মুসলিমরা কী শিবলিঙ্গ আর দেবদেবীর পূজা করে?
মুসলিমরা কী শিবলিঙ্গ আর দেবদেবীর পূজা করে?
লেখকঃ আহমেদ আলি
.
(ইসলামবিদ্বেষীদের মিথ্যাচারের জবাব)
.
এইসব অভিযোগ শুনে মাঝে মাঝে confused হয়ে যাই - হাসব না কাঁদব!
.
হজ্জের ক্ষেত্রে যে কালো পাথরের গায়ে চুমু খাওয়া হল তাকে বলে "হাজরে আসওয়াদ"।
.
এখন কাল পাথর যে শিব লিঙ্গ - এর কোনো প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। পি এন ওয়াক নামে এক ব্যক্তি, (যার পুরো নাম পুরুষোত্তম নাগেশ ওয়াক) যে নিজেকেই নিজে ঐতিহাসিক দাবি করেছে, কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠিত মুসলিম বা অমুসলিম ঐতিহাসিকই ওনাকে ঐতিহাসিক বলে মেনে নেন নি। এই ব্যক্তিই এইসকল কল্পিত দাবি প্রথম ঢালাওভাবে প্রচার করা শুরু করে যে, হাজরে আসওয়াদ শিবলিঙ্গ, তাজমহল ছিল মন্দির ইত্যাদি ইত্যাদি, যেগুলোর কোনো প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
.
ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই কালো পাথরকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল কাবা ঘরের প্রতিষ্ঠার স্থানকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য।[১] এতে চুমু দেওয়া হচ্ছে হজ্জের রীতি সম্পন্নের একটি অংশ মাত্র। যেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই রীতি দেখিয়েছেন, তাই আমরাও এই রীতির অনুসরণ করি। কিন্তু এই কালো পাথরের কল্যাণ বা অক্যাণের কোনো ক্ষমতা নেই।
.
হাদিসে খলিফা উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলছেন,
.
"‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি হাজ্রে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।"[২]
.
অর্থাৎ এই পাথরকে কেউ পূজা করছে না, এটা মুশরিকদের বিকৃত চিন্তা!
.
একইভাবে পাথর ছোঁড়াটাও রীতি সম্পন্ন করার অংশ মাত্র। এটার মানে শয়তানকে মারা না। এটা একটা ভুল ধারণা। এগুলো কেবলই মানুষের মনগড়া চিন্তাধারা। আলিমদের ফতোয়ায় তারা এরকম ধারণাকে সমর্থন করেন নি।[৩]
এগুলো দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করছেন যে, এসকল ক্রিয়া তোমার কাছে অর্থহীন মনে হলেও তারপরও কি তুমি আমায় বিশ্বাস করবে আর আমি যে রীতির অনুসরণ এর পথ দেখিয়েছি তা মেনে চলবে? অর্থাৎ এগুলো দ্বারা বোঝায়, আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা।
.
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ
.
"মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।"[৪]
.
এভাবেই এসকল রীতি সঠিক ঈমান আর নিয়ত নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করলে আল্লাহ চাইলে কোনো ব্যক্তির পাপসমূহ নির্মূল করে দেবেন।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
.
"আল্লাহর শপথ, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ এটিকে (হাজরে আসওয়াদ) উপস্থিত করবেন। এর দুটো চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে ও একটি জিহ্বা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যারা তাকে আন্তরিকতার সাথে স্পর্শ করেছিল তাদের পক্ষে সে সাক্ষ্য দেবে।"[৫]
.
"যদি কেউ হজ্জ করে এবং তাতে কোনরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।"[৬]
.
.
কাবাঘরের ওপর দাঁড়িয়ে সাহাবাদের সময়ে আযান দেওয়া হত, যেটা প্রমাণ করে যে, কাবা ঘর কোনো পূজার বস্তু নয়, কেননা কোনো মূর্তিপূজারি তার উপাস্যের মূর্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্যদের প্রার্থনার জন্য কখনই আহবান করবে না!
.
