সূর্যের উত্তাপ বনাম জাহান্নাম / জাকারিয়া মাসুদ

সূর্যের উত্তাপ বনাম জাহান্নাম 
লেখকঃ  জাকারিয়া মাসুদ

সূর্যের উত্তাপে আমাদের জীবন যেন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। কাঠফাটা রোদে ঘর থেকে বেরোনো যাচ্ছে না। কাজে মন দেওয়া যাচ্ছে না। অনবরত ঘাম ঝরছে। ফ্যানের নিচে বসে থাকলেও শরীর ঘেমে যাচ্ছে। 
.
আচ্ছা, আজকের তাপমাত্রা কত? 
মোবাইলে যদিও ৩৭ ডিগ্রি সে. দেখাচ্ছে, তবে মনে হয় এর থেকে আরও বেশি হবে। মাত্র ৩৭ ডিগ্রিতে যদি এই অবস্থা হয়, তো জাহান্নামের উত্তাপ কেমন লাগবে? কোনো সেলসিয়াস কিংবা ক্যালভিন স্কেলে কি জাহান্নামের তাপমাত্রা মাপা যাবে? যাবে না। জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ দুনিয়ার কোনো স্কেলে মাপা যাবে না। তার তীব্রতা এতই বেশি যে, থার্মোমিটারে সেটি পরিমাপ করা যাবে না। 
.
জাহান্নামের সর্বনিম্ন আযাবপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে একজোড়া আগুনের জুতো পরিয়ে দেওয়া হবে। ওই জুতোর উত্তাপ এত বেশি হবে যে, লোকটির মগজ টবগবগ করতে থাকবে। এমনভাবে টগবগ করতে থাকবে, যেভাবে ফুটন্ত পানি টগবগ করতে থাকে। লোকটিকে দেখলে মনে হবে, এর চেয়ে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ তার শাস্তিই সবচেয়ে হালকা। 
.
নুমান ইবনু বশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স) বলেছেন, “জাহান্নামবাসীদের মধ্য থেকে যাকে সবচেয়ে হালকা শাস্তি দেওয়া হবে, তাকে একজোড়া আগুনের জুতো ও ফিতে পরানো হবে। এ দুটোর উত্তাপে তার মাথার মগজ এমনভাবে টগবগ করতে থাকবে, যেভাবে ফুটন্ত (পানির) পাত্র টগবগ করতে থাকে। তার মনে হবে, তার চেয়ে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ তার শাস্তিই হলো সবচেয়ে হালকা।” [১]
.
তাহলে যাকে এর চেয়েও বেশি শাস্তি দেওয়া হবে, তার অবস্থা কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরটা আমরা কোরআনকে জিজ্ঞেস করি। দেখি, কোরআন থেকে কী জবাব আসে। 
কোরআন বলবে, 
“তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানিতে। আর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়। যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়। নিশ্চয়ই তারা ইতোপূর্বে বিলাসিতায় মগ্ন ছিলো।”[২] “তারপর হে অস্বীকারকারীরা! তোমরা অবশ্যই যাক্কুম গাছ থেকে খাবে। অতঃপর তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি পান করবে প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানি। অতঃপর তোমরা তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উটের মতো। প্রতিফল দিবসে এটাই হবে তাদের মেহমানদারী।”[৩] “তাদেরকে ফুটন্ত পানি খাওয়ানো হবে, ফলে তা তাদের নাড়ি-ভুঁড়িকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে।”[৪] “তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।”[৫] 
.
“তারপর তার মাথার ওপর ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের ভেতরে যা কিছু আছে—তা ও তাদের তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্যে থাকবে লোহার হাতুড়ী। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এবং বলা হবে—দহন যন্ত্রণা আস্বাদন করো।”[৬] “আর সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে বের করে দিন। আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করবো।”[৭] “(তখন আল্লাহ বলবেন), আমি কি তোমাদের এতোটা বয়স দিইনি, যখন কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতো? আর তোমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিলো। কাজেই তোমরা আযাব আস্বাদন করো। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।”[৮] 
.
“নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্যে প্রত্যাবর্তন স্থল।”[৯] “তারপর নিশ্চয়ই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই তা—যা তোমরা অস্বীকার করতে।”[১০] “সেখানে তারা স্থায়ী হবে।”[১১] “আর কতোই না নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তন স্থল।”[১২] “অতঃপর জাহান্নামের আগুন কীভাবে সহ্য করবে?” [১৩] 
.
সেই ভয়াবহ জাহান্নামের গভীরতা কেমন হবে? জাহান্নাম এতটাই গভীর হবে যে, একটি পাথরের টুকরোকে যদি আকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ফেলা হয়, তবে তা রাত পোহাবার আগেই পৃথিবীতে পৌঁছে যাবে। কিন্তু সে পাথরটিই যদি জাহান্নামের ওপরিভাগ থেকে ফেলা হয়, তবে জাহান্নামের নিচ পর্যন্ত পৌঁছতে তার চল্লিশ বছর সময় লাগবে। 
.
একবার রাসূল (স) মাথার খুলির মতো দেখতে একটি বস্তুর দিকে ইশারা করলেন। সাহাবারা সে দিকে তাকেলেন। এরপর নবি (স) বললেন, “এমন একটি পাথরের টুকরো যদি পৃথিবীর উদ্দেশে আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে তা রাত পোহাবার আগেই পৃথিবীতে পৌঁছে যাবে। অথচ আকাশ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব পাঁচ শ বছরের রাস্তা। অপরদিকে এই পাথরের টুকরোকে যদি জাহান্নামের শেকলের ওপরিভাগ থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা তলদেশে পৌঁছনোর পূর্বের দিবা-রাত্রির একটানা চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাবে।”[১৪]
.
আমরা গরম থেকে বাঁচার জন্যে বাসায় ফ্যান লাগাই, এসি লাগাই, ভালো ভেন্টিলেশান সুবিধে রাখি। কিন্তু জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্যে? জাহান্নামের উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্যে কী করি? মৃত্যুর সময় ৫-টনের একটি এসি সাথে নিয়ে গেলে জাহান্নামের উত্তাপ থেকে বাঁচা যাবে তো? 
.
“হে আমাদের রব! আমর তো ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করো, এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করো।”[১৫]
.
.
তথ্যসূত্র : 
[১] রাসূলের চোখে দুনিয়া, হাদীস : ২৩৫। 
[২] আল-ওয়াকিয়াহ : ৪২-৪৬ আয়াত। 
[৩] আল-ওয়াকিয়াহ : ৫১-৫৫ আয়াত।
[৪] মুহাম্মাদ : ১৫ আয়াত।
[৫] ইবরাহীম : ৫০ আয়াত।
[৬] আল-হাজ : ১৯-২২ আয়াত।
[৭] ফাতির : ৩৭ আয়াত।
[৮] ফাতির : ৩৭ আয়াত।
[৯] আন-নাবা : ২১-২২ আয়াত। 
[১০] আল-মুতাফফিফীন : ১৬-১৭ আয়াত। 
[১১] আল-মুজাদালাহ : ১৭ আয়াত।
[১২] আল-মুলক : ৬ আয়াত।
[১৩] আল-বাকারাহ : ১৭৫ আয়াত।
[১৪] রাসূলের চোখে দুনিয়া, হাদীস : ১০২। 
[১৫] আলি ইমরান : ১৬ আয়াত।

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.