লজ্জা/ চরিত্র লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ

লজ্জা/ চরিত্র
লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ 
রাজবাড়ির গোয়ালন্দ উপজেলা। এ উপজেলার পশ্চিম উজানচর গ্রামের মেয়ে হাজেরা খাতুন। বয়স ২৪ বছর। বাবা মৃত সিরাজ প্রামাণিক। রাজবাড়ি সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। একদিন অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল আসে হাজেরার মোবাইলে। বিব্রত হাজেরা কলটা রিসিভ করেন। অচেনা লোকটি কণ্ঠের মুগ্ধতা দিয়ে আকর্ষিত করার ফাঁদ পাতে। বিনম্র কণ্ঠে সে বলে, ‘আমি জহির উদ্দিন বাবু। আমাকে চিনতে পারছেন?’
এই নামের কাউকে চেনে না হাজেরা। তবু হয়তো লজ্জার খাতিরে বললেন, ‘হ্যাঁ, চিনতে পারছি! তো কেমন আছেন আপনি...।’
.
লোকটার বয়স চল্লিশ বছর। ঘরে স্ত্রী-সন্তান আছে। পৌঢ়ত্বের বয়সে কেমন যেন জবুথবু অবস্থা লোকটার। কিন্তু সম্মোহন ও বিভ্রান্ত করার চুম্বক শক্তি ছিলো তার। সেই সম্মোহনে গলে গেলেন হাজেরা। তখন থেকে দুজনের পরিচয়। পরিচয় থেকে হৃদ্যতা, সেখান থেকে প্রেম। চলতে থাকে নিরবধি। আপন গতিতে। এক বছর পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে তাদের প্রেম।
.
বিয়ে করার প্রলোভন দিয়ে হাজেরার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে সে। হাজেরাও নিজেকে সমর্পণ করে এই লোকটার কাছে। নির্দ্বিধায়! পবিত্র (!!!) প্রেম বলে কথা। এই নির্বুদ্ধিতা আর পাপের ফল শুভ হলো না হাজেরার জন্যে। বিয়ের আগেই গর্ভে বাচ্চা ধারণ করলেন তিনি। গর্ভের দুনিয়া তাকে উদ্বিগ্ন করে তুললো। তিনি জহিরকে বিয়ের জন্যে চাপ দিতে লাগলেন। তার চাপাচাপিতেই বেরিয়ে এলো জহির নামক পাষণ্ডের আসল পরিচয়। মুখোশটা খুলে গেলো হাজেরার সামনে।
.
ছেলেটা আসলে জহির নয়। তার আসল নাম শ্রীরাম কুমার দাস। সে গোয়ালন্দঘাট উপজেলার হাটজয়পুর গ্রামের খোকা দাসের ছেলে। পরিচয়টা পেয়ে ঘৃণায় গা গুলিয়ে বমি বেরিয়ে আসতে চায় হাজেরার। একটা মুশরিকের সন্তান পেটে ধারণ করেছেন তিনি! কিন্তু কী করবেন হাজেরা? পবিত্র প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাওয়ার পরিণতি এর চেয়ে আর ভালো কী হতে পারে?
.
বিষয়টা সুরাহা করার জন্যে চাপ দেওয়া হোলো কুমার দাস-কে। অবস্থা বেগতিক দেখে কুমার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ২রা মে হাজেরাকে মোটরসাইকেলে করে রাজবাড়ির একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে জোরপূর্বক কবিরাজি ঔষধ খাইয়ে পেটের বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করে। এতে হাজেরা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৬ই মে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
(তথ্যসূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৫/০৭/১০ ইং)
.
এমন কিছু ঘটনা আছে, যা অন্তরকে নাড়িয়ে দেয়। আবার সাথে সাথে একটা ঘৃণাও তৈরি করে—মানুষ এতটাই নিচে নামতে পারে?
শারীরিক সম্পর্ক এতটাই তুচ্ছ জিনিস হয়ে যেতে পারে?
হারাম প্রেমগুলো এত সহজেই ‘পবিত্র প্রেম’ হয়ে যেতে পারে?
আধুনিকতার নামে জিনা-ব্যভিচার এতটাই সস্তা হয়ে যেতে পারে?
.
ফেসবুকে মাঝেমধ্যে এমন কিছু প্রশ্ন আসে, যা শুনলে মনটা তৃপ্তিতে ভরে যায়। আবার এমন কিছু প্রশ্ন আসে, যা পড়তে গেলেও ঘেন্না লাগে। মনের অজান্তেই প্রশ্ন জাগে, ছিঃ! মানুষ এতটা নিচে নামতে পারে? আমার জীবনে শুনা একটি নিকৃষ্টম প্রশ্ন হোলো—“একজন মুসলিম মেয়ে একটা হিন্দু ছেলের সাথে ৭ বছর ধরে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িত ছিল, এ সময় তারা শারীরিক ভাবে মেয়ের কথামত শুধু নাভীর উপর এর কাপড় খুলে ওই হিন্দু ছেলের সাথে বহু বার মিলিত হয়েছে আর শরীরের নিচের অংশে কাপড় এর উপর দিয়ে স্পশ (বানানটা স্পর্শ হবে) করত। পরে ওই ছেলে অন্য হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করে এবং ওই মুসলিম মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখে। এমন করে আরো ৭ বছর অতিবাহিত হয়। মোট ১৫ বছর, এখন ওই মুসলিম মেয়ের একটা বিয়ে হয় এবং স্বামী ও তার পরিবারের নিকট তার পুরানো সম্পকের (সম্পর্কের হবে) কথা গোপন রাখে.....।”
.
আল্লাহ তাআলা আমাদের লজ্জাস্থান হিফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
“মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। ঈমানদার নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।” (সূরা নূর : ২৯-৩০)
.
প্রশ্নটা ইনবক্সে দেখার পর, বিস্মিত না হয়ে পারিনি। হায়, আজ কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি আমরা! আধুনিকতার নামে যেভাবে আল্লাহর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি, না জানি আল্লাহর গজব কবে আমাদের ধ্বংস করে। আজ যিনা-ব্যভিচার-লজ্জাস্থানের ফিতনাগুলো আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির ইয়াং জেনারেশান এই ফিতনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর আমরা বসে বসে দেখছি। সব আমাদের সামনেই হচ্ছে, কিন্তু তবুও আমরা নিশ্চুপ দর্শকের ভূমিকায় অভিনয় করছি।
.
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদের কিছুতেই ফিতনায় ফেলতে না পারে, যেমন করে তোমাদের পিতা-মাতা (আদম ও হাওয়াকে) জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিলো। সে তাদের পরস্পরকে লজ্জাস্থান দেখানোর জন্যে তাদের দেহ থেকে পোশাক খুলিয়ে ফেলেছিলো।” (সূরা আল আ’রাফ : ২৭)
.
আল্লাহ লজ্জাস্থান হিফাযত করতে বলেছেন। লজ্জাস্থানের ফিতনা থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। কারণ, শয়তান তার এই ফিতনার মাধ্যমেই আদম (আ) ও হাওয়া (আ)-কে জান্নাত থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছিলো। আর আজ আমরা মডার্ন হওয়ার নেশায়—পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণের মাধ্যমে—শয়তানের সেই অপকৌশল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। পবিত্র প্রেমের নামে জিনার সