সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক ও তাত্ত্বিক অনুসন্ধান/ জাকারিয়া মাসুদ
সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক ও তাত্ত্বিক অনুসন্ধান
লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ
.
.
[এক]
মা বাসায় নেই। আজ সকালে যে চা খাওয়া হবে না তা ভালোই বুঝতে পারছি। কিন্তু চা ছাড়া সকাল কাটবে কী করে? শীতের সকাল; চা ছাড়া কি চলে? আগুনগরম এক কাপ চা খাওয়াই চাই। তবে আজ বিছানায় বসে সে চা খাওয়ার সুযোগ নেই, বাইরে যেতে হবে। শীতের মধ্যে বাইরে যেতে একটু কষ্টই হবে। সে যা হবার হোক, চা তো খেতে হবে।
যে কথা সেই কাজ। চা খেতে বের হলাম। সকালটা বেশ সুন্দর মনে হচ্ছে। কুয়াশার ফাঁকে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। মানুষজন তেমন রাস্তায় বের হয়নি। দু-একজন ছাত্রের দেখা মিলল। হয়তো প্রাইভেট কিংবা কোচিং-এ যাচ্ছে। মনে হলো ফারিসের কথা। ওকে একটু চমকে দিলে কেমন হয়? কী করলে ও চমকাবে?
.
বলা নেই কওয়া নেই হুটহাট ওর মেসে হাজির। ফারিস কী যেন পড়ছিল। আমাকে দেখে তো অবাক!
--‘কীরে এত সকালে?’
--‘সকালে কি তোর কাছে আসতে মানা?’
-- ‘আমি কি তা-ই বলেছি?’
-- ‘চল।’
-- ‘কোথায়?’
--‘আরে চল না।’
--‘আচ্ছা একটু দাঁড়া।’
.
অল্প সময়ের মধ্যেই আমি আর ফারিস বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য—শেখ ঘাট। অবশ্যি নাম শেখ ঘাট হলেও সেখানে এখন কোনো ঘাট নেই। অনেক আগে ছিল। এখন সেখানে নতুন ব্রিজ বানানো হয়েছে। পাকা রাস্তাও করা হয়েছে। আগে ওখানে পৌঁছতে দু-ঘণ্টা লাগত, এখন পনেরো মিনিট লাগে। সেখানে ভালো চা পাওয়া যায়। আসলে ভালো না বলে ব্যতিক্রমও বলা যায়। ব্যতিক্রম চা পাওয়া যায়। রহস্যময় চা। অবশ্যি সে রহস্য এখনো আমি উদ্ধার করতে পারিনি। দোকানি সে রহস্য আড়াল করে রাখে।
.
ঘাটে পৌঁছে আমরা দু-কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। ডাবল চা। ছোটবেলায় যখন চা খেয়েছি বাবার সাথে, তখন সিঙ্গেল-ডাবল ছিল না। এই তো সেদিন থেকে সিঙ্গেল-ডাবল চায়ের কথা শুনছি। নদীর ধারে বসে চা খাচ্ছি আমরা দুজন। সূর্যের আলোটা এখন আগের চেয়ে স্পষ্ট হয়েছে। কুয়াশা কুয়াশা ভাবটা কমতে শুরু করেছে। ফারিসকে দেখে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। এক ধ্যানে চা খাচ্ছে, আর নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। চুপচাপ বসে থাকতে আমার একদম ভালো লাগে না। তাই ফারিসকে বললাম, ‘কীরে কিছু হয়েছে?’
.
আমার দিকে না তাকিয়েই ও উত্তর দিলো, ‘না, তেমন কিছু না।’
--‘তেমন কিছু না মানে? জলদি জলদি বল কী হয়েছে?’
--‘কাল আরটিভি কী করেছে জানিস?’
--‘কী?’
--‘সমকামিতা নিয়ে নাটক প্রচার করেছে—রেইনবো?’
--‘তাই নাকি?’
--‘হ্যাঁ রে দোস্ত, রাজন ফোন করেছিল। ও-ই জানাল। স্পন্সর কে ছিল—জানিস?’
--‘কে?’
--‘গ্রামীণফোন।’
.
ফারিসের চিন্তার কারণ বুঝতে আর বেগ পেতে হলো না। খানিক বিরতি দিয়ে ফারিস বলল, ‘কদিন আগে কী হয়েছে জানিস?’
উৎসুক গলায় আমি বললাম, ‘কী?’
--‘ঢাকার কেরাণীগঞ্জে প্রায় তিরিশেক সমকামী আটক করা হয়েছে।’
--‘ওরা ভালোই প্রচারণা চালাচ্ছে তাহলে?’
--‘হুম। চালাচ্ছেই তো। বেশ প্রচারণা চালাচ্ছে।’
--‘ওদের উদ্দেশ্য কী?’
--‘কী আবার? সমকামিতাকে সাধারণ বিষয় করে তোলা। মানুষ যাতে মনে করে এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়, যার ইচ্ছে সে সমকামী হতে পারে। এতে দোষের কিছুই নেই।’
.
--‘অনেক গোপনে এগুলো ছড়াচ্ছে তাহলে?’
--‘গোপনে কী, প্রকাশ্যেই তো চালাচ্ছে। পহেলা বৈশাখে ওদের র্যালি হয়, দেখিসনি? রূপবান ম্যাগাজিন বের করে ওরা। বিভিন্ন এনজিও তো আছেই। শহরে-গ্রামে সমকামিতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিনামূল্যে লুব্রিকেন্ট অয়েল বিতরণ করছে।’
--‘ছেলেবেলায় তো এদের এত তোড়জোড় দেখিনি।’
--‘দেখিসনি, তবে এখন দেখবি। নব্বই দশকের শেষের দিকে ওরা এদেশে কাজ শুরু করে। এরপর থেকে গোপনে-প্রকাশ্যে কাজ করেই যাচ্ছে। বিদেশিদের সাপোর্ট নিয়ে এখন কোমর বেঁধে নেমেছে। ২০১০ সালে বাংলায় জোড়াতালি দিয়ে একটা বইও লিখে ফেলেছে।’
--‘সমকামিতা নিয়ে?’
--‘হুঁ।’
--‘কে লেখেছে?’
--‘কে আবার, অভিজিৎ। অভিজিৎ রায়।’
--‘আচ্ছা দোস্ত, রূপবান কারা চালায়?’
--‘তুই তো দেখছি কোনো খবরই রাখিস না। রূপবান ব্রিটিশ অর্থায়নে চলে। ২০১৪ সালে এদের এ ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যা প্রকাশ হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিল ব্রিটিশ হাইকমিশনার। রবার্ট গিবসন।’
.
--‘এভাবে চলতে থাকলে তো বিপদ!’
--‘বিপদ মানে ভয়াবহ বিপদ। ১৯৮৭-তে মাত্র ৩৭% আমেরিকান মনে করত সমকামিতা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু ২০১৭-তে এসে এ চিত্র পুরোটাই পাল্টে গেছে। এখন ৬৪% আমেরিকান সমকামিতাকে সাধারণ বিষয় মনে করে। সমকামীদের প্রচার-প্রচারণার ফলে এমনটা হয়েছে। আমেরিকা ছাড়াও প্রায় ২১ টি দেশে সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ। মজার ব্যাপার হলো, এসব দেশে রাষ্ট্র জনগণের ওপর সমকামিতা চাপিয়ে দেয়নি, জনগণই রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছে। আমাদের দেশেও যে হারে প্রচারণা শুরু হয়েছে, আমেরিকার মতো হতে বেশি দিন লাগবে না মনে হয়।’
--‘আচ্ছা দোস্ত, একবার খবরে গে-জীনের কথা শুনেছিলাম, জেনেটিক্সে তো এমন কোনো জীনের কথা শুনিনি। গে-জীন কি সত্যিই আছে?’
--‘আমার জানামতে নেই। তবে আরও ক্লিয়ার হতে হবে। কিছুদিন সমকামিতা নিয়ে পড়াশোনা করব বলে ঠিক করেছি।’
--‘এ জন্যেই তোর টেবিলে অভিজিতের বইটা দেখলাম?’
ফারিস কিছু বলল না। এক ফালি হাসি উপহার দিলো। শব্দবিহীন হাসি।
.
.
[দুই]
বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলে নাকি মানুষকে আর পড়াশোনা করতে হয় না। তাই ছোটবেলা থেকেই অপেক্ষা করতাম, কবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হব? কবে থেকে আর পড়াশোনা করতে হবে না? কবে থেকে শিক্ষকরা আর বকবে না? পড়ো-পড়ো করে কেউ সারাদিন মাথা খারাপও করবে না। কবে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে?
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। মনে হতে লাগল, আজ থেকে আমি মুক্ত, স্বাধীন। ইচ্ছেমতো পড়াশোনা করব। যখন খুশি বই পড়ব। হাদিসের বই, কোনোটা বাদ রাখব না। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনাকে বিদায় জানাব।
.
কিন্তু আমার সে আশা আশাই রয়ে গেল, আর পূর্ণ হলো না। এমন একটা সাব্জেক্টে ভর্তি হলাম, ক্লাস করতে করতে দিন শেষ। রাতে যতটুকু সময় পাওয়া যেত, সেটাও অ্যাসাইনমেন্টের পেছনে ব্যয় হতো। অন্য বই পড়ব কখন? ক্লাস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠতাম। ক্লাসের ফাঁকে কফি খাওয়ার সময়টুকু মেলানো যেত না। কখনো যদি স্যাররা ব্যস্ততার কারণে ক্লাস না নিতেন, তখন কফি খেতে যেতাম। ক্লাসের অবসর সময়কে স্পেশাল নিয়ামত মনে হতো।
.
কোনো এক ক্লাসের বিরতিতে, কফি খাওয়ার মনস্থ করলাম, আমি আর ফারিস। ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ায়। ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়েছিলাম একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্যে, তা আর হলো না। অবশ্যি এর জন্যে রফিক ভাই-ই দায়ী। তাঁর কারণেই অবসর সময়টুকু মাটি হয়ে গেল। আমরা গিয়ে দেখি তিনি সেখানে বসা।
.
রফিক ভাই ইকোনোমিক্সে পড়েন। আমাদের সিনিয়র। উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। শরীরটা বেশ মোটা। গোঁফ চুলের থেকেও লম্বা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাগাছ সংঘের সভাপতি। কলাগাছ সংঘের সভাপতি ছাড়াও তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি নারী অধিকার কর্মী। নারীদের নিয়ে তাঁর ভাবনার অন্ত নেই। ইসলামকে খোঁচা দিয়ে কথা বলাটা তাঁর অভ্যাস। কথায় আঞ্চলিকতার টান বেশ স্পষ্ট। ফারিসকে দেখলেই তিনি নানান বিষয়ে প্রশ্ন করেন। অবশ্যি জানার পরাজিত করার জন্যে। তবে ফারিসকে কখনো পরাজিত করতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই।
.
আমাদের ক্যাফেটেরিয়ায় দেখে তিনি বললেন, ‘কীরে মোল্লার দল? এইহানে কী করিস?’
ফারিস মুচকি হেসে জবাব দিলো, ‘কফি খেতে এসেছি, ভাই।’
--‘কফি! আয় বোস।’
--‘আপনি খাবেন?’
--‘খাওয়া যায়। তয় শর্ত হইল তোরা বিল দিতে পারবি না। আমিই দিমু।’
--‘এ তো মেঘ না চাইতেই জল।’
--‘অত জল টল বুঝি না। রাজি থাকলে ক।’
--‘জি ভাই, রাজি।’
--‘তাইলে দিতে ক।’
.
রফিক ভাই লোক সুবিধের না। সব সময় হুজুরদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেন। আমরা দুজনই হুজুর। আমাদের নিয়ে কী ফন্দি এঁটেছেন, কে জানে? তবে যতই ফন্দি করুন না কেন, ফারিসকে পরাস্ত করার শক্তি তাঁর নেই। এর আগেও অনেক কৌশল করেছিলেন। তবে পারেননি। শত জাল ছিন্ন করে ফারিস ঠিকই বেরিয়ে এসেছে।
আমি কফির অর্ডার দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে কফি চলে এল। কাপটা হাতে নিয়ে রফিক ভাই বললেন, ‘ঈদের অনুষ্ঠানে আরটিভি সমকামিতা নিয়া একটা নাটক প্রচার করল। সেইখানে না খারাপ কিছু দেহানো অইলো, আর না খারাপ কোনো কতা প্রচার করা অইল। তারপরেও হুজুররা এইডা নিয়া লাফালাফি শুরু করল। অনলাইন অফলাইনে এক্কেবারে ঝড় তুইলা ফেলল। এই কামডা কি ঠিক অইল, তুই ক?’
.
যা ভেবেছিলাম তা-ই। আজও তিনি ফারিসের সাথে তর্ক করতে এসেছেন। তর্কের বিষয়টাও তিনি মনে হয় বেছে বেছে সমকামিতা। ইংরেজিতে যাকে বলে Homosexuality। যখন ছোট ছিলাম তখন এদেশে সমকামিতা নিয়ে তেমন কথাবার্তা শুনিনি। আজকাল অবশ্যি শব্দটা সমাজে বেশি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। সমকামিতা একটি অপ্রাকৃতিক যৌনকর্ম। এর দ্বারা সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্ক বোঝায়। ‘Homosexual’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কার্ল মারিয়া কার্টবেরি, ১৮৬৯ সালে। পরে জীববিজ্ঞানী গুস্তভ জেগার এবং রিচার্ড ফ্রেইহার ভন ক্রাফট ইবিং শব্দটি জনপ্রিয় করে তোলেন। এটা সেই ১৮৮০-এর দশকের কথা। তবে ‘Homosexual’ শব্দটা সমকামীদের পছন্দ নয়। বিশ্বজুড়ে তাদের আন্দোলনের ফলে ‘গে’ এবং ‘লেসবিয়ান’ শব্দ দুটি অধুনা সমাজে ব্যবহার করা হয়। এসব তথ্য ফারিসের কাছে সেদিন শেখ ঘাটে বসেই শুনেছিলাম।
.
'হুজুররা কেন সমকামিতার বিরোধীতা করে, জানেন ভাই?’ ফারিস রফিক ভাইকে প্রশ্ন করল।
--‘কেন আবার? তারা মানুষের কাজ কামের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাই।’
--‘আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।’
--‘ভুল?’
--‘হ্যাঁ, ভুল।’
--‘কেন?’
--‘কারণ, হুজুরদের সমকামিতাকে বিরোধিতা করার আসল কারণটা আপনি জানেন না।’
--‘জানি জানি, খুব জানি। হুজুর গো আমার চিনা আছে। খালি মসজিদ-মাদ্রাসা লইয়া পইড়া থাকে। আর মানুষের কাজে-কামে নাক গলায়। মানুষরে দাস বানাইয়্যা রাখবার চায়। এইডাই মেন কারণ।’
.
--‘রফিক ভাই, আপনি আবারও ভুল বলছেন।’
--‘ভুল কইতাছি? তাইলে ঠিকটা কী, ক দেহি।’
এটি একটি গর্হিত কাজ।’
--‘গর্হিত কাম? হা হা হা। হাসাইলি ফারিস, হাসাইলি। সমকামিতা খারাপ কাম অইব কেন? এইডা মানুষের জেনেটিক বিষয়। মানুষ জন্মগতভাবেই সমকামী অইতে পারে। হেইডা কি তোর জানা নাই?’
--‘একটা মস্ত বড় ভুল ইনফরমেশন দিলেন, ভাই।’
--‘ভুল ইনফরমেশন দিছি?’
--‘হুম। এই তো, এইমাত্র দিলেন।’
--‘তাইলে ঠিকটা তুই-ই ক।’
.
.
[এক]
মা বাসায় নেই। আজ সকালে যে চা খাওয়া হবে না তা ভালোই বুঝতে পারছি। কিন্তু চা ছাড়া সকাল কাটবে কী করে? শীতের সকাল; চা ছাড়া কি চলে? আগুনগরম এক কাপ চা খাওয়াই চাই। তবে আজ বিছানায় বসে সে চা খাওয়ার সুযোগ নেই, বাইরে যেতে হবে। শীতের মধ্যে বাইরে যেতে একটু কষ্টই হবে। সে যা হবার হোক, চা তো খেতে হবে।
যে কথা সেই কাজ। চা খেতে বের হলাম। সকালটা বেশ সুন্দর মনে হচ্ছে। কুয়াশার ফাঁকে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। মানুষজন তেমন রাস্তায় বের হয়নি। দু-একজন ছাত্রের দেখা মিলল। হয়তো প্রাইভেট কিংবা কোচিং-এ যাচ্ছে। মনে হলো ফারিসের কথা। ওকে একটু চমকে দিলে কেমন হয়? কী করলে ও চমকাবে?
.
বলা নেই কওয়া নেই হুটহাট ওর মেসে হাজির। ফারিস কী যেন পড়ছিল। আমাকে দেখে তো অবাক!
--‘কীরে এত সকালে?’
--‘সকালে কি তোর কাছে আসতে মানা?’
-- ‘আমি কি তা-ই বলেছি?’
-- ‘চল।’
-- ‘কোথায়?’
--‘আরে চল না।’
--‘আচ্ছা একটু দাঁড়া।’
.
অল্প সময়ের মধ্যেই আমি আর ফারিস বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য—শেখ ঘাট। অবশ্যি নাম শেখ ঘাট হলেও সেখানে এখন কোনো ঘাট নেই। অনেক আগে ছিল। এখন সেখানে নতুন ব্রিজ বানানো হয়েছে। পাকা রাস্তাও করা হয়েছে। আগে ওখানে পৌঁছতে দু-ঘণ্টা লাগত, এখন পনেরো মিনিট লাগে। সেখানে ভালো চা পাওয়া যায়। আসলে ভালো না বলে ব্যতিক্রমও বলা যায়। ব্যতিক্রম চা পাওয়া যায়। রহস্যময় চা। অবশ্যি সে রহস্য এখনো আমি উদ্ধার করতে পারিনি। দোকানি সে রহস্য আড়াল করে রাখে।
.
ঘাটে পৌঁছে আমরা দু-কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। ডাবল চা। ছোটবেলায় যখন চা খেয়েছি বাবার সাথে, তখন সিঙ্গেল-ডাবল ছিল না। এই তো সেদিন থেকে সিঙ্গেল-ডাবল চায়ের কথা শুনছি। নদীর ধারে বসে চা খাচ্ছি আমরা দুজন। সূর্যের আলোটা এখন আগের চেয়ে স্পষ্ট হয়েছে। কুয়াশা কুয়াশা ভাবটা কমতে শুরু করেছে। ফারিসকে দেখে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। এক ধ্যানে চা খাচ্ছে, আর নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। চুপচাপ বসে থাকতে আমার একদম ভালো লাগে না। তাই ফারিসকে বললাম, ‘কীরে কিছু হয়েছে?’
.
আমার দিকে না তাকিয়েই ও উত্তর দিলো, ‘না, তেমন কিছু না।’
--‘তেমন কিছু না মানে? জলদি জলদি বল কী হয়েছে?’
--‘কাল আরটিভি কী করেছে জানিস?’
--‘কী?’
--‘সমকামিতা নিয়ে নাটক প্রচার করেছে—রেইনবো?’
--‘তাই নাকি?’
--‘হ্যাঁ রে দোস্ত, রাজন ফোন করেছিল। ও-ই জানাল। স্পন্সর কে ছিল—জানিস?’
--‘কে?’
--‘গ্রামীণফোন।’
.
ফারিসের চিন্তার কারণ বুঝতে আর বেগ পেতে হলো না। খানিক বিরতি দিয়ে ফারিস বলল, ‘কদিন আগে কী হয়েছে জানিস?’
উৎসুক গলায় আমি বললাম, ‘কী?’
--‘ঢাকার কেরাণীগঞ্জে প্রায় তিরিশেক সমকামী আটক করা হয়েছে।’
--‘ওরা ভালোই প্রচারণা চালাচ্ছে তাহলে?’
--‘হুম। চালাচ্ছেই তো। বেশ প্রচারণা চালাচ্ছে।’
--‘ওদের উদ্দেশ্য কী?’
--‘কী আবার? সমকামিতাকে সাধারণ বিষয় করে তোলা। মানুষ যাতে মনে করে এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়, যার ইচ্ছে সে সমকামী হতে পারে। এতে দোষের কিছুই নেই।’
.
--‘অনেক গোপনে এগুলো ছড়াচ্ছে তাহলে?’
--‘গোপনে কী, প্রকাশ্যেই তো চালাচ্ছে। পহেলা বৈশাখে ওদের র্যালি হয়, দেখিসনি? রূপবান ম্যাগাজিন বের করে ওরা। বিভিন্ন এনজিও তো আছেই। শহরে-গ্রামে সমকামিতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিনামূল্যে লুব্রিকেন্ট অয়েল বিতরণ করছে।’
--‘ছেলেবেলায় তো এদের এত তোড়জোড় দেখিনি।’
--‘দেখিসনি, তবে এখন দেখবি। নব্বই দশকের শেষের দিকে ওরা এদেশে কাজ শুরু করে। এরপর থেকে গোপনে-প্রকাশ্যে কাজ করেই যাচ্ছে। বিদেশিদের সাপোর্ট নিয়ে এখন কোমর বেঁধে নেমেছে। ২০১০ সালে বাংলায় জোড়াতালি দিয়ে একটা বইও লিখে ফেলেছে।’
--‘সমকামিতা নিয়ে?’
--‘হুঁ।’
--‘কে লেখেছে?’
--‘কে আবার, অভিজিৎ। অভিজিৎ রায়।’
--‘আচ্ছা দোস্ত, রূপবান কারা চালায়?’
--‘তুই তো দেখছি কোনো খবরই রাখিস না। রূপবান ব্রিটিশ অর্থায়নে চলে। ২০১৪ সালে এদের এ ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যা প্রকাশ হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিল ব্রিটিশ হাইকমিশনার। রবার্ট গিবসন।’
.
--‘এভাবে চলতে থাকলে তো বিপদ!’
--‘বিপদ মানে ভয়াবহ বিপদ। ১৯৮৭-তে মাত্র ৩৭% আমেরিকান মনে করত সমকামিতা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু ২০১৭-তে এসে এ চিত্র পুরোটাই পাল্টে গেছে। এখন ৬৪% আমেরিকান সমকামিতাকে সাধারণ বিষয় মনে করে। সমকামীদের প্রচার-প্রচারণার ফলে এমনটা হয়েছে। আমেরিকা ছাড়াও প্রায় ২১ টি দেশে সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ। মজার ব্যাপার হলো, এসব দেশে রাষ্ট্র জনগণের ওপর সমকামিতা চাপিয়ে দেয়নি, জনগণই রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছে। আমাদের দেশেও যে হারে প্রচারণা শুরু হয়েছে, আমেরিকার মতো হতে বেশি দিন লাগবে না মনে হয়।’
--‘আচ্ছা দোস্ত, একবার খবরে গে-জীনের কথা শুনেছিলাম, জেনেটিক্সে তো এমন কোনো জীনের কথা শুনিনি। গে-জীন কি সত্যিই আছে?’
--‘আমার জানামতে নেই। তবে আরও ক্লিয়ার হতে হবে। কিছুদিন সমকামিতা নিয়ে পড়াশোনা করব বলে ঠিক করেছি।’
--‘এ জন্যেই তোর টেবিলে অভিজিতের বইটা দেখলাম?’
ফারিস কিছু বলল না। এক ফালি হাসি উপহার দিলো। শব্দবিহীন হাসি।
.
.
[দুই]
বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলে নাকি মানুষকে আর পড়াশোনা করতে হয় না। তাই ছোটবেলা থেকেই অপেক্ষা করতাম, কবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হব? কবে থেকে আর পড়াশোনা করতে হবে না? কবে থেকে শিক্ষকরা আর বকবে না? পড়ো-পড়ো করে কেউ সারাদিন মাথা খারাপও করবে না। কবে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে?
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। মনে হতে লাগল, আজ থেকে আমি মুক্ত, স্বাধীন। ইচ্ছেমতো পড়াশোনা করব। যখন খুশি বই পড়ব। হাদিসের বই, কোনোটা বাদ রাখব না। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনাকে বিদায় জানাব।
.
কিন্তু আমার সে আশা আশাই রয়ে গেল, আর পূর্ণ হলো না। এমন একটা সাব্জেক্টে ভর্তি হলাম, ক্লাস করতে করতে দিন শেষ। রাতে যতটুকু সময় পাওয়া যেত, সেটাও অ্যাসাইনমেন্টের পেছনে ব্যয় হতো। অন্য বই পড়ব কখন? ক্লাস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠতাম। ক্লাসের ফাঁকে কফি খাওয়ার সময়টুকু মেলানো যেত না। কখনো যদি স্যাররা ব্যস্ততার কারণে ক্লাস না নিতেন, তখন কফি খেতে যেতাম। ক্লাসের অবসর সময়কে স্পেশাল নিয়ামত মনে হতো।
.
কোনো এক ক্লাসের বিরতিতে, কফি খাওয়ার মনস্থ করলাম, আমি আর ফারিস। ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ায়। ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়েছিলাম একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্যে, তা আর হলো না। অবশ্যি এর জন্যে রফিক ভাই-ই দায়ী। তাঁর কারণেই অবসর সময়টুকু মাটি হয়ে গেল। আমরা গিয়ে দেখি তিনি সেখানে বসা।
.
রফিক ভাই ইকোনোমিক্সে পড়েন। আমাদের সিনিয়র। উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। শরীরটা বেশ মোটা। গোঁফ চুলের থেকেও লম্বা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাগাছ সংঘের সভাপতি। কলাগাছ সংঘের সভাপতি ছাড়াও তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি নারী অধিকার কর্মী। নারীদের নিয়ে তাঁর ভাবনার অন্ত নেই। ইসলামকে খোঁচা দিয়ে কথা বলাটা তাঁর অভ্যাস। কথায় আঞ্চলিকতার টান বেশ স্পষ্ট। ফারিসকে দেখলেই তিনি নানান বিষয়ে প্রশ্ন করেন। অবশ্যি জানার পরাজিত করার জন্যে। তবে ফারিসকে কখনো পরাজিত করতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই।
.
আমাদের ক্যাফেটেরিয়ায় দেখে তিনি বললেন, ‘কীরে মোল্লার দল? এইহানে কী করিস?’
ফারিস মুচকি হেসে জবাব দিলো, ‘কফি খেতে এসেছি, ভাই।’
--‘কফি! আয় বোস।’
--‘আপনি খাবেন?’
--‘খাওয়া যায়। তয় শর্ত হইল তোরা বিল দিতে পারবি না। আমিই দিমু।’
--‘এ তো মেঘ না চাইতেই জল।’
--‘অত জল টল বুঝি না। রাজি থাকলে ক।’
--‘জি ভাই, রাজি।’
--‘তাইলে দিতে ক।’
.
রফিক ভাই লোক সুবিধের না। সব সময় হুজুরদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেন। আমরা দুজনই হুজুর। আমাদের নিয়ে কী ফন্দি এঁটেছেন, কে জানে? তবে যতই ফন্দি করুন না কেন, ফারিসকে পরাস্ত করার শক্তি তাঁর নেই। এর আগেও অনেক কৌশল করেছিলেন। তবে পারেননি। শত জাল ছিন্ন করে ফারিস ঠিকই বেরিয়ে এসেছে।
আমি কফির অর্ডার দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে কফি চলে এল। কাপটা হাতে নিয়ে রফিক ভাই বললেন, ‘ঈদের অনুষ্ঠানে আরটিভি সমকামিতা নিয়া একটা নাটক প্রচার করল। সেইখানে না খারাপ কিছু দেহানো অইলো, আর না খারাপ কোনো কতা প্রচার করা অইল। তারপরেও হুজুররা এইডা নিয়া লাফালাফি শুরু করল। অনলাইন অফলাইনে এক্কেবারে ঝড় তুইলা ফেলল। এই কামডা কি ঠিক অইল, তুই ক?’
.
যা ভেবেছিলাম তা-ই। আজও তিনি ফারিসের সাথে তর্ক করতে এসেছেন। তর্কের বিষয়টাও তিনি মনে হয় বেছে বেছে সমকামিতা। ইংরেজিতে যাকে বলে Homosexuality। যখন ছোট ছিলাম তখন এদেশে সমকামিতা নিয়ে তেমন কথাবার্তা শুনিনি। আজকাল অবশ্যি শব্দটা সমাজে বেশি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। সমকামিতা একটি অপ্রাকৃতিক যৌনকর্ম। এর দ্বারা সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্ক বোঝায়। ‘Homosexual’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কার্ল মারিয়া কার্টবেরি, ১৮৬৯ সালে। পরে জীববিজ্ঞানী গুস্তভ জেগার এবং রিচার্ড ফ্রেইহার ভন ক্রাফট ইবিং শব্দটি জনপ্রিয় করে তোলেন। এটা সেই ১৮৮০-এর দশকের কথা। তবে ‘Homosexual’ শব্দটা সমকামীদের পছন্দ নয়। বিশ্বজুড়ে তাদের আন্দোলনের ফলে ‘গে’ এবং ‘লেসবিয়ান’ শব্দ দুটি অধুনা সমাজে ব্যবহার করা হয়। এসব তথ্য ফারিসের কাছে সেদিন শেখ ঘাটে বসেই শুনেছিলাম।
.
'হুজুররা কেন সমকামিতার বিরোধীতা করে, জানেন ভাই?’ ফারিস রফিক ভাইকে প্রশ্ন করল।
--‘কেন আবার? তারা মানুষের কাজ কামের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাই।’
--‘আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।’
--‘ভুল?’
--‘হ্যাঁ, ভুল।’
--‘কেন?’
--‘কারণ, হুজুরদের সমকামিতাকে বিরোধিতা করার আসল কারণটা আপনি জানেন না।’
--‘জানি জানি, খুব জানি। হুজুর গো আমার চিনা আছে। খালি মসজিদ-মাদ্রাসা লইয়া পইড়া থাকে। আর মানুষের কাজে-কামে নাক গলায়। মানুষরে দাস বানাইয়্যা রাখবার চায়। এইডাই মেন কারণ।’
.
--‘রফিক ভাই, আপনি আবারও ভুল বলছেন।’
--‘ভুল কইতাছি? তাইলে ঠিকটা কী, ক দেহি।’
এটি একটি গর্হিত কাজ।’
--‘গর্হিত কাম? হা হা হা। হাসাইলি ফারিস, হাসাইলি। সমকামিতা খারাপ কাম অইব কেন? এইডা মানুষের জেনেটিক বিষয়। মানুষ জন্মগতভাবেই সমকামী অইতে পারে। হেইডা কি তোর জানা নাই?’
--‘একটা মস্ত বড় ভুল ইনফরমেশন দিলেন, ভাই।’
--‘ভুল ইনফরমেশন দিছি?’
--‘হুম। এই তো, এইমাত্র দিলেন।’
--‘তাইলে ঠিকটা তুই-ই ক।’
রফিক ভাইয়ের কথা শেষ হলে ফারিস আমাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তুই তো হিস্টোলজি আমার থেকে ভালো করে পড়েছিস। রফিক ভাইকে একটু পায়ু ও যোনির গাঠনিক পার্থক্যগুলো বল তো।’
.
ফারিসের কথা শেষ হলে আমি বললাম, ‘মেয়েদের যোনি যৌনমিলনের জন্যে বিশেষভাবে তৈরি একটি অঙ্গ। যোনি তিন স্তরবিশিষ্ট, যা পুরু ও স্থিতিস্থাপক পেশি দিয়ে তৈরি। যোনিতে আছে ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট। ফলে লিঙ্গ সহজেই যোনিতে ঢুকে যেতে পারে। তিন স্তরবিশিষ্ট লেয়ার, ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট ও স্থিতিস্থাপক পেশি থাকার কারণে—যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশের ফলে রক্তপাত হয় না। কোনোরকম ঘর্ষণ হয় না। অপর দিকে মলাশয় অত্যন্ত নাজুক অঙ্গ। মলাশয়ে ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত। মলাশয়গাত্র একেবারেই পাতলা। এক স্তরবিশিষ্ট আবরণ দিয়ে তৈরি। মলাশয়ে লিঙ্গ যোনির মতো সহযেই ঢুকে যেতে পারে না, মতো চাপ দিয়ে ঢুকাতে হয়। যেহেতু মলাশয়গাত্র পাতলা ও ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত, তাই লিঙ্গ ঢুকানোর ফলে রক্তপাত হয়। ফলে বীর্য সহজেই রক্তের সাথে মিশে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। বীর্যরস ইমিউনোসাপ্রেসিভ। আর মানুষের অ্যানাল রুটের ইমিউনো সিস্টেম যোনির তুলনায় দুর্বল। বীর্যরস যদি মলাশয়ে নির্গত হয়, তাহলে মলাশয়ের ইমিউনো সিস্টেম আরও দুর্বল হয়ে পরে। ফলে জীবাণু বিনাবাধায় শরীরে প্রবেশ করে, বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।’
.
আমার কথা শুনে রফিক ভাই সন্তুষ্ট হতে পেরেছে বলে মনে হলো না। তিনি এবার বললেন, ‘সবই বুঝলাম। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে গে-জীন আবিষ্কার করছে। গে-জীনডাই যথেষ্ট সমকামিতারে জেনেটিক্যালি প্রোভ করবার লাইগ্যা।’
রফিক ভাইয়ের কথা শুনে ফারিস হাসতে শুরু করল। হাসি থামিয়ে রফিক ভাইকে বলল, ‘ভাই, একটা প্রশ্ন করি?’
--‘আর কী প্রশ্ন করবি? এইবার তো তুই আমার কাছে হাইরা গেলি। হো হো হো।’
--‘সে না হয় পরে দেখা যাবে। আগে বলেন তো, আপনি গে-জীনের কথা কোথা থেকে শুনেছেন।’
--‘হেইডা তোরে কওয়া যাইব না। সিক্রেট ব্যাপার।’
--‘আমি বলি?’
--‘ক দেহি। দেহি তোর আইডিয়া কেমন।’
--‘অভিজিৎ রায়ের বই থেকে। তাই না?’
.
রফিক ভাই কোনো জবাব দিলেন না। রফিক ভাইয়ের চুপ থাকাটাই তাঁর মৌন সম্মতি নির্দেশ করে। ফারিসের সন্দেহটা ঠিক। অভিজিৎ বাবু পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নাস্তিকদের বহুলপ্রচারিত একটি ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। লোকটার বায়োলজির জ্ঞানের কমতির অভাব নেই। কপি পেস্ট লেখক হিসেবেও তার জুড়ি-মেলা-ভার। জোড়া-তালি দিয়ে সমকামিতার পক্ষে একটা বইও তিনি রচনা করেছেন। তাই নিয়ে বাংলার নাস্তিকদের অহমিকার শেষ নেই। রফিক ভাইদের মতো লোকেরা তার লিখনীগুলো গসপেল মনে করে। আর মনে মনে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।
.
রফিক ভাই চুপ করে আছেন দেখে ফারিস তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা রফিক ভাই, আমি যদি গণিতবিদের কাছে ইতিহাস বুঝতে যাই, সেটা কেমন হবে?’
--‘পাগলে কয় কী? গণিতের লোকগো কাছে তুই ইতিহাসের কী পাইবি? অর্থনীতি বুঝতে চাইলে ইতিহাসবিদদের কাছে যাইতে অইব।’
--‘আপনি ইঞ্জিনিয়ারের বই পড়ে যদি মেডিকেল সাইন্স বুঝতে চান, সেটা কেমন দেখায় না?’
--‘তুই কইবার চাস মেডিকেল সাইন্স নিয়া আমাগোর ঘাঁটাঘাঁটি করবার অধিকার নাই?’
--‘থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। তবে মিথ্যাচার করার অধিকার কারও নেই।’
--‘তুই কইবার চাস অভিজিৎ দাদা মিসা কতা লিখছে তার বইডার মধ্যে?’
--‘শুধুই কি মিথ্যা? তার গোটা বইটাই তো মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে সাজানো।’
--‘দাদা তো বইডার মধ্যে রেফারেন্স দিয়াই লিখছে, না কি?’
--‘রেফারেন্স দিয়েছে, কিন্তু ভুল গবেষণার।’
--‘ভুল?’
--‘জি, ভাই। ভুল।’
--‘যেমন?’
--‘অভিজিৎ রায় গে-জীনের কথা উল্লেখ করেছেন। এরপর দাবি করেছেন, সমকামিতার জন্যে গে-জীন দায়ী। কিন্তু তথাকথিত গে-জীনের ফাদার উপাধিপ্রাপ্ত Dr. Dean Hamer, গে-জীনের কথা অস্বীকার করেছেন। Scientific সমকামিতা কি জীনবিদ্যার সাথে সম্পর্কিত? উত্তরে তিনি ‘Absolutely not.’
.
ফারিসের কথা শেষ হলে আমি বললাম, ‘মেয়েদের যোনি যৌনমিলনের জন্যে বিশেষভাবে তৈরি একটি অঙ্গ। যোনি তিন স্তরবিশিষ্ট, যা পুরু ও স্থিতিস্থাপক পেশি দিয়ে তৈরি। যোনিতে আছে ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট। ফলে লিঙ্গ সহজেই যোনিতে ঢুকে যেতে পারে। তিন স্তরবিশিষ্ট লেয়ার, ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট ও স্থিতিস্থাপক পেশি থাকার কারণে—যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশের ফলে রক্তপাত হয় না। কোনোরকম ঘর্ষণ হয় না। অপর দিকে মলাশয় অত্যন্ত নাজুক অঙ্গ। মলাশয়ে ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত। মলাশয়গাত্র একেবারেই পাতলা। এক স্তরবিশিষ্ট আবরণ দিয়ে তৈরি। মলাশয়ে লিঙ্গ যোনির মতো সহযেই ঢুকে যেতে পারে না, মতো চাপ দিয়ে ঢুকাতে হয়। যেহেতু মলাশয়গাত্র পাতলা ও ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত, তাই লিঙ্গ ঢুকানোর ফলে রক্তপাত হয়। ফলে বীর্য সহজেই রক্তের সাথে মিশে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। বীর্যরস ইমিউনোসাপ্রেসিভ। আর মানুষের অ্যানাল রুটের ইমিউনো সিস্টেম যোনির তুলনায় দুর্বল। বীর্যরস যদি মলাশয়ে নির্গত হয়, তাহলে মলাশয়ের ইমিউনো সিস্টেম আরও দুর্বল হয়ে পরে। ফলে জীবাণু বিনাবাধায় শরীরে প্রবেশ করে, বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।’
.
আমার কথা শুনে রফিক ভাই সন্তুষ্ট হতে পেরেছে বলে মনে হলো না। তিনি এবার বললেন, ‘সবই বুঝলাম। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে গে-জীন আবিষ্কার করছে। গে-জীনডাই যথেষ্ট সমকামিতারে জেনেটিক্যালি প্রোভ করবার লাইগ্যা।’
রফিক ভাইয়ের কথা শুনে ফারিস হাসতে শুরু করল। হাসি থামিয়ে রফিক ভাইকে বলল, ‘ভাই, একটা প্রশ্ন করি?’
--‘আর কী প্রশ্ন করবি? এইবার তো তুই আমার কাছে হাইরা গেলি। হো হো হো।’
--‘সে না হয় পরে দেখা যাবে। আগে বলেন তো, আপনি গে-জীনের কথা কোথা থেকে শুনেছেন।’
--‘হেইডা তোরে কওয়া যাইব না। সিক্রেট ব্যাপার।’
--‘আমি বলি?’
--‘ক দেহি। দেহি তোর আইডিয়া কেমন।’
--‘অভিজিৎ রায়ের বই থেকে। তাই না?’
.
