি হলো আখিরাতে বিশ্বাস, মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রতি বিশ্বাস। জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস। এখানে খারাপ কাজ করে মুক্তি পেলেও সেখানে গিয়ে ধরা খেতে হবে আর এখানে ভালো কাজ করে দুঃখ পেলেও সেখানে অনন্ত সুখের জীবন লাভ হবে। এ একটি প্রেরণাই এমন যা পারে মানুষকে এ দুনিয়াতে সামগ্রীকভাবে ও সফলভাবে ভালো কাজের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে এ দুনিয়াতে। তাই যে সমাজে এ বোধা যত বেশি হবে সে সমাজ ততটাই উন্নত ও নৈতিক মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। এটিই বাস্তবতা।
আর পবিত্র কোরআন ইমানুয়েল কান্টের এ পুরো ফিলোসফিকে এ তিনটি ছোট্র আয়াতের মধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছে তারও হাজার বছর আগেঃ
পবিত্র কোরআন, সূরা আলাক, আয়াত নং- 6-8
সত্যি সত্যি মানুষ সীমালংঘন করে,
এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।
নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার দিকেই প্রত্যাবর্তন হবে।
হ্যা শুধুমাত্র এ বোধই তাকে ভালোর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারে স্থায়ীভাবে। যত কিছুই এখানে করি না কেন, একদিন আমার স্রষ্টার নিকট ফিরে যেতে হবে। তার নিকট জবাবদিহি করতে হবে।
সেটা দূরে ঠিকই কিন্তু অলিক নয়।

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.