স্বামী বিবেকানন্দের ইসলামবিদ্বেষের স্বরূপ বিশ্লেষণ....

স্বামী বিবেকানন্দের ইসলামবিদ্বেষের স্বরূপ বিশ্লেষণ....
.লিখেছেনঃ আহমেদ আলী
[বিবেকানন্দের ইসলামবিরোধিতার বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বামী লক্ষ্মী শংকরাচার্যের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন - https://youtu.be/j6S5nluahR8]
.
স্বামী বিবেকানন্দ অনেক জায়গাতেই ইসলামকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, বাংলার মুক্তমনা সমাজ কখনও বিবেকানন্দের বিপক্ষে একটা টু শব্দটুকুও করে না! বিবেকানন্দের অনেক গুলো আক্রমণের মধ্য থেকে একটা অন্যতম আক্রমণের উদ্ধৃতি তুলে ধরছি যার ওপরই আমরা তার ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।
.
"মোহাম্মেদ দাবি করেছিল যে, একদিন ফিরিশতা জিব্রাইল তাঁর কাছে আসে একটা গুহাতে এবং তাকে এক স্বর্গীয় ঘোড়া, হারাক-এ করে মহাকাশে ভ্রমণ করায়। কিন্তু এই সকল কিছু থেকে মোহাম্মেদ কিছু আশ্চর্য সত্য কথা উচ্চারণ করে। আপনি যদি কোরান পড়েন তাহলে দেখতে পাবেন যে, সবচেয়ে আশ্চর্য সত্যগুলো কুসংস্কারের সাথে মিশে আছে। আপনি কীভাবে সেটাকে ব্যাখ্যা করবেন? সেই মানুষটি অনুপ্রাণিত হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই অনুপ্রেরণা যেন পদস্খলনের মত। সে একজন শিক্ষাপ্রাপ্ত যোগী ছিল না এবং সে কী করছে তা নিজেও জানত না। ভেবে দেখুন, উত্তম মোহাম্মেদ পৃথিবীকে কী দিয়েছে এবং ভেবে দেখুন তার উদ্ভট কল্পনার জন্য কীরূপ অশুভ পরিণতি ঘটেছে! ভেবে দেখুন লক্ষ লক্ষ মানুষকে কীভাবে তার শিক্ষার কারণে হত্যা করা হয়েছে, মায়েরা কীভাবে তাদের সন্তানের শোকে শোকার্ত হয়েছে, কীভাবে শিশুরা অনাথ হয়েছে, কীভাবে গোটা দেশটা ধ্বংস হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে!"
.
.
"Mohammed claimed that the Angel Gabriel came to him in a cave one day and took him on the heavenly horse, Harak, and he visited the heavens. But with all that, Mohammed spoke some wonderful truths. If you read the Koran, you find the most wonderful truths mixed with superstitions. How will you explain it? That man was inspired, no doubt, but that inspiration was, as it were, stumbled upon. He was not a trained Yogi, and did not know the reason of what he was doing. Think of the good Mohammed did to the world, and think of the great evil that has been done through his fanaticism! Think of the millions massacred through his teachings, mothers bereft of their children, children made orphans, whole countries destroyed, millions upon millions of people killed!"
.
[Complete Works of Swami Vivekananda/Volume 1/Raja-Yoga/Dhyana And Samadhi;
Source - https://en.m.wikisource.org/…/…/Raja-Yoga/Dhyana_And_Samadhi]
.
.
নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
.
ভেবে দেখুন, কতখানি ইসলামবিদ্বেষ থাকলে একজন মানুষ এমনতর কথাগুলো নির্দ্বিধায় ঘোষণা দিতে পারে!!!
.
আসুন বিবেকানন্দের কথাগুলো এক এক করে বিশ্লেষণ করি।
.
//মোহাম্মেদ দাবি করেছিল যে, একদিন ফিরিশতা জিব্রাইল তাঁর কাছে আসে একটা গুহাতে এবং তাকে এক স্বর্গীয় ঘোড়া, হারাক-এ করে মহাকাশে ভ্রমণ করায়।//
.
লক্ষ্য করুন, তিনি নামগুলোও ঠিকমত বলতে পারেন নি! "মোহাম্মেদ" (Mohammed) নয়, নামটা হবে "মুহাম্মাদ" (Muhammad) [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]।
"হারাক" (Harak) নয়, এটা "বোরাক" বলা হয়। আর এটা ঘোড়া ছিল না, বরং বিশেষ প্রজাতির অন্য একটি প্রাণী ছিল।
.
"আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা, গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে তার পা রাখে...."
.
[সহিহ হাদিসে কুদসি/অধ্যায়ঃ ১/বিবিধ/হাদিস নম্বরঃ ৯৯/হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)/উৎস - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=21413]
.
অর্থাৎ, ইসলাম সম্পর্কে সমালোচনা করতে এসেছেন, অথচ যা নিয়ে সমালোচনা করছেন, সেই সম্পর্কেই স্পষ্ট ধারণা নেই!!!
.
.