রফিক ভাই কোনো জবাব দিলেন না। রফিক ভাইয়ের চুপ থাকাটাই তাঁর মৌন সম্মতি নির্দেশ করে। ফারিসের সন্দেহটা ঠিক। অভিজিৎ বাবু পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নাস্তিকদের বহুলপ্রচারিত একটি ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। লোকটার বায়োলজির জ্ঞানের কমতির অভাব নেই। কপি পেস্ট লেখক হিসেবেও তার জুড়ি-মেলা-ভার। জোড়া-তালি দিয়ে সমকামিতার পক্ষে একটা বইও তিনি রচনা করেছেন। তাই নিয়ে বাংলার নাস্তিকদের অহমিকার শেষ নেই। রফিক ভাইদের মতো লোকেরা তার লিখনীগুলো গসপেল মনে করে। আর মনে মনে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।
.
রফিক ভাই চুপ করে আছেন দেখে ফারিস তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা রফিক ভাই, আমি যদি গণিতবিদের কাছে ইতিহাস বুঝতে যাই, সেটা কেমন হবে?’
--‘পাগলে কয় কী? গণিতের লোকগো কাছে তুই ইতিহাসের কী পাইবি? অর্থনীতি বুঝতে চাইলে ইতিহাসবিদদের কাছে যাইতে অইব।’
--‘আপনি ইঞ্জিনিয়ারের বই পড়ে যদি মেডিকেল সাইন্স বুঝতে চান, সেটা কেমন দেখায় না?’
--‘তুই কইবার চাস মেডিকেল সাইন্স নিয়া আমাগোর ঘাঁটাঘাঁটি করবার অধিকার নাই?’
--‘থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। তবে মিথ্যাচার করার অধিকার কারও নেই।’
--‘তুই কইবার চাস অভিজিৎ দাদা মিসা কতা লিখছে তার বইডার মধ্যে?’
--‘শুধুই কি মিথ্যা? তার গোটা বইটাই তো মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে সাজানো।’
--‘দাদা তো বইডার মধ্যে রেফারেন্স দিয়াই লিখছে, না কি?’
--‘রেফারেন্স দিয়েছে, কিন্তু ভুল গবেষণার।’
--‘ভুল?’
--‘জি, ভাই। ভুল।’
--‘যেমন?’
--‘অভিজিৎ রায় গে-জীনের কথা উল্লেখ করেছেন। এরপর দাবি করেছেন, সমকামিতার জন্যে গে-জীন দায়ী। কিন্তু তথাকথিত গে-জীনের ফাদার উপাধিপ্রাপ্ত Dr. Dean Hamer, গে-জীনের কথা অস্বীকার করেছেন। Scientific সমকামিতা কি জীনবিদ্যার সাথে সম্পর্কিত? উত্তরে তিনি ‘Absolutely not.’
The Human Genome প্রজেক্ট শুরু হয় ১৯৯০ সালে। শেষ হয় ২০০৩ সালে। এ প্রজেক্টে মানুষের জীন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা হয়। কিন্তু তারা গে-জীনের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পায়নি। Dr. George Rice, Dr. Neil and Whitehead, Drs. William Byne, Bruce Parsons এসব বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, মানুষ কখনোই জন্মগতভাবে সমকামী হতে পারে না।
এ ছাড়াও অনেক বিজ্ঞানী হেমারের গবেষণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। মানুষ কখনো জন্মগতভাবে সমকামী হতে পারে না। Laumann এর গবেষণায় দেখা যায় সমকামিতা সৃষ্টিতে শহুরে পরিবেশ, গ্রাম্য পরিবেশের তুলনায় বেশি ভূমিকা পালন করে। যদি সমকামিতা জেনেটিকই হতো, তাহলে তো সব স্থানে এর বিস্তার সমান হওয়ার কথা ছিল। সমকামিতা জেনেটিক বিষয় নয়; এটা আবেগ, কৌতূহল, আকর্ষণ ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফলেই সৃষ্টি হয়। সমকামী সম্পর্ক অস্থায়ী। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। এখন বলেন তো ভাই, অভিজিৎ রায় কী মিথ্যা তথ্য দেননি?’
.
রফিক ভাইকে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। তিনি চুপ রইলেন। চুপ থাকারই কথা। তাঁর প্রিয় দাদা যে এতবড় ভুল করবেন তা কি আর তিনি জানতেন? জানবেনই-বা কী করে? বেচারা পড়াশোনা করেছেন কমার্স নিয়ে। বিজ্ঞান নিয়ে যে দু-কলম জেনেছেন সেটাও নিজের জ্ঞানে না, অন্যদের থেকে ধার করে। কখনো ধার করেছেন ব্লগ থেকে, কখনো বা বিজ্ঞানমনস্ক কলাবিভাগের ছাত্রের কাছ থেকে। যাদের কাছ থেকে ধার করেছেন, তারাও আবার কারও কাছ থেকে ধার করে লিখেছে। সত্য-মিথ্যা মিলিয়েই লিখেছে।
.
তাই বিজ্ঞানের ভুল জ্ঞান তাঁর কাছে থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক, সে পরে দেখা যাবে। কিন্তু এখন তাঁর গুরুকে ফারিস মিথ্যাবাদী প্রমাণ করবে, আর তিনি বসে বসে দেখবেন, তা কি হয়? যে করেই হোক ফারিসকে হারাতে হবে। তাই তো তিনি বলে উঠলেন, ‘তোর আগের কথাডা মাইনা নিলাম। কিন্তু বিজ্ঞান তো এইডাও প্রমাণ করছে সমকামীদের মগজ অন্যদের থেইকা আলাদা। তাইলে মিছা মিছা দাদারে দুশ দিয়া লাভ কী?’
.
প্রশ্ন শেষ করে রফিক ভাই কফির কাপে চুমুক দিলেন। তাঁর মুখের চিন্তার ছাপটা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, নে বেটা, পারলে আমার এই প্রশ্নের জবাব দে? দেখি তোর মুরোদটা কেমন! তিনি যা ভাবার ভাবুন। তাতে কিছু আসে যায় না। ফারিস যে তাঁর প্রশ্নের উচিত জবাব দেবে, সে আমার বুঝতে বাকি নেই। ফারিস তাৎক্ষণিক বলে উঠল, এটাও আপনি অভিজিৎ রায়ের বই থেকে বলছেন, তাই না ভাই?’
--‘না মানে...’
--‘অভিজিৎ রায় Dr. Simon Levay-এর একটি গবেষণাকে কেন্দ্র করে এ তথ্যটা দিয়েছেন। যদিও পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা এই তথ্যকে বাতিল করে দিয়েছেন।’
.
Dr. Simon Levay তাঁর গবেষণায় কী বলেছিলেন, তা জানতে ইচ্ছে করছিল। তাই ফারিসকে প্রশ্ন করলাম, ‘ডক্টর সাহেব কী বলেছিলেন রে?’
--‘ডক্টর সাহেব বলেছেন, হাইপোথ্যালামাসের Cluster cell ভিন্ন। তাই সমকামিতা জন্মগতভাবে লাভ করা সম্ভব।’
--‘তাঁর গবেষণা বিজ্ঞানমহলে বাতিল হওয়ার কারণ কী?’
--‘তাঁর গবেষণা ছিল দুর্বল।’
--‘কেন?’
--‘তিনি যে সমকামীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন, তারা এইডস রোগে মারা গিয়েছিল। তাই তাঁর গবেষণার বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রফেসর Dr. A. Dean Byrd সহ অনেকেই তাঁর গবেষণাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক স্থির নয়, পরিবর্তনশীল। কেউ যখন একটা কাজ বার বার করতে থাকে, তখন নির্দিষ্ট একটা নিউরাল পথ শক্তিশালী হয়। যখন এই নিউরাল পথ শক্তিশালী হয়, তখন এটি মস্তিষ্কের রসায়নে প্রতিফলিত হয়।
.
রফিক ভাইকে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। তিনি চুপ রইলেন। চুপ থাকারই কথা। তাঁর প্রিয় দাদা যে এতবড় ভুল করবেন তা কি আর তিনি জানতেন? জানবেনই-বা কী করে? বেচারা পড়াশোনা করেছেন কমার্স নিয়ে। বিজ্ঞান নিয়ে যে দু-কলম জেনেছেন সেটাও নিজের জ্ঞানে না, অন্যদের থেকে ধার করে। কখনো ধার করেছেন ব্লগ থেকে, কখনো বা বিজ্ঞানমনস্ক কলাবিভাগের ছাত্রের কাছ থেকে। যাদের কাছ থেকে ধার করেছেন, তারাও আবার কারও কাছ থেকে ধার করে লিখেছে। সত্য-মিথ্যা মিলিয়েই লিখেছে।
.
তাই বিজ্ঞানের ভুল জ্ঞান তাঁর কাছে থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক, সে পরে দেখা যাবে। কিন্তু এখন তাঁর গুরুকে ফারিস মিথ্যাবাদী প্রমাণ করবে, আর তিনি বসে বসে দেখবেন, তা কি হয়? যে করেই হোক ফারিসকে হারাতে হবে। তাই তো তিনি বলে উঠলেন, ‘তোর আগের কথাডা মাইনা নিলাম। কিন্তু বিজ্ঞান তো এইডাও প্রমাণ করছে সমকামীদের মগজ অন্যদের থেইকা আলাদা। তাইলে মিছা মিছা দাদারে দুশ দিয়া লাভ কী?’
.
প্রশ্ন শেষ করে রফিক ভাই কফির কাপে চুমুক দিলেন। তাঁর মুখের চিন্তার ছাপটা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, নে বেটা, পারলে আমার এই প্রশ্নের জবাব দে? দেখি তোর মুরোদটা কেমন! তিনি যা ভাবার ভাবুন। তাতে কিছু আসে যায় না। ফারিস যে তাঁর প্রশ্নের উচিত জবাব দেবে, সে আমার বুঝতে বাকি নেই। ফারিস তাৎক্ষণিক বলে উঠল, এটাও আপনি অভিজিৎ রায়ের বই থেকে বলছেন, তাই না ভাই?’
--‘না মানে...’
--‘অভিজিৎ রায় Dr. Simon Levay-এর একটি গবেষণাকে কেন্দ্র করে এ তথ্যটা দিয়েছেন। যদিও পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা এই তথ্যকে বাতিল করে দিয়েছেন।’
.
Dr. Simon Levay তাঁর গবেষণায় কী বলেছিলেন, তা জানতে ইচ্ছে করছিল। তাই ফারিসকে প্রশ্ন করলাম, ‘ডক্টর সাহেব কী বলেছিলেন রে?’
--‘ডক্টর সাহেব বলেছেন, হাইপোথ্যালামাসের Cluster cell ভিন্ন। তাই সমকামিতা জন্মগতভাবে লাভ করা সম্ভব।’
--‘তাঁর গবেষণা বিজ্ঞানমহলে বাতিল হওয়ার কারণ কী?’
--‘তাঁর গবেষণা ছিল দুর্বল।’
--‘কেন?’
--‘তিনি যে সমকামীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন, তারা এইডস রোগে মারা গিয়েছিল। তাই তাঁর গবেষণার বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রফেসর Dr. A. Dean Byrd সহ অনেকেই তাঁর গবেষণাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক স্থির নয়, পরিবর্তনশীল। কেউ যখন একটা কাজ বার বার করতে থাকে, তখন নির্দিষ্ট একটা নিউরাল পথ শক্তিশালী হয়। যখন এই নিউরাল পথ শক্তিশালী হয়, তখন এটি মস্তিষ্কের রসায়নে প্রতিফলিত হয়।
তাই ভিন্ন ভিন্ন পেশার লোকদের মধ্যে মস্তিষ্কের তারতম্য ঘটে। যিনি সাইন্টিস্ট আর যিনি কৃষক—দুজনের মস্তিষ্কের গঠন এক নয়, আলাদা। তুই শুনলে হয়তো আরও অবাক হবি, ডক্টর সাহেব নিজেই ২০০১ সালে তাঁর গবেষণার ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, “আমি প্রমাণ করিনি যে, সমকামিতা জেনেটিক। আমি সমকামিতার জেনেটিক কোনো কারণও বের করিনি।”’
.
ফারিসের কথায় রফিক ভাই প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেলেন। খাবেনই-বা না কেন? তাঁর দাদা বিজ্ঞানের নাম দিয়ে অপব্যাখ্যা করেছেন, তাঁর তো কষ্ট হবেই। অবশ্যি তা ছাড়া অভিজিতের কোনো উপায়ও নেই। বিজ্ঞান দিয়ে তো আর সমকামিতাকে জেনেটিক প্রমাণ করা যাবে না; যদি মিথ্যে দিয়ে হয় তো ক্ষতি কী?
.
--‘শুনলাম আমেরিকার মনোবিজ্ঞানীরা নাকি সমকামিতারে মানসিক রোগের চার্ট থেইকা বাদ দিছে? যদি দিয়াই থাকে, তাইলে তোর কথা কেমনে মানি? হেরা নিশ্চয়ই তোর চাইতে বিজ্ঞান বেশি জানে।’ রফিক ভাইয়ের প্রশ্ন ফারিসের কাছে।
ফারিস বেশ হাসিমুখে বলল, ‘ভাই আপনি জানেন কি, ১৯৭৩ সালের আগে আমেরিকায় সমকামিতাকে মানসিক ব্যাধি মনে করা হতো?’
--‘না, এইডা আমার জানা ছিল না।’
--‘সমকামিতাকে মানসিক ব্যাধির চার্ট থেকে বাদ দেওয়ার কারণ বিজ্ঞান নয়—অন্য কিছু।’
--‘তোরা না! সব কামোই খালি সন্দেহ খুঁজস। আইচ্ছা ক দেহি হেই কারণডা কী।’
--‘পলিটিকাল কারণ।’
--‘পলিটিকাল?’
--‘জি ভাই, পলিটিকাল। আমেরিকান রাজনৈতিক দলগুলো সমকামী ও তাদের প্রতি সহনশীলদের ভোট পাওয়ার জন্যে মনোবিজ্ঞান সংস্থাকে চাপ দিতে করতে থাকে। চাপের মুখে সংস্থাটি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। তবে তারা এটা বলার দুঃসাহস দেখায়নি যে, বিজ্ঞান এটা মেনে নিয়েছে। ২০০০ সালের মে মাসে American Psychiatric Association জানায়—এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, যা দিয়ে সমকামিতার পক্ষে বায়োলজিক্যাল প্রমাণ দাঁড় করানো যায়।
.
রফিক ভাই এবার চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসলেন। এরপর বললেন, ‘তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ব্যক্তি-স্বাধীনতা বইলা তো একটা কথা আছে, নাকি? সমকামীরা তো আমাগোর সমাজে কোনো ক্ষতি করতাছে না। তাইলে তাগো পিছনে লাইগ্যা লাভ কী? তারা তাগোর কাম করুক, আমরা আমাগোর কামে টাইম দেই। হেইডাই আমাগোর লাইগ্যা ভালা।’
--‘রফিক ভাই, একটা প্রশ্ন করি?’
--‘হ, কর।’
--‘কেউ যদি আপনার সামনে গাঁজা খায়, আপনি কি তাকে বাধা দেবেন?’
--‘বাধা দিমু না মানে? এইডা তুই কী কস?’
--‘কেন বাধা দিবেন? গাঁজা খাওয়াটা তো ব্যক্তি-স্বাধীনতা! বাধা দিলে তো আপনি তার ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেন!’
--‘রাখ তোর স্বাধীনতা। গাঞ্জা খাইলে হের শরীলো কী পরিমাণ ক্ষতি অইব তুই জানস? তারে অবশ্যই এই কাম থেইকা ফিরাইয়্যা রাহন লাগব।’
--‘সমকামীদেরও বাধা না দিলে যে রোগব্যাধি তাদের শরীরে বাসা বাঁধবে, সে খেয়াল কে করবে ভাই?’
--‘মানে? তুই কী কইবার চাস?’
--‘ভাই, বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে—অ্যানাল সেক্স অন্য যেকোনো সেক্সের তুলনায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এর মাধ্যমে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজগুলো দ্রুত ছড়ায়। সমকামীদের মধ্যে এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়ার হার অনেক বেশি। অন্য যৌনরোগও তাদের বেশি হয়। গে-বাওয়েল সিনড্রোম সমকামীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তাই এর নাম রাখা হয়েছে গে-বাওয়েল সিনড্রোম। আচ্ছা রফিক ভাই, বলেন তো এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া রোগগুলোর মধ্যে কোনটা অধিক ক্ষতিকারক?’
--‘কোনডা আবার? এইডস। এইডা তো সবাই জানে। কারণ, এইডার কোনো অশুধ এহনো আবিষ্কার অয়নাই।’
--‘আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন, মরণঘাতী এইডসের অন্যতম কারণ সমকামিতা।’
.
--‘এইডা কি তর কতা? নাকি বিজ্ঞানীদের?’
.
ফারিসের কথায় রফিক ভাই প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেলেন। খাবেনই-বা না কেন? তাঁর দাদা বিজ্ঞানের নাম দিয়ে অপব্যাখ্যা করেছেন, তাঁর তো কষ্ট হবেই। অবশ্যি তা ছাড়া অভিজিতের কোনো উপায়ও নেই। বিজ্ঞান দিয়ে তো আর সমকামিতাকে জেনেটিক প্রমাণ করা যাবে না; যদি মিথ্যে দিয়ে হয় তো ক্ষতি কী?
.
--‘শুনলাম আমেরিকার মনোবিজ্ঞানীরা নাকি সমকামিতারে মানসিক রোগের চার্ট থেইকা বাদ দিছে? যদি দিয়াই থাকে, তাইলে তোর কথা কেমনে মানি? হেরা নিশ্চয়ই তোর চাইতে বিজ্ঞান বেশি জানে।’ রফিক ভাইয়ের প্রশ্ন ফারিসের কাছে।
ফারিস বেশ হাসিমুখে বলল, ‘ভাই আপনি জানেন কি, ১৯৭৩ সালের আগে আমেরিকায় সমকামিতাকে মানসিক ব্যাধি মনে করা হতো?’
--‘না, এইডা আমার জানা ছিল না।’
--‘সমকামিতাকে মানসিক ব্যাধির চার্ট থেকে বাদ দেওয়ার কারণ বিজ্ঞান নয়—অন্য কিছু।’
--‘তোরা না! সব কামোই খালি সন্দেহ খুঁজস। আইচ্ছা ক দেহি হেই কারণডা কী।’
--‘পলিটিকাল কারণ।’
--‘পলিটিকাল?’
--‘জি ভাই, পলিটিকাল। আমেরিকান রাজনৈতিক দলগুলো সমকামী ও তাদের প্রতি সহনশীলদের ভোট পাওয়ার জন্যে মনোবিজ্ঞান সংস্থাকে চাপ দিতে করতে থাকে। চাপের মুখে সংস্থাটি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। তবে তারা এটা বলার দুঃসাহস দেখায়নি যে, বিজ্ঞান এটা মেনে নিয়েছে। ২০০০ সালের মে মাসে American Psychiatric Association জানায়—এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, যা দিয়ে সমকামিতার পক্ষে বায়োলজিক্যাল প্রমাণ দাঁড় করানো যায়।
.
রফিক ভাই এবার চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসলেন। এরপর বললেন, ‘তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ব্যক্তি-স্বাধীনতা বইলা তো একটা কথা আছে, নাকি? সমকামীরা তো আমাগোর সমাজে কোনো ক্ষতি করতাছে না। তাইলে তাগো পিছনে লাইগ্যা লাভ কী? তারা তাগোর কাম করুক, আমরা আমাগোর কামে টাইম দেই। হেইডাই আমাগোর লাইগ্যা ভালা।’
--‘রফিক ভাই, একটা প্রশ্ন করি?’
--‘হ, কর।’
--‘কেউ যদি আপনার সামনে গাঁজা খায়, আপনি কি তাকে বাধা দেবেন?’
--‘বাধা দিমু না মানে? এইডা তুই কী কস?’
--‘কেন বাধা দিবেন? গাঁজা খাওয়াটা তো ব্যক্তি-স্বাধীনতা! বাধা দিলে তো আপনি তার ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেন!’
--‘রাখ তোর স্বাধীনতা। গাঞ্জা খাইলে হের শরীলো কী পরিমাণ ক্ষতি অইব তুই জানস? তারে অবশ্যই এই কাম থেইকা ফিরাইয়্যা রাহন লাগব।’
--‘সমকামীদেরও বাধা না দিলে যে রোগব্যাধি তাদের শরীরে বাসা বাঁধবে, সে খেয়াল কে করবে ভাই?’
--‘মানে? তুই কী কইবার চাস?’
--‘ভাই, বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে—অ্যানাল সেক্স অন্য যেকোনো সেক্সের তুলনায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এর মাধ্যমে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজগুলো দ্রুত ছড়ায়। সমকামীদের মধ্যে এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়ার হার অনেক বেশি। অন্য যৌনরোগও তাদের বেশি হয়। গে-বাওয়েল সিনড্রোম সমকামীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তাই এর নাম রাখা হয়েছে গে-বাওয়েল সিনড্রোম। আচ্ছা রফিক ভাই, বলেন তো এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া রোগগুলোর মধ্যে কোনটা অধিক ক্ষতিকারক?’
--‘কোনডা আবার? এইডস। এইডা তো সবাই জানে। কারণ, এইডার কোনো অশুধ এহনো আবিষ্কার অয়নাই।’
--‘আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন, মরণঘাতী এইডসের অন্যতম কারণ সমকামিতা।’
.
--‘এইডা কি তর কতা? নাকি বিজ্ঞানীদের?’
--‘আমার কথা কেন হবে ভাই? এটা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত। আমেরিকান সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও UNAIDS-এর রিপোর্ট এ কথা প্রমাণ করেছে। তারা দেখিয়েছে যে, সমকামিতা এইডসের বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। CDC-এর তথ্য থেকে আরও জানা যায়, ১৯৯৮ সালে আমারিকায় নতুন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪%-ই ছিল সমকামী। ২০০৯ সালের আগষ্ট মাসে প্রকাশিত CDC-এর একটি রিপোর্ট বলছে, অন্যদের চেয়ে এইডস সংক্রমণের হার সমকামীদের বেশি। অনেক বেশি। প্রায় ৫০ গুণ বেশি। UNAIDS-এর ২০১৫ সালের রিপোর্টও একই কথাই বলেছে।’
.
ফারিসের কথা শুনে রফিক ভাইয়ের মাথা ধরছে মনে হলো। তাঁর কপালের ভাঁজ স্পষ্টতই দৃশ্যমান হচ্ছে। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, ‘যাকগে! আর প্রশ্ন করার দরকার নেই। না জানি কোন বিপদ হয়। যেভাবে ফারিস আমার দাদার ভুলগুলো টেনে টেনে বের করছে, আবার কিছু বললে মনে হয় থলের বিড়াল সব বেরিয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং চুপ থাকি। চুপ থাকাই শ্রেয়।’
.
চুপচাপ ভাই কফি খাচ্ছেন। ফারিসও খাচ্ছে। আমি এক চুমুক দিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা ফারিস, সমকামিতা কি যৌনরোগ ছাড়া অন্যান্য রোগের জন্যেও দায়ী? যেমন, ক্যান্সার বা এই টাইপের কিছু?’
আমার প্রশ্ন শুনে ফারিস বলল, ‘গুড পয়েন্ট। অনেক সুন্দর একটা প্রশ্ন করছিস। নয়তো আমার এই পয়েন্টটা মনেই আসত না। জাঝাকাল্লাহ দোস্ত। সমকামিতা শুধু যৌনরোগই নয়, অন্যান্য রোগও ছড়ায়। ক্যান্সার হলো তাদের মধ্যে অন্যতম।’
.
--‘মেকানিজমটা কী, দোস্ত?’
--‘অ্যানাল সেক্সের ফলে মলাশয়গাত্রে অতি সহজেই ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে, যেটা তুই নিজেই বলেছিস। প্যাপিলোমা ভাইরাস সহজেই অ্যানাল রুট দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। ক্ষতের মাধ্যমে ভাইরাসটি দ্রুত রক্তের সাথে মিশে যায়। তাই অ্যানাল ক্যান্সার সমকামীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। Nursing Clinic of North America-এর ২০০৪ সালের একটি রিপোর্ট বলছে—এইডস আক্রান্ত ৯০% এবং এইডস ব্যতীত ৬৫% সমকামীদের দেহে Human Papilloma Virus আছে; যা ক্যান্সারের জন্যে দায়ী। সমকামীদের অ্যানাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বিষমকামীদের থেকে ১০ গুণ বেশি। আর এইডস আক্রান্ত সমকামীদের এ ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। প্রায় ২০ গুণ।’
.
--‘ক্যান্সার ছাড়া অন্য কিছুর ঝুঁকি তাদের মধ্যে কেমন?’
--‘অন্যান্য রোগও তাদের মধ্যে বেশি। যেমন ধর, হেপাটাইটিস-এ। এ রোগটি সমকামীদের বেশি হতে দেখা যায়। ১৯৯১ সালে নিউইয়র্কে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সে সময়ে ৭৮% হেপাটাইটিস-এ তে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিল সমকামী। এ ছাড়া বিভিন্ন প্যারাসাইটিক ও ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজও সমকামীদের বেশি হয়ে থাকে।’
--‘যেমন?’
--‘সালমোনেলা সম্পর্কে ধারণা আছে?’
--‘হুম, আছে। কিন্তু এটি তো যৌনবাহিত রোগ নয়।’
--‘তা নয়। তবে যৌনসংশ্লিষ্ট সালমোনেলার প্রধান কারণ ওরাল-অ্যানাল এবং ওরাল-জেনিটাল যৌনসম্পর্ক।’
--‘ও আচ্ছা।’
--‘বল তো টাইফয়েড কোনো ধরনের রোগ?’
--‘এটি তো পানিবাহিত রোগ।’
--‘এর যৌনসংশ্লিষ্ট প্রকারটির অন্যতম মূল কারণ সমকামিতা। টাইফয়েড ছাড়াও মলাশয়ের প্রদাহ সমকামীদের মধ্যে অনেক কমন। এ ছাড়া গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামিডিয়া, এমিবিয়োসিস ইত্যাদি রোগগুলোও তাদের বেশি। অত্যন্ত বেশি। এসব রোগ থেকে অতি সহজেই মলাশয়ের প্রদাহ হতে পারে। সমকামী এইচআইভি আক্রান্তদের অনেকেই কাপোসিসারকোমা নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। অহ, ভালো কথা! রেক্টাল প্রলেপস ডিজিজের কথা মনে আছে?’
--‘হ্যাঁ, আছে।’
--‘এটি কাদের হয়?’
--‘যারা অ্যানাল রুটে সংগম করে তাদের।’
.
