ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন- -(৬ থেকে ১০)

ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন- -৬
 লেখকঃ সাব্বির আহমেদ সজীব

বস্তুবাদী নাস্তিকদের দাবী এই সৃষ্টিজগতের সব কিছুই ম্যাটারিয়ালিস্টিক অর্থাৎ বিশ্বজগতের সবকিছু কিছু ম্যাটারের সমষ্টি মাত্র। তাদের ধারণা মতে আমাদের চিন্তা, সুখ-দুঃখ, প্রেম-ক্ষোভ ইত্যাদি সবকিছু সৃষ্টি হয় ম্যাটারের ইন্টারেকশনের ফলে। বাস্তবিকপক্ষে এটাই কি সত্য? আমরা জানি আমাদের সবকিছু পরমাণু দিয়ে সৃষ্টি। কিন্তু একই পরমাণু থেকে সৃষ্ট বস্তুসমূহে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। তাহলে বস্তুসমূহের যে এত বৈচিত্র্য বা তার যে ধর্ম সেটা কি অর্জিত নয়? কিভাবে সেই গুণ অর্জিত হলো? কেন হলো?
যাইহোক আমি আজ কথা বলবো আমদের চিন্তাজগত নিয়ে। চিন্তাজগত কি শুধুই ম্যাটারের ইন্টারেকশনের সমষ্টি নাকি কোনো অতিপ্রাকৃত বা স্রষ্টা প্রদত্ত, যা আমাদের ভাল-মন্দ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে?
আমাদের মাইন্ড ও ব্রেইন এক নয়। মাইন্ড ব্রেইনকে পরিবর্তন করতে পারে। আপনার ব্রেইন ছাড়াও আপনার মাইন্ড প্রভাবিত হয়। আপনার চিন্তা আপনার ব্রেইন কেমিস্ট্রিকে পরিবর্তন করতে পারে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স হচ্ছে, আপনার ইমম্যাটিরিয়াল মাইন্ড আপনার ম্যাটিরিয়াল ব্রেইনকে প্রভাবিত করছে। কগনিটিভ থেরাপি গবেষণা ও বিভিন্ন স্টাডি কনফার্ম করে যে, সাইকোথেরাপি রোগীরা তাদের চিন্তা ব্যবহার করে তাদের ব্রেইনে মেটাবলিক পরিবর্তন তৈরি করে ডিপ্রেশন ওভারকাম করতে পারে। এই মেটাবলিক পরিবর্তন গুলো ঘটে যখন রোগী মনে করে তারা সঠিক ঔষধ ছাড়া অন্য কিছু নিচ্ছেনা; যদিও প্রকৃতিপক্ষে তা নয়, সেটা তারা নিচ্ছেনা। এই প্লাসিবো ফলাফল ভাল প্রামাণ্যপত্র। স্নায়ুবিজ্ঞানী ম্যারিও এবং তার সহকারী ও'লেয়ারি প্রত্যক্ষ করেন যে, প্লাসিবো সাধারণত রোগীদের ৩৫-৪৫% সাহায্য করে।
সুতরাং, বর্তমান ডেকেইড অনুসারে, যদি একটা ঔষধের ফলাফল পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়, এর মানে হচ্ছে যে, ইহা একটি প্লাসিবো থেকে অন্তত ৫% ভাল, যা ব্যবহারের অনুমিত দেয়া হয়। অপরদিকে, এমন কিছু কেস রয়েছে, যেখানে আপনি চিন্তা করছেন নিছক ঔষধ সেবন করছেন যদিও ঔষধগুলো প্রকৃতপক্ষে ভাল এই অবস্থাতেও আপনি আশা অনুরূপ ফল পাচ্ছেননা। কারণ আপনার মাইন্ড আপনার ব্রেইনের কেমিস্ট্রিকে পরিবর্তন করছে।
