কোরআনে ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter) এবং ডার্ক এ্যানার্জি (Dark Energy) এর ধারণা ও নাস্তিকদের মূর্খতার পরিচয়...
কোরআনে ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter) এবং ডার্ক এ্যানার্জি (Dark Energy) এর ধারণা ও নাস্তিকদের মূর্খতার পরিচয়...
লেখকঃ আহমেদ আলী
.
মহাবিশ্বের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণার পর জানতে পেরেছিল, তা হল এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। এ সম্পর্কে কোরআনে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের অনেক আগেই সরাসরি বলা আছে - এটা হয়ত আপনারা অনেকেই জানেন। তবে আজ অন্য একটা বিষয় নিয়ে বলব যা এই সম্প্রসারণের সাথে জড়িত। প্রথমদিকে যখন এডুইন হাবল আবিষ্কার করলেন যে, এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে - তখন বিজ্ঞানীরা এটা মনে করত যে, হয় এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়েই চলবে, নয়ত এই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি ধীরে ধীরে কমে যাবে। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়েই চলবে - এমনটা ভাবার কারণ হল, তারা অনুমান করত যে, হয়ত মহাবিশ্বের শক্তি-ঘনত্ব (energy density) এত ক্ষুদ্র যে, তা ক্রমাগত মহাবিশ্বকে সম্প্রসারিতই করতে থাকবে।
আরেকটি ধারণা ছিল যে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি ধীরে ধীরে কমে যাবে। এর কারণ হল মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ বল মানে হল, এই মহাবিশ্বের সবকিছুই একে অপরকে নিজের দিকে টানতে থাকে যেটা আমরা সব সময় বুঝে উঠতে পারি না। নিউটন এর একটা উদাহরণ দেখেছিলেন যখন তিনি গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়তে দেখেন। এখানে আপনি সেই একই ধরণের উদাহরণ প্রয়োগ করুন আরেকবার। যদি কোনো কিছুকে আপনি হাত দিয়ে উপরের দিকে ছুটে মারেন, তবে সেটা যত উপরে উঠতে থাকবে, তার গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে, আর এক সময় সেটা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে। এটার কারণই এই মহাকর্ষ বল, যে বলের কারণে ভারী বস্তু পৃথিবী, আপনার হাত দিয়ে ছোড়া হালকা বস্তুর গতিকে ধীরে ধীরে কমিয়ে নিজের দিকে আবার টেনে এনেছে। বিজ্ঞানীরাও তাই প্রথমে এটা ভেবেছিলেন যে, মহাবিশ্ব যেহেতু ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাই মহাকর্ষ বলের প্রভাবে হয়ত এর সম্প্রসারিত হওয়ার গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে এবং এক সময় এর সম্প্রসারণের গতি থেমে যাবে এবং মহাবিশ্ব হয়ত আবার ছোট হয়ে যেতে শুরু করবে যেমনভাবে বেলুন থেকে হাওয়া বেরিয়ে গেলে সেটা চুপসে যেতে শুরু করে এবং শেষমেশ হয়ত পুনরায় এক বিন্দুতে মিলিত হয়ে যাবে, যে বিন্দুকে বলা হয় "সিঙ্গুলারিটি" (singularity)।
.
কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলেন, তখন তাদের সকল কল্পনার বারোটা বেজে গেল আর তারা দেখতে পেলেন যে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি কমার পরিবর্তে উল্টে আরও বেড়েই চলেছে! অর্থাৎ সময় যত যাচ্ছে, সম্প্রসারণের গতিবেগও আরও বেড়ে যাচ্ছে! এটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে? এটার ওপর কয়েকটি থিওরি দেওয়া হল, তবে মূল সারাংশ হল, কোনো এক ধরণের অদৃশ্য শক্তি আছে যা দেখা যাচ্ছে না, যার বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না, যাকে ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যাচ্ছে না, অথচ তার অস্তিত্ব যে আছে, এটার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, যে শক্তির কারণে মহাবিশ্ব ক্রমাগত অধিক গতিবেগে সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। বিজ্ঞানীরা এই অদৃশ্য শক্তির নাম দিয়েছেন "ডার্ক এ্যানার্জি" (Dark Energy)।
.
আচ্ছা কারা যেন বলে যে, আল্লাহকে দেখা যায় না, জিনজাতিকে দেখা যায় না, জান্নাত-জাহান্নাম দেখা যায় না, আর এগুলোর সম্পর্কে কিছুই পরীক্ষা করে জানা যায় না; তাই নাকি এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই!! কারা যেন এগুলো বলে বলে নিজেদের আধুনিক বলে দাবি করে?? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। ছাগলের চেয়েও অধম মুক্তমনা আর নাস্তিকের দল!! তারা না দেখে, অনুভব না করে, বৈশিষ্ট্য বুঝতে না পারলেও অদৃশ্য শক্তি বলে কিছু একটা আছে বলে মানতে রাজি; কিন্তু আল্লাহ তাআলা গায়েবের যে বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান আনতে বলেছেন আর সেগুলোর অস্তিত্বের সত্যতার জন্য যে সকল নিদর্শন মানবজাতির উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করেছেন, সেগুলোতে তারা হাজার যুক্তি-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বাস করবে না। কোনো না কোনো ভাবে সেগুলোকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করে আর সেগুলো নিয়ে হাসি-তামাশা করেই তারা তাদের নাফসকে তুষ্ট করতে থাকবে!!