রফিক ভাই এতক্ষণ নিঃশব্দে বসে কেবল কফি পান করছিলেন। কিন্তু কাপটা এখন শূন্য, তাই সেটা টেবিলে রেখে দিলেন। তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। গরম যদিও কম, তবুও তিনি ঘামছেন। কেন ঘামছেন কে জানে! পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছিল।’
ফারিস চায় রফিক ভাই তাকে প্রশ্ন করুক। তবে প্যাঁচে ফেলার জন্যে নয়; জানার জন্যে। রফিক ভাইয়ের মাথায় মিথ্যার যে বসত গড়ে উঠেছে, সেটা দূর হোক। তিনি আলোর পথ খুঁজে পান। তাই রফিক ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে তাকে বেশ প্রসন্ন দেখালো। একটু মুচকি হেসে বলল, ‘কী প্রশ্ন, ভাই?’
--‘সমকামী পুলাগোরে সমস্যা অয়, হেইডা না হয় বুঝলাম, কিন্তু মাইয়্যাগো তো সমস্যা অইবার কতা না। তাইলে তাগোর সমকামিতা তো মাইনাই নেওন যায়। তুই কী কস?’
--‘সমকামী মেয়েরা মানে লেসবিয়ান যারা, তারা কি ওরাল সেক্স করে, নাকি অ্যানাল?’
--‘ওরাল।’
--‘কদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, ওরাল সেক্স নিয়ে একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বিবিসির অনলাইন পেইজে। সেটা দেখেছিলেন?’
.
--‘আমি কেমনে দেখমু? আমি কি সারাদিন বিবিসি লইয়া পইড়া থাহি? নাকি আমি বিবিসির সাংবাদিক? ভার্সিটিতে আমার অনেক কাম। কাম বাদ দিয়া এইসব চিপাচাপার খবর পড়ার মতন টাইম আমার নাই। কী লিখা আছে তুই-ই ক।’
--‘সে রিপোর্টে বলা হয়, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে গনোরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গনোরিয়া জীবাণু সাধারণত যৌনাঙ্গ, মলদ্বার বা গলার ভেতরে সংক্রমণ ঘটায়। এর মধ্যে গলার সংক্রমণই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অন্তত ৭৭টি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছে—গনোরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত তা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এর জন্যে দায়ী ওরাল সেক্স। ওরাল সেক্স গনোরিয়া জীবাণুকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ভয়ংকর মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া লেসবিয়ান নারীদের আরও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।’
--‘যেমন?’
--‘মাদকাসক্ত পুরুষের সঙ্গে লেসবিয়ানদের সঙ্গমের হার বিষমকামীদের থেকে ৩-৪ গুণ বেশি। এ ছাড়া লেসবিয়ানদের মধ্যে এইডসের হাই রিস্ক ফ্যাক্টর—ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগ এবিউজ, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদিতে জড়িত থাকার প্রবণতাও অত্যধিক।’
.
রফিক ভাইয়ের মতো যারা চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়েনি কোনো দিন, তারা কী করে জানবে, সমকামিতা কতটা খারাপ? ব্যক্তি-স্বাধীনতা জিন্দাবাদ বলে সমকামিতাকে সাপোর্ট করাটা অতিশয় ভয়ানক। সমকামিতা শুধু ব্যক্তিকেই নিঃশেষ করে না, সমাজকেও কলুষিত করে। সমকামিতার সাথে জীবন-মরণ সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। জীবনটাই যদি না থাকে, তাহলে অযথা মরীচিকার পেছনে দৌড়িয়ে লাভ কী? সমকামিতাকে যদি ব্যক্তি-স্বাধীনতা বলা হয়, তবে মদ্যপান, ধূমপান, ইয়াবা-সেবন এসবকেও তা-ই বলতে হবে। মানবাধিকার মানে যা ইচ্ছে তা-ই করা নয়, এই কথাটা রফিক ভাই যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততটাই মঙ্গল।
.
আমার কফি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফারিসের কাপে এখনো অবশ্যি কিছু বাকি আছে। ফারিস শেষ চুমুকটা দিয়ে বলল, ‘সমকামিতার আরও বড় সমস্যা হলো একটা সময় সমকামীদের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায়।’
--‘বিকৃত হইয়্যা যায় মানে? কস কী আবোল-তাবোল? এইসব ইনফরমেশন তোরে কেডায় দিছে?’ রফিক ভাই খানিকটা উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলেন।
--‘Coprofilia কাকে বলে জানেন ভাই?’ ফারিসের পাল্টা প্রশ্ন রফিক ভাইয়ের কাছে।
.
রফিক ভাই না-সূচক মাথা নাড়লেন। এরপর চেয়ারে হেলান দিয়ে কফির কাপের দিকে মনোযোগ দিলেন। কফি তাঁর অনেক আগেই শেষ। তাই কফির কাপটা ঘুরাতে লাগলেন আর ফারিসের দিকে তাকিয়ে রইলেন। রফিক ভাইয়ের উত্তরটা জানা ছিল না, তাই উত্তরটা ফারিসই দিলো।
ফারিস বলল, ‘Coprofilia হলো এমন একটি যৌন আচরণ, যেখানে ব্যক্তি মলমূত্রের সংস্পর্শে এসে আনন্দ পায়। ফিনল্যান্ডের একটি সার্ভে থেকে জানা যায়, ১৭% সমকামী এই অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত। একবার চিন্তা করুন ভাই, সমকামীরা মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। তারপরেও এই অস্বাভাবিক যৌনাচার তাদের মধ্যে ১৭%। আনুপাতিক বিচারে এই পারসেন্টেজটা তাহলে কত বিশাল? এ ছাড়াও সমকামীদের মধ্যে ধর্ষকাম বেশি দেখা যায়। ৩৭% সমকামীই ধর্ষকামে লিপ্ত।
সমকামীরা যৌনতাড়িত বেশি হয়। একটা পর্যায়ে সমকামীরা আত্মবিধ্বংসী চিন্তা-চেতনার অধিকারী হয়ে যায়। New York Times এর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সমকামী ব্যক্তির এইডসের ভাইরাস ছড়ানোর পরেও তার কোনো অনুতাপ নেই। কোনো অনুশোচনা নেই। এ ছাড়া সমকামীরা উন্নাসিক প্রকৃতির হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথাই থাকে না। অপর দিকে Bagley ও Tremblay-এর রিসার্চ থেকে দেখা যায়, সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ২ থেকে ১৩.৯ গুণ বেশি।’
.
ফারিসের পাশে বসা রফিক ভাই এতক্ষণ চুপই ছিলেন। কিন্তু ফারিসের কথা শুনে যেন তাঁর টনক নড়ে উঠল। ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। তিনি কিছুটা মোটা গলায় বললেন, ‘তোর লাস্ট পয়েন্টটার সাথে আমি একমত হইতে পারলাম না, ফারিস।’
--‘কেন ভাই?’
--‘আত্মহত্যা কস আর মানসিক সমস্যাই কস, এইগুলার জন্যে সমকামীরা দায়ী না। এইডার জন্যে দায়ী হোমোফোবিয়া। দায়ী সমাজের হুজুররা। যারা উঠতে বইতে সমকামীদের বিরোধিতা করে। আর হোমোফোবিয়া ছড়াইবার কাম করে। সমকামীদের সামাজিকভাবে মাইন্যা নিলে এই সমস্যাডা আর থাকব না।’
-- ‘ভাইয়ের নিশ্চয় জানা আছে, নেদারল্যান্ডে সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ?’
--‘হ জানি। জানুম না কেন?’
.
--‘ভালো। নেদারল্যান্ডের General Psychiatry-এর দেওয়া তাদের দেশে সমকামীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা অনেক বেশি। সমকামীরা বেশি মেন্টাল ডিপ্রেশনে ভোগে। কানাডা একটি উদার রাষ্ট্র, যেখানে সমকামিতা সাধারণ বিষয়। কানাডায় বছরে যে ক’টি আত্মহত্যা ঘটে, তার মধ্যে ৩০% আত্মহত্যাকারী সমকামী। একটু লক্ষ করুন, ভাই। এসব রাষ্ট্রে হোমোফোবিয়া নেই, তারপরেও সেখানে সমকামীদের মানসিক সমস্যা অত্যধিক। আর এ থেকেই বোঝা যায়, সমকামীদের মানসিক সমস্যার কারণ হোমোফোবিয়া নয়, হুজুররাও নয়। ওরা নিজেরাই এর জন্যে দায়ী। তাদের যৌন-উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনই এর জন্যে দায়ী।’
--‘আইচ্ছা ফারিস, সমকামিতা তো খৃষ্টের জন্মেরও অনেক আগে থেইকাই চইলা আইতাছে। তাইলে এইডারে কি স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে ধরা যাইব না?’
--‘ধর্ষণকে কি আপনি স্বাভাবিক আচরণ মনে করেন?’
--‘পাগলে কয় কী? হা হা হা। সাত খণ্ড রামায়ণ পইড়া কয় শিতা কার বাপ। ধর্ষণরে কি কোনো সুস্থ মানুষ স্বাভাবিক আচরণ বইলা মাইনা নিব? হা হা হা।’
--‘কেন নেবে না, ভাই? আপনার আপত্তি কোথায়? ধর্ষণ তো খৃষ্টের জন্মের অনেক আগে থেকে চলে আসছে।’
.
রফিক ভাই চুপচাপ। কফির কাপটিকে ঘুরাচ্ছেন। কপাল ভাঁজ করে কী যেন চিন্তা করছেন। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, ‘আমার শেষ টোপটাও ফারিসকে গেলানো গেল না।’ রফিক ভাইয়ের নিস্তব্ধতা আমাকে সত্যিই আনন্দিত করছে। লোকটা অনেক ফাঁক-ফোকর খুঁজে ফারিসকে আটকানোর চেষ্টা করল। কোনোটাই কোনো কাজে আসল না। আসলে মিথ্যে যতই বিশাল হোক না কেন, তার স্থিতি নেই। মিথ্যে তো সমুদ্রের ফেনার মতো। ফেনা তো বিলীন হয়েই যায়।
.
রফিক ভাই চুপ করে আছেন দেখে ফারিস বলল, ‘সমকামিতাকে সহজলভ্য করার জন্যে আমেরিকাকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। আমেরিকা এক যৌনবিকারগ্রস্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যৌনরোগ সেখানে মহামারি আকার ধারণ করেছে। ওদের ৬৫ মিলিয়ন নাগরিক বিভিন্ন যৌনরোগে আক্রান্ত। শুধু HIV-তে আক্রান্ত ১.২ মিলিয়ন নাগরিক। যার ৫৪% সমকামী। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৫% হলো সমকামী। তুলনামূলক অনুপাতে সমকামীরা একেবারেই নগণ্য, কিন্তু সংক্রমণের দিক থেকে এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
শুধু ২০১২ সালে প্রায় পনেরো হাজার এইডসর রোগী মারা যায়। যাদের মধ্যে ম্যাক্সিমামই হলো গে অথবা লেসবিয়ান। যৌনরোগগুলোর ৫৭% সমকামীদের দ্বারা ছড়ায়। রফিক ভাই, একটু ভাবুন। ভেবে দেখুন, সমকামিতা কতটা ভয়ানক ব্যাধি। সমাজের জন্যে কতটা ক্ষতিকর। ব্যক্তির জন্যে কতটা ধ্বংসাত্মক। এর পরেও যদি সমকামিতার বিরোধিতা করার জন্যে হুজুরদের সমালোচনা করেন, তো আমার বলার কিছুই নেই। অ্যাজ ইওর উইশ, ব্রাদার।’
.
.
ফারিসের কথা শুনে রফিক ভাইয়ের মাথা ধরছে মনে হলো। তাঁর কপালের ভাঁজ স্পষ্টতই দৃশ্যমান হচ্ছে। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, ‘যাকগে! আর প্রশ্ন করার দরকার নেই। না জানি কোন বিপদ হয়। যেভাবে ফারিস আমার দাদার ভুলগুলো টেনে টেনে বের করছে, আবার কিছু বললে মনে হয় থলের বিড়াল সব বেরিয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং চুপ থাকি। চুপ থাকাই শ্রেয়।’
.
চুপচাপ ভাই কফি খাচ্ছেন। ফারিসও খাচ্ছে। আমি এক চুমুক দিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা ফারিস, সমকামিতা কি যৌনরোগ ছাড়া অন্যান্য রোগের জন্যেও দায়ী? যেমন, ক্যান্সার বা এই টাইপের কিছু?’
আমার প্রশ্ন শুনে ফারিস বলল, ‘গুড পয়েন্ট। অনেক সুন্দর একটা প্রশ্ন করছিস। নয়তো আমার এই পয়েন্টটা মনেই আসত না। জাঝাকাল্লাহ দোস্ত। সমকামিতা শুধু যৌনরোগই নয়, অন্যান্য রোগও ছড়ায়। ক্যান্সার হলো তাদের মধ্যে অন্যতম।’
.
--‘মেকানিজমটা কী, দোস্ত?’
--‘অ্যানাল সেক্সের ফলে মলাশয়গাত্রে অতি সহজেই ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে, যেটা তুই নিজেই বলেছিস। প্যাপিলোমা ভাইরাস সহজেই অ্যানাল রুট দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। ক্ষতের মাধ্যমে ভাইরাসটি দ্রুত রক্তের সাথে মিশে যায়। তাই অ্যানাল ক্যান্সার সমকামীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। Nursing Clinic of North America-এর ২০০৪ সালের একটি রিপোর্ট বলছে—এইডস আক্রান্ত ৯০% এবং এইডস ব্যতীত ৬৫% সমকামীদের দেহে Human Papilloma Virus আছে; যা ক্যান্সারের জন্যে দায়ী। সমকামীদের অ্যানাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বিষমকামীদের থেকে ১০ গুণ বেশি। আর এইডস আক্রান্ত সমকামীদের এ ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। প্রায় ২০ গুণ।’
.