যদি ম্যাটারিয়ালিজম সত্য হয়, তাহলে প্লাসিবোর কোনো তাৎপর্য থাকেনা। ম্যাটারিয়ালিজমের পক্ষপাতীরা প্লাসিবোর ফলাফলের লিস্ট তৈরি করেন, যেখানে বলা হয় কিছু ক্ষেত্রে তার কোনো তাৎপর্য নেই। কিন্তু ম্যারিও ও ও'লেয়ারি তা নাকচ করে দিয়ে বলেন-- অবশ্যই প্লাসিবো কোনো তাৎপর্য তৈরি করবেনা, যদি আপনি মনে করেন আপনার মাইন্ড ডাস নট এগজিস্ট অর ইজ পাওয়ারলেস।
ব্রেইনে মাইন্ডের প্রভাব ক্ষতিকরও হতে পারে। ডাক্তার আমাদের বলেন যে, অনেক ফিজিক্যাল ডিজিজস মানসিক চাপ দ্বারা সূত্রপাত হয় বা উৎপত্তি লাভ করে। তাহলে এখানে লক্ষণীয় যে, মাইন্ড ব্রেইনে প্রভাব বিস্তার করে এবং পরে তা শরীরে স্থান নেয়।
সর্বনিম্ন আমরা বলতে পারি, আমাদের ব্রেইন হচ্ছে কার্যসম্পাদনের যন্ত্র যার মধ্যে আমাদের চিন্তাগুলো রয়েছে। কিন্তু আপনার চিন্তাগুলো ইমম্যাটিরিয়াল মাইন্ডের ইমম্যাটিরিয়াল প্রোডাক্টস। আপনার মাইন্ড আপনাকে সচেতন এজেন্ট হিসেবে তৈরি করে যা আপনাকে কোনো কিছু গ্রহনের সামর্থ্য প্রদান করে। যেমন:
মনে করুন, আপনি দুই টন গোলাপি হাতির কথা চিন্তা করছেন! এখন যদি নিউরোসাইনটিস্ট আপনার মাথার খুলি চির করে দেখে, তারা কি সেখানে দুই টন গোলাপি হাতি খুঁজে পাবে? এখন যত বিজ্ঞানীই আসুক না কেন, সেটা বিষয় নয়, তারা যতই আমার ব্রেইনের ফিজিক্যাল ম্যাকআপ এনালাইসিস করুক তারা সেখানে(মাথার খুলি) দুই টন গোলাপি হাতি খুঁজে পাবেনা বা অন্য কিছুও খুঁজে পাবেনা যা আপনি চিন্তা করছেন। এর কারণ হচ্ছে আপনার চিন্তা হচ্ছে ইমম্যাটিরিয়াল যা আপনার ব্রেইনের কোন পার্টস নয়। আপনার চিন্তা হচ্ছে সাবজেক্ট এবং আপনার ব্রেইন হচ্ছে অবজেক্ট। আপনার চিন্তা হচ্ছে প্রাইভেট মানে সাবজেক্ট এবং ব্রেইন হচ্ছে অবজেক্ট যা প্রত্যক্ষ করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা আপনার ব্রেইনের সেই অংশকে আবিষ্কার করতে পারে যা আপনার চিন্তা ও অনুভূতিকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত করে। এবং তারা আপনার ব্রেইনের মলিকিউলস ও ফিজিক্সস আবিষ্কার করতে পারবে। কিন্তু তারা কখনই আপনার বাইরের নির্দিষ্ট চিন্তার জগতকে আবিষ্কার করতে পারবেনা। শুধু আপনিই আপনার ভিতরের চিন্তা সম্পর্কে অবগত। এই বিষয়গুলো কখনই কেমিস্ট্রি ও ফিজিক্স দ্বারা ব্যাখ্যা সম্ভব নয়।
তাই বলা যায় আমাদের লাইফ শুধু মাত্র কিছু কেমিক্যাল রিয়েকশন নয়। স্রষ্টা প্রদত্ত জ্ঞান যা উনি আমাদের দিয়েছেন নিজস্ব ও ব্যক্তিক চিন্তার স্বাধীনতা।
যেমন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, বল, সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে ; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক। (সূরা আল কাহাফ: ২৯)


ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন--৭
মানুষ কি শিম্পাঞ্জী ও বানরের আত্মীয়?
বিষয়টা একটু বিবেচনা করে দেখা যাক। আমরা জানি প্রতিটি ভাষায় বর্ণ রয়েছে, বর্ণগুলো পাশাপাশি বসে শব্দ তৈরি করে এবং শব্দগুলো পাশাপাশি বসে সম্পূর্ণরূপে ভাব প্রকাশের জন্য অর্থবোধক বাক্যে তৈরি করে, বাক্যেগুলো দিয়ে তৈরি হয় গল্প, কবিতা, ও উপন্যাস ইত্যাদি। একইভাবে বায়োলজিতেও বিশাল বিশাল গল্প ও উপন্যাসের বই যা সূচিত হয়েছে চারটি বর্ণ দিয়ে ( A, C, G, ও T)। বিবর্তনবাদীদের ধারণা মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের ছোট ছোট পরিবর্তন ও ন্যাচারাল সিলেকশনের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে বর্তমান মানব জাতির এই গল্পগুচ্ছ বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা বর্তমানে অনেকটাই বেকার অনুমান।
তাদের ধারণা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? ন্যাচারাল সিলেকশন ও মিউটেশনের একটা পরস্পরবিরোধ সম্পর্কে রয়েছে। যেমন: যদি পপুলেশন সাইজ বড় হয় তাহলে মিউটেশন বৃদ্ধি পাবে কিন্তু ন্যাচারাল সিলেকশনের সময় হ্রাস পাবে আর যদি পপুলেশন সাইজ ছোট হয় তাহলে মিউটেশন সংখ্যা হ্রাস পাবে ন্যাচারাল সিলেকশন সময় বৃদ্ধি পাবে।
ডি.রা. সুগার, ফসফেট ও নাইট্রোজেন বেইস মিলে গঠিত হয় একটি নিউক্লিওটাইড। A যুক্ত নিউক্লিওটাইড দুইটি হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা T এর সাথে ও C অনুরূপ তিনটি বন্ধন দ্বারা G এর সাথে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড স্ট্রিং তৈরি করে যাকে ডিএনএ সিকোয়েন্স বলা হয়। মানুষের ডিএনএ-তে আনুমানিক প্রায় তিন বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড বেইস পেয়ারস রয়েছে। ডিএনএ-এর যে অংশে ফাংশনাল তথ্য সূচিত থাকে তাকে বলে জিন। জিন থেকে আরএনএ তৈরি হয় যা প্রোটিন সংশ্লেষণ করে আর প্রোটিন সেলের সার্বিক কাজ সম্পন্ন করে। একটা জিনে আনুমানিক এক হাজার থেকে মিলিয়নের উপরে নিউক্লিওটাইড থাকে। মানুষের একটা জিনে মোটামুটি ৫০ হাজার নিউক্লিওটাইড থাকে।
কোনো জেনেটিক্স বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেননা যে, একটি জিনের সবগুলো নিউক্লিওটাইড ডাইরেক্টরি উদ্ভূত হতে পারে। তাই কোনো নতুন ফাংশনাল জিন তৈরি হতে পারে পূর্বের ফাংশনাল জিনে কয়েকটা নিউক্লিওটাইড স্ট্রিং করে মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে। উপরে আগেই বলেছি মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশনে সময়ের ব্যবধান লক্ষণীয়।
একটা হিসেব করে দেখা হয়েছে, যেখানে ক্লাসিকাল পূর্ব হোমিনিনকে ১০হাজার স্বতন্ত্র এবং প্রতি জেনারেশন ২০বছর ধরে হিসেবটি পরিচালনা করা হয়েছিল। উক্ত হিসেবটিতে দেখানো হয় দুটি ফাংশনাল নিউক্লিওটাইড স্ট্রিং তৈরি হতে এভারেজ ৮৪মিলিয়ন বছর ও পাঁচটি নিউক্লিওটাইড স্ট্রিং তৈরি হতে ২বিলিয়ন বছর সময় প্রয়োজন।