.
.
চলুন নাস্তিকদের কিছুটা পিছনে রেখে আমরা আরেকটু সামনের দিকে এগোই। বিজ্ঞানের বদৌলতে আমাদের কাছে যখন মহাকর্ষ বলের ধারণা আসে, তখন আমরা আরও জানতে পারি যে, এই সুবিশাল মহাবিশ্ব যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন মহাকর্ষ বলের কারণে মহাকাশের পদার্থগুলো পরস্পরের সাথে আকর্ষণ বজায় রেখে গঠিত হচ্ছিল। কিন্তু মহাবিশ্বের মধ্যে আমরা যে সকল জগত দেখি যাদেরকে আমরা গ্যালাক্সি নাম দিয়েছি, সেগুলির মধ্যকার গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে যেমন অনেক ব্যবধান বা ফাঁকা জায়গা আমরা দেখতে পাই, তেমনি মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যেও আমরা ব্যবধান দেখে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা হঠাৎ আবিষ্কার করেন যে, এই ফাঁকা জায়গাতে যেমন অদৃশ্য শক্তি বা dark energy আছে, যেটার কথা একটু আগেই বললাম, সেটা ছাড়াও আরও এক প্রকার জিনিস আছে। তারা দেখতে পান, যে আলো কোনো নক্ষত্র থেকে আসে, সেই আলো কোনো এক অজানা কারণে bend বা বেঁকে যেতে থেকে; কিন্তু আমরা তো জানি যে, আলো সব সময় সোজা চলে! আপনি নিজেই দেখতে পারেন ব্যাপারটা। একটা টর্চের আলো কোনো এক অন্ধকার ঘরে জ্বালিয়ে ধরুন এবং দেখুন কীভাবে আলো ধূলিকণায় প্রতিফলিত হচ্ছে, আর তখন আপনি দেখতে পাবেন যে, টর্চ থেকে বের হওয়া আলো সোজাই যাচ্ছে। তবে একটা অন্য ব্যাপারও আছে একটু মনে করে দেখুন! আপনি দিনের বেলায় ধরুন একটা কাঁচের বড় পাত্রে পানি নিয়ে তার মধ্যে একটা কয়েন ফেললেন। এবার পানি যদি আপনি কিছুটা নাড়াচাড়া করতে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে, পানির মধ্যে থাকা কয়েনও কেমন যেন ক্রমাগত ঢেউ খেলে যাচ্ছে আর সেটা ক্রমাগত ছোট বড় দেখাচ্ছে! কিন্তু আদৌ কি কয়েন ছোট বা বড় হয়ে যায়? না তো! আসলে মূল ব্যাপারটা হল গিয়ে, আলো এসে পানির মধ্যে প্রবেশ করে আর পানির মধ্যে প্রবেশ করে আলো কিছুটা বেঁকে যায়, আর তারপর সেই আলো আবার কয়েনের ওপর গিয়ে পড়ে আর তারপর আলো কয়েনের ওপর থেকে প্রতিফলিত হয়ে আবার ফিরে আসতে শুরু করে। কিন্তু এ কী! আপনার কয়েন তো জলের মধ্যে! তাই আলো যখন কয়েন থেকে প্রতিফলিত হয়, তখন আগে সেই আলো জলের মধ্যেই থাকে, তারপর জল ভেদ করে পুনরায় জল থেকে আলো বেরিয়ে এসে সেই আলো আপনার চোখে এসে পৌঁছায় আর তখন বাপু আপনি কয়েনখানা যে জলের মধ্যে আছে, তা টের পান। কিন্তু খেয়াল করুন, আলো যখন পানি ভেদ করে বের হচ্ছিল, তখন আলো কিন্তু আবার বেঁকে যায়। আর আপনি যখন পানি নাড়াচাড়া করছেন, তখন এই আলো পানি থেকে বের হওয়ার সময় যে কোন্ দিকে কীভাবে বাঁকে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। আলোর এই bend বা বেঁকে যাওয়ার জন্যই আপনি পানির মধ্যে কয়েনের ছোট বড় হওয়া তথা কয়েনের আকৃতির পরিবর্তন হওয়া, কয়েনের ঢেউ খেলে যাওয়া ইত্যাদি দেখতে পান।
.
তাহলে সোজা কথা হল গিয়ে, কোনো বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আপনার চোখে সেই আলো এলে যদি আলোর bend বা বেঁকে যাওয়া চরিত্র আপনি উপলব্ধি করতে পারেন, তবে এর মানে হল ওই বস্তু আর আপনার মাঝে আরও কিছু জিনিস আছে যার কারণে আলোর এই বক্র চরিত্র আপনি টের পাচ্ছেন। যেমনটা কয়েনের বেলায় হয়েছিল, যেখানে কয়েন আর আপনার মাঝে আর কিছু না হলেও অন্তত পানি ছিল, কারণ কয়েনটা পানির মধ্যেই ছিল। তাই কয়েন হতে প্রতিফলিত আলোর বেঁকে যাওয়ার উপলব্ধি আপনি পাচ্ছিলেন। ঠিক একইভাবে, বিজ্ঞানীরাও মহাকাশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখেছেন যে, মহাবিশ্ব যেখানে কোনো বাতাস, পানি বা অন্য কোনো মাধ্যম সাধারণত প্রতিবন্ধক হিসেবে আলোর সামনে দাঁড়ায় না, সেই মহাকাশে আলো সরলরেখায় চলবে, এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু সেই আলো তার bend বা বক্র চরিত্র প্রদর্শন করছে!! এটা কীভাবে সম্ভব? তারা পর্যবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা করে দেখল যে, এই বক্র চরিত্র সৃষ্টির জন্য দায়ী বিষয়ের বৈশিষ্ট্য black hole, anti-matter, baryonic clouds ইত্যাদি যা যা তারা আবিষ্কার করেছে, তার কোনো কিছুর সাথেই মেলে না! এর অর্থ হল, এটা বিজ্ঞানীদের কাছে অদৃশ্য ও অজানা একটি বিষয় যে, এমন এক ধরণের পদার্থ আছে যা মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থান জুড়েই আছে, অথচ না তারা তার বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পারছে, না তারা তা দেখতে পাচ্ছে। এমনতর অদৃশ্য পদার্থকেই "ডার্ক ম্যাটার" (Dark Matter) বলা হয়ে থাকে।
.
নাসার বিজ্ঞানীদের মতে,
.
"..it is an important mystery. It turns out that roughly 68% of the universe is dark energy. Dark matter makes up about 27%. The rest - everything on Earth, everything ever observed with all of our instruments, all normal matter - adds up to less than 5% of the universe...."
[source - https://science.nasa.gov/as…/focus-areas/what-is-dark-energy]
.
অর্থাৎ, মহাবিশ্বের মাত্র ৫% এর কম অংশ হল সাধারণ পদার্থ আর আমাদের চারপাশের সেই জগত যা আমরা দেখতে পাই ও উপলব্ধি করতে পারি। বাকি ৬৮% হল Dark Energy এবং ২৭% Dark Matter যা দেখা তো দূরের কথা, সেটা সম্পর্কে আমরা এখনও কিছুই জানি না! অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টিজগতের যতটুকুর অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত আমরা পরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছি, তার ৯৫% সম্পর্কেই আমরা এখনও কিছুই জানি না; আর সেই ৯৫% এর কোনোকিছুই এখনও পর্যন্ত আমরা চোখে দেখি নি; তার বৈশিষ্ট্য কেমন তাও আমরা জানি না!
.
আবার একবার বলি - কারা যেন বলে যে, আল্লাহকে দেখা যায় না, জিনজাতিকে দেখা যায় না, জান্নাত-জাহান্নাম দেখা যায় না, আর এগুলোর সম্পর্কে কিছুই পরীক্ষা করে জানা যায় না; তাই নাকি এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই!! কারা যেন এগুলো বলে বলে নিজেদের আধুনিক বলে দাবি করে?? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। গাধার চেয়েও অধম ভক্ত মুক্তমনা আর নাস্তিকের দল!!
.
.
এবার চলুন নাস্তিক আর মুক্তমনাদের মাথায় চূড়ান্ত বাঁশটা ভাঙি!
.
মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
أَفَلَمْ يَنظُرُوٓا۟ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَٰهَا وَزَيَّنَّٰهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٍ
.
"তারা কি তাদের উপরে অবস্থিত আকাশের দিকে তাকায় না, কীভাবে আমি তাকে বানিয়েছি, তাকে সুশোভিত করেছি আর তাতে নেই কোন ফাটল?"
(আল-কোরআন, ৫০:৬)
.
এখানে আরবি فُرُوجٍ শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে "ফাটল"। তবে যদি আপনি ইংরেজি অনুবাদটা দেখেন, তবে ব্যাপারটা আরেকটু বুঝতে পারবেন। ইংরেজিতে অনেকেই একে অনুবাদ করেছেন "rift" 👉এখান থেকে দেখুন - http://corpus.quran.com/wordmorphology.jsp…
.
rift এর অর্থ ফাটল যেমন হতে পারে, তেমনি "gap" জাতীয় বিষয়ও হতে পারে, যেমনটা কিছু কিছু dictionary অনুবাদ করেছে "a gap between two cloud masses" [উৎস - https://www.thefreedictionary.com/rift]
.
অর্থাৎ এখানে উক্ত আয়াতের ক্ষেত্রে আরবি فُرُوجٍ শব্দের দ্বারা আমরা মূলত বুঝি যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নির্মিত মহাকাশে gap বা ফাঁকা জাতীয় বিষয় রাখেন নি। আচ্ছা বিজ্ঞানের কথা বলার আগে আমায় দয়া করে একটু বলুন, এই কথাখানা সেই আরবের মত বালুর মধ্যে বসে বসে কে ভাবতে পারে যে, মহাকাশে ফাঁকা জাতীয় বিষয় নেই? এমনকি আমরা নিজেরাই তো এখনও অনেকেই এটা ভাবি যে, আকাশ মানেই শূন্য, সেখানে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে! সেখানে কার পক্ষে সম্ভব এমন কল্পনা করা, তাও আবার সেই অজ্ঞতার যুগে সেই মরুভূমিতে বসে বসে যে, মহাবিশ্বে মূলত ফাঁকা জাতীয় বিষয় নেই?? সাধারণ বিচারবুদ্ধি টুকুও থাকলে আপনার উত্তর হবে যে, কোনো মূর্খ কেন, জ্ঞানী মানুষের পক্ষেও তখন এটা ভাবা সম্ভবপর ছিল না!
.
আমরা একটু আগেই দেখলাম যে, মহাবিশ্বের যে বিরাট অংশ যা আমাদের কাছে আসলে ফাঁকা মনে হয়, সেটা আসলে ফাঁকা নয়, সেখানে অদৃশ্য ও অজানা dark matter ও dark energy বিদ্যমান রয়েছে।
.
কারা যেন বলে বেড়ায় যে, কোরআন নাকি বলছে যে, আকাশ শক্ত জিনিস দিয়ে তৈরি কারণ তাতে নাকি "ফাটল" নেই একথা বলা হয়েছে? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন - ভণ্ড নাস্তিকের দল! যদি আমরা তাদের কথা ধরেও নিই যে, আকাশে ফাটল নেই বলা হয়েছে, তবুও দেখুন, এই ফাটল এর প্রকৃতি কী তা কিন্তু আয়াতে বলা হয়নি; অন্যভাবে বললে, "শক্ত জিনিসের ফাটলের মত আকাশে ফাটল নেই" এরকম কথা কোরআনে বলা হয়নি; বরং "ফাটল নেই" শুধু এরূপ অনুবাদ করা হয়েছে। এখন dark energy আর dark matter এর প্রকৃতি কেমন, dark matter শক্ত না নরম, না এটার কোনোটাই না, এগুলো কি আমরা জানি? না! তাহলে এগুলোর মধ্যে কোনো ফাটল নেই বললেই কীভাবে বলা যায় যে, এগুলো শক্ত পদার্থেরই তৈরি?? কোরআন যেখানে "শক্ত পদার্থের" কোনোরূপ সরাসরি উল্লেখ করেনি, সেখানে দুই step বেশি বোঝা নাস্তিকের দল আকাশকে শক্ত পদার্থ বানিয়ে দিয়ে কোরআনের নামে মিথ্যাচার করছে! অথচ এখানে যদি কেবল আমরা আরবি فُرُوجٍ শব্দের দ্বারা rift বিষয়কে ফাঁকা জাতীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করি, তবে কোরআন এর বক্তব্য অনুযায়ী আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন যে, তাঁর সৃষ্ট মহাকাশে ফাঁকা বিষয়ের অস্তিত্ব নেই যার কারণ হিসেবে আমরা আজ জেনেছি যে, যাকে ফাঁকা মনে হয় সেখানে আসলে বিরাজ করছে dark matter আর dark energy.
.
তাহলে এই সত্য প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে কোনো নিরক্ষর ব্যক্তির পক্ষে কীভাবে বলা সম্ভব হতে পারে যে সম্পর্কে তৎকালীন সময়ের জ্ঞানী ব্যক্তিরাও অবগত ছিলেন না??
.
এটা প্রমাণ করে, নাস্তিকরা কতবড় ছাগল! না না, সরি সরি, ছাগলের চেয়েও অধম এক প্রজাতি!!
.
আগেই বলেছি যে, dark matter এবং dark energy আমরা দেখতে পাই না, এর বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি বুঝতে পারি না, ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধিও করতে পারি না। কিন্তু এর অস্তিত্ব যে আছে, সেটা অনুধাবন করতে পারি। সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা তাই এই অদৃশ্য ও রহস্যজনক বিষয়ের শপথ করে বলছেন,
.
فَلَآ أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُونَ
وَمَا لَا تُبْصِرُونَ
إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍۚ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُونَ
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍۚ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ
تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
.
"তোমরা যা দেখ, আমি তার শপথ করছি এবং যা তোমরা দেখতে পাও না, তার! নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসূলের আনীত এবং এটা কোন কবির রচনা নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস করো। আর এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথাও নয়; তোমরা কমই অনুধাবন করো। এটা বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ!"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন ৬৯:৩৮-৪৩)
.
