পবিত্র_কুরআনে_পৃথিবীর_আকার

পবিত্র_কুরআনে_পৃথিবীর_আকার 
সংগ্রহেঃ মোঃ নিয়ামত আলী
.

.
প্রথমত কুরআনের কোথাও পৃথিবীর আকার নিয়ে স্পষ্ট বলা হয়নি শুধু মাত্র ইঙ্গিত প্রদান করে দেয়া হয়েছে । কিন্তু অনেক জায়গায় বিছানা কিংবা সমতল বলা হয়েছে । তাই বলে নেয়া ভালো যে , নিজের মত করে কুরআন পড়লে বুঝলে হবেনা বরং সাহাবি , তাবেই , সালফে সলেহীনেরা যেভাবে বুঝেছে সেভাবে বুঝতে হবে । কুরআনের ৫১ নাম্বার সূরার ৪৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ,
⦁ وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ
⦁ আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী![1]
এই আয়াত সম্পর্কে ১৩০১ খ্রিষ্টাব্দ এর একজন তাফসিরবীদ ইমাম ইবনে কাসির বলেন ,
* ইবনে কাসিরঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ যমীনকে আমি আমার সৃষ্টজীবের জন্যে বিছানা। বানিয়েছি আর একে বানিয়েছি অতি উত্তম বিছানা। এখানে একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন যে , কি বলা হয়েছে আল্লাহ পৃথিবীর যমিন কে সৃষ্টিকূলের জন্য বিছানা বানিয়েছেন । এখানে পৃথিবীর বাহ্যিক আকৃতির কথা বলা হচ্ছেনা । [ 2 ]
৬০৪-৬১০ হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে জন্ম নেয়া ইমাম কুরতুবি তাঁর তাফসির আল কুরতুবি তে বর্ণনা করেন ,
* কুরতুবিঃ مَاهِدُونَ শব্দের অর্থ দু'টি। এক. বিছানার মত সুন্দরভাবে বিছিয়ে দেয়া। দুই, সুন্দর ব্যবস্থাপনা তৈরী করা এই কথাটি তাফসীর ড আবু বকর যাকারিয়া তেও এসেছে । এখানে স্পষ্ট যে , আল্লাহ পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা করেছেন । এখানে স্পষ্ট বুঝা যায় যে , কোথায় ইঙ্গিত করা হচ্ছে পৃথিবীর বাহ্যিক নাকি পৃথিবীর অভ্যন্তর ( ফাতহুল মাজীদ ) । [ 3 ]
অর্থাৎ বিজ্ঞানমনস্কদের জন্য এটি লজ্জাজনক যে , শত শত বছর আগের মানুষেরা বুঝে গেলো কোথায় ইঙ্গিত করা হয়েছে । কিন্তু তারা এটি বুঝতে পারলো না ।
শুধু এই একটি আয়াত না আরও আয়াতে সমতলের কথা বলা হয়েছে । কিন্তু তাঁর আগে সকল নাস্তিককূল কে চ্যালেঞ্জ জানানো হল কেননা , সেইসব আয়াতে একটি আয়াতেও তারা দেখাতে পারবেনা যে সেখানে Noun ব্যাবহার করা হয়েছে বা Past Tense ব্যাবহার করা হয়েছে । সেখানে আল্লাহ ভবিষ্যতে করবেন বলেছে এবং সেইখানে যে আরবি শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে সেটা Verb হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে । শুধু একটি দুইটি আয়াত নয় সমস্ত আয়াতে যে কথাটা বলা হয়েছে চলুন দেখে আসি আয়াতগুলো ,
⦁ فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا
⦁ অতঃপর তিনি তাকে (অর্থাৎ ভূমিকে) মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন। [ 4 ]
এখানে স্পষ্ট দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে , আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল করেই ছাড়বেন । আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে ,
⦁ وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا
⦁ এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন। [ 5 ]
এখানে دَحَاهَا দাহাহা শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে । এখন এর দুটি শব্দ একটি হচ্ছে উটপাখির ডিম
আরেকটি হল বিস্তৃত করা । এখন খুব সহজে একটি জবাব দেব যে , دَحَاهَا দাহাহা শব্দটি কখনই উটপাখির ডিম বলে গণ্য হবেনা । কেননা , دَحَاهَا দাহাহা শব্দটি د ح و দাল , হা , ওয়াও মূলে গঠিত যার অর্থ হচ্ছে stretching , expanding বা সম্প্রসারিত হতে আছে অর্থাৎ এককথায় শব্দটি Continious । এবং সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে এই শব্দটি কোন Noun না । এটি Verb অর্থাৎ কাজের পর্যায়ে আল্লাহ এখনো একে সম্প্রসারণ করেই যাচ্ছেন । এথেকে বুঝা যায় যে , আল্লাহ একে সম্প্রসারণ করছেন এখনো [ 6 ] . এবং সুরা ইন্‌শিক্বাক্বের ৩ নম্বর আয়াত পড়লেই বুঝা যাবে পুরো ব্যাপার সেখানে বলা হচ্ছে ,
⦁ অতঃপর তিনি তাকে (অর্থাৎ ভূমিকে) মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন।
অর্থাৎ পুরো আয়াতটি এভাবে দাড়াচ্ছে যে , আল্লাহ একে ( ভূমিকে ) সম্প্রসারণ করছেন এবং এক পর্যায়ে একে সমতল করেই ছাড়বেন । অর্থাৎ এথেকে বুঝা যাছে পৃথিবী এখনো সমতল নয় । এক পর্যায়ে হবে । আপনি হয়তো জানেন না, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রতি বছর .০০৪ ইঞ্চি (০.১ মি.মি) করে বাড়ছে [ 7 ] । এই তথ্য কোথা থেকে পেলাম? তথ্যসূত্র- নাসার ওয়েবসাইট। সংখ্যাটা অতি ক্ষুদ্র হলেও, পৃথিবীর মিলিয়ন-বিলিয়ন বছরের হিসেবে সেটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
তাহলে এখন প্রশ্ন হল যে , তাহলে পৃথিবীকে সমতল না বলা হলে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন ,
⦁ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
⦁ তিনি যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাতকে দিনের উপর এবং দিনকে রাতের উপর জড়িয়ে দিয়েছেন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন সূর্য ও চাঁদকে। প্রত্যেকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলছে। জেনে রাখ, তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।
উপরের আয়াতটিতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো “يُكَوِّرُ”। যার অর্থ কোন জিনিসকে প্যাঁচানো বা জড়ানো, যেমনটা মাথার পাগড়ির ক্ষেত্রে বুঝানো হয়। অবিরত প্যাঁচানোর পদ্ধতি- যাতে এক অংশ আরেক অংশের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। আমরা ভালোভাবেই জানি, পাগড়ি কিভাবে গোলাকারভাবে প্যাঁচানো হয়। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, রাত ধীরে ধীরে ক্রমশ দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিনও ধীরে ধীরে রাতে রূপান্তরিত হয়। আপনাদের কি মনে হয় যে , একটি সমতল কোন জিনিসকে পাগড়ির মত গোলাকারভাবে প্যাঁচানো যেতে পারে ? নিশ্চয়ই না । পৃথিবী গোলাকার হলেই এমনটা সম্ভব । [ 8 ]
আল্লাহ আরও বলেন ,
⦁ “আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে ‘অর্ন্তদৃষ্টি-সম্পন্নগণের’ জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।” [ 9 ]
⦁ “নিশ্চয়ই মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’ জ্ঞানবান লোকদের জন্য।” [ 10 ]
আল্লাহ্‌ কেন বললেন অন্তর্দৃষ্টির কথা? কেন বললেন না বাহ্যিক দৃষ্টির কথা? আমরা বাহ্যিকভাবে দেখি, সূর্য উদিত হয় বা অস্ত যায়। আসলেই কি তাই? ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’- কি এমন ‘বিশেষ’ জিনিস রয়েছে যাতে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দিতে হবে? অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখার আর পাগড়ির মত প্যাঁচানোর কথা বলে এখানে ইঙ্গিতে পৃথিবীর স্ফেরিক্যাল শেপ এবং ঘূর্ণায়মানতার কথা বলা হয়েছে।
এখন আমরা সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারি যে , কুরআনে পৃথিবীকে সমতল বলা হয়নি বরং গোলাকার ই ইঙ্গিত করা হয়েছে । আশা করি উত্তর পেয়েছেন ।
তথ্যসূত্রঃ
1. সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
2. তাফসীর ইবনে কাসির / সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
3. তাফসীর আল কুরতুবি , ফাতহুল মাজিদ / সুরা আয যারিয়াত আয়াত ৪৮
4. সুরা তহা আয়াত ১০৬
5. সূরা ইন্‌শিক্বাক্ব আয়াত ৩
6. Mokrane Guezzou, Pg. 835, Tafsir Ibn Abbas Great Commentaries on the Holy Quran, ISBN 9781891785177
7. https: //www.nasa.gov/topics/earth/features/earth20110816.html
8. Wikitionary / كور
9. সুরা নুর আয়াত ৪৪
10. সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৯০

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.