আমরা অলরেডি জানি শিম্পাঞ্জী ও মানুষের জিনোম কমপক্ষে ৫% পার্থক্য রয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রায় ১৫০মিলিয়ন নিউক্লিওটাইড পার্থক্য রয়েছে। এই জিনোমিক পার্থক্য থেকে এটা বুঝা যায় মানুষের জিনোমে অনেক নতুন সাব স্ট্রিং নিউক্লিওটাইড রয়েছে। তাহলে উক্ত নিউক্লিওটাইডগুলো কিভাবে মানুষ বিবর্তনে অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের জিনোমে যুক্ত হলো? যেখানে মানুষের পপুলেশন সাইজ খুবই ছোট ও তাদের জেনারেশন টাইম বেশি।
যারা নিজেদের বানরের আত্মীয়র পরিচয় দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন, একদিন তাদের এই ক্ষণকালীন তৃপ্তি বিস্বাদে পরিণত হবে। তাই নিজের ব্রেইন ভাড়া না দিয়ে সত্য জানুন ও সত্য গ্রহণ করুন।

ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন--৮
ডিএনএ অনুলিপন।
ডিএনএ অনুলিপন এমন একটি বায়োলজিক্যাল প্রসেস যার ফলে একটি ডিএনএ অনু থেকে তার অনুরূপ আরেকটি ডিএনএ তৈরি হওয়া। ডিএনএ অনুলিপন প্রতিটি অর্গানিজমেই ঘটে থাকে এবং জীবের উত্তরাধিকারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাই ডিএনএ'র অনুলিপন প্রতিটা জীবের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বায়োলজিক্যাল প্রসেস।
ডিএনএ-- প্রাণী জগতের সৃষ্টি ৩-৪ বিলিয়ন বছর অতীত হলেও ডিএনএ-র গঠনগত আকৃতি সম্পর্কে মানুষের অজানাই ছিল। ১৮৬৯ সালে সুইস বিজ্ঞানী ফ্রেডারিক মিসার সর্বপ্রথম যখন ডিএনএ আবিষ্কার করলেন তখন এর নাম দিলেন নিউক্লিন। যদিও অনেক বছর পরে এর নাম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নিউক্লিয়িক অ্যাসিড হিসাবে। মিসারের আগে ও পরেও আরো অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করেছেন কিন্তু ডিএনএ’র প্রকৃত স্ট্রাকচার বা গঠন তাদের কাছে অনাবিষ্কৃতই থেকে গেছে। সেই অসাধ্য সাধনটি করে দেখালেন যারা, তারা হচ্ছেন: বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক ও মরিস উইলকিনস।
১৯৫৩ সালে তারা সায়েন্টিফিক নেচার সাময়িকীতে তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করলেন। প্রস্তাব করলেন তারা ভৌত ও রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে ডিএনএ’র ডাবল-হেলিক্স মডেল যার ফল সরূপ ১৯৬২ সালে তাঁদেরকে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁদের বহু প্রতীক্ষিত এ আবিষ্কারের পিছনে আরো একজনের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনি হচ্ছেন ব্রিটিশ নারীবিজ্ঞানী ও এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফার রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন। দুর্ভাগ্যজনক যে, ১৯৬২ সালের নোবেল ঘোষণার প্রায় ৪ বছর আগেই রোজালিন এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন (মৃত্যুবরণ করেন), তাই তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হননি।