//কিন্তু এই সকল কিছু থেকে মোহাম্মেদ কিছু আশ্চর্য সত্য কথা উচ্চারণ করে। আপনি যদি কোরান পড়েন তাহলে দেখতে পাবেন যে, সবচেয়ে আশ্চর্য সত্যগুলো কুসংস্কারের সাথে মিশে আছে। আপনি কীভাবে সেটাকে ব্যাখ্যা করবেন?//
.
এই কথা থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, আহলে সুন্নাত আল জামাআত এর আকিদায় সহিহ ইসলামিক ব্যাখ্যাগুলো কী, তা বিবেকানন্দ জানতেন না। উনি চেয়েছিলেন, নিজে নিজেই সব পড়ে সবকিছুর ব্যাখ্যা করে দেবেন! তা তার ব্যাখ্যাই যে সত্য, এটা আমরা কেন মানতে যাব? আর তার দর্শনের সাথে না মিললেই সেটা তার কাছে কুসংস্কার হয়ে যাবে আর তারা যা যা বলবে, সেগুলোকে আমাদের বিনা বাক্যে হজম করতে হবে কেন???
.
.
//সেই মানুষটি অনুপ্রাণিত হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই অনুপ্রেরণা যেন পদস্খলনের মত। সে একজন শিক্ষাপ্রাপ্ত যোগী ছিল না...//
.
খেয়াল করুন, বিবেকানন্দ বৈদিক দর্শনের বাইরে যে আর কিছু যে থাকতে পারে, এটা চিন্তা করার ইচ্ছাও পোষণ করতেন না! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনি অশিক্ষিত যোগী সাধকের মত মনে করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! আল্লাহ তাআলা এই ধারণার জবাব দিচ্ছেন নিম্নোক্ত আয়াতেগুলিতে,
.
إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍۚ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُونَ
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍۚ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ
تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ ٱلْأَقَاوِيلِ
لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِٱلْيَمِينِ
ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ ٱلْوَتِينَ
فَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَٰجِزِينَ
.
"নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসূলের আনীত এবং এটা কোন কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস করো। আর এটা কোনো অতীন্দ্রিয়বাদীর কথাও নয়; তোমরা কমই অনুধাবন করো। এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তার জীবন-ধমনী। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না।"
(আল-কোরআন, ৬৯:৪০-৪৭)
.
আমরা জানি যে, মক্কার মুশরিকরাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নানান রকম ভাবে গালি গালাজ করত। তার ওপর নানান রকম অপবাদ আরোপ করত। আর আধুনিক যুগের মুশরিক স্বামীজি, যোগিজীরাও যে এর ব্যতিক্রম হবেন না, সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার!
.
.
//..সে কী করছে তা নিজেও জানত না।//
.
আসল কথাটা হল বিবেকানন্দ ইসলামিক আকিদা আর তাওহীদ কী, সেটাই ঠিকমত বোঝেন নি! ঈমানের অনুভূতি ঠিক কেমন, সেটাই উপলব্ধি করতে পারেন নি! আল্লাহকে সগুণ ঈশ্বর, কাবাঘরকে সাকার প্রতীক এসব উদ্ভট কল্পনা আর ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামকে বুঝতে আসলে তো মনে হবেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী করছেন তা নিজেই জানতেন না! (নাউযুবিল্লাহ)! আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন,
.
فَٱرْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِى ٱلسَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِينٍ
يَغْشَى ٱلنَّاسَۖ هَٰذَا عَذَابٌ أَلِيمٌ
رَّبَّنَا ٱكْشِفْ عَنَّا ٱلْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ
أَنَّىٰ لَهُمُ ٱلذِّكْرَىٰ وَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُولٌ مُّبِينٌ
ثُمَّ تَوَلَّوْا۟ عَنْهُ وَقَالُوا۟ مُعَلَّمٌ مَّجْنُونٌ
إِنَّا كَاشِفُوا۟ ٱلْعَذَابِ قَلِيلًاۚ إِنَّكُمْ عَآئِدُونَ
.
"অতএব অপেক্ষা কর সেদিনের যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ যা মানুষদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে: এটি যন্ত্রণাদায়ক আযাব। (তখন তারা বলবে) ‘হে আমাদের রব, আমাদের থেকে আযাব দূর করুন; নিশ্চয় আমরা মুমিন হব।’ এখন কীভাবে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে, অথচ ইতঃপূর্বে তাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী রাসূল এসেছিল? তারপর তারা তাঁর দিক থেকে বিমুখ হয়েছিল এবং বলেছিল ‘এ শিক্ষাপ্রাপ্ত পাগল’। নিশ্চয় আমি ক্ষণকালের জন্য আযাব দূর করব; নিশ্চয় তোমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।"
(আল-কোরআন, ৪৪:১০-১৫)
.
যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী করছেন, তা তিনি নিজেই না জানতেন, তাহলে তিনি যে সত্য (অর্থাৎ আল-কোরআন) নিয়ে এসেছেন (যে সত্যের কথা বিবেকানন্দ নিজেই স্বীকার করছেন), সেই কোরআন এর সূরার মত আরেকটি সূরা কেউ রচনা করে দেখাক না (যা আজ পর্যন্ত কেউ করতে সক্ষম হয় নি)? আল্লাহ বলেন,
.
وَإِن كُنتُمْ فِى رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا۟ بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِۦ وَٱدْعُوا۟ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا۟ وَلَن تَفْعَلُوا۟ فَٱتَّقُوا۟ ٱلنَّارَ ٱلَّتِى وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُۖ أُعِدَّتْ لِلْكَٰفِرِينَ
.
"আমি আমার বান্দার ওপর যা নাযিল করেছি (অর্থাৎ কোরআন) সে সম্বন্ধে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে তাহলে (নিজেরা) তার আদলে একটি সূরা রচনা করে দেখাও এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাক্ষীদেরকে (অথবা সাহায্যকারীদেরকে) ডাক; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
আর যদি তা করতে না পার এবং অবশ্যই তা পারবে না, তাহলে (জাহান্নামের) সেই আগুনকে ভয় করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর, প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের জন্য যারা সত্য প্রত্যাখানকারী।"
(আল-কোরআন, ২:২৩-২৪)
.
.
//ভেবে দেখুন, উত্তম মোহাম্মেদ পৃথিবীকে কী দিয়েছে এবং ভেবে দেখুন তার উদ্ভট কল্পনার জন্য কীরূপ অশুভ পরিণতি ঘটেছে! ভেবে দেখুন লক্ষ লক্ষ মানুষকে কীভাবে তার শিক্ষার কারণে হত্যা করা হয়েছে, মায়েরা কীভাবে তাদের সন্তানের শোকে শোকার্ত হয়েছে, কীভাবে শিশুরা অনাথ হয়েছে, কীভাবে গোটা দেশটা ধ্বংস হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে!"//
.
বোঝাই যাচ্ছে যে, বিবেকানন্দ পশ্চিমা আর খ্রিস্টান মিশনারিদের অপপ্রচারগুলোকে পুনরায় আওড়িয়েছেন!
.
প্রথমত, তিনি যে লক্ষ লক্ষ হত্যাকাণ্ডের দোষটা মুসলিমদের ঘাড়েই দিলেন, তা থেকে তার নিজের সম্প্রদায় কি মুক্ত???
.
বিবেকানন্দ নিজেই অন্য এক জায়গায় বলছেন যে, ভারতে ও বিশেষ করে বাংলায় অধিক মুসলিম থাকার কারণ হল, জমিদার ও পুরোদিতদের নিম্ন সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার!
.
"ভারতের দরিদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে এত বেশি মোহাম্মেদান (Mohammedans) কেন? এটা বলা অর্থহীন যে, তারা তরবারির মুখে ধর্মান্তরিত হয়েছে। জমিদার আর পুরোহিতদের থেকে মুক্তি পেতেই আসলে এটা হয়েছে এবং ফলস্বরূপ আপনি দেখতে পাবেন যে, বাংলায় চাষীদের মধ্যে হিন্দুদের থেকে মোহাম্মেদানরা বেশি, কারণ সেখানে অনেক বেশি জমিদার ছিল।"
.
"Why amongst the poor of India so many are Mohammedans?
It is nonsense to say, they were converted by the sword.
It was to gain their liberty from the . . . zemindars and from the . . . priest, and as a consequence you find in Bengal there are more Mohammedans than Hindus amongst the cultivators, because there were so many zemindars there."
.
[Complete Works of Vivekananda/ Volume 8/Epistles/Fourth/­XXXIV Diwanji;
Source - https://en.m.wikisource.org/…/Epistles_-_Four…/XXXIV_Diwanji]
.
.
তাহলে দেখাই যাচ্ছে যে, বিবেকানন্দ নিজেই মেনে নিচ্ছেন যে, ভারতে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের অত্যাচার ছিল নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের ওপর, আর বাংলায় জমিদারদের অত্যাচারও ছিল প্রবল! কিন্তু এখানে আরেকটি বিষয় হল, ইতিহাসে যেভাবে বখতিয়ার খিলজির আগমনের মাধ্যমে ভারতে মুসলিমদের আগমনের কথা তুলে ধরা হয়, ব্যাপারটা তো মোটেও সেরকম নয়! বখতিয়ার খিলজির পূর্বেও মুসলিমরা ভারতে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল যা আক্রমণাত্মক ছিল না। কিন্তু মুসলিমদের সেই অবস্থার স্বরূপ না দেখিয়ে আক্রমণের স্বরূপই শুধু দেখানো হয় কেবল ইসলামবিদ্বেষের জন্য!
.
যাই হোক, এখানে বিবেকানন্দের ভাষ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, নিচু জাতের ওপর উঁচু জাতের নির্মম অত্যাচারের কথা। আর সেটা থেকে মুক্তি দিতে ইসলামিক জিহাদ কখনই আমাদের নিকট হেয় কার্য নয়! শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেন,
.
"যে ব্যক্তি ইসলামের দাওয়াত শুনেছে এবং সাড়া দিয়েছে তার ক্ষেত্রে ইসলাম দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে প্রসার লাভ করেছে। আর যে ব্যক্তি দাম্ভিকতা ও আত্ম-অহংকার করেছে, এক পর্যায়ে তাকে পরাজিত করা হয়েছে এবং দম্ভ অহংকার ছেড়ে দিয়ে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে তার ক্ষেত্রে ইসলাম শক্তি ও তরবারীর মাধ্যমে প্রসার লাভ করেছে।"
.
[ফাতাওয়াল্‌ লাজনাহ দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র) (১২/১৪)/উৎস - https://islamqa.info/bn/5441]
.
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এখানে যুদ্ধ কেবল অরাজক শাসকগোষ্ঠীর সাথেই হয়েছে। নিরীহ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়নি, সাধারণ মানুষকেও ইসলাম গ্রহণে জোর করার হয়নি। ইতিহাসে ব্রিটিশরা অনেক রকম মনগড়া গল্প ঢুকিয়েছে মুসলিমদেরকে ভিলেন বানিয়ে হিন্দুদের সামনে উপস্থাপনের জন্য, যাতে করে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব আরও তৈরি হয় আর সেই সুযোগটা নেয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার!
.
আল্লাহ তাআলা বলেন,
.
لَآ إِكْرَاهَ فِى ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشْدُ مِنَ ٱلْغَىِّۚ فَمَن يَكْفُرْ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسْتَمْسَكَ بِٱلْعُرْوَةِ ٱلْوُثْقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
.
"দীন (ইসলাম) গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।"
(আল-কোরআন, ২:২৫৬)
.
.
وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ٱسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّىٰ يَسْمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُۥۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُونَ
.
"মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়; তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দাও। এটা এজন্য করতে হবে যে, এরা এমন এক সম্প্রদায় যারা (ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) অজ্ঞ।"
(আল-কোরআন, ৯:৬)
.
.
نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَۖ وَمَآ أَنتَ عَلَيْهِم بِجَبَّارٍۖ فَذَكِّرْ بِٱلْقُرْءَانِ مَن يَخَافُ وَعِيدِ
.
"তারা (তোমার বিরুদ্ধে) যা বলে তা আমি ভাল করেই জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও। কাজেই যে আমার শাস্তির ভয়প্রদর্শনকে ভয় করে, তাকে তুমি কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দাও।"
(আল-কোরআন, ৫০:৪৫)
.
.
এছাড়াও কোনো নিরপরাধ সাধারণ ব্যক্তিকে হত্যা করাও ইসলামে নিষিদ্ধ।
.
"...যে ব্যক্তি নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার দন্ডদান উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল..."
(আল-কোরআন, ৫:৩২)
.
.
দ্বিতীয়ত, ভারতের আর্য সম্প্রদায়, বৌদ্ধ আর জৈনদের সমূলে বিনাশ করেছে যার চরম পরিণতি আমরা পাই আদি শঙ্করাচার্যের সময়কালে। সেই বেলাতে বিবেকানন্দের নিজের সম্প্রদায়ই যখন নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছে, সেই বেলায় নারীরা বিধবা হয়নি? শিশুরা অনাথ হয়নি? বিবেকানন্দের নিজের লেখাতে সেই সময় সম্পর্কে সামান্য ইঙ্গিত পাওয়া যায়:
.
"..এবং এমন ছিল তার হৃদয় যে সে অনেক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে পুড়িয়ে মেরেছিল তাদেরকে বিতর্কে হারানোর মাধ্যমে! আর বৌদ্ধগুলোও তেমনি বোকা যে তারা নিজেদের পুড়িয়ে মেরেছিল, শুধু এই কারণে যে, তারা বিতর্কে হেরে গেছিল! তুমি শঙ্করের পক্ষ থেকে এই কাজকে উদ্ভট খেয়ালখুশি ছাড়া আর কী বলবে?..."
.
“...And such was his heart that he burnt to death lots of Buddhist monks — by defeating them in argument! And the Buddhists, too, were foolish enough to burn themselves to death, simply because they were worsted in argument! What can you call such an action on Shankara’s part except fanaticism?..."
.
[Complete Works of Swami Vivekananda/Volume 7/Conversations And Dialogues/II/source - https://en.wikisource.org/…/…/Conversations_And_Dialogues/II]
.
.
স্বামী প্রভুপাদ এর ভাষায়,
.
"সংস্কৃতে প্রকৃত শব্দটা হল "নাস্তিক" (nāstika) যা সেই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে, যে বৈদিক শাস্ত্রে বিশ্বাস করে না, কিন্তু কিছু সাজান ধর্মীয় ব্যবস্থার উদ্ভাবন করে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন যে, বৌদ্ধের মতবাদের অনুসারীরা হল নাস্তিক। প্রভু বুদ্ধ তার অহিংসার মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্পষ্টভাবে বৈদিক শাস্ত্রে বিশ্বাস স্থাপন করাকে প্রত্যাখান করে এবং এভাবে পরবর্তীতে শঙ্করাচার্য ভারতে এই ধর্মীয় পদ্ধতির অবসান ঘটান এবং সেই ব্যবস্থাকে ভারতের বাইরে যেতে বাধ্য করেন..."