--‘ক্যান্সার ছাড়া অন্য কিছুর ঝুঁকি তাদের মধ্যে কেমন?’
--‘অন্যান্য রোগও তাদের মধ্যে বেশি। যেমন ধর, হেপাটাইটিস-এ। এ রোগটি সমকামীদের বেশি হতে দেখা যায়। ১৯৯১ সালে নিউইয়র্কে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সে সময়ে ৭৮% হেপাটাইটিস-এ তে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিল সমকামী। এ ছাড়া বিভিন্ন প্যারাসাইটিক ও ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজও সমকামীদের বেশি হয়ে থাকে।’
--‘যেমন?’
--‘সালমোনেলা সম্পর্কে ধারণা আছে?’
--‘হুম, আছে। কিন্তু এটি তো যৌনবাহিত রোগ নয়।’
--‘তা নয়। তবে যৌনসংশ্লিষ্ট সালমোনেলার প্রধান কারণ ওরাল-অ্যানাল এবং ওরাল-জেনিটাল যৌনসম্পর্ক।’
--‘ও আচ্ছা।’
--‘বল তো টাইফয়েড কোনো ধরনের রোগ?’
--‘এটি তো পানিবাহিত রোগ।’
--‘এর যৌনসংশ্লিষ্ট প্রকারটির অন্যতম মূল কারণ সমকামিতা। টাইফয়েড ছাড়াও মলাশয়ের প্রদাহ সমকামীদের মধ্যে অনেক কমন। এ ছাড়া গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামিডিয়া, এমিবিয়োসিস ইত্যাদি রোগগুলোও তাদের বেশি। অত্যন্ত বেশি। এসব রোগ থেকে অতি সহজেই মলাশয়ের প্রদাহ হতে পারে। সমকামী এইচআইভি আক্রান্তদের অনেকেই কাপোসিসারকোমা নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। অহ, ভালো কথা! রেক্টাল প্রলেপস ডিজিজের কথা মনে আছে?’
--‘হ্যাঁ, আছে।’
--‘এটি কাদের হয়?’
--‘যারা অ্যানাল রুটে সংগম করে তাদের।’
.
রফিক ভাই এতক্ষণ নিঃশব্দে বসে কেবল কফি পান করছিলেন। কিন্তু কাপটা এখন শূন্য, তাই সেটা টেবিলে রেখে দিলেন। তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। গরম যদিও কম, তবুও তিনি ঘামছেন। কেন ঘামছেন কে জানে! পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছিল।’
ফারিস চায় রফিক ভাই তাকে প্রশ্ন করুক। তবে প্যাঁচে ফেলার জন্যে নয়; জানার জন্যে। রফিক ভাইয়ের মাথায় মিথ্যার যে বসত গড়ে উঠেছে, সেটা দূর হোক। তিনি আলোর পথ খুঁজে পান। তাই রফিক ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে তাকে বেশ প্রসন্ন দেখালো। একটু মুচকি হেসে বলল, ‘কী প্রশ্ন, ভাই?’
--‘সমকামী পুলাগোরে সমস্যা অয়, হেইডা না হয় বুঝলাম, কিন্তু মাইয়্যাগো তো সমস্যা অইবার কতা না। তাইলে তাগোর সমকামিতা তো মাইনাই নেওন যায়। তুই কী কস?’
--‘সমকামী মেয়েরা মানে লেসবিয়ান যারা, তারা কি ওরাল সেক্স করে, নাকি অ্যানাল?’
--‘ওরাল।’
--‘কদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, ওরাল সেক্স নিয়ে একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বিবিসির অনলাইন পেইজে। সেটা দেখেছিলেন?’
.
--‘আমি কেমনে দেখমু? আমি কি সারাদিন বিবিসি লইয়া পইড়া থাহি? নাকি আমি বিবিসির সাংবাদিক? ভার্সিটিতে আমার অনেক কাম। কাম বাদ দিয়া এইসব চিপাচাপার খবর পড়ার মতন টাইম আমার নাই। কী লিখা আছে তুই-ই ক।’
--‘সে রিপোর্টে বলা হয়, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে গনোরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গনোরিয়া জীবাণু সাধারণত যৌনাঙ্গ, মলদ্বার বা গলার ভেতরে সংক্রমণ ঘটায়। এর মধ্যে গলার সংক্রমণই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অন্তত ৭৭টি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছে—গনোরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত তা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এর জন্যে দায়ী ওরাল সেক্স। ওরাল সেক্স গনোরিয়া জীবাণুকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ভয়ংকর মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া লেসবিয়ান নারীদের আরও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।’
--‘যেমন?’
--‘মাদকাসক্ত পুরুষের সঙ্গে লেসবিয়ানদের সঙ্গমের হার বিষমকামীদের থেকে ৩-৪ গুণ বেশি। এ ছাড়া লেসবিয়ানদের মধ্যে এইডসের হাই রিস্ক ফ্যাক্টর—ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগ এবিউজ, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদিতে জড়িত থাকার প্রবণতাও অত্যধিক।’
.
রফিক ভাইয়ের মতো যারা চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়েনি কোনো দিন, তারা কী করে জানবে, সমকামিতা কতটা খারাপ? ব্যক্তি-স্বাধীনতা জিন্দাবাদ বলে সমকামিতাকে সাপোর্ট করাটা অতিশয় ভয়ানক। সমকামিতা শুধু ব্যক্তিকেই নিঃশেষ করে না, সমাজকেও কলুষিত করে। সমকামিতার সাথে জীবন-মরণ সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। জীবনটাই যদি না থাকে, তাহলে অযথা মরীচিকার পেছনে দৌড়িয়ে লাভ কী? সমকামিতাকে যদি ব্যক্তি-স্বাধীনতা বলা হয়, তবে মদ্যপান, ধূমপান, ইয়াবা-সেবন এসবকেও তা-ই বলতে হবে। মানবাধিকার মানে যা ইচ্ছে তা-ই করা নয়, এই কথাটা রফিক ভাই যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততটাই মঙ্গল।
.
আমার কফি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফারিসের কাপে এখনো অবশ্যি কিছু বাকি আছে। ফারিস শেষ চুমুকটা দিয়ে বলল, ‘সমকামিতার আরও বড় সমস্যা হলো একটা সময় সমকামীদের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায়।’
--‘বিকৃত হইয়্যা যায় মানে? কস কী আবোল-তাবোল? এইসব ইনফরমেশন তোরে কেডায় দিছে?’ রফিক ভাই খানিকটা উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলেন।
--‘Coprofilia কাকে বলে জানেন ভাই?’ ফারিসের পাল্টা প্রশ্ন রফিক ভাইয়ের কাছে।
.
রফিক ভাই না-সূচক মাথা নাড়লেন। এরপর চেয়ারে হেলান দিয়ে কফির কাপের দিকে মনোযোগ দিলেন। কফি তাঁর অনেক আগেই শেষ। তাই কফির কাপটা ঘুরাতে লাগলেন আর ফারিসের দিকে তাকিয়ে রইলেন। রফিক ভাইয়ের উত্তরটা জানা ছিল না, তাই উত্তরটা ফারিসই দিলো।
ফারিস বলল, ‘Coprofilia হলো এমন একটি যৌন আচরণ, যেখানে ব্যক্তি মলমূত্রের সংস্পর্শে এসে আনন্দ পায়। ফিনল্যান্ডের একটি সার্ভে থেকে জানা যায়, ১৭% সমকামী এই অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত। একবার চিন্তা করুন ভাই, সমকামীরা মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। তারপরেও এই অস্বাভাবিক যৌনাচার তাদের মধ্যে ১৭%। আনুপাতিক বিচারে এই পারসেন্টেজটা তাহলে কত বিশাল? এ ছাড়াও সমকামীদের মধ্যে ধর্ষকাম বেশি দেখা যায়। ৩৭% সমকামীই ধর্ষকামে লিপ্ত।
সমকামীরা যৌনতাড়িত বেশি হয়। একটা পর্যায়ে সমকামীরা আত্মবিধ্বংসী চিন্তা-চেতনার অধিকারী হয়ে যায়। New York Times এর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সমকামী ব্যক্তির এইডসের ভাইরাস ছড়ানোর পরেও তার কোনো অনুতাপ নেই। কোনো অনুশোচনা নেই। এ ছাড়া সমকামীরা উন্নাসিক প্রকৃতির হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথাই থাকে না। অপর দিকে Bagley ও Tremblay-এর রিসার্চ থেকে দেখা যায়, সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ২ থেকে ১৩.৯ গুণ বেশি।’
.
ফারিসের পাশে বসা রফিক ভাই এতক্ষণ চুপই ছিলেন। কিন্তু ফারিসের কথা শুনে যেন তাঁর টনক নড়ে উঠল। ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। তিনি কিছুটা মোটা গলায় বললেন, ‘তোর লাস্ট পয়েন্টটার সাথে আমি একমত হইতে পারলাম না, ফারিস।’
--‘কেন ভাই?’
--‘আত্মহত্যা কস আর মানসিক সমস্যাই কস, এইগুলার জন্যে সমকামীরা দায়ী না। এইডার জন্যে দায়ী হোমোফোবিয়া। দায়ী সমাজের হুজুররা। যারা উঠতে বইতে সমকামীদের বিরোধিতা করে। আর হোমোফোবিয়া ছড়াইবার কাম করে। সমকামীদের সামাজিকভাবে মাইন্যা নিলে এই সমস্যাডা আর থাকব না।’
-- ‘ভাইয়ের নিশ্চয় জানা আছে, নেদারল্যান্ডে সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ?’
--‘হ জানি। জানুম না কেন?’
.
--‘ভালো। নেদারল্যান্ডের General Psychiatry-এর দেওয়া তাদের দেশে সমকামীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা অনেক বেশি। সমকামীরা বেশি মেন্টাল ডিপ্রেশনে ভোগে। কানাডা একটি উদার রাষ্ট্র, যেখানে সমকামিতা সাধারণ বিষয়। কানাডায় বছরে যে ক’টি আত্মহত্যা ঘটে, তার মধ্যে ৩০% আত্মহত্যাকারী সমকামী। একটু লক্ষ করুন, ভাই। এসব রাষ্ট্রে হোমোফোবিয়া নেই, তারপরেও সেখানে সমকামীদের মানসিক সমস্যা অত্যধিক। আর এ থেকেই বোঝা যায়, সমকামীদের মানসিক সমস্যার কারণ হোমোফোবিয়া নয়, হুজুররাও নয়। ওরা নিজেরাই এর জন্যে দায়ী। তাদের যৌন-উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনই এর জন্যে দায়ী।’
--‘আইচ্ছা ফারিস, সমকামিতা তো খৃষ্টের জন্মেরও অনেক আগে থেইকাই চইলা আইতাছে। তাইলে এইডারে কি স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে ধরা যাইব না?’
--‘ধর্ষণকে কি আপনি স্বাভাবিক আচরণ মনে করেন?’
--‘পাগলে কয় কী? হা হা হা। সাত খণ্ড রামায়ণ পইড়া কয় শিতা কার বাপ। ধর্ষণরে কি কোনো সুস্থ মানুষ স্বাভাবিক আচরণ বইলা মাইনা নিব? হা হা হা।’
--‘কেন নেবে না, ভাই? আপনার আপত্তি কোথায়? ধর্ষণ তো খৃষ্টের জন্মের অনেক আগে থেকে চলে আসছে।’
.
রফিক ভাই চুপচাপ। কফির কাপটিকে ঘুরাচ্ছেন। কপাল ভাঁজ করে কী যেন চিন্তা করছেন। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, ‘আমার শেষ টোপটাও ফারিসকে গেলানো গেল না।’ রফিক ভাইয়ের নিস্তব্ধতা আমাকে সত্যিই আনন্দিত করছে। লোকটা অনেক ফাঁক-ফোকর খুঁজে ফারিসকে আটকানোর চেষ্টা করল। কোনোটাই কোনো কাজে আসল না। আসলে মিথ্যে যতই বিশাল হোক না কেন, তার স্থিতি নেই। মিথ্যে তো সমুদ্রের ফেনার মতো। ফেনা তো বিলীন হয়েই যায়।
.
রফিক ভাই চুপ করে আছেন দেখে ফারিস বলল, ‘সমকামিতাকে সহজলভ্য করার জন্যে আমেরিকাকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। আমেরিকা এক যৌনবিকারগ্রস্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যৌনরোগ সেখানে মহামারি আকার ধারণ করেছে। ওদের ৬৫ মিলিয়ন নাগরিক বিভিন্ন যৌনরোগে আক্রান্ত। শুধু HIV-তে আক্রান্ত ১.২ মিলিয়ন নাগরিক। যার ৫৪% সমকামী। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৫% হলো সমকামী। তুলনামূলক অনুপাতে সমকামীরা একেবারেই নগণ্য, কিন্তু সংক্রমণের দিক থেকে এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
শুধু ২০১২ সালে প্রায় পনেরো হাজার এইডসর রোগী মারা যায়। যাদের মধ্যে ম্যাক্সিমামই হলো গে অথবা লেসবিয়ান। যৌনরোগগুলোর ৫৭% সমকামীদের দ্বারা ছড়ায়। রফিক ভাই, একটু ভাবুন। ভেবে দেখুন, সমকামিতা কতটা ভয়ানক ব্যাধি। সমাজের জন্যে কতটা ক্ষতিকর। ব্যক্তির জন্যে কতটা ধ্বংসাত্মক। এর পরেও যদি সমকামিতার বিরোধিতা করার জন্যে হুজুরদের সমালোচনা করেন, তো আমার বলার কিছুই নেই। অ্যাজ ইওর উইশ, ব্রাদার।’
.