ডিএনএ ডাবল হেলিক্স মডেলটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক তথ্যের অবতারণা করলেন তারা। যেমন: ডিএনএ অণুর আকৃতি অনেকটা প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো। ৫ কার্বনবিশিষ্ট ডিঅক্সিরাইবোজ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা অজৈব ফসফেট ও নিউক্লিও বা নাইট্রোজেন-বেজের (অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন ও সাইটোসিন) সমন্বয়ে ডিএনএ’র একটি নিউক্লিওটাইড গঠিত।ডিএনএ হচ্ছে একটি পলি-নিউক্লিওটাইড শিকল বা চেইন যাতে হাজার হাজার নিউক্লিওটাইড থাকে। প্যাঁচানো সিঁড়ির ন্যায় এই পলিনিউক্লিওটাইড চেইনের একটি নাইট্রোজেন বেজ চেইন অপর একটি নাইট্রোজেন বেজ চেইনের সঙ্গে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হাইড্রোজেন বন্ড (বন্ধনী) দ্বারা যুক্ত থাকে। যেমন: অ্যাডেনিন বেজ থাইমিনের সঙ্গে দুটি এবং গুয়ানিন সাইটোসিনের সঙ্গে তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধনী দ্বারা যুক্ত থাকে। প্যাঁচানো চেইন দুটি পরস্পর এনটি-প্যারালাল বা উল্টোমুখী হয়ে অবস্থান করে। অর্থাৎ ৩-৫ প্রাইম চেইন অপর চেইনের ৫-৩ প্রাইমের সাথে যুক্ত থাকে।
অনুলিপন পদ্ধতিসমূহ: ডিএনএ-এর অনুলিপন তিনটি পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় বলে ধারণা করা হয়। যেমন: সংরক্ষণশীল, অর্ধ-সংরক্ষণশীল ও বিচ্যুরণশীল। অর্ধ-সংরক্ষণশীল পদ্ধতিকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদ বিবেচনা করা হয়। সংরক্ষণশীল পদ্ধতি আবার তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। যেমন: হাইড্রোজন বন্ড ভাঙ্গা, নিউক্লিওটাইডগুলো পরিপূরক স্থানে সজ্জিত হওয়া ও পুনরায় হাইড্রোজেন বন্ড সৃষ্টি হওয়া।
অনুলিপনে প্রয়োজনীয় এনজাইম সমূহ: ডিএনএ অনুলিপন কার্য পরিচালিত হয় একাধিক এনজাইমের সমন্বয়ে। যেমন: DNA ligase, DNA primase, DNA helicase, DNA gyrase, DNA polymerase, RNA primer, RNA primase, Initiator protein, Beta clamp, STBP ও clamp loader ইত্যাদি।
অনুলিপন প্রসেস: ডিএনএ অনুলিপন কার্য শুরু হয় একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে যাকে বলা হয় অরিজিন অফ রেপ্লিকেশন। যখন ডিএনএ অনুলিপনের সময় হয় তখন DNA ligase এনজাইমটি একটিভ হয় ও একটি প্রোটিন এনজাইম নিয়ে আসে যা অরিজিন অফ রেপ্লিকেশন পয়েন্ট চিহ্নিত করে এবং সেখানের হাইড্রোজেন বন্ড ভাঙ্গার কাজ করে। এই কাজটি করে Initiator protein এনজাইম। হাইড্রোজন বন্ড ভাঙ্গার জন্য এনজাইমটি সাধারণত AT এর হাইড্রোজেন বন্ড ভাঙ্গে কারণ AT দু'টি হাইড্রোজেন বন্ড দ্বারা যুক্ত থাকে। হাইড্রোজেন বন্ড ভাঙ্গার ফলে উক্ত স্থানে Y Shape আকৃতি ধারণ করে যাকে বলা হয় replication forks। এই replication forks এ প্রথম যুক্ত হয় helicase, যার কাজ হল হাইড্রোজন বন্ড ভেঙ্গে double strand-কে পৃথক করা। এর আগে DNA gyrase প্যাঁচ খুলে যাওয়া Double strand ডিএনএ-কে টান টান করে রিলীভ করে এবং STBP এনজাইমটি প্যাঁচ খোলা ও পৃথক হওয়া অংশে প্রলেপের মাথ্যমে সেই অংশটুকুকে stabilize করে।
