দাসীর সাথে সহবাস / নয়ন চৌধুরী

নাস্তিকের অপপ্রচার ও তার জবাবঃ
*********************************
অভিযোগঃ
ইসলামকে কেন কৃতদাসীর সাথে সহবাসে বৈধতা দিল?এটাতো ধর্ষনের অনুমতি ছাড়া,আর কিছুইনা। কারন স্বাভাবিকভাবে কোন নারী এতে রাজী হবেনা স্বেচ্ছায়।
জবাবঃ
----------
ইসলাম বিরোধীরা যেসব বিষয় নিয়ে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তার অন্যতম অস্র হচ্ছে কৃতদাসীর সাথে সহবাসের অনুমতি।
সমালোচনা করাই যাদের লক্ষ্য তারা সমালোচনা করবেই, কিন্তু চিন্তা ও উপলদ্ধির দ্বার যারা এখনো বন্ধ করেন নাই আশা করি লেখাটি পড়ে স্পর্শকাতর এই বিষয়টি সম্পর্কে তাদের অনেক ভুল ধারণারই অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ।
মূল আলোচনায় যাবার আগে কয়েকটি বিষয় আমাদের ভালোভাবে মনে রাখতে হবেঃ
১)প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাই হালাল যা আল্লাহ্‌ হালাল করেছেন।আর সেই সব বিষই হারাম যা আল্লাহ্‌ হারাম করেছেন।
২) ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার দাসপ্রথার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছিল ইসলাম এই বিষয়টি কিছু নীতিমালা দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করে দাসীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে মাত্র যা অতীতে কখনোই ছিলনা।
কৃতদাসি কারা?
***************
মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কমিউনিটির প্রত্যেক লোককে বলা হয় মুহারিব। এদের নারীদের দাসী বানানো মুসলিমদের জন্য ততক্ষন পর্যন্ত বৈধ যতক্ষণ না তারা নিজেদের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে অথবা ইসলাম গ্রহণ করে।কোন যুদ্ধবন্দী কাফির নারী যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তাকে আর দাসী বানানো যাবে না। এবং যেসব কাফির নারী স্বামী সমেত বন্দী হয়েছে, তাদের স্বামী জীবিত থাকা পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাস করা যাবে না।
কেন?
যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণা করেছে, তারা মূলত মুসলিমদের জন্য চরম ক্ষতিকর আর ইসলাম এজন্যেই এদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক ব্যবস্থাই নেয়। ইসলাম এদের নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ বন্দিদের হত্যা করতে নিষেধ করে।
এসব বন্দির ক্ষেত্রে ইসলামি নির্দেশ হচ্ছেঃ-
১. কুফফারের কাছে আটক মুসলিমদের বিপরীতে বন্দী বিনিময়।
২. অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধবন্দীদের ছেড়ে দেয়া।
৩. ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়া।
৪. তাদের পুরুষদের হত্যা করা আর তাদের দাস-দাসী বানানো।
এই চারটার বিপরীতে মুসলিমরা সেই বন্দীদের চিরজীবন আটক করে রাখতে পারে। কিন্তু এটা কোন যৌক্তিক সমাধান না। মুসলিমরা তাদের ভরণ-পোষণের দায়ভার নিয়ে, নিজেদের দায়িত্বকে কোন অবস্থাতেই বাড়াতে পারে না। কারণ, ইসলাম বন্দীদের সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দেয়।
যেহেতু বন্দী নারীদের কোনভাবেই হত্যা করা যাবে না, সেহেতু তাদের ব্যাপারে অবশ্যই ইসলাম যৌক্তিক সমাধান দেয়। কাফিররা যদি তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কোন ব্যবস্থা না করে, তবে হয় তাদের ক্ষমা করে ছড়ে দিতে হবে, নয়ত দাসী বনাতে হবে। তারা যদি আহলুল কিতাব হয় তবে তাদেরকে মুসলিমরা বিবাহ করতে পারবে কিন্তু মুশরিক হলে কখনেই তাদের বিয়ে করতে পারবে না।
.
ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনী সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াতঃ
******************************************************
১)
তবে তাদের স্ত্রী ও ডান হাতের মালিকানাভুক্তদের (দাসীদের) ক্ষেত্রে [যৌনাঙ্গকে] সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। [প্রাসঙ্গিক অংশ২৩:৬]
২)
আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ৪:২৫]
৩)
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ২৪:৩২]
৪)
তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ২৪:৩৩]
সংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসঃ
****************************
১)
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো যদি একটি বাঁদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে, তাহলে সে দ্বিগুন সাওয়াব লাভ করবে।(সহি বুখারী-২৩৭৬)
২)
আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) আওতাসে ধৃত যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত এরশাদ বর্ণনা করেন: গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করো না যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে এবং যে নারী গর্ভবতী নয় তার সাথে (সঙ্গম) করো না যতক্ষণ না তার একটি ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়। [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৭ ]
৩)
রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি হতে বর্ণিত: আমি কি তোমাদেরকে বলবো না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুনাইনের দিনে যা বলতে শুনেছি: “আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে পানি দেওয়া (অর্থাৎ কোন গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করা)। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় কোন যুদ্ধবন্দিনী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সে গর্ভবতী নয়। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় বণ্টন হবার আগে গণিমতের কোন মাল বিক্রয় করা।” [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৮ ]
৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসি তার সন্তান ধারণ করে, সে তার(মুনিবের) মৃত্যুর পর স্বাধীন হয়ে যায়।” [সূত্র: তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৯৪]
৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তান গর্ভধারিণী ক্রীতদাসিকে বিক্রয় করো না।” [তাবারানি’র মু’যাম আল কাবির, হাদিস নং-৪১৪৭]
৬)
হারুন ইবনুল আসিম বর্ণনা করেন:
উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদ(রা.)-কে সৈন্যবাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন।
, আর তারা আসাদ গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তিনি সেখানে এক বন্দি নারীর সাথে সহবাস করলেন।এতে উমর(রাঃ) তাকে রজমের (পাথর ছুড়ে হত্যা) নির্দেশ দেন।(সংক্ষেপিত)
[সূত্র: বায়হাকি’র সুনান আল কুবরা, হাদিস নং ১৮৬৮৫]
বৈধতার যৌক্তিকতার বিশ্লেষণঃ
******************************
উপরোক্ত কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি ইসলাম দাসিকে বিয়ে করতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে শর্ত সাপেক্ষে কৃতদাসির সাথে সহবাসের অনুমতি দিয়েছে।ইসলামে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যৌন চাহিদার স্বীকৃতি এবং তা পূরণের বৈধ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইভাবে ক্রীতদাসদাসিদের যৌন চাহিদা পূরণের বৈধ ব্যবস্থাও ইসলামে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
এই নির্দেশনা কৃতদাসীদের জন্য খুলে দিয়েছিল মুক্তির যে অবারিত দোয়ার-
***********************************************************************
প্রথমত,
দাসপ্রথা অনুসারে একজন মুনিবের ক্রীসদাসির সন্তান (যে উক্ত মুনিবের ঔরসজাত নয়, ক্রীতদাসির স্বামীর সন্তান) উক্ত মুনিবের ক্রীতদাস হিসেবে গণ্য হয়।
কিন্তু ক্রীতদাসির সন্তান যদি মুনিবের ঔরসজাত হয়, তবে সে উক্ত মুনিবের সন্তান হিসেবে গণ্য হয়। ফলে সে সন্তান স্বাধীন ও পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
দাসীর গর্ভের সন্তান আর বউয়ের গর্ভের সন্তানের মর্যাদা এক, তারা সমানভাবে পিতার সম্পত্তির অংশীদার।
দ্বিতীয়ত,
দাসীকে বিয়ে করা সুন্নাহ।
রাসূলুল্লাহর (স) দুইজন দাসী ছিল, যারা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (স) তাদের বিয়ে করে উম্মুল মু’মিনীনের সন্মান দান করেন।এতে অন্যান্য সাহাবা ও পরবর্তি সময়ের দাসির মনিবেরা তাদের দাসীদের বিয়ে করে স্ত্রী হিসেব গ্রহণ করেন।এতে তাদের মুক্তির পথ উম্মুক্ত হয়।
তৃতীয়ত,
ক্রীতাদাসি মুনিবের সন্তান গর্ভে ধারণ করার সাথে

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.