কাবা হল কেবলই "কিবলা" অর্থাৎ দিক বা direction, যে দিকে বা অভিমুখে ফিরে সকল মুসলিম নামাজ আদায় করে, যাতে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। একটি বৃত্তের পরিধির ওপর অনেকগুলো বিন্দু থাকে। কিন্তু বৃত্তের কেন্দ্র একটিই থাকে, যাকে কেন্দ্র করে সকল বিন্দুই পরিধির ওপর অবস্থান করে। একইভাবে কাবাও হল সেই কেন্দ্রস্বরূপ আর মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি হল সেই এক একটি বিন্দু। তাই নামাজের সময় একেক মুসলিম একেক দিকে না ফিরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিবলামুখী হয় আর এক আল্লাহরই ইবাদত করে।
.
لَّيْسَ ٱلْبِرَّ أَن تُوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ قِبَلَ ٱلْمَشْرِقِ وَٱلْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلْبِرَّ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلْكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۦنَ وَءَاتَى ٱلْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ ذَوِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْيَتَٰمَىٰ وَٱلْمَسَٰكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ وَٱلسَّآئِلِينَ وَفِى ٱلرِّقَابِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَٰهَدُوا۟ۖ وَٱلصَّٰبِرِينَ فِى ٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلْبَأْسِۗ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ۖ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُتَّقُونَ
.
"পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোই সৎকর্ম নয়, কিন্তু সৎকর্ম হলো যে ব্যক্তি আল্লাহ্, শেষ দিবস, ফেরেশ্তাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনবে। আর সম্পদ দান করবে তাঁরই ভালবাসায় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করবে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করবে। তারাই সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।"[৭]
.
সবশেষে এই অভিযোগের জবাব দেব যে, আল্লাহ নামটি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তারই নাম।
.
যদি কলম এর দিকে আঙুল দেখিয়ে কেউ বলে যে, 'এটা হল কাগজ', তাহলে কলম কি কাগজ হয়ে যাবে? কখনই না।
একইভাবে কাবাঘরের মধ্যে দেবদেবীর মূর্তি রাখলে আর কোনো একটা দেবতাকে "আল্লাহ" নামে পূজা করলেই যে আল্লাহ তাআলা সেই দেবতা হয়ে যাবেন (নাউজুবিল্লাহ), এরূপ ভাবাও মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই না!
.
কাবাঘর প্রস্তুতির কাজ নবী ইব্রাহীম(আ) এর ওপর ন্যস্ত হয়েছিল যা প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিকরাও মেনে নেন। কোরআন বলছে,
.
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَٰهِيمَ مَكَانَ ٱلْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِى شَيْـًٔا وَطَهِّرْ بَيْتِىَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلْقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ
.
"আর স্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম কাবা গৃহের স্থান, (তখন বলেছিলাম,) আমার সাথে কোন শরীক স্থির করো না এবং আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, নামায আদায়কারী, রুকূ ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো।"[৮]
.
পরবর্তীতে ইব্রাহীম(আ) মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে অন্যান্য নবীরা আসেন এবং তারপরও কালের বিবর্তনে মানুষ প্রকৃত তাওহীদের শিক্ষাকে বিকৃত করে ফেলে এবং মুশরিকি ক্রিয়াকলাপ শুরু করে দেয়। তাই কাবাঘরে মূর্তিপূজা আর "আল্লাহ" নামে দেবতার পূজা করা এগুলো মানুষই চালু করেছে নবী ইব্রাহীম(আ) এর শিক্ষাকে বিকৃত করে। আল্লাহ বলেন,
.
وَٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةً لَّا يَخْلُقُونَ شَيْـًٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا وَلَا يَمْلِكُونَ مَوْتًا وَلَا حَيَوٰةً وَلَا نُشُورًا
.
"তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং নিজেদের ভালও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না এবং জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনের ও তারা মালিক নয়।"[৯]
.
একারণে তাওহীদের প্রকৃত শিক্ষাকে সংশোধন করে সেই বার্তা সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে চূড়ান্তরূপে তুলে ধরার জন্য সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আবির্ভাব ঘটে, যিনি কেবল মুসলিম বা আরব জাতির জন্যই নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ হতে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন!
.
إِنَّآ أَنزَلْنَا عَلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ لِلنَّاسِ بِٱلْحَقِّۖ فَمَنِ ٱهْتَدَىٰ فَلِنَفْسِهِۦۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۖ وَمَآ أَنتَ عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ
.
"(হে মুহাম্মাদ) আমি মানুষের জন্য তোমার প্রতি সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি; অতঃপর যে সৎপথ অবলম্বন করে, সে তা নিজেরই কল্যাণের জন্য করে এবং যে বিপথগামী হয়, সে তো বিপথগামী হয় নিজেরই ধ্বংসের জন্য। আর তুমি ওদের তত্ত্বাবধায়ক নও।[১০]
.
তাই ইসলামকে বিকৃত দৃষ্টিতে না দেখে আগে চিন্তাকে ইতিবাচক করুন। কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিতে ইসলামকে দেখলে এর অর্থ এটা নয় যে, ইসলামের চিত্র ঠিক সেরূপই যেরূপে সে কল্পনা করছে!
.
"মহম্মদের ধর্ম আবির্ভূত হয় জনসাধারণ এর জন্য বার্তারূপে। তাঁহার প্রথম বাণী ছিল-'সাম্য'। একমাত্র ধর্ম আছে-তাহা প্রেম। জাতি বর্ণ বা অন্য কিছুর প্রশ্ন নাই। এই সাম্যভাবে যোগ দাও! সেই কার্যে পরিণত সাম্যই জয়যুক্ত হইল। সেই মহতী বাণী ছিল খুব সহজ সরলঃ স্বর্গ ও মর্ত্যের স্রষ্টা এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী হও। শূন্য হইতে তিনি কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন। কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিও না।"
.
[স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী/৮ম খণ্ড/মহাপুরুষ-প্রসঙ্গ/মহম্মদ]
.
.
________________________
তথ্যসূত্র:
[১] It was narrated that Ibn ‘Abbaas said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “When the Black Stone came down from Paradise, it was whiter than milk, but the sins of the sons of Adam made it black.”
[Narrated by al-Tirmidhi, 877; Ahmad, 2792. Classed as saheeh by Ibn Khuzaymah, 4/219. Al-Haafiz ibn Hajar classed it as qawiy (strong) in Fath al-Baari, 3/462.
source - https://islamqa.info/en/1902]
[২] সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ২৫/ হাজ্জ (كتاب الحج)
হাদিস নম্বরঃ ১৫৯৭
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=25528
[৩] "...Some people think that these Jamaraat are devils, and that they are actually stoning devils, so you may see them becoming very emotional and very angry, as if the Shaytaan himself is in front of him, and this leads to the following grave errors:
1- This is a mistaken notion. We stone these Jamaraat as an act of remembering Allaah, following the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him), as an act of worship. If a person does an act of worship and does not know its benefits, but he does it only as an act of worship for Allaah, this will be more indicative of his humility and submission to Allaah......."
[ফতোয়াটি বিস্তারিত পড়তে ভিজিট করুন: https://islamqa.info/en/34420]
[৪] আল-কোরআন, ৪৯:১৫
[৫] It was narrated that Ibn ‘Abbaas said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said concerning the Stone: “By Allaah, Allaah will bring it forth on the Day of Resurrection, and it will have two eyes with which it will see and a tongue with which it will speak, and it will testify in favour of those who touched it in sincerity.”
[Narrated by al-Tirmidhi, 961; Ibn Maajah, 2944;
This hadeeth was classed as hasan by al-Tirmidhi, and as qawiy by al-Haafiz ibn Hajar in Fath al-Baari, 3/462
source - https://islamqa.info/en/1902]
[৬] সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)/অধ্যায়ঃ ৯/হাজ্জ (হজ্জ) (كتاب الحج عن رسول الله ﷺ)/হাদিস নম্বরঃ ৮০৯;
হাজ্জাতুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - পৃঃ ৫, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৮১১ (আল মাদানী প্রকাশনী);
হাদিসের মান: সহিহ
source - https://hadithbd.com/hadith-link.php?hid=17998
[৭] আল-কোরআন, ২:১৭৭
[৮] আল-কোরআন, ২২:২৬
[৯] আল-কোরআন, ২৫:৩
[১০] আল-কোরআন, ৩৯:৪১
======================
লেখকঃ আহমেদ আলি
.
(ইসলামবিদ্বেষীদের মিথ্যাচারের জবাব)
.
এইসব অভিযোগ শুনে মাঝে মাঝে confused হয়ে যাই - হাসব না কাঁদব!
.
হজ্জের ক্ষেত্রে যে কালো পাথরের গায়ে চুমু খাওয়া হল তাকে বলে "হাজরে আসওয়াদ"।
.
এখন কাল পাথর যে শিব লিঙ্গ - এর কোনো প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। পি এন ওয়াক নামে এক ব্যক্তি, (যার পুরো নাম পুরুষোত্তম নাগেশ ওয়াক) যে নিজেকেই নিজে ঐতিহাসিক দাবি করেছে, কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠিত মুসলিম বা অমুসলিম ঐতিহাসিকই ওনাকে ঐতিহাসিক বলে মেনে নেন নি। এই ব্যক্তিই এইসকল কল্পিত দাবি প্রথম ঢালাওভাবে প্রচার করা শুরু করে যে, হাজরে আসওয়াদ শিবলিঙ্গ, তাজমহল ছিল মন্দির ইত্যাদি ইত্যাদি, যেগুলোর কোনো প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
.
ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই কালো পাথরকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল কাবা ঘরের প্রতিষ্ঠার স্থানকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য।[১] এতে চুমু দেওয়া হচ্ছে হজ্জের রীতি সম্পন্নের একটি অংশ মাত্র। যেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই রীতি দেখিয়েছেন, তাই আমরাও এই রীতির অনুসরণ করি। কিন্তু এই কালো পাথরের কল্যাণ বা অক্যাণের কোনো ক্ষমতা নেই।
.
হাদিসে খলিফা উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলছেন,
.
"‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি হাজ্রে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।"[২]
.
অর্থাৎ এই পাথরকে কেউ পূজা করছে না, এটা মুশরিকদের বিকৃত চিন্তা!
.
একইভাবে পাথর ছোঁড়াটাও রীতি সম্পন্ন করার অংশ মাত্র। এটার মানে শয়তানকে মারা না। এটা একটা ভুল ধারণা। এগুলো কেবলই মানুষের মনগড়া চিন্তাধারা। আলিমদের ফতোয়ায় তারা এরকম ধারণাকে সমর্থন করেন নি।[৩]
এগুলো দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করছেন যে, এসকল ক্রিয়া তোমার কাছে অর্থহীন মনে হলেও তারপরও কি তুমি আমায় বিশ্বাস করবে আর আমি যে রীতির অনুসরণ এর পথ দেখিয়েছি তা মেনে চলবে? অর্থাৎ এগুলো দ্বারা বোঝায়, আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা।
.
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ
.
"মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।"[৪]
.
এভাবেই এসকল রীতি সঠিক ঈমান আর নিয়ত নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করলে আল্লাহ চাইলে কোনো ব্যক্তির পাপসমূহ নির্মূল করে দেবেন।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
.
"আল্লাহর শপথ, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ এটিকে (হাজরে আসওয়াদ) উপস্থিত করবেন। এর দুটো চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে ও একটি জিহ্বা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যারা তাকে আন্তরিকতার সাথে স্পর্শ করেছিল তাদের পক্ষে সে সাক্ষ্য দেবে।"[৫]
.
"যদি কেউ হজ্জ করে এবং তাতে কোনরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।"[৬]
.
.
কাবাঘরের ওপর দাঁড়িয়ে সাহাবাদের সময়ে আযান দেওয়া হত, যেটা প্রমাণ করে যে, কাবা ঘর কোনো পূজার বস্তু নয়, কেননা কোনো মূর্তিপূজারি তার উপাস্যের মূর্তির ওপর দাঁড়িয়ে অন্যদের প্রার্থনার জন্য কখনই আহবান করবে না!
.
কাবা হল কেবলই "কিবলা" অর্থাৎ দিক বা direction, যে দিকে বা অভিমুখে ফিরে সকল মুসলিম নামাজ আদায় করে, যাতে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। একটি বৃত্তের পরিধির ওপর অনেকগুলো বিন্দু থাকে। কিন্তু বৃত্তের কেন্দ্র একটিই থাকে, যাকে কেন্দ্র করে সকল বিন্দুই পরিধির ওপর অবস্থান করে। একইভাবে কাবাও হল সেই কেন্দ্রস্বরূপ আর মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি হল সেই এক একটি বিন্দু। তাই নামাজের সময় একেক মুসলিম একেক দিকে না ফিরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিবলামুখী হয় আর এক আল্লাহরই ইবাদত করে।
.
لَّيْسَ ٱلْبِرَّ أَن تُوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ قِبَلَ ٱلْمَشْرِقِ وَٱلْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلْبِرَّ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلْكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۦنَ وَءَاتَى ٱلْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ ذَوِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْيَتَٰمَىٰ وَٱلْمَسَٰكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ وَٱلسَّآئِلِينَ وَفِى ٱلرِّقَابِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَٰهَدُوا۟ۖ وَٱلصَّٰبِرِينَ فِى ٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلْبَأْسِۗ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ۖ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُتَّقُونَ
.
"পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোই সৎকর্ম নয়, কিন্তু সৎকর্ম হলো যে ব্যক্তি আল্লাহ্, শেষ দিবস, ফেরেশ্তাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনবে। আর সম্পদ দান করবে তাঁরই ভালবাসায় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করবে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করবে। তারাই সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।"[৭]
.
সবশেষে এই অভিযোগের জবাব দেব যে, আল্লাহ নামটি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তারই নাম।
.
যদি কলম এর দিকে আঙুল দেখিয়ে কেউ বলে যে, 'এটা হল কাগজ', তাহলে কলম কি কাগজ হয়ে যাবে? কখনই না।
একইভাবে কাবাঘরের মধ্যে দেবদেবীর মূর্তি রাখলে আর কোনো একটা দেবতাকে "আল্লাহ" নামে পূজা করলেই যে আল্লাহ তাআলা সেই দেবতা হয়ে যাবেন (নাউজুবিল্লাহ), এরূপ ভাবাও মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই না!
.
কাবাঘর প্রস্তুতির কাজ নবী ইব্রাহীম(আ) এর ওপর ন্যস্ত হয়েছিল যা প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিকরাও মেনে নেন। কোরআন বলছে,
.
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَٰهِيمَ مَكَانَ ٱلْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِى شَيْـًٔا وَطَهِّرْ بَيْتِىَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلْقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ
.
"আর স্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম কাবা গৃহের স্থান, (তখন বলেছিলাম,) আমার সাথে কোন শরীক স্থির করো না এবং আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, নামায আদায়কারী, রুকূ ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো।"[৮]
.
পরবর্তীতে ইব্রাহীম(আ) মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে অন্যান্য নবীরা আসেন এবং তারপরও কালের বিবর্তনে মানুষ প্রকৃত তাওহীদের শিক্ষাকে বিকৃত করে ফেলে এবং মুশরিকি ক্রিয়াকলাপ শুরু করে দেয়। তাই কাবাঘরে মূর্তিপূজা আর "আল্লাহ" নামে দেবতার পূজা করা এগুলো মানুষই চালু করেছে নবী ইব্রাহীম(আ) এর শিক্ষাকে বিকৃত করে। আল্লাহ বলেন,
.
وَٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةً لَّا يَخْلُقُونَ شَيْـًٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا وَلَا يَمْلِكُونَ مَوْتًا وَلَا حَيَوٰةً وَلَا نُشُورًا
.
"তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং নিজেদের ভালও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না এবং জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনের ও তারা মালিক নয়।"[৯]
.
একারণে তাওহীদের প্রকৃত শিক্ষাকে সংশোধন করে সেই বার্তা সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে চূড়ান্তরূপে তুলে ধরার জন্য সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আবির্ভাব ঘটে, যিনি কেবল মুসলিম বা আরব জাতির জন্যই নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ হতে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন!
.
إِنَّآ أَنزَلْنَا عَلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ لِلنَّاسِ بِٱلْحَقِّۖ فَمَنِ ٱهْتَدَىٰ فَلِنَفْسِهِۦۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۖ وَمَآ أَنتَ عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ
.
"(হে মুহাম্মাদ) আমি মানুষের জন্য তোমার প্রতি সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি; অতঃপর যে সৎপথ অবলম্বন করে, সে তা নিজেরই কল্যাণের জন্য করে এবং যে বিপথগামী হয়, সে তো বিপথগামী হয় নিজেরই ধ্বংসের জন্য। আর তুমি ওদের তত্ত্বাবধায়ক নও।[১০]
.
তাই ইসলামকে বিকৃত দৃষ্টিতে না দেখে আগে চিন্তাকে ইতিবাচক করুন। কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিতে ইসলামকে দেখলে এর অর্থ এটা নয় যে, ইসলামের চিত্র ঠিক সেরূপই যেরূপে সে কল্পনা করছে!
.
"মহম্মদের ধর্ম আবির্ভূত হয় জনসাধারণ এর জন্য বার্তারূপে। তাঁহার প্রথম বাণী ছিল-'সাম্য'। একমাত্র ধর্ম আছে-তাহা প্রেম। জাতি বর্ণ বা অন্য কিছুর প্রশ্ন নাই। এই সাম্যভাবে যোগ দাও! সেই কার্যে পরিণত সাম্যই জয়যুক্ত হইল। সেই মহতী বাণী ছিল খুব সহজ সরলঃ স্বর্গ ও মর্ত্যের স্রষ্টা এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী হও। শূন্য হইতে তিনি কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন। কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিও না।"
.
[স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী/৮ম খণ্ড/মহাপুরুষ-প্রসঙ্গ/মহম্মদ]
.
.
________________________
তথ্যসূত্র:
[১] It was narrated that Ibn ‘Abbaas said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “When the Black Stone came down from Paradise, it was whiter than milk, but the sins of the sons of Adam made it black.”
[Narrated by al-Tirmidhi, 877; Ahmad, 2792. Classed as saheeh by Ibn Khuzaymah, 4/219. Al-Haafiz ibn Hajar classed it as qawiy (strong) in Fath al-Baari, 3/462.
source - https://islamqa.info/en/1902]
[২] সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ২৫/ হাজ্জ (كتاب الحج)
হাদিস নম্বরঃ ১৫৯৭
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=25528
[৩] "...Some people think that these Jamaraat are devils, and that they are actually stoning devils, so you may see them becoming very emotional and very angry, as if the Shaytaan himself is in front of him, and this leads to the following grave errors:
1- This is a mistaken notion. We stone these Jamaraat as an act of remembering Allaah, following the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him), as an act of worship. If a person does an act of worship and does not know its benefits, but he does it only as an act of worship for Allaah, this will be more indicative of his humility and submission to Allaah......."
[ফতোয়াটি বিস্তারিত পড়তে ভিজিট করুন: https://islamqa.info/en/34420]
[৪] আল-কোরআন, ৪৯:১৫
[৫] It was narrated that Ibn ‘Abbaas said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said concerning the Stone: “By Allaah, Allaah will bring it forth on the Day of Resurrection, and it will have two eyes with which it will see and a tongue with which it will speak, and it will testify in favour of those who touched it in sincerity.”
[Narrated by al-Tirmidhi, 961; Ibn Maajah, 2944;
This hadeeth was classed as hasan by al-Tirmidhi, and as qawiy by al-Haafiz ibn Hajar in Fath al-Baari, 3/462
source - https://islamqa.info/en/1902]
[৬] সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)/অধ্যায়ঃ ৯/হাজ্জ (হজ্জ) (كتاب الحج عن رسول الله ﷺ)/হাদিস নম্বরঃ ৮০৯;
হাজ্জাতুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - পৃঃ ৫, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৮১১ (আল মাদানী প্রকাশনী);
হাদিসের মান: সহিহ
source - https://hadithbd.com/hadith-link.php?hid=17998
[৭] আল-কোরআন, ২:১৭৭
[৮] আল-কোরআন, ২২:২৬
[৯] আল-কোরআন, ২৫:৩
[১০] আল-কোরআন, ৩৯:৪১
======================
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.