পৃথক হয়ে যাওয়া Strands দুটির এটিকে leading strand অন্যটিকে lagging strand বলা হয়। Leading strand কন্টিনিউয়াসলি ৫ থেকে ৩ ডিরেকশনে নিউক্লিওটাইডগুলোকে সজ্জিত করে কিন্তু lagging strand সাইডে তা হয় না এর কারণ হল DNA polymerase এর সীমাবদ্ধতা। যেমন: অন্য এনজাইম Beta clamp ও clamp loader, DNA polymerase কে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং DNA polymerase শুধু মাত্র parent strand-এর ৩-৫ প্রাইম দিকে চালিত হয়। তাই lagging strand-এ একেক সময় একটা নির্দিষ্ট অংশে নিউক্লিওটাইডগুলো সজ্জিত হয় যাকে বলা হয় Okazaki fragments এর ফলে নির্দিষ্ট অংশগুলোর মাঝে ফাঁকার সৃষ্টি হয় এই ফাঁকা স্থান জন্য পূরণের জন্য DNA ligase কাজ করে। DNA polymerase এর আরেকটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা হচ্ছে, DNA polymerase একটিভ হতে পারেনা RNA primer ছাড়া আবার RNA primer তৈরি হয় RNA primase দ্বারা। যেহেতু DNA polymerase কে একটিভ করে RNA primer সেহেতু ডিএনএ-তে RNA primer যুক্ত থাকে। তাই RNA primer-কে প্রতিস্থাপনের জন্য কাজ করে DNA polymerase1 একই সাথে DNA polymerase তাদের কাজের নির্ভুলতা প্রুফরিড করে।
ডিএনএ অনুলিপনে দেখা যাচ্ছে, একেকটা এনজাইম একেকটা বুদ্ধিমান মাইন্ড হিসেবে কাজ করছে। আমাদের জিনোমে প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ডিএনএ বেস পেয়ারস রয়েছে। কোন একটা সেল ডিভিশনের সময় ডিএনএ-কে নির্ভুল ও দ্রুততার সাথে অনুলিপন কার্য সম্পন্ন করতে হয়। যদি অনুলিপনের সময় একটু ভুলও হয় তাহলে ক্যান্সারের মত রোগের সৃষ্টি হতে পারে। একটু চিন্তা করলেও বুঝা সম্ভব এমন একটা জটিল প্রসেস কোনো দৈবাৎ ঘটনা হতে পারে না। এখানে একটা নিয়মের অধীন প্রসেসটা সংঘটিত হচ্ছে। এমন জটিল প্রসেস কি দৈবাৎ ঘটতে পারে? এনজাইমগুলো কি কোনো অন্ধ ও দৈবাৎ প্রক্রিয়া নিজের কাজ সম্পন্ন করার কমান্ড পাচ্ছে? অবশ্যই না। এমন জটিল প্রসেস অবশ্যই কেউ একজন নির্ধারণ করেছেন। এমন অসংখ্য জটিল ও সূক্ষ্ম কাজ সংঘটিত হচ্ছে জীব সেলে ও সৃষ্টি সমূহে। তাই সৃষ্টি জগত কোন দৈবাৎ বা র‍্যান্ডম প্রসেস নয়, সবকিছু ডিজাইনের সমষ্টি।

ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন--৯

বিবর্তন আলোচনায় আস্তিক ছাত্রের কাছে নাস্তিক শিক্ষক পরাস্ত।
ক্লাসে শিক্ষক বায়োলজির একটা পাঠ অধ্যয়ন করাচ্ছেন। শিক্ষক উক্ত পাঠে ইভল্যুশন ও পৃথিবীতে প্রথম প্রাণ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তারপর ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের মাঝে একটি ইন্টারেস্টিং কনভারসেশন ছিলো। আসুন আলোচনাটা দেখি--
শিক্ষক: এখানে একটি ব্যাকটেরিয়ার ছবি রয়েছে লক্ষ্য করো বাচ্চারা। তারা সরল এককোষী প্রাণী। প্রিয় বাচ্চারা তোমরা কি জানো, পৃথিবীর সমস্ত জীব এই সরল এককোষী জীব থেকে বিবর্তিত হয়েছিলো? এই এককোষী জীবগুলো আজকের মত এত জটিল চছিল না। এরা আদি পরিবেশে খুব সাধারণ ছিল। তাই তারা সহজে কেমিকেল প্রসেসে গঠিত হয়।
ছাত্রছাত্রী: কূল!