কথা বলতে বলতে কোন দিক দিয়ে যে এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে—বুঝতেই পারিনি। ফারিসের জাদুকরী কথার ছোঁয়ায় হারিয়ে গিয়েছিলাম মনে হয়। তাই ষাট মিনিটকে কয়েক মিনিটের মতো মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন এইমাত্রই এলাম।
.
ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছিল। আমি ফারিসকে ইশারা দিলাম। ও কথা থামিয়ে দিলো। সেদিনকার মতো রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বিদায় নিয়ে আমরা ফ্যাকাল্টির দিকে যাত্রা করলাম। চলে যাওয়ার সময় আমি ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। মুখটা বেশ শুকনো দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন বাংলার পাঁচ। পরাজিত সৈনিকের মতো মনে হচ্ছিল। তিনি আজও ফারিসের কাছে হেরেছেন। মারাত্মকভাবে হেরেছেন। আর হবেনই-না কেন? মিথ্যে কখনোই সত্যের সামনে জয়ী হতে পারে না। মিথ্যের সে ক্ষমতা নেই। মিথ্যে তো নিম্নগামী।
.
.
বই : সংবিৎ,
পৃষ্ঠা : ৬৮-৮৭
(সমর্পণ প্রকাশন, ২য় সংস্করণ, আগস্ট, ২০১৮)
.
অনেকদিন পর ফারিসের কথা মনে পড়লো, তাই রিপোস্ট করলাম। যারা ‘সংবিৎ’ বইটা পড়েননি, আশা করি তাদের উপকারে লাগবে।
.
তথ্যসূত্র :
1) Hamer DH, Hu S, Magnuson VL, Hu N, Pattatucci AM (July 1993). A linkage between DNA.
markers on the X chromosome and male sexual orientation". Science, 261 (5119) : 321–7.
2) S. S. Witkin and J. Sonnabend, “Immune Responses to Spermatozoa in Homosexual Men,” Fertility and Sterility, 39(3): 337-342, pp. 340-341 (1983).
3) New Evidence of a gay gene, by AnastasiaTouefexis, Time, November 13,1995, vol. 146, issue 20, p.95.
4) George Rice, et al., “Male Homosexuality: Absence of Linkage to Microsatellite Markers at Xq28”, Science, Vol. 284, p. 667.
5) William Byne and Bruce Parsons, “Human Sexual Orientation: The Biologic Theories Reappraised,” Archives of General Psychiatry, Vol. 50, March 1993: 228-239.
6) Laumann EO, Gagnon JH, Michael RT, Michaels S. 1994. The Social Organization of Sexuality. Chicago: University of Chicago Press
7) American Psychiatric Association . Fact sheet—“Gay,Lesbian and Bisexual Issues,”, May, 2000.
8) Henry Kazal, et al., “The gay bowel syndrome: Clinicopathologic correlation in 260 cases,” Annals of Clinical and Laboratory Science, 6(2): 184-192 (1976).
9) Hepatitis A among Homosexual Men—United States, Canada, and Australia,” Morbidity and Mortality Weekly Report, CDC, 41(09): 155, 161-164 (March 06, 1992).
10) Glen E. Hastings and Richard Weber, “Use of the term ‘Gay Bowel Syndrome’, reply to a letter to the editor, American Family Physician, 49(3): 582 (1994).
11) Paraphilias,” Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, Fourth Edition, Text Revision, p. 576, Washington: American Psychiatric Association, 2000;
12) Karla Jay and Allen Young, The Gay Report: Lesbians and Gay Men Speak Out About Sexual Experiences and Lifestyles, pp. 554-555, New York: Summit Books (1979).
13) Mads Melbye, Charles Rabkin, et al., “Changing patterns of anal cancer incidence in the United States, 1940-1989,” American Journal of Epidemiology, 139: 772-780, p. 779, Table 2 (1994).
14) N. Kenneth Sandnabba, Pekka Santtila, Niklas Nordling (August 1999). “Sexual Behavior and Social Adaptation Among Sadomasochistically-Oriented Males”. Journal of Sex Research.
15) Theo Sandfort, Ron de Graaf, et al., “Same-sex Sexual Behavior and Psychiatric Disorders,” Archives of General Psychiatry, 58(1): 85-91, p. 89 and Table 2 (January 2001).
16) Edward O. Laumann, John H. Gagnon, et al., The social organization of sexuality: Sexual practices in the United States, p. 293, Chicago: University of Chicago Press, 1994.
17) United States. HIV/AIDS Knowledge Base. University of California, San Francisco. Retrieved November 25, 2011.
18) “Estimating HIV Prevalence and Risk Behaviors of Transgender Persons in the United States: A Systematic Review”. AIDS Behav. 12 (1): 1–17. Jan 2008. doi:10.1007/s10461-007-9299-3. PMID 17694429.
19) Centers for Disease Control and Prevention, (CDC) (June 3, 2011). “HIV surveillance—United States, 1981–2008”. MMWR. Morbidity and mortality weekly report. 60 (21): 689–93. PMID 21637182.
20) R. R. Wilcox, “Sexual Behaviour and Sexually Transmitted Disease Patterns in Male Homosexuals,” British Journal of Venereal Diseases, 57(3): 167-169, 167 (1981).
21) C. M. Thorpe and G. T. Keutsch, “Enteric bacterial pathogens: Shigella, Salmonella, Campylobacter,” in K. K. Holmes, P. A. Mardh, et al., (Eds.), 22) Sexually Transmitted Diseases (3rd edition), New York: McGraw-Hill Health Professionals Division, 1999.
23) Wikipedia, Article: Homosexuality,
https://en.wikipedia.org/w/index.php…
24) Wikipedia, Article: Coprophilia,
https://simple.m.wikipedia.org/wiki/Coprophilia
25) Wikipedia, Article: HIV, https://en.m.wikipedia.org/wiki/HIV/AIDS
26) Wikipedia, Article: Sadism, https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sadism
27) http://www.bbc.com/bengali/news-40546773
28)http://www.cdc.gov/hiv/topics/msm/index.htm
29)http://www.springerlink.com/content/jx13231641717w48/
30)http://www.cdc.gov/hiv/resources/qa/qa22.htm
31)http://www.unaids.org/…/aboutuna…/unaidsstrategygoalsby2015/
32)http://www.cdc.gov/hiv/topics/surveillance/basic.htm…
33)http://www.journals.uchicago.edu/…/…/v38n2/30832/30832.html…
34)http://www2.law.ucla.edu/…/How-many-people-are-LGBT-Final.p…
35)http://www.theatlantic.com/…/no-scientists-have-not…/410059/
36)http://www.evolvedworld.com/…/it…/169-back-to-school-sex-101
37)http://www.yourtango.com/experts/ava-cadell–ph-d—ed-d/3-reasons-men-cheat
38)https://concernedwomen.org/images/content/bornorbred.pdf
39)http://www.youth-suicide.com/gay-bisexual/gbsuicide1.htm
.
ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছিল। আমি ফারিসকে ইশারা দিলাম। ও কথা থামিয়ে দিলো। সেদিনকার মতো রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বিদায় নিয়ে আমরা ফ্যাকাল্টির দিকে যাত্রা করলাম। চলে যাওয়ার সময় আমি ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। মুখটা বেশ শুকনো দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন বাংলার পাঁচ। পরাজিত সৈনিকের মতো মনে হচ্ছিল। তিনি আজও ফারিসের কাছে হেরেছেন। মারাত্মকভাবে হেরেছেন। আর হবেনই-না কেন? মিথ্যে কখনোই সত্যের সামনে জয়ী হতে পারে না। মিথ্যের সে ক্ষমতা নেই। মিথ্যে তো নিম্নগামী।
.
.
বই : সংবিৎ,
পৃষ্ঠা : ৬৮-৮৭
(সমর্পণ প্রকাশন, ২য় সংস্করণ, আগস্ট, ২০১৮)
.
অনেকদিন পর ফারিসের কথা মনে পড়লো, তাই রিপোস্ট করলাম। যারা ‘সংবিৎ’ বইটা পড়েননি, আশা করি তাদের উপকারে লাগবে।
.
তথ্যসূত্র :
1) Hamer DH, Hu S, Magnuson VL, Hu N, Pattatucci AM (July 1993). A linkage between DNA.
markers on the X chromosome and male sexual orientation". Science, 261 (5119) : 321–7.
2) S. S. Witkin and J. Sonnabend, “Immune Responses to Spermatozoa in Homosexual Men,” Fertility and Sterility, 39(3): 337-342, pp. 340-341 (1983).
3) New Evidence of a gay gene, by AnastasiaTouefexis, Time, November 13,1995, vol. 146, issue 20, p.95.
4) George Rice, et al., “Male Homosexuality: Absence of Linkage to Microsatellite Markers at Xq28”, Science, Vol. 284, p. 667.
5) William Byne and Bruce Parsons, “Human Sexual Orientation: The Biologic Theories Reappraised,” Archives of General Psychiatry, Vol. 50, March 1993: 228-239.
6) Laumann EO, Gagnon JH, Michael RT, Michaels S. 1994. The Social Organization of Sexuality. Chicago: University of Chicago Press
7) American Psychiatric Association . Fact sheet—“Gay,Lesbian and Bisexual Issues,”, May, 2000.
8) Henry Kazal, et al., “The gay bowel syndrome: Clinicopathologic correlation in 260 cases,” Annals of Clinical and Laboratory Science, 6(2): 184-192 (1976).
9) Hepatitis A among Homosexual Men—United States, Canada, and Australia,” Morbidity and Mortality Weekly Report, CDC, 41(09): 155, 161-164 (March 06, 1992).
10) Glen E. Hastings and Richard Weber, “Use of the term ‘Gay Bowel Syndrome’, reply to a letter to the editor, American Family Physician, 49(3): 582 (1994).
11) Paraphilias,” Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, Fourth Edition, Text Revision, p. 576, Washington: American Psychiatric Association, 2000;
12) Karla Jay and Allen Young, The Gay Report: Lesbians and Gay Men Speak Out About Sexual Experiences and Lifestyles, pp. 554-555, New York: Summit Books (1979).
13) Mads Melbye, Charles Rabkin, et al., “Changing patterns of anal cancer incidence in the United States, 1940-1989,” American Journal of Epidemiology, 139: 772-780, p. 779, Table 2 (1994).
14) N. Kenneth Sandnabba, Pekka Santtila, Niklas Nordling (August 1999). “Sexual Behavior and Social Adaptation Among Sadomasochistically-Oriented Males”. Journal of Sex Research.
15) Theo Sandfort, Ron de Graaf, et al., “Same-sex Sexual Behavior and Psychiatric Disorders,” Archives of General Psychiatry, 58(1): 85-91, p. 89 and Table 2 (January 2001).
16) Edward O. Laumann, John H. Gagnon, et al., The social organization of sexuality: Sexual practices in the United States, p. 293, Chicago: University of Chicago Press, 1994.
17) United States. HIV/AIDS Knowledge Base. University of California, San Francisco. Retrieved November 25, 2011.
18) “Estimating HIV Prevalence and Risk Behaviors of Transgender Persons in the United States: A Systematic Review”. AIDS Behav. 12 (1): 1–17. Jan 2008. doi:10.1007/s10461-007-9299-3. PMID 17694429.
19) Centers for Disease Control and Prevention, (CDC) (June 3, 2011). “HIV surveillance—United States, 1981–2008”. MMWR. Morbidity and mortality weekly report. 60 (21): 689–93. PMID 21637182.
20) R. R. Wilcox, “Sexual Behaviour and Sexually Transmitted Disease Patterns in Male Homosexuals,” British Journal of Venereal Diseases, 57(3): 167-169, 167 (1981).
21) C. M. Thorpe and G. T. Keutsch, “Enteric bacterial pathogens: Shigella, Salmonella, Campylobacter,” in K. K. Holmes, P. A. Mardh, et al., (Eds.), 22) Sexually Transmitted Diseases (3rd edition), New York: McGraw-Hill Health Professionals Division, 1999.
23) Wikipedia, Article: Homosexuality,
https://en.wikipedia.org/w/index.php…
24) Wikipedia, Article: Coprophilia,
https://simple.m.wikipedia.org/wiki/Coprophilia
25) Wikipedia, Article: HIV, https://en.m.wikipedia.org/wiki/HIV/AIDS
26) Wikipedia, Article: Sadism, https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sadism
27) http://www.bbc.com/bengali/news-40546773
28)http://www.cdc.gov/hiv/topics/msm/index.htm
29)http://www.springerlink.com/content/jx13231641717w48/
30)http://www.cdc.gov/hiv/resources/qa/qa22.htm
31)http://www.unaids.org/…/aboutuna…/unaidsstrategygoalsby2015/
32)http://www.cdc.gov/hiv/topics/surveillance/basic.htm…
33)http://www.journals.uchicago.edu/…/…/v38n2/30832/30832.html…
34)http://www2.law.ucla.edu/…/How-many-people-are-LGBT-Final.p…
35)http://www.theatlantic.com/…/no-scientists-have-not…/410059/
36)http://www.evolvedworld.com/…/it…/169-back-to-school-sex-101
37)http://www.yourtango.com/experts/ava-cadell–ph-d—ed-d/3-reasons-men-cheat
38)https://concernedwomen.org/images/content/bornorbred.pdf
39)http://www.youth-suicide.com/gay-bisexual/gbsuicide1.htm
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.