কোরআন সংকলনের ব্যাপারে সংশয় নিরসন করুন সত্য জানুন


কোরআন সংকলনের ব্যাপারে সংশয় নিরসন করুন সত্য জানুন
লেখকঃ মোঃ নিয়ামত আলী

সামনে পিছনে কাট কুট করে অর্ধেক হাদিস বা অর্ধেক আয়াত দেখিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা ফাউ প্রমাণ করতে চান যে আল্লাহর কিতাব কুরআন নাকি বিকৃত (নাউজুবিল্লাহ) । তাদের এ অহেতুক ফাউ প্রমাণ সে আসলেও ফেউ সেটাই আজকে আমি প্রমাণ করে দেখিয়ে দিব সাথে কিছু প্রশ্ন জুড়ে দিব দেখি নাস্তিক ধর্মে প্রশ্ন করলে উত্তর আসে কিনা !!! যাই হক । কুরআন সংকলন ব্যাপারে তাদের বড় বড় যেই দাবি সমূহ হলঃ

১/ বর্তমানের কুরআনের সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়কার কুরআনের কোন মিল নাই অথবা কুরআন পরিপূর্ণ ছিল না ।
২/ নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময় যদি কুরআন থাকেও তাইলে সাহাবিদের কেন আবার কোরআন সংকলন এর দরকার হল
৩/  কুরআনের যেই সুরার বিন্যাস এটি রাসুল (সা) করেননি
৪/ কুরআন একেক স্থানে একেক ভাবে পড়ে এতে কি প্রমাণ হয় না কুরআন আসলে বিকৃত ।

প্রথম দাবি খণ্ডন করি:

“বর্তমানের কুরআনের সাথে নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়কার কুরআনের কোন মিল নাই”

*হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) বলেন, নবী (সা) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,সমগ্র কুরআন খতম করতে তোমার কত সময় লাগে ? (১)

* হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন নবী (সা) আমাকে বললেন , “একমাসে কোরআন খতম করো” । আমি বললাম , আমি এর চেয়ে বেশি করার শক্তি রাখি । তখন নবী (সা) বললেন ,তাহলে প্রতি সাত দিনে একবার খতম করো এবং এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে খতম করো না (২)

* সম্পূর্ণ কোরআন খতম করার ব্যাপারে নবী (সা) এর বিশাল একটি হাদিসই আছে । বিস্তারিত দেখুন (৩)  

* ......রাসুল (সা) তাঁকে (এক লোককে) ফিরে যেতে দেখে তাঁকে ডেকে আনালেন । যখন সে ফিরে আসল  , নবী (সা) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্ত আছে ? সে উত্তরে বলল, অমুক অমুক সুরা মুখস্ত আছে । সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করতে থাকলো । তখন নবী (সা) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি এ সকল সুরা মুখস্ত তিলওয়াত করতে পারো ? সে উত্তর দিল হ্যাঁ ! তখন নবী (সা) বললেন , যাও তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্ত রেখেছ উহার বিনিময়ে এ মহিলাটির তোমার সঙ্গে শাদী দিলাম ।(৪)

*হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’লা নবী (সা) এর প্রতি ধারাবাহিকভাবে ওহি নাযিল করতে থাকেন এবং তাঁর ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ তা’লা তাঁর প্রতি সর্বাধিক পরিমাণ ওহি নাযিল করেন । এরপর তিনি ওফাত প্রাপ্ত হন । (৫)

*ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন নবী (সা) কল্যাণের কাজে ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল , বিশেষভাবে রমজান মাসে ।  (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিব্রাইল (আ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তেলওয়াত করে শোনাতেন । যখন জিব্রাইল (আ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের ব্যাপারে প্রবহমান বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হতেন ।(৬)

* আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ প্রতি বছর জিব্রাইল (আ) নবী (সা) এর সঙ্গে একবার কুরআন শরীফ দাওর করতেন । কিন্তু যে বছর তিনি ওফাত লাভ করেন সে বছর তিনি রাসুল (সা) এর সঙ্গে দুবার দাওর করেন । প্রতি বছর নবী (সা) রমযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন কিন্তু যে বছর তিন ওফাত লাভ করেন সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন ।(৭)

* কাতাদা (র) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইবন মালিক (রা) কে জিজ্ঞাসা করলাম নবী (সা) এর সময়ে কে কে কুরান সংগ্রহ করেছেন ? তিনি বললেনঃ চারজন এবং তাঁরা চারজনই ছিলেন আনসারি সাহাবী । তাঁরা হলেনঃ উবায় ইবন কাব (রা), মুয়াজ ইবন জাবাল (রা), যায়দ ইবন সাবিত (রা) এবং আবু যায়দ (রা) ।(৮)

উপরের গুলো ভাল করে পড়ুন নিজেরাই বুঝে যাবেন যে নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়কার কুরআন আর বর্তমান কুরআন মিল আছে কি নাই । অবশ্যই আছে । উপরের হাদিস গুলা পড়ার পর আমরা যেই পয়েন্ট তৈরি করতে পারিঃ

= নবী মোহাম্মদ (সা) তাঁর সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলেন কুরআন খতম করতে কত সময় লাগে তোমার । এ থেকে প্রমাণ হয় নবী মোহাম্মদ সা এর সময়ি পরো কুরআন কমপ্লিট ছিল যদি নাই হত তাহলে তিনি কেন তাঁর সাহাবীকে কুরআন খতম এর ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন ???

= নবী মোহাম্মদ (সা) তাঁর সাহাবীদের কে কুরআন খতম এর ব্যাপারে অনেক উৎসাহ দিতেন বিশেষ করে রমজান মাসে তো আরও বেরে যেত উৎসাহ দেওয়া । যদি কুরআন কমপ্লিট নাই হত তাহলে নবী মোহাম্মদ (সা) কুরআন খতম এর উৎসাহ কেন দিতেন ?

= নবী মোহাম্মদ (সা) এর সাহাবী ছিল যারা পুরো কুরআন এর হাফেজ ছিল । তাহলে হাফেজ কিভাবে হল যদি পুরো কুরআন সম্পূর্ণ না ছিল ???

= রমজান মাসে নবী মোহাম্মদ (সা) জিবরাইলকে পুরো কোরআন পড়ে শোনাতেন ।
   
= প্রতি বছর নবী মোহাম্মদ (সা) জিব্রাইলের (আ) কাছে কুরআন শরীফ একবার দাওর করতেন কিন্তু যে বছর নবী মোহাম্মদ (সা) এর ওফাত হবে সে বছর তিনি দুইবার কুরআন দাওর করেছেন । এ থেকে প্রমাণ হয় পুরা কুরআন জিব্রাইল (আ) নবী মুহাম্মদ (সা) কে শিক্ষা দিয়েছেন । দাওর মানে পুরো কুরআন বার বার পড়া ।  আর পুরা কুরআন যদি নাই থাকতো তাইলে জিব্রাইল (আ) কিভাবে রাসুল (সা) কে পুরো কুরআন দাওর করালেন ??

= নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়েই সাহাবিরা কুরআন সংরক্ষণ শুরু করে দেন । মুখস্ত আকারে অথবা চামড়ায় লিখে ইত্যাদি ভাবে ।

পরিশেষে এটাই বোলব যে নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময়ি পুরো কুরআন সম্পূর্ণ ছিল এর বাস্তব প্রমাণ উপরের হাদিস গুলাই ।

এখন আসি দ্বিতীয় দাবিতেঃ
“নবী মোহাম্মদ (সা) এর সময় যদি কুরআন থাকেও তাইলে সাহাবিদের কেন আবার কোরআন সংকলন এর দরকার হল” 

·         আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা) একবার উসমান (রা) এর কাছে এলেন । এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আজারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরিয় ও ইরাকি যোদ্ধাদের জন্য রণ প্রস্তুতির কাজে বেস্ত ছিলেন । কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুজায়ফাকে ভীষণ চিন্তিত করলো । সুতরাং তিনি উসমান (রা) কে বললেনঃ হে আমিরুল মু’মিনিন! কিতাব সম্পর্কে ইহুদী ও নাসারাদের মত মতপার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন । তারপর উসমান (রা) হাফসা (রা)এর কাছে জনৈক বেক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহিফাসমুহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন,যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করতে পারি । এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দিব । হাফসা (রা) তখন সেগুলো উসমান (রা)এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন । এরপর উসমান (রা) যায়দ ইবনে সাবিত (রা),আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়র (রা), সাইদ ইবনে আস (রা) এবং আব্দুর রহমান ইবন হারিস ইবন হিশাম (রা)কে নির্দেশ দিলেন । তাঁরা মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলেন । এ সময় হযরত উসমান (রা) তিনজন কুরাইশি বেক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন বিষয়ে যদি যায়দ ইবন সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতপার্থক্য দেখা দেয়,তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে।কারন কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে । সুতরাং তাঁরা তাই করলেন । যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়ে গেল,তখন উসমান (রা) মূল লিপিগুলো হাফসা (রা) এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন । তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ সমূহের একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সিন্নিবেশিত কুরআনের যে কপিসমুহ রয়েছে তা জালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন । ইবন শিহাব (র) খারিজা ইবন যায়দ ইবন সাবিতের মাধ্যমে যায়দ ইবন সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে , তিনি বলেছেন আমরা যখন গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সুরা আহযাবের একটি আয়াত আমার থেকে হারিয়ে যায় , অথচ আমি তা রাসুল (সা) কে পাঠ করতে শুনেছি । তাই আমরা অনুসন্ধান করতে লাগলাম । অবশেষে আমরা তা খুজায়মা ইবন সাবিত আনসারি (রা) এর কাছে পেলাম  । আয়াতটি হচ্ছে এই, মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে ,তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরন করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে, তাঁরা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি ।(৩৩/২৩) । আমরা অতপর এ আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সুরার মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম ।(৯)