শিক্ষক: হ্যাঁ, ইট'জ রিয়ালি কূল! কিন্তু তোমরা কি জানো এই ব্যাকটেরিয়া নিজের কপি নিজেই তৈরি করতে পারে? এটাকে বলা হয় রেপ্লিকেশন বা অনুলিপন এবং রিপ্রোডাকশন। বাই দিজ ওয়ে ব্যাকটেরিয়া তার পপুলেশন মেইনটেইনে সক্ষম। ব্যাকটেরিয়ার রেপ্লিকেশন বা অনুলিপন মেকানিজম অত্যন্ত জটিল। ব্যাকটেরিয়ার রয়েছে বিশাল পপুলেশন এর কারণ ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত রিপ্রোডাশন করতে সক্ষম। অর্থাৎ বড় ধরনের সমস্যা ছাড়াই এই অনুলিপ প্রায় নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করে।
আস্তিক ছাত্র: স্যার, এককোষী ব্যাকটেরিয়া কত সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে?
শিক্ষক: ওয়েল, কিছু ব্যাকটেরিয়া কয়েক মিনিট বাঁচে এবং কিছু বেঁচে থাকতে পারে সপ্তাহের উপরে।
আস্তিক ছাত্র: তাহলে প্রথম ব্যাকটেরিয়া কিভাবে তার রেপ্লিকেশন সিস্টেম ডেভেলপ করেছিলো যদি তার সময় থাকে মাত্র কয়েক মিনিট বা সপ্তাহ ইহা ইনভেনশনের জন্য?
শিক্ষক: কি? আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। একটু বুঝিয়ে বল!
আস্তিক ছাত্র: আপনি বলেছেন একটা ব্যাকটেরিয়া মৃত্যুর পূর্বে নিজেই রেপ্লিকেট করে এবং পপুলেশন মেইনটেইনে সক্ষম। আপনি কি মনে করে রেপ্লিকেশন মেকানিজম ডেভেলপড হয়েছিলো কয়েক মিনিট, ঘন্টা বা সপ্তাহে?
শিক্ষক: হুম.... আমরা জানিনা প্রথম ব্যাকটেরিয়ার সময় পরিবেশ কেমন ছিলো...হুম... কিন্তু বিজ্ঞানে সব উত্তর আছে। তোমাদের বেশি বেশি বই পড়া উচিত!!!!😂😂😂😂😂😂
পরিশেষে, আমি গত পোস্টে দেখিয়েছিলাম, রেপ্লিকেশন বা অনুলিপন কতটা জটিল এবং রেপ্লিকেশনের মেকানিজমগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রোগ্রামিং করা। আমার জানা মতে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যা প্রোগ্রামার ছাড়া দৈবাৎ সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে এমন একটি প্রোগ্রাম কিভাবে দৈবাৎ ও অল্প সময়ে ইল্ভভ সম্ভব?
বিবর্তনবাদীদের ধারণা ধীরে ধীরে সমস্ত কিছু বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু রেপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ধীরে ধীরে বিবর্তিত হওয়ার চান্স নেই এবং সেই সময়ও একটা ব্যাকটেরিয়া পাবেনা। তাহলে কে সেই প্রোগ্রামার যে এমন জটিল একটা প্রোগ্রাম সিস্টেম তৈরি করেছে?