.
[কোনোরূপ ভুলত্রুটি হলে আল্লাহ তাআলা মার্জনা করুন এবং আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন। আমিন]
লেখকঃ আহমেদ আলী
.
মহাবিশ্বের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণার পর জানতে পেরেছিল, তা হল এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। এ সম্পর্কে কোরআনে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের অনেক আগেই সরাসরি বলা আছে - এটা হয়ত আপনারা অনেকেই জানেন। তবে আজ অন্য একটা বিষয় নিয়ে বলব যা এই সম্প্রসারণের সাথে জড়িত। প্রথমদিকে যখন এডুইন হাবল আবিষ্কার করলেন যে, এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে - তখন বিজ্ঞানীরা এটা মনে করত যে, হয় এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়েই চলবে, নয়ত এই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি ধীরে ধীরে কমে যাবে। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়েই চলবে - এমনটা ভাবার কারণ হল, তারা অনুমান করত যে, হয়ত মহাবিশ্বের শক্তি-ঘনত্ব (energy density) এত ক্ষুদ্র যে, তা ক্রমাগত মহাবিশ্বকে সম্প্রসারিতই করতে থাকবে।
আরেকটি ধারণা ছিল যে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি ধীরে ধীরে কমে যাবে। এর কারণ হল মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ বল মানে হল, এই মহাবিশ্বের সবকিছুই একে অপরকে নিজের দিকে টানতে থাকে যেটা আমরা সব সময় বুঝে উঠতে পারি না। নিউটন এর একটা উদাহরণ দেখেছিলেন যখন তিনি গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়তে দেখেন। এখানে আপনি সেই একই ধরণের উদাহরণ প্রয়োগ করুন আরেকবার। যদি কোনো কিছুকে আপনি হাত দিয়ে উপরের দিকে ছুটে মারেন, তবে সেটা যত উপরে উঠতে থাকবে, তার গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে, আর এক সময় সেটা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে। এটার কারণই এই মহাকর্ষ বল, যে বলের কারণে ভারী বস্তু পৃথিবী, আপনার হাত দিয়ে ছোড়া হালকা বস্তুর গতিকে ধীরে ধীরে কমিয়ে নিজের দিকে আবার টেনে এনেছে। বিজ্ঞানীরাও তাই প্রথমে এটা ভেবেছিলেন যে, মহাবিশ্ব যেহেতু ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাই মহাকর্ষ বলের প্রভাবে হয়ত এর সম্প্রসারিত হওয়ার গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে এবং এক সময় এর সম্প্রসারণের গতি থেমে যাবে এবং মহাবিশ্ব হয়ত আবার ছোট হয়ে যেতে শুরু করবে যেমনভাবে বেলুন থেকে হাওয়া বেরিয়ে গেলে সেটা চুপসে যেতে শুরু করে এবং শেষমেশ হয়ত পুনরায় এক বিন্দুতে মিলিত হয়ে যাবে, যে বিন্দুকে বলা হয় "সিঙ্গুলারিটি" (singularity)।
.
কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলেন, তখন তাদের সকল কল্পনার বারোটা বেজে গেল আর তারা দেখতে পেলেন যে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি কমার পরিবর্তে উল্টে আরও বেড়েই চলেছে! অর্থাৎ সময় যত যাচ্ছে, সম্প্রসারণের গতিবেগও আরও বেড়ে যাচ্ছে! এটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে? এটার ওপর কয়েকটি থিওরি দেওয়া হল, তবে মূল সারাংশ হল, কোনো এক ধরণের অদৃশ্য শক্তি আছে যা দেখা যাচ্ছে না, যার বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না, যাকে ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যাচ্ছে না, অথচ তার অস্তিত্ব যে আছে, এটার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, যে শক্তির কারণে মহাবিশ্ব ক্রমাগত অধিক গতিবেগে সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। বিজ্ঞানীরা এই অদৃশ্য শক্তির নাম দিয়েছেন "ডার্ক এ্যানার্জি" (Dark Energy)।
.
আচ্ছা কারা যেন বলে যে, আল্লাহকে দেখা যায় না, জিনজাতিকে দেখা যায় না, জান্নাত-জাহান্নাম দেখা যায় না, আর এগুলোর সম্পর্কে কিছুই পরীক্ষা করে জানা যায় না; তাই নাকি এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই!! কারা যেন এগুলো বলে বলে নিজেদের আধুনিক বলে দাবি করে?? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। ছাগলের চেয়েও অধম মুক্তমনা আর নাস্তিকের দল!! তারা না দেখে, অনুভব না করে, বৈশিষ্ট্য বুঝতে না পারলেও অদৃশ্য শক্তি বলে কিছু একটা আছে বলে মানতে রাজি; কিন্তু আল্লাহ তাআলা গায়েবের যে বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান আনতে বলেছেন আর সেগুলোর অস্তিত্বের সত্যতার জন্য যে সকল নিদর্শন মানবজাতির উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করেছেন, সেগুলোতে তারা হাজার যুক্তি-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বাস করবে না। কোনো না কোনো ভাবে সেগুলোকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করে আর সেগুলো নিয়ে হাসি-তামাশা করেই তারা তাদের নাফসকে তুষ্ট করতে থাকবে!!
.
.
চলুন নাস্তিকদের কিছুটা পিছনে রেখে আমরা আরেকটু সামনের দিকে এগোই। বিজ্ঞানের বদৌলতে আমাদের কাছে যখন মহাকর্ষ বলের ধারণা আসে, তখন আমরা আরও জানতে পারি যে, এই সুবিশাল মহাবিশ্ব যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন মহাকর্ষ বলের কারণে মহাকাশের পদার্থগুলো পরস্পরের সাথে আকর্ষণ বজায় রেখে গঠিত হচ্ছিল। কিন্তু মহাবিশ্বের মধ্যে আমরা যে সকল জগত দেখি যাদেরকে আমরা গ্যালাক্সি নাম দিয়েছি, সেগুলির মধ্যকার গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে যেমন অনেক ব্যবধান বা ফাঁকা জায়গা আমরা দেখতে পাই, তেমনি মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যেও আমরা ব্যবধান দেখে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা হঠাৎ আবিষ্কার করেন যে, এই ফাঁকা জায়গাতে যেমন অদৃশ্য শক্তি বা dark energy আছে, যেটার কথা একটু আগেই বললাম, সেটা ছাড়াও আরও এক প্রকার জিনিস আছে। তারা দেখতে পান, যে আলো কোনো নক্ষত্র থেকে আসে, সেই আলো কোনো এক অজানা কারণে bend বা বেঁকে যেতে থেকে; কিন্তু আমরা তো জানি যে, আলো সব সময় সোজা চলে! আপনি নিজেই দেখতে পারেন ব্যাপারটা। একটা টর্চের আলো কোনো এক অন্ধকার ঘরে জ্বালিয়ে ধরুন এবং দেখুন কীভাবে আলো ধূলিকণায় প্রতিফলিত হচ্ছে, আর তখন আপনি দেখতে পাবেন যে, টর্চ থেকে বের হওয়া আলো সোজাই যাচ্ছে। তবে একটা অন্য ব্যাপারও আছে একটু মনে করে দেখুন! আপনি দিনের বেলায় ধরুন একটা কাঁচের বড় পাত্রে পানি নিয়ে তার মধ্যে একটা কয়েন ফেললেন। এবার পানি যদি আপনি কিছুটা নাড়াচাড়া করতে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে, পানির মধ্যে থাকা কয়েনও কেমন যেন ক্রমাগত ঢেউ খেলে যাচ্ছে আর সেটা ক্রমাগত ছোট বড় দেখাচ্ছে! কিন্তু আদৌ কি কয়েন ছোট বা বড় হয়ে যায়? না তো! আসলে মূল ব্যাপারটা হল গিয়ে, আলো এসে পানির মধ্যে প্রবেশ করে আর পানির মধ্যে প্রবেশ করে আলো কিছুটা বেঁকে যায়, আর তারপর সেই আলো আবার কয়েনের ওপর গিয়ে পড়ে আর তারপর আলো কয়েনের ওপর থেকে প্রতিফলিত হয়ে আবার ফিরে আসতে শুরু করে। কিন্তু এ কী! আপনার কয়েন তো জলের মধ্যে! তাই আলো যখন কয়েন থেকে প্রতিফলিত হয়, তখন আগে সেই আলো জলের মধ্যেই থাকে, তারপর জল ভেদ করে পুনরায় জল থেকে আলো বেরিয়ে এসে সেই আলো আপনার চোখে এসে পৌঁছায় আর তখন বাপু আপনি কয়েনখানা যে জলের মধ্যে আছে, তা টের পান। কিন্তু খেয়াল করুন, আলো যখন পানি ভেদ করে বের হচ্ছিল, তখন আলো কিন্তু আবার বেঁকে যায়। আর আপনি যখন পানি নাড়াচাড়া করছেন, তখন এই আলো পানি থেকে বের হওয়ার সময় যে কোন্ দিকে কীভাবে বাঁকে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। আলোর এই bend বা বেঁকে যাওয়ার জন্যই আপনি পানির মধ্যে কয়েনের ছোট বড় হওয়া তথা কয়েনের আকৃতির পরিবর্তন হওয়া, কয়েনের ঢেউ খেলে যাওয়া ইত্যাদি দেখতে পান।
.
তাহলে সোজা কথা হল গিয়ে, কোনো বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আপনার চোখে সেই আলো এলে যদি আলোর bend বা বেঁকে যাওয়া চরিত্র আপনি উপলব্ধি করতে পারেন, তবে এর মানে হল ওই বস্তু আর আপনার মাঝে আরও কিছু জিনিস আছে যার কারণে আলোর এই বক্র চরিত্র আপনি টের পাচ্ছেন। যেমনটা কয়েনের বেলায় হয়েছিল, যেখানে কয়েন আর আপনার মাঝে আর কিছু না হলেও অন্তত পানি ছিল, কারণ কয়েনটা পানির মধ্যেই ছিল। তাই কয়েন হতে প্রতিফলিত আলোর বেঁকে যাওয়ার উপলব্ধি আপনি পাচ্ছিলেন। ঠিক একইভাবে, বিজ্ঞানীরাও মহাকাশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখেছেন যে, মহাবিশ্ব যেখানে কোনো বাতাস, পানি বা অন্য কোনো মাধ্যম সাধারণত প্রতিবন্ধক হিসেবে আলোর সামনে দাঁড়ায় না, সেই মহাকাশে আলো সরলরেখায় চলবে, এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু সেই আলো তার bend বা বক্র চরিত্র প্রদর্শন করছে!! এটা কীভাবে সম্ভব? তারা পর্যবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা করে দেখল যে, এই বক্র চরিত্র সৃষ্টির জন্য দায়ী বিষয়ের বৈশিষ্ট্য black hole, anti-matter, baryonic clouds ইত্যাদি যা যা তারা আবিষ্কার করেছে, তার কোনো কিছুর সাথেই মেলে না! এর অর্থ হল, এটা বিজ্ঞানীদের কাছে অদৃশ্য ও অজানা একটি বিষয় যে, এমন এক ধরণের পদার্থ আছে যা মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থান জুড়েই আছে, অথচ না তারা তার বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পারছে, না তারা তা দেখতে পাচ্ছে। এমনতর অদৃশ্য পদার্থকেই "ডার্ক ম্যাটার" (Dark Matter) বলা হয়ে থাকে।
.
নাসার বিজ্ঞানীদের মতে,
.
"..it is an important mystery. It turns out that roughly 68% of the universe is dark energy. Dark matter makes up about 27%. The rest - everything on Earth, everything ever observed with all of our instruments, all normal matter - adds up to less than 5% of the universe...."
[source - https://science.nasa.gov/as…/focus-areas/what-is-dark-energy]
.
অর্থাৎ, মহাবিশ্বের মাত্র ৫% এর কম অংশ হল সাধারণ পদার্থ আর আমাদের চারপাশের সেই জগত যা আমরা দেখতে পাই ও উপলব্ধি করতে পারি। বাকি ৬৮% হল Dark Energy এবং ২৭% Dark Matter যা দেখা তো দূরের কথা, সেটা সম্পর্কে আমরা এখনও কিছুই জানি না! অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টিজগতের যতটুকুর অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত আমরা পরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছি, তার ৯৫% সম্পর্কেই আমরা এখনও কিছুই জানি না; আর সেই ৯৫% এর কোনোকিছুই এখনও পর্যন্ত আমরা চোখে দেখি নি; তার বৈশিষ্ট্য কেমন তাও আমরা জানি না!
.
আবার একবার বলি - কারা যেন বলে যে, আল্লাহকে দেখা যায় না, জিনজাতিকে দেখা যায় না, জান্নাত-জাহান্নাম দেখা যায় না, আর এগুলোর সম্পর্কে কিছুই পরীক্ষা করে জানা যায় না; তাই নাকি এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই!! কারা যেন এগুলো বলে বলে নিজেদের আধুনিক বলে দাবি করে?? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। গাধার চেয়েও অধম ভক্ত মুক্তমনা আর নাস্তিকের দল!!
.
.
এবার চলুন নাস্তিক আর মুক্তমনাদের মাথায় চূড়ান্ত বাঁশটা ভাঙি!
.
মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
أَفَلَمْ يَنظُرُوٓا۟ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَٰهَا وَزَيَّنَّٰهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٍ
.
"তারা কি তাদের উপরে অবস্থিত আকাশের দিকে তাকায় না, কীভাবে আমি তাকে বানিয়েছি, তাকে সুশোভিত করেছি আর তাতে নেই কোন ফাটল?"
(আল-কোরআন, ৫০:৬)
.
এখানে আরবি فُرُوجٍ শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে "ফাটল"। তবে যদি আপনি ইংরেজি অনুবাদটা দেখেন, তবে ব্যাপারটা আরেকটু বুঝতে পারবেন। ইংরেজিতে অনেকেই একে অনুবাদ করেছেন "rift" 👉এখান থেকে দেখুন - http://corpus.quran.com/wordmorphology.jsp…
.
rift এর অর্থ ফাটল যেমন হতে পারে, তেমনি "gap" জাতীয় বিষয়ও হতে পারে, যেমনটা কিছু কিছু dictionary অনুবাদ করেছে "a gap between two cloud masses" [উৎস - https://www.thefreedictionary.com/rift]
.
অর্থাৎ এখানে উক্ত আয়াতের ক্ষেত্রে আরবি فُرُوجٍ শব্দের দ্বারা আমরা মূলত বুঝি যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নির্মিত মহাকাশে gap বা ফাঁকা জাতীয় বিষয় রাখেন নি। আচ্ছা বিজ্ঞানের কথা বলার আগে আমায় দয়া করে একটু বলুন, এই কথাখানা সেই আরবের মত বালুর মধ্যে বসে বসে কে ভাবতে পারে যে, মহাকাশে ফাঁকা জাতীয় বিষয় নেই? এমনকি আমরা নিজেরাই তো এখনও অনেকেই এটা ভাবি যে, আকাশ মানেই শূন্য, সেখানে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে! সেখানে কার পক্ষে সম্ভব এমন কল্পনা করা, তাও আবার সেই অজ্ঞতার যুগে সেই মরুভূমিতে বসে বসে যে, মহাবিশ্বে মূলত ফাঁকা জাতীয় বিষয় নেই?? সাধারণ বিচারবুদ্ধি টুকুও থাকলে আপনার উত্তর হবে যে, কোনো মূর্খ কেন, জ্ঞানী মানুষের পক্ষেও তখন এটা ভাবা সম্ভবপর ছিল না!
.
আমরা একটু আগেই দেখলাম যে, মহাবিশ্বের যে বিরাট অংশ যা আমাদের কাছে আসলে ফাঁকা মনে হয়, সেটা আসলে ফাঁকা নয়, সেখানে অদৃশ্য ও অজানা dark matter ও dark energy বিদ্যমান রয়েছে।
.
কারা যেন বলে বেড়ায় যে, কোরআন নাকি বলছে যে, আকাশ শক্ত জিনিস দিয়ে তৈরি কারণ তাতে নাকি "ফাটল" নেই একথা বলা হয়েছে? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন - ভণ্ড নাস্তিকের দল! যদি আমরা তাদের কথা ধরেও নিই যে, আকাশে ফাটল নেই বলা হয়েছে, তবুও দেখুন, এই ফাটল এর প্রকৃতি কী তা কিন্তু আয়াতে বলা হয়নি; অন্যভাবে বললে, "শক্ত জিনিসের ফাটলের মত আকাশে ফাটল নেই" এরকম কথা কোরআনে বলা হয়নি; বরং "ফাটল নেই" শুধু এরূপ অনুবাদ করা হয়েছে। এখন dark energy আর dark matter এর প্রকৃতি কেমন, dark matter শক্ত না নরম, না এটার কোনোটাই না, এগুলো কি আমরা জানি? না! তাহলে এগুলোর মধ্যে কোনো ফাটল নেই বললেই কীভাবে বলা যায় যে, এগুলো শক্ত পদার্থেরই তৈরি?? কোরআন যেখানে "শক্ত পদার্থের" কোনোরূপ সরাসরি উল্লেখ করেনি, সেখানে দুই step বেশি বোঝা নাস্তিকের দল আকাশকে শক্ত পদার্থ বানিয়ে দিয়ে কোরআনের নামে মিথ্যাচার করছে! অথচ এখানে যদি কেবল আমরা আরবি فُرُوجٍ শব্দের দ্বারা rift বিষয়কে ফাঁকা জাতীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করি, তবে কোরআন এর বক্তব্য অনুযায়ী আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন যে, তাঁর সৃষ্ট মহাকাশে ফাঁকা বিষয়ের অস্তিত্ব নেই যার কারণ হিসেবে আমরা আজ জেনেছি যে, যাকে ফাঁকা মনে হয় সেখানে আসলে বিরাজ করছে dark matter আর dark energy.
.
তাহলে এই সত্য প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে কোনো নিরক্ষর ব্যক্তির পক্ষে কীভাবে বলা সম্ভব হতে পারে যে সম্পর্কে তৎকালীন সময়ের জ্ঞানী ব্যক্তিরাও অবগত ছিলেন না??
.
এটা প্রমাণ করে, নাস্তিকরা কতবড় ছাগল! না না, সরি সরি, ছাগলের চেয়েও অধম এক প্রজাতি!!
.
আগেই বলেছি যে, dark matter এবং dark energy আমরা দেখতে পাই না, এর বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি বুঝতে পারি না, ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধিও করতে পারি না। কিন্তু এর অস্তিত্ব যে আছে, সেটা অনুধাবন করতে পারি। সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা তাই এই অদৃশ্য ও রহস্যজনক বিষয়ের শপথ করে বলছেন,
.
فَلَآ أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُونَ
وَمَا لَا تُبْصِرُونَ
إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍۚ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُونَ
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍۚ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ
تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
.
"তোমরা যা দেখ, আমি তার শপথ করছি এবং যা তোমরা দেখতে পাও না, তার! নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসূলের আনীত এবং এটা কোন কবির রচনা নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস করো। আর এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথাও নয়; তোমরা কমই অনুধাবন করো। এটা বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ!"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন ৬৯:৩৮-৪৩)
.
.
[কোনোরূপ ভুলত্রুটি হলে আল্লাহ তাআলা মার্জনা করুন এবং আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন। আমিন]
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.