*উপরের হাদিস থেকে আমরা যা পাইঃ

= কুরআন পাঠে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায় । এই মতবিরোধ নিয়েই ইসলাম বিদ্বেষীরা নানান কারিশমা করে মজার কথা হল আমরা যদি এই হাদিস জানি যেখানে, হযরত আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন যে , তিনি এক বেক্তিকে আয়াত পাঠ করতে শুনলেন । নবী (সা) কে যেভাবে পাঠ করতে শুনতেন ,তার থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে সে পাঠ করছিল , তখন ঐ বেক্তিকে তিনি নবী (সা) এর নিকট নিয়ে গেলেন । তখন নবী (সা) বললেন ,তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ । সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করতে থাকো । নবী (সা) আরও বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমুহ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পরস্পরের বিভেদের কারনে ।(১০)

মূলত মতবিরোধ ছিল উপভাষায় । এই মতবিরোধ মানে এই না যে নতুন নতুন আয়াত একেক জন পড়ত আরেক জনে আরেক ভাবে পড়ত

= সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে হযরত উসমান (রা) কুরআন লিপিবদ্ধ করেন ।

= “এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সিন্নিবেশিত কুরআনের যে কপিসমুহ রয়েছে তা জালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন” এই লাইন দেখিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা দাবি করে কুরআন নাকি জালিয়ে দেওয়া হয় হাহাহা । মজার ব্যাপার হল আলাদা আলাদা যেই সব কপি ছিল সেগুলা জালিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এর আগেই কিন্তু সাহাবিরা পরামর্শ করে কুরআন সম্পূর্ণ লিপিবদ্ধ করে ফেলেছেন এমনকি সেগুলা বিভিন্ন প্রদেশেও পাঠিয়ে দিয়েছেন

= নবী মোহাম্মদ (সা) এর যুগে কুরআন তো সম্পূর্ণ ছিলই সাহাবিরা শুদু লিপিবদ্ধ করেছেন । আমরা একটি মোটা দাগে প্রশ্ন রাখতে পারি যখন হযরত উসমান (রা) কোরআন লিপিবদ্ধ এর কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন তখন কি কোন সাহাবী এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেছিলেন যে কুরআন পরিপূর্ণ নেই ???

সুতরাং পরিশেষে আমরা বলতেই পারি যে আপনাদের দ্বিতীয় দাবি ফাউল।

এখন আসা যাক তৃতীয় দাবিতে । দাবিতি ছিলঃ
“কুরআনের যেই সুরার বিন্যাস এটি রাসুল (সা) করেননি”

* মাসরুফ (র) থেকে বর্ণিত , আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, আল্লাহর কসম ! তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সুরা সম্পর্কেই আমি জানি যে , তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে তা কার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে । আমি যদি জানতাম যে , কোন বেক্তি আলাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চাইতে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট গিয়ে পৌঁছতে পারে তাহলে সওয়ার হয়ে আমি সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম ।(১১)

সাহাবী নিজেই বলেছেন কুরআনের অবতীর্ণ প্রতিটি সুরা সম্পর্কেই সে জানে এমন কি তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পরকেও সে জানে যে তা কার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে । এখানে একটি প্রশ্ন হল সাহাবী আব্দুল্লাহ (রা) কার থেকে কুরআনের যাবতীয় সব শিখেছেন ? উত্তরঃ নবী মোহাম্মদ (সা) এর থেকে । এখন কি আপনি বলতে চাচ্ছেন সুরার বিন্যাস এই সাহাবী জানত না ? ভাইরে এইসব হাসির কথা বলে আপনারা নাস্তিক ধর্মকে অবমাননা করছেন !!!
আসুন বিস্তারিত জানিঃ

আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশক্রমেই কুরআন বিন্যস্ত হয়েছে । কুরআনের বর্তমান তারতিব বা বিন্যাস আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ ক্রমেই সূচিত হয়েছে যা সাহাবীরা নিজেরা করেছেন । এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে *আল্লামা সুয়ুতি (রহ) বলেনঃ

“সন্দেহ নেই যে কুরআনের আয়াতগুলোর বিন্যাস ঐশী নির্দেশ ভিত্তিক । এ বিষয়ে ইজমা এবং সমার্থক দেরথহীন বহু উক্তি রয়েছে । এ বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা অনেকেই বর্ণনা করেছেন । তাদের মধ্যে “যারকাশী” বুরহানে এবং আবু জাআফার ইবনে যোবায়ের তাঁর মুনাসাবাতে ইজমার কথা বলেছেন । তাঁর বক্তব্য এই যেঃ সূরাগুলোতে আয়াত গুলোর বিন্যাস নবী (সা) এর নির্দেশক্রমেই সূচিত হয়েছেতাঁর হুকুমে সুরাগুলোতে আয়াত গুলো সন্নিবেশিত করা হয় । এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে দ্বিমত নেই । (১২)

*হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (রা) বলেনঃ তিনি একদা রাসুল (সা) এর নিকট বসা ছিলেন । দেখতে পেলেন রাসুলুল্লাহ তাঁর দৃষ্টি উপরের দিকে উথালেন এবং নামিয়ে নিলেন । অতপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট জিব্রাইল এসেছিল । তিনি আমাকে এ আয়াতটি এ সুরার এ স্থানে স্থাপন করতে বলে গেলেন ।(১৩)

* হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা) কে একবার প্রশ্ন করা হয় (একটি আয়াত দেখিয়ে যে) আয়াতটি রহিত (মানসুক) হয়েছে । অন্য আয়াত দ্বারা এটিকে মানসুক করা হয়েছে । এ আয়াত লিখলেন কেন ? এটিকে বাদ দিলেন না কেন ? হযরত উসমান (রা) উত্তরে বললেনঃ ওহে ভাতিজা ! কুরআনের কোনকিছুই যেখানে রয়েছে সেখান থেকে আমি সরাতে পারি না ।(১৪)

এসব বর্ণনা দ্বারা পরিস্কার প্রমানিত হয় যে কুরআন সুরা সমূহের মধ্যে আয়াতগুলো ঐশী নির্দেশেই সন্নিবেশিত হয়েছে । ওহি প্রাপ্ত হয়ে নবী করীম (সা) যে আয়াত যেখানে রাখতে বলেছেন সেখানেই রাখা হয়েছে । হযরত উসমান (রা) তা পরিবর্তন করেননি ।
*কাজী আবু বকর “আল ইনতিসার” গ্রন্থে বলেনঃ আয়াত সমূহের তারতিব (ক্রমবিন্যাস) একটি অবধারিত ব্যাপার । অনিবার্য নির্দেশ । কেননা হযরত জিব্রাইল (আ) বলে দিতেনঃ অমুক আয়াতটি অমুক স্থানে সন্নিবেশিত করো ।(১৫)

* মহানবী (সা) তাঁর জীবনদশায় নামাজে এবং নামাজের বাইরে কুরআন তিলওয়াত করেছেন । তখন তিনি সুরা সমূহের তারতিব রক্ষা করেছেন । সাহাবাগন তা অবগত ছিলেন । রমযান মাসে নাযিলকৃত কুরআনের খতম তারাবীহ পড়া হত । তখনও সুরাগুলোর ক্রমবিন্যাস ও তারতিবের প্রতি লক্ষ্য রেখে সাহাবাগণ নবী (সা) এর নিকট হতে অথবা তাঁর বর্তমানে তারাবীহর নামাজে যিনি ইমামতি করেছেন তাঁর নিকট হতে তারতিব মত সুরাগুলো শুনেছেন । আর হযরত ইবনে মাসউদ এবং হযরত উবাই ইবনে কাআব প্রমুখ নবী (সা) এর সামনে একাধিকবার কুরআন খতম করেছিলেন । তখন তাঁরা সুরাসমূহের ক্রমবিন্যাস রক্ষা করেই কুরআন খতম করেছিলেন । এসব তথ্যের ভিত্তিতে সাহাবীগণ কুরআনের সুরার ক্রমবিন্যাস সাধন করেছেন আর এরুপ বিন্যাস ও তারতিব প্রতি সাহাবারা সকলেই একমত হয়েছেন । কাজেই নবী করীম (সা) এর পক্ষ হতে কুরআনের সুরা বিন্যাস ও তারতিব সমর্থিত বলেই মানতে হবে নবী (সা) এর সামনে পঠিত সুরা সমূহের ক্রমবিন্যাসের প্রতি রাসুল (সা)এর মৌন সমর্থনকে “হাদিসে তাকরিরি”র পর্যায়ে ফেলা যায় আর তিনি নিজে যে তারতিবে কুরআনের সুরা তিলওয়াত করেছেন তাকে “হাদিসে কউলি” বা “হাদিসে ফেলি”র পর্যায়ে ফেলা যায় । মুখে তিনি তারতিব রক্ষা করে কুরআন তিলওয়াত করেছেন বলে হাদিসে কউলি এবং কার্যতঃ তিনি তা পালন করেছেন বলে হাদিসে ফেলি এবং সাহাবাগণ তাঁর সামনে কুরআন তারতিব মত খতম করেছিলেন বলে হাদিসে তাকরিরি দ্বারা কুরআনের বর্তমান সুরা বিন্যাসকে সাব্যস্ত করা যায় । এজন্যই অনেকেই বলেছেনঃ কুরআনের সুরার আয়াত সমূহের ন্যায় সুরা সমূহের মাঝেও তারতিব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঐশী নির্দেশনার আলকেই ।(১৬) 

এছাড়া সুরাসমূহের বর্তমান তারতিব যে সকল মুসলমানের ঐকের মাধ্যমে ইজমাই উম্মত দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে এতে কারো কোন দ্বিমত নাই । সকলেই বর্তমান তারতিবেই কুরআন পড়েন । কুরআনের আয়াতের ন্যায় কুরআনের সুরা সমূহও নবী (সা) এর নির্দেশনায় ও সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত বলে মত প্রকাশ করে আল্লামা আম্বারি (রহ) বলেনঃ আল্লাহ তা’লা সমূদয় কুরআন একসঙ্গে নিন্মতম আসমানে নাযিল করেন । অতপর ২৩ বছর ব্যাপী পৃথকভাবে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেন । বস্তুতঃ সুরা এবং আয়াত নাযিল হত কোন ব্যাপার দেখা দিলে । বিষয় অবগত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশকারীর উত্তর থাকত তাতে । হযরত জিব্রাইল (আ) আয়াত ও সুরাসমূহের স্থান নবী (সা)কে অবগত করতেন । কাজেই সুরাসমূহের পরম্পরা অক্ষর ও আয়াতসমূহের ন্যায়ই পরস্পর সম্পৃক্ত । এসবই নবী (সা) হতে গৃহীত । কাজেই যে কেউ কোন সুরাকে স্বস্থান থেকে পেছনে আনবে বা আগে নিয়ে যাবে সে কুরআনের পরম্পরা গাঁথুনি বিনষ্ট করে দেবে ।(১৭)

সুতরাং প্রমাণ হয় কুরআনের সুরা সমূহের বিন্যাসে অবশ্যই নবী মোহাম্মদ (সা) এর আদেশ ছিল ।
শেষ দাবিটি হলঃ

“কুরআন একেক স্থানে একেক ভাবে পড়ে এতে কি প্রমাণ হয় না কুরআন আসলে বিকৃত”
* ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন রাসুল (সা) বলেছেনঃ জিব্রাইল (আ) আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন । এরপর আমি তাকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরধ করতে থাকলাম এবং পুনঃ পুনঃ অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অব্যাহতভাবে অনুরধ করতে থাকলে তিনি আমার জন্য পাঠ পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন । অবশেষে তিনি সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় তিলওয়াত করে সমাপ্ত করলেন । (১৮)

* হযরত আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন যে , তিনি এক বেক্তিকে আয়াত পাঠ করতে শুনলেন । নবী (সা) কে যেভাবে পাঠ করতে শুনতেন ,তার থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে সে পাঠ করছিল , তখন ঐ বেক্তিকে তিনি নবী (সা) এর নিকট নিয়ে গেলেন । তখন নবী (সা) বললেন ,তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ । সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করতে থাকো । নবী (সা) আরও বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমুহ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পরস্পরের বিভেদের কারনে ।(১৯)

এটি বিষয় বুঝা একেবারেই সহজ । যেমন ধরেন ঢাকার বাংলাও বাংলা পুরান ঢাকার বাংলাও বাংলা ।

 ঢাকার বাংলায় “আমাদের কোন সমস্যা নেই আমরা স্বাধীন” 

একই লেইন যদি পুরান ঢাকার স্টাইলে বলি তাহলে 

“আমাগো কোন শমসসা নাইক্কা আমরা শাধিন” 

দুটি স্টাইল সঠিক ।

কুরআনের এই বেপারটাও এরকমি । উপরের হাদিস খেয়াল করুন নবী মুহাম্মদ (সা) এর অনুরধে জিব্রাইল (আ) সাত আঞ্চলিক ভাষায় তিলওয়াত সমাপ্ত করেন । আরেক হাদিসে ভিন্ন পদ্ধতিতে পাঠ করা হলে রাসুল (সা) দুটিই সঠিক বলে ঘোষণা দিলেন । 

আমি যদি পুরান ঢাকার স্টাইলে (পদ্ধতিতে) কথা বলি সেটাও সঠিক আবার ঢাকার স্টাইলে কথা বললেও সেটাও সঠিক এখানে বিকৃতির কোন প্রশ্নই আসে না জনাব ।

আশা করি এইবার সব পরিস্কার আলহামদুলিল্লাহ......সাথে
কুরআন যে অবিকৃত একটি গ্রন্থ এটাও সম্পূর্ণ প্রমানিত আলহামদুলিল্লাহ।

রেফারেন্স সমূহঃ

১/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৮৮ , পৃষ্ঠা ৩৭৫)
২/ ( ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৮৯ , পৃষ্ঠাঃ ৩৭৫ )
৩/ ( ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৮৭ , পৃষ্ঠাঃ ৩৭৪,৩৭৫) 
৪/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৬৪ , পৃষ্ঠাঃ ৩৬৩ )
৫/ (ই’ফা,সহিহ বুখারি খণ্ড ৮, হাদিস নং ৪৬২১ , পৃষ্ঠাঃ ৩৩২,৩৩৩ )
৬/ (ই;ফা, সহিহ বুখারি, খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৩৫ , প্রিস্থাঃ ৩৪৪)
৭/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৩৬ , পৃষ্ঠাঃ ৩৪৫ )
৮/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮, হাদিস নং ৪৬৪১ , পৃষ্ঠা ৩৪৭) ।
৯/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি, খণ্ড ৮, হাদিস নং ৪৬২৬ , পৃষ্ঠাঃ ৩৩৮ )
১০/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৯৬ , পৃষ্ঠা ৩৭৯ এবং পৃষ্ঠা ৩৬৮ এর ৪৬৭৬ নং হাদিসও দেখুন )
১১/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮, হাদিস নং ৪৬৪০ , পৃষ্ঠা ৩৪৭) ।
১২/ (ইতকান, খণ্ড ১ , পৃষ্ঠা ৬০ আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ৯৮” লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
১৩/ (ইতকান, খণ্ড ১ , পৃষ্ঠা ৬০) আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ৯৮” লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
১৪/ ) (ইতকানঃ খণ্ড ১ , পৃষ্ঠা ২০, আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ৯৮” লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
১৫/ (ইতকানঃ খণ্ড ১ , পৃষ্ঠা ৬১, আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ৯৮”৯৯ , লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
১৬/ (ইতকানঃ খণ্ড ১ , পৃষ্ঠা ৬২, আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ১০০,১০১। লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
১৭/ (ইতকান, খণ্ড ১ ,পৃষ্ঠাঃ ৬২) আরও দেখুনঃ “তাহরীফমুক্ত কুরআন, পৃষ্ঠাঃ ১০১,১০২। লেখকঃ মাও মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন, দ্বীন হক প্রকাশনী , প্রথম প্রকাশ মেঃ ১৯৯৫ ইংরেজি )
১৮/ (ই’ফা,সহিহ বুখারি খণ্ড ৮, হাদিস নং ৪৬২৯ , পৃষ্ঠাঃ ৩৪০)
১৯/ (ই’ফা, সহিহ বুখারি খণ্ড ৮ , হাদিস নং ৪৬৯৬ , পৃষ্ঠা ৩৭৯ এবং পৃষ্ঠা ৩৬৮ এর ৪৬৭৬ নং হাদিসও দেখুন )

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.