তাই বলা যায় সব কিছুই ডিজাইনের সমষ্টি কোনো অন্ধ প্রক্রিয়ার দৈবাৎ ক্রিয়া নয়। নিজের ব্রেইন ভাড়া না দিয়ে সত্য নিয়ে চিন্তা করুন, সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করুন।

ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন Vs ডারউইন ইভল্যুশন -- ১০

দ্যা অরিজিন অফ লাইফ এন্ড বায়োকেমিস্ট্রি।
পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব কিভাবে হয়েছিলো, তা আজও এক বিরাট রহস্য আমাদের কাছে? কিন্তু বস্তুবাদীরা অনায়াসে প্রচার করে থাকে কোন একটা সময় জড়বস্তু থেকে ধীরে ধীরে প্রাণ ইভল্ভ হয়েছিল যদিও প্রাপ্ত ডাটা থেকে আমরা জানতে পারি ইহা অসম্ভব।
সংক্ষেপে একটা অংশ নিয়ে বিষয়টা আলোচনা করা যাক, একটি স্টেবল অ্যাটিমকে বলা হয় অকটেট। যার সর্ববহিঃস্থস্তরের Valence shell-এ রয়েছে ৮টি ইলেকট্রন, অপরদিকে একটি কার্বন পরমাণুর সর্ববহিঃস্থস্তরের valence shell-এ রয়েছে ৪টি ইলেকট্রন, যা একটি মাল্টিপ্লিসিটি অপসরণশীল পরমাণুর সাথে বন্ধন তৈরি করতে পারে। তারপর কার্বন নন বায়োলজিক্যাল ন্যাচারের পরমাণুর সাথে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু অরিজিন অফ লাইফ নন স্পেসিফিসিটি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডিএনএ-তে ফসফেট, নাইট্রোজেন ইত্যাদি শুধুমাত্র তাদের সাথেই বন্ধনে যুক্তি হয় না বরং তারা নন বায়োলজিক্যাল পরমাণুর সাথেও যুক্ত হতে পারে। তাই ন্যাচার কেমিস্ট্রি শুধু মাত্র বায়োলজিক্যালি সম্পর্কযুক্ত মলিকুলস-এর সাথে সংযুক্তি স্থির করেনা। এটা স্বাভাবিক যে, বিক্রিয়ক সম্পর্কযুক্ত পদার্থসমূহ একে অপরের সাথে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পর বন্ধনে যুক্ত হবে কিন্তু এটা পূর্ব নির্দিষ্ট বা প্রবণ নয় যে, শুধুমাত্র তারাই পরস্পর যুক্ত হবে। কারণ ক্রোস রিয়েকশন ঘটতে পারে ও ইন্টারফেয়ার করতে পারবে যদি তারা পরস্পর সন্নিকটে আসে। ইহা একটি বড় কেমিকেল ইন্টারফেয়ারেন্স সমস্যা যা ডারউইন ও ডারউইনবাদীরা এড়িয়ে চলে।
এখন হয়তো অনেক ডারউইনবাদী আমাকে বলতে পারে আমি বিবর্তনবাদের অজ্ঞ ও মূর্খ। কারণ ডারউইন কোথাও প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে মন্তব্য করেননি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়, হয়তো তারাই সব বিষয়ে অবগত নন। ডারউইন প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে বিস্তারিত না বললেও প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। ডারউইন বলেছিলেন, 'প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল স্থলভাগের ছোট্ট এক উষ্ণ জলাশয়ে।' শুধু ডারউইন নয়, 'বিবর্তবাদীরা বিশ্বাস করেন মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সময়ে ধীরে ধীরে জড়বস্তু থেকে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিলো।' এইসব মন্তব্য ধরেই অনেক বস্তুবাদী নাস্তিকরা প্রচার করে থাকে ABIOGENESIS তত্ত্ব।
বর্তমান ও পূর্ব ডাটার প্রাপ্ত তথ্যাদি থেকে এটা প্রায় নিশ্চিত যে, জড়বস্তু থেকে কেমিকেল ইভল্যুশন অসম্ভব। তাই অনেক নাস্তিক ও বস্তুবাদীরা প্রাণের উৎপত্তির বিষয়টি চতুরতার সাথে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রাণের উৎপত্তি ছাড়া বিবর্তন অসম্ভব ও বিবর্তনবাদ অসম্পূর্ণ। প্রাণের উৎপত্তি এতটাই জটিল যে, নাস্তিকদের শিরোমণি ও ত্যাড়া বিজ্ঞানী ডকিন্সও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, প্রাণ সৃষ্টির পিছনে রয়েছে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার। তাই বরাবরের মত নাস্তিকদের বলবো, নিজের ব্রেইন ভাড়া না দিয়ে সঠিক চিন্তা করুন ও সত্যকে স্বীকার করুন।

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.