.
“The exact word used in Sanskrit is nāstika, which refers to one who does not believe in the Vedas but manufactures some concocted system of religion. Śrī Caitanya Mahāprabhu has said that the followers of the Buddhist system of religion are nāstikas. In order to establish his doctrine of nonviolence, Lord Buddha flatly refused to believe in the Vedas, and thus, later on, Śaṅkarācārya stopped this system of religion in India and forced it to go outside India.”
.
[Swami Prabhupada on Srimad Bhagavatam 4.2.30/source - http://www.vedabase.com/en/sb/4/2/30]
.
.
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষায়,
.
"..দশ বছর ধরে তিনি (শঙ্করাচার্য) গোটা দেশজুড়ে ভ্রমণ করেন এবং জৈনধর্মকে খণ্ডন করেন ও বৈদিক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সকল ভাঙা ছবি যা আজকাল খননের মাধ্যমে মাটি থেকে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো শঙ্করের সময়ে ছিল, অথচ যেগুলো মাটির তলায় এখানে সেখানে পাওয়া যায় সেগুলো জৈনরা মাটিতে পুঁতে দেয় এই ভয়ে যে, সেগুলো ভেঙে ফেলা হবে (তাদের দ্বারা যারা জৈনধর্ম পরিহার করেছে)... সেই সময়ে এই দেশ ছিল অনেক ধনী এবং এই দেশের মানুষ ছিল অনেক দেশপ্রেমী। শঙ্কর, রাজা সুধন্য এবং অন্যান্য রাজারা জৈনদের মন্দির ভাঙেনি এই উদ্দেশ্যে যে, তারা সেখানে শিক্ষালয় চালু করবে বেদ এবং অন্যান্য শাস্ত্র শিক্ষা দেওয়ার জন্য..."
.
"For ten years he toured all over the country, refuted Jainism and advocated the Vedic religion. All the broken images that are now-a-days dug out of the earth were broken in the time of Shankar, whilst those that are found whole here and there under the ground had been buried by the Jainis for fear of their being broken (by those who had renounced Jainism)…At that time this country was very rich, and its people were also patriotic. Shankar, King Sudhanwa and other kings had not had the Jain temples pulled down as they intended to establish schools therein to teach the Vedas and other Shaastras...”
[Satyarth Prakash, by Swami Dayanand Sasarwati, Chapter 11, page 347, Tr. Chiranjiva Bhardwaja,
Source - http://www.aryasamajjamnagar.org/chaptereleven.htm]
.
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, দয়ানন্দ নিজেই স্বীকার করছেন যে, বৌদ্ধদের মন্দিরকে হিন্দুরা কাজে লাগিয়েছে। বর্তমানের গবেষণা থেকেও দেখা গেছে যে, অনেক হিন্দু মন্দির আসলে বৌদ্ধ মন্দির ছিল। রাজা শশাঙ্ক, রাজা সুধন্য প্রভৃতি হিন্দু রাজা অসংখ্য নিরীহ বৌদ্ধকে হত্যা করেছে কেবল ধর্মের জন্য। রাজা শশাঙ্ক বোধি বৃক্ষ তুলে ফেলে সেখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে। এসকল বিবরণ এক কথায় বলে বর্ণনা করে যাবে না। তাই কেউ ব্যাপারগুলো বিশদে জানতে এই দুটো লেখা পড়তে পারেন:
.
১) Were Buddhists persecuted by Hindus?
.
https://vedkabhed.wordpress.com/…/were-buddhists-persecute…/
.
.
২) How Shankaracharya destroyed Buddhism and founded Hinduism in the 8th century
.
https://vedkabhed.wordpress.com/…/how-shankaracharya-destr…/
.
.
উপরন্তু জিহাদকে কেবল মুসলিমদের ওপরই আরোপ করা হয়, অথচ তাদের নিজেদের মহাভারতের বর্ণনাই দেখাচ্ছে, কী পরিমাণ যুদ্ধ ভারতে হিন্দুদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে! কেবল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেই কত লোক মারা গেছে, তার ইয়ত্তা নেই! সেই বেলায় নারী বিধবা হয় না! শিশু অনাথ হয় না! অথচ এগুলো এসব স্বামীজিদের কাছে সত্যের সাথে মিথ্যার সংঘাত, কিন্তু ইসলাম যদি একই কথা বলে, তাহলে সেটা তাদের কাছে সন্ত্রাস!!!
.
দেখুন কীভাবে হিন্দু গ্রন্থও যুদ্ধের জন্য দিব্যিই উৎসাহিত করছে:
.
১) ধর্মযুদ্ধের প্রতি অনীহার প্রকাশ:
.
"হে শ্রীকৃষ্ণ লক্ষ্মীপতি মাধব, আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করে কী লাভ হবে এবং তা থেকে কেমন করে আমরা সুখী হব!"
(ভগবতগীতা, ০১:৩৭)
.
.
২) ধর্মযুদ্ধের প্রতি অনীহা নিন্দনীয়:
.
"ভগবান বললেন - প্রিয় অর্জুন, এই ঘোর সংঙ্কটময় যুদ্ধস্থলে যারা প্রকৃত জীবনের মূল্য বোঝেনা সেসব অনার্যের মত শোকানল তোমার হৃদয়ে কীভাবে প্রজ্জলিত হল? এই রকমের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নীত করবে না। পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট হবে।
হে পার্থ, এই অসন্মানজনক ক্লীবত্তের বশবর্তী হয়ো না, এই ধরনের আচরণ তোমার পক্ষে অনুচিত। হে পরন্তপ, হৃদয়ের দুর্বলতা পরিত্যাগ করে উঠে দাড়াও।"
(ভগবতগীতা, ২:২-৩)
.
.
৩) ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম:
.
"ক্ষত্রিয় রূপে তোমার স্বধর্ম বিবেচনা করেও তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিৎ নয়। কারণ ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করা থেকে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নাই।
হে পার্থ, স্বর্গদ্বার উন্মোচনকারী এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তারা সুখী হন।"
(ভগবতগীতা, ২:৩১-৩২)
.
.
৪) ধর্মযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির স্বর্গলাভ, জীবিত ব্যক্তির রাজ্যসুখ লাভ:
.
"হে কুন্তীপুত্র, এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্বর্গলাভ করবে আর জয়ী হলে রাজ্যসুখ ভোগ করবে অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।"
(ভগবতগীতা, ২:৩৭)
.
"যদি যুদ্ধে নিহত একজন ক্ষত্রিয় বীরের জন্য কেউ শোকগ্রস্ত না হন, তবে তিনি স্বর্গে গমন করবেন এবং স্বর্গের অধিবাসী হিসেবে মর্যাদা লাভ করবেন.........
শোন আমার কথা - এমনতর ব্যক্তির জন্য কী ধরণের সুখ প্রস্তুত রয়েছে তা আমি গণনা করেছি। ***শীর্ষস্থানীয় অপ্সরা - যাদের সংখ্যা হবে হাজার হাজার - দ্রুত বেগে ছুটে বেরিয়ে আসবে (যুদ্ধে নিহত ক্ষত্রিয় বীর আত্মাকে বরণ করতে) তাদের প্রভুর প্রতি ব্যাকুলভাবে লালায়িত হয়ে..."***
.
[মহাভারত/গ্রন্থ নং ১২: শান্তিপর্ব/খণ্ড ১/রাজধর্মানুশাসন পর্ব/অধ্যায় ৯৮;
অনুবাদ - কিশারি মোহন গাঙ্গুলি;
মূল ইংরেজি অনুবাদের উৎস - source - http://www.sacred-texts.com/hin/m12/m12a097.htm]
.
["A slain hero, if nobody grieves for him, goes to heaven and earns the respect of its denizens.........
Listen to me as I enumerate the felicity that is in store for such a person. Foremost of Apsaras, numbering by thousands, go out with great speed (for receiving the spirit of the slain hero) coveting him for their lord..."
.
(The Mahabharata/Book 12: Santi Parva/Part 1/Rajadharmanusasana Parva/SECTION XCVIII;
translated by Kisari Mohan Ganguli;
source - http://www.sacred-texts.com/hin/m12/m12a097.htm)]
.
"সর্বমোট সাত ধরণের দাস রয়েছে, সেগুলি হল - ***যাকে কোনো একটি মানদণ্ডে বন্দি করা হয়েছে***, যে তার প্রাত্যাহিক খাদ্যের জন্য সেবায় নিয়োজিত, যে কোনো গৃহে জন্মলাভ করেছে, যাকে আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাকে পূর্বপুরুষ হতে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করা হয়েছে এবং ***যাকে শাস্তির মাধ্যমে দাসে পরিণত করা হয়েছে।***
(মনুসংহিতা, ৮:৪১৫)
.
["There are slaves of seven kinds, (viz.) he who is made a captive under a standard, he who serves for his daily food, he who is born in the house, he who is bought and he who is given, he who is inherited from ancestors, and he who is enslaved by way of punishment."
(Laws of Manu, 8:415; translated by George Bühler;
source - http://www.sacred-texts.com/hin/manu/manu08.htm)]
.
.
৫) ধর্মযুদ্ধ থেকে পালানো পাপকার্য:
.
"কিন্তু তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর তা হলে তোমার স্বীয়কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে।"
(ভগবতগীতা, ২:৩৩)
.
.
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) এই বিষয়ে একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন:
.
"ইসলাম বিষয়ক বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের মূলে রয়েছে ‘‘জিহাদ’’। অনেক সময় বলা হয়, ধর্মই সকল হানাহানির মূল, ধর্মের নামেই রক্তপাত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কী জঘন্য মিথ্যাচার!! এ কথা সত্য যে, অনেক সময় ধর্মকে হানাহানির হাতিয়ার বানানো হয়, আবার অনেক সময় ধর্ম সত্য ও ন্যায়ের স্বার্থে যুদ্ধের অনুমতি দেয়। কিন্তু কখনোই ধর্মের নামে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হয় নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কমুনিষ্ট চীনের সাথে কমুনিষ্ট ভিয়েতনামের যুদ্ধ, আমেরিকার সাথে ভিয়েতনামের যুদ্ধ ইত্যাদি যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ মরেছে। কম্পূচীয়ায় কমুনিষ্ট খেমার রূজের হাতে লক্ষলক্ষ মানুষের ভয়ঙ্কর মৃত্যু, জোসেফ স্টালিনের নির্দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের হত্যা, মাওসেতুং-এর চীনে প্রায় দু কোটি মানুষের হত্যা, মুসোলিনির নির্দেশে ইটালির ৪ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও এরূপ অগণিত মানুষের হত্যা সবই কি ধর্মের নামে হয়েছে?
.
কখনো বলা হয়, ইসলামই ধর্মের নামে ‘‘জিহাদ’’ বা ‘‘ধর্মযুদ্ধ’’ বৈধ করেছে। এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কী হতে পারে? হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ মহাভারত ও রামায়ন পুরোটায় যুদ্ধ ও হানাহানি নিয়ে। গীতা ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে যুদ্ধের নির্দেশ রয়েছে। বাইবেলে বারংবার যুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে...
.
..জিহাদ বিষয়ক আরেকটি বিভ্রান্তি জিহাদকে ‘‘পবিত্র যুদ্ধ’’ বা ‘‘ধর্মযুদ্ধ’’ বলে আখ্যায়িত করা। জিহাদ অর্থ কখনোই ‘‘পবিত্র যুদ্ধ’’ (holy war) বা ‘‘ধর্মযুদ্ধ’’ (relegious war/crusade) নয়। পবিত্র যুদ্ধ, ধর্মযুদ্ধ, ক্রুসেড ইত্যাদি সবই খৃস্টান চার্চ ও যাজকদের আবিষ্কৃত পরিভাষা.... ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ অর্থ ‘‘রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ’’। মুসলিম রাষ্ট্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় যুদ্ধকে ইসলামের জিহাদ বলা হয়েছে। সাধারণভাবে কাফির বা অমুসলিম রাষ্ট্রই মুসলিম রাষ্ট্রের শত্রুরাষ্ট্র; এজন্য জিহাদের ক্ষেত্রে শত্রুদেরকে ‘‘কাফির’’, ‘‘মুশরিক’’ বা অমুসলিম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিহাদ বিষয়ে আরেকটি বিভ্রান্তি হলো, মুসলিমরা ধর্মপ্রচার বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করে বা ইসলাম তরবারীর জোরে প্রচারিত হয়েছে বলে দাবি করা। এটি শুধু জঘন্য মিথ্যাই নয়, বরং প্রকৃত সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য। পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, বাইবেলে ধর্মের কারণে মানুষ হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বারংবার বিধর্মীদের উপাসনালয় ভেঙ্গে ফেলার, দেশের বিধর্মী নাগরিকদের উৎসবে ডেকে এনে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করার ও নিরিহ বির্ধমীদের ধরে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।[1]
.
৩২৫ খৃস্টাব্দে সম্রাট কনস্টানটাইন খৃস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেন। সেদিন থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত খৃস্টান চার্চ, পোপ, প্রচারক ও রাষ্ট্রগুলির ইতিহাস হলো রক্তের ইতিহাস। অধার্মিকতা বা heresy দমনের নামে অথবা ধর্ম প্রচারের নামে পরধর্ম অসহিষ্ণুতা, পরধর্মের প্রতি বিষোদ্গার, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, অন্য ধর্মাবলম্বীদের হত্যা, নির্যাতন বা জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করা খৃস্টান ধর্মের সুপরিচিত ইতিহাস। পক্ষান্তরে ইসলামে শুধু রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্যই যুদ্ধ বৈধ করা হয়েছে, ধর্ম প্রচারের জন্য নয়। ইসলামে যুদ্ধের ময়দান ছাড়া কখনোই অমুসলিম হওয়ার কারণে কাউকে হত্যা করা হয় নি বা জোরপূর্বক মুসলিম বানানো হয় নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর মদীনায় আগমনের পূর্বে তথাকার অনেকের সন্তান ইহূদী ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এরা ইসলাম গ্রহণের পরে তাদের সন্তানদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য চাপ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে এরূপ চাপ প্রয়োগ থেকে নিষেধ করেন এবং তাদেরকে তাদের পছন্দের ধর্ম পালনের অধিকার প্রদান করেন।[2]
.
দীন প্রতিষ্ঠা বা দীন প্রচারের জন্য হত্যা, জিহাদ বা যুদ্ধ তো দূরের কথা কোনোরূপ শক্তিপ্রয়োগও নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেছেন:
.
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
.
‘‘দীনে কোনো জবরদস্তি নেই। ভ্রান্তি থেকে সত্য সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগূতকে অবিশ্বাস করবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস
করবে সে এমন এক মযবুত হাতল ধরবে যা কখনো ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা প্রজ্ঞাময়।’’[3]
.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
من قتل نفسًا معاهدًا لم يَرَحْ رائحةَ الجنةِ ، وإنَّ رِيحَها ليُوجدُ من مسيرةِ أربعين عامًا
.
‘‘যদি কোনো ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা মুসলিম দেশে অবস্থানকারী অমুসলিম দেশের কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বৎসরের দুরত্ব থেকে লাভ করা যায়।’’[4]
.
বিধর্মীকে হত্যা তো দূরের কথা, বিধর্মীর সাথে অভদ্র আচরণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাদের ধর্মবিশ্বাস বা উপাস্যদেরকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। মুসলিম তাঁর নিজের বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করবেন, তবে কারো গালি দিবেন না বা কারো অনুভূতি আহত করবেন না। কারণ এতে পারস্পারিক গালাগালিই বাড়বে। প্রত্যেকেই তো তার ধর্মকে ভালবাসে। আল্লাহ মানব প্রকৃতি এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। আর কারো ভক্তি ও ভালবাসা আহত করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
.
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ مَرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
.
‘‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না; কারণ এতে তারাও সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে। এভাবেই আমি প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপ সুশোভন করেছি; অতঃপর তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন, তখন তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।’’[5]
.
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
.
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ
.
‘‘তোমরা উত্তম পন্থায় ছাড়া অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের অনুসারীদের সাথে বিতর্ক করবে না, তবে তাদের মধ্যে যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তারা ব্যতিক্রম।’’[6] জুইশ এনসাইক্লোপিডীয়া, অন্যান্য বিশ্বকোষ ও ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বিগত দেড় হাজার বছরে ইউরোপের সকল খৃস্টান দেশে ইহূদীদের উপর বর্বর অত্যাচার করা হয়েছে, জোর পূর্বক তাদের ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, তাদেরকে গণহারে হত্যা করা হয়েছে, তাদেরকে গণ-আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে এবং নানভাবে তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। অথচ এ সময়ে মুসলিম দেশগুলিতে ইহূদীরা পরিপূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাস করেছেন।
.
প্রায় দেড় হাজার বৎসর ধরে মুসলিমগণ আরববিশ্ব শাসন করেছেন। সেখানে দেড় কোটিরও বেশি খৃস্টান ও কয়েক লক্ষ ইহূদী এখন পর্যন্ত বংশপরম্পরায় বসবাস করছে। ভারতে মুসলিমগণ প্রায় একহাজার বছর শাসন করেছেন, সেখানে প্রায় শতকরা ৮০ জন হিন্দু। অথচ খৃস্টানগণ যে দেশই দখল করেছেন, জোরযবরদস্তি করে বা ছলে-বলে সেদেশের মানুষদের ধর্মান্তরিত করেছেন অথবা হত্যা ও বিতাড়ন করেছেন।
.
ইসলাম যদি তরবারীর জোরেই প্রচারিত হবে তাহলে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইসলামী দেশ হলো কি করে? ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, ব্রুনাই ও অন্যান্য দেশে তো কোনো মুসলিম বাহিনী কখনোই যায় নি। বিগত অর্ধ শতাব্দি যাবৎ ইসলাম The firstest growing religion বা সর্বাধিক বর্ধনশীল ধর্ম। ইউরোপ ও আমেরিকা-সহ সকল দেশের হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছেন। কোন্ তরবারীর ভয়ে তারা ইসলাম গ্রহণ করছেন?"
.
===================
[1] বাইবেল, ১ রাজাবলি ১৮/৪০; ২ রাজাবলি ১০/১৮-২৮। [2] আবু দাউদ, আস-সুনান (কিতাবুল জিহাদ, বাবুল আসীর ইউকরাহু) ৩/৫৮। হাদিসটি সহীহ। [3] সূরা বাকারা। ২৫৬ আয়াত। [4] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১১৫৫, ৬/২৫৩৩; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২২৭৮। [5] সূরা ৬: আন’আম, ১০৮ আয়াত। [6] সূরা ২৯: আনকাবুত, ৪৬ আয়াত।http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=6907
===================
[গ্রন্থঃ ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ/অধ্যায়ঃ ৩. বিভ্রান্তির তাত্ত্বিক পর্যালোচনা/৩. ৬. জিহাদ ও হত্যা - (৩. ৬. ১. জিহাদ বিষয়ক অপপ্রচার)]
.
.
.
_______________
- Ahmed Ali
.
.
.
[বিবেকানন্দের ইসলামবিরোধীতার বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বামী লক্ষ্মী শংকরাচার্যের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন - https://youtu.be/j6S5nluahR8]

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.