আমার যতো সীমাবদ্ধতা এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টি ভাবনা

আমার যতো সীমাবদ্ধতা এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টি ভাবনা ।
*********************************************
সৃষ্টিকর্তা বলে কোনো স্বত্ত্বা আছেন কি না- বাস্তব জীবনে এই প্রশ্নের সম্মুখীন খুব একটা না হলেও অনলাইন জগতে এটা একটি কমন প্রশ্ন। প্রশ্নকারীদের মত হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা আসলেই থেকে থাকলে তিনি যদি আমাদের সামনে এসে হাজির হতেন তবেই তো সব ল্যাঠা চুকে যেতো! হ্যাঁ, তিনি যদি তাই করতেন তবে আপনার মাঝে এই প্রশ্নেরও উদ্রেক হতো না যে তিনি আছেন কি নেই। তখন আপনার অবস্থা হতো অন্যান্য সৃষ্টির মতো একটি অর্থহীন সৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তা আপনার সামনে এসে হাজির হয়ে যদি দাঁড়াতেনই তবে আপনাকে মানুষ বানানোর কোনো অর্থ থাকত না। মানুষকে বানানোই হয়েছে এমনভাবে যাতে সে তার জ্ঞান- বুদ্ধি, যুক্তি, লক্ষণ দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
ধরা যাক, সৃষ্টিকর্তা নিয়ে কোটি মানুষের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে যদি তিনি তাদেরকে কথায় সাড়া দিয়ে সত্যি সত্যিই সামনে এসে দাঁড়ান, তবে তাঁকে অস্বীকার করার কিছু থাকবে না। তখন মানুষের অবস্থা কি দাঁড়াবে? এরপরেও কি তারা সৃষ্টিকর্তাকে অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারবে? না, পারবে না। আর এটা হয়ে গেলেই মানুষকে আর ব্যতিক্রম সৃষ্টি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তাদের যুক্তি-বুদ্ধি ও জ্ঞানের কোনো মূল্য থাকবে না। স্বাভাবিকভাবেই তার যুক্তি-বুদ্ধি ও জ্ঞানের পরীক্ষা করারও কিছু থাকবে না।
উপরে আমার সম্পূর্ণ বক্তব্যটুকুই একটি 'যদি'র উপর নির্ভরশীল। এই 'যদি'টা বাদ দিলে এর আর কোনো মূল্য থাকে না। 'যদি- টদি' শব্দগুলো প্রমাণে বিশ্বাসী মানুষের কাছে মূল্যহীন। যারা ডিএনএ টেস্ট ছাড়া নিজ পিতার ব্যাপারেই স্থির বিশ্বাসী নয় তারা কেন না দেখে স্রষ্টাকে বিশ্বাস করবেন? কি, ধাক্কা খেলেন? নিজ পিতার ব্যাপারে সত্যিই কি আপনার কোনো সন্দেহ নেই? যদি না থাকে তবে কেন নেই? ছোট বেলা থেকে আপনার মা, দাদা-দাদী ও পাড়া প্রতিবেশীরা আপনার বাবাকে বাবা বলে জানিয়ে আসছেন বলে? তাদেরকে কেন বিশ্বাস করবেন? যদি তাই করেন তবে কোটি কোটি বছর থেকে আপনার পূর্বপুরুষরা যে স্রষ্টার কথা বিশ্বাস করে আসছেন তাকে কেন আপনি বিশ্বাস করবেন না?
আচ্ছা, এই দার্শনিক ক্যাচাল, যুক্তি বাদ দেই। আসেন গণিতের হিসেবে। আশা করি, অবিশ্বাসীরা গণিতের উপর ঠিকই আস্থা রাখেন!
প্রথমত, আমরা চর্মচক্ষু দিয়ে একটি মহাবিশ্ব দেখতে পাচ্ছি। এটা এমনি এমনি হয়ে যায়নি। নিশ্চয় এর পেছনে কারো সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও হস্তক্ষেপ আছে। মহা বিশ্বের (Universe) সৃষ্টি কেমন করে হয়েছে সে সম্বন্ধে মানুষ আজও অজ্ঞ- যদিও প্রচণ্ড বিস্ফোরণ (Big Bang), স্থিতাবস্থা (Steady State), স্পন্দনশীল (Oscillating) ইত্যাদি বিজ্ঞানীদের কয়েকটি ধারণা (Theory) আছে । কিন্ত আজও কোনোটাই প্রমাণিত হয়নি এবং বিজ্ঞানীরা নিজেরাই এসব থিওরির উপর একমত নন । কিন্তু মতবিরোধ যাই থাকুক একটা কথা অনস্বীকার্য্য, এবং তারাই স্বীকার করেছেন যে গোড়ার কথায় গেলে এই মহা বিশ্ব সৃষ্টির মাত্র দু'টি সম্ভাবনা আছে । যেহেতু সৃষ্টি হয়েছে এবং আছে সুতরাং ঐ দু'টি সম্ভাবনার মধ্যে একটি অবশ্য হতেই হবে- তৃতীয় কোনো সম্ভাবনাই নেই । এই দু'টির একটি হল - এই বিশাল সৃষ্টি নিজে থেকেই আচম্বিতে হয়ে গেছে (Accidental), দ্বিতীয়টি পরিকল্পিত (Planned)।
প্রথমে দেখা যাক আচম্বিতের ধারণা । এই থিওরি মতে মহাশূন্য [মহাশূন্য (Space) কি তা কিন্তু তারা বিশ্লেষণ করতে পারেন না] শুধু গ্যাস (Gas) আর ধুলিকণা (Dust) দিয়ে পূর্ণ ছিলো । এই গ্যাস আর ধুলিকণা কোথা থেকে এলো এ কথার তারা কোন উত্তর দিতে পারেন না- শুধু বলেন এগুলো আগে থেকেই ছিলো । তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম ওগুলো আগে থেকেই ছিলো- যদিও স্রষ্টা ছাড়া ওগুলোর সৃষ্টি কেমন করে এ প্রশ্ন থেকেই যায় । যাই হোক, এখান থেকেই, অর্থাৎ এই উপাদান থেকেই মহা-বিশ্বের সৃষ্টি আরম্ভ এবং ক্রমে ক্রমে কোটি কোটি, অর্বুদ অর্বুদ বছর ধরে নানা রকম আচম্বিত ঘটনার (Accidents), মধ্য দিয়ে আজকের এই পর্য্যায়ে এসে পৌঁছেছে । কেমন করে কি কি ঘটনার মধ্য দিয়ে এখানে পৌঁছলাম তা নিয়ে বহু মতবিরোধ রয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে । এই আচম্বিতের থিউরি মতে অর্বুদ অর্বুদ বছর আগে থেকে আজ পর্যন্ত সৃষ্টিতে যা কিছু হয়ে আসছে তাতে কোনো পরিকল্পনা (Plan) নেই- কারণ স্রষ্টাই তো নেই- সব হয়েছে এবং হচ্ছে আচম্বিতে(Accidentally)। পরিকল্পনার কথা আসলে তো অবশ্যই স্রষ্টা এসে যান ।
এখন থেকে এগুবার আগে আরেকটা কথা জেনে নিতে হবে । সেটা হচ্ছে- এই যে আচম্বিতে ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং ঘটছে এগুলো যেখানে খুশি, যখন খুশিভাবে ঘটেনি । এগুলোকে ঘটতে হয়েছে ধারাবাহিকভাবে (In sequence)। একটা আচম্বিত ঘটনা যখন ঘটেছে বলে মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু ইত্যাদি বেঁচে আছে, ঐ ঘটনাটা তখন না ঘটে যদি তার আগে বা পরে ঘটতো তবে কোনো প্রাণী পৃথিবীতে থাকতো না, হয়ত জন্মই হতো না, এই সৃষ্টিও আজ যা দেখছি তা হত না, হয়ত মোটেও হতো না । কাজেই আচম্বিত ঘটনা ঘটেছে এবং ধারাবাহিকভাবে ঘটেছে । এইরূপ ঘটনাগুলির (Accident) সংখ্যা কোটি কোটি- অগুণতি ।
এইবার দেখা যাক এটা কতটুকু সম্ভব। ঠিক একই আকারের টাকা বা আধুলির মত গোল দশটি ধাতব বা প্লাষ্টিকের চাকতি নিন এবং এগুলোর ওপর এক থেকে দশ সংখ্যা লিখুন । মনে রাখবেন এই চাকতিগুলি সেই কোটি কোটি আচম্বিত ঘটনাগুলোর মাত্র দশটি প্রতীক এবং সংখ্যাগুলো হল ওগুলোর ধারাবাহিকতা (Sequence)- যার কথা বলে এলাম । এই চাকতি দশটি আপনার পকেটে রেখে নেড়ে-চেড়ে মিলিয়ে দিন । এইবার আপনি চোখ বুজে পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটি চাকতি বের করুন । এই চাকতিটি এক থেকে দশ নম্বরের যে কোনোটি হতে পারে এবং প্রথম বারেই এক সংখ্যার চাকতিটি আপনার হাতে উঠে আসার সম্ভাবনা দশের মধ্যে এক (১:১০) । ধরুন প্রথমবারেই আপনার হাতে এক নম্বর চাকতিটি উঠলো । এবার ওটা পকেটে ফেরৎ রেখে নেড়ে-চেড়ে মিশিয়ে দিয়ে আরেকটি চাকতি বের করে নিন । দ্বিতীয়বারে আপনার হাতে দুই নম্বর দেয়া চাকতিটি উঠে আসার সম্ভাবনা একশ'র মধ্যে এক । অর্থাৎ আপনি যদি একশ'বার পকেট থেকে একটা একটা করে চাকতি বের করেন তবে এক নম্বর ওঠাবার ঠিক পরের বারে দুই নম্বরের চাকতি উঠে আসার সম্ভানা থাকবে একশ'বারের মধ্যে এক বারের । অর্থাৎ ( ১:১০×১০=১০০)। ঠিক তেমনিভাবে তৃতীয় বারের তিন নম্বর চাকতি উঠার সম্ভাবনা এক হাজার বারের মধ্যে একবার (১:১০০×১০=১০০০)। অর্থাৎ আপনি দশবার পকেট থেকে চাকতি উঠালেন । এক থেকে ধারাবাহিকভাবে দশ পর্য্ন্ত উঠার সম্ভাবনা এক হাজার কোটি বারের মধ্যে একবার (১:১০০০০০০০০০০)।
আমরা কোটি কোটি নয় অসংখ্য আচম্বিত ঘটনার মধ্যে মাত্র দশটির প্রতীক নিয়েছিলাম । তাতেই এই সংখ্যার সম্ভাবনা পাচ্ছি । তাহলে কোটি কোটি নিলে দেখা যাবে, যে সৃষ্টি আচম্বিতে (Accident) হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অসীম সংখ্যার, অর্থাৎ যে সংখ্যার শেষ নেই, তার মধ্যে একবার- অর্থাৎ অসম্ভব । এখন- দু'টো সম্ভাবনার মধ্যে একটি অসম্ভব বলে বাদ পড়লে বাধ্য হয়ে দ্বিতীয়টিকে গ্রহণ করতে হবে, এবং সেটা হল পরিকল্পিত (Planned) এবং পরিকল্পিত মানেই স্রষ্টা । তৃতীয় আর কোনো থিওরির সম্ভাবনা কিছুই নেই । এই একই হিসাব ঠিক উল্টো দিক থেকেও করা যায় । যেমন যে কোটি কোটি আচম্বিত ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে আসার দরুণ আজ আমরা এই বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছি- ঠিক তেমনি কোটি কোটি অন্য রকম আচম্বিত ঘটনা (Accident) এই মহাকালের মধ্যে ঘটতে পারতো । যার একটি মাত্র ঘটনাও সমস্ত লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারতো । কিন্তু তেমন একটি মাত্র ঘটনাও ঘটেনি । যেমন ধরুন- উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমানো বরফ যদি গলে যেতো বা যায় তবে বিজ্ঞানীদের মতে, পাহাড়-পর্বত ছাড়া সমস্ত পৃথিবী পানিতে ডুবে যাবে । ঘটতে পারতো, ঘটেনি ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, অংকের হিসাবে, (Mathematics or Figure of chance) স্রষ্টার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে । যে কোন চিন্তাশীল মানুষ এই বিশাল সৃষ্টির দিকে চেয়ে দেখলে এর মধ্যে এক বিরাট পরিকল্পনা দেখতে পাবেন যেটাকে অস্বীকার করা অসম্ভব । জ্ঞানের অভাবে যারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না, অর্থাৎ নাস্তিক, তারা ধারণা করেন যে, মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে, ভয় দেখাতে, স্রষ্টাকে সৃষ্টি করা হয়েছে । এই ধারণাটা বিশ্লেষণ করা যাক । এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্রষ্টার ধারণা আজকের নয় । ইতিহাসের অনেক আগে যখন থেকে মানুষ সম্বন্ধে জানা যায় তখন থেকেই মানুষ একজন স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন ছিলো ।
প্রত্নতাত্বিকেরা মাটি খুঁড়ে হাজার হাজার বছর আগের যেসব জনবসতির খোঁজ পেয়েছেন, দেখেছেন সবখানেই ধর্মের অর্থাৎ স্রষ্টার কোনো না কোনোরকমের ধারণা ছিলো । বিভিন্ন মহাদেশে, পৃথিবীর যেখানেই কোনো প্রাক-ঐতিহাসিক জনপদের সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই তারা পেয়েছেন উপাসনার, ধর্মের চিহ্ন । অর্থাৎ স্রষ্টা সম্বন্ধে একটা ধারণা, একটা চেতনা পৃথিবীময় ছড়িয়ে ছিলো এটা সন্দেহাতীত । পৃথিবীর প্রধান ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়াতেও যেসব প্রাক-ঐতিহাসিক মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে সে সবগুলিতেও তাই । যখন এইসব বিভিন্ন জনসমষ্টির মধ্যে কোনো সংযোগ, আদান-প্রদান ছিলো না, ভাষা, সংস্কৃতি সব কিছুই ছিলো ভিন্ন, একে অন্যের অস্তিত্ব পর্য্ন্ত জানতো না, তখন ঐ একটি ব্যাপারে সবাই সচেতন ছিলো এটা কেমন করে হলো? পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা এই জনসমষ্টি শুধু যে স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন ছিলো তাই নয়- তারা ঐ স্রষ্টার গুণাবলী- আমরা যেটাকে বলি সিফত- একই বলে কেমন করে স্থির করলো? অর্থাৎ স্রষ্টা মহা-শক্তিশালী, সর্বব্যাপী, দয়ালু যা ইচ্ছা করতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি । তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষ যদি স্রষ্টার ধারণাকে সৃষ্টি করে থাকে তবে স্বীকার করে নিতে হবে যে বহু আগে- কত আগে কেউ বলতে পারবে না, তবে প্রাক-ঐতিহাসিক যুগে, সমস্ত পৃথিবীময় বিচ্ছিন্ন, বিভিন্ন স্থানে মানুষ একটা জুজুর ভয় সৃষ্টি করলো, যে জুজুটার গুণাবলী অকস্মাৎ কেমন করে একই হয়ে গেলো- অর্থাৎ ঐ জুজুটা সর্বশক্তিমান, সর্বত্র বিরাজমান, সর্বজ্ঞানী, অসীম ক্ষমাশীল, দয়াময়, ইত্যাদি । এবার দেখা যাক এটা কতখানি সম্ভব ।
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি (Gravity) আছে এ কথা প্রতিষ্ঠিত সত্য- এবং এটা আছে পৃথিবীর সৃষ্টির একদম প্রথম থেকে এ কথাও প্রতিষ্ঠিত সত্য । এ পৃথিবী স্রষ্টাই তৈরী করে থাকেন আর আচম্বিতে নিজেই সৃষ্টি হয়ে থাক, এই মধ্যাকর্ষণ পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত থেকে আজ পর্য্ন্ত এই পৃথিবীর সমস্ত জিনিষের, পাহাড়-পর্বত, নদী, সমুদ্রের এক কথায় প্রত্যেক জিনিষের প্রতিটি অণু-পরামানুকে নিচের দিকে টেনে রাখছে । আপনার আমার দেহের প্রতিটি অণু-পরামাণুকেও টেনে পৃথিবীতে ধরে রেখেছে । সৃষ্টির প্রথম থেকে আজ পর্য্ন্ত এক সেকেণ্ডের এক ভগ্নাংশের জন্যও কখনো বিরতি দেয়নি । যে মস্তিষ্ক (Brain) দিয়ে মানুষ চিন্তা করে, অনুভব করে, সেই মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ (Cell)কেও সেই অনাদিকাল থেকে এই মধ্যাকর্ষণ অবিরতভাবে টেনে রেখেছে । কিন্তু মানুষ এই সর্বব্যাপী শক্তির কথা জানতো না । কোনোদিন একে আবিষ্কার করতে পারেনি, একে ধারণাও করতে পারেনি । মাত্র সেদিন নিউটন (Newton) একে আবিষ্কার করলেন । কেন? এতদিন কি মানুষ তার মগজ মস্তিষ্ক ব্যবহার করেনি? নিশ্চয় করেছে । নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের আগে মানুষ বহু কিছু আবিষ্কার করেছে, পিরামিডের মত কালজয়ী সৌধ তৈরী করেছে, কিন্তু যে শক্তির অধীনে থেকে তার জীবনের প্রতি মুহূর্ত কাটছে, যে শক্তি এক মুহূর্ত বিরতি দিলে সে পৃথিবীর বহির্মুখ, অপকেন্দ্রীক শক্তির (Centrifugal force) ফলে ছিটকে মহাশূন্যে নিক্ষিপ্ত হবে সে শক্তি সম্বন্ধে সে ছিলো সম্পূর্ণ অজ্ঞ- মাত্র কয়েক বছর আগে পর্য্ন্ত ।
যেটা নেই (স্রষ্টা) তাকে মানুষ সেই প্রাক-ঐতিহাসিক সময়ে কল্পনা করে নিলো, শুধু কল্পনা করে নিলো না, সেটা কী রকম তার একই রকম বিস্তৃত বিবরণ পৃথিবীর এধার থেকে ওধার পর্য্ন্ত বিশ্বাস করে নিলো- কিন্তু যেটা আছে (মধ্যাকর্ষণ) সেটাকে মানুষ হাজার হাজার বছরেও আবিষ্কার করতে পারলো না- এ কেমন কথা? এর জবাব হচ্ছে- স্রষ্টা তার প্রেরিতদের দিয়ে সেই প্রথম মানুষটি থেকেই তার অস্তিত্ব ও গুণাবলী অর্থাৎ তিনি কেমন তা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন বলেই মানুষ তার সম্পর্কে জানে। আর মধ্যাকর্ষণ সম্বন্ধে নিউটনের আগে কাউকে জানাননি বলেই মানুষ তা জানতে পারেনি। স্রষ্টা যদি মানুষ সৃষ্টি করে, তাকে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হতেন, প্রেরিতদের দিয়ে নিজের সম্বন্ধে কিছু না জানাতেন তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে মানুষ আজও তার সম্বন্ধে কিছু জানতো না- কিম্বা স্রষ্টা কেউ একজন হতে পারেন ভাবলেও তার গুণাবলী, সিফত (Attributes) সম্বন্ধে কোনো ধারণা করতে পারত না। নাস্তিকরা স্রষ্টার অস্তিত্বের যে প্রত্যক্ষ বা চাক্ষুস প্রমান চান ও রকমের প্রমাণহীন বহু লক্ষ জিনিষকে, ব্যাপারকে তারা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন । তারা যার যার বাপকে বাপ বলে বিশ্বাস করেন, কিন্তু এর কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই- প্রতিবেশীর ছেলের চেহারা বাপের মত, শুধু এইটুকুর ওপর নির্ভর করেই তারা তাদের সত্যই বাপ ও ছেলে বলে গ্রহণ করে নেন। এ বিশ্বাসগুলো সব অবস্থাগত, আনুষঙ্গিক (inferential)। কিন্তু স্রষ্টার প্রমাণ তারা চান প্রত্যক্ষ, চাক্ষুস ।
আসল কথা হল- স্রষ্টা আছেন কিন্তু তিনি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবেন না বা তার ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে তার প্রতি বিশ্বাস এনে দেবেন না । কারণ তা করলে মানুষকে বিচার করে শাস্তি বা পুরস্কার দেবার আর কোনো অর্থ থাকবে না । মানুষ তা হলে গাছ-পাথর, পাহাড়-পর্বতের মত তার আরেকটি সৃষ্টি মাত্র হত, তার নিজের হাতের তৈরি যুক্তি, বুদ্ধিসহ সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি হতো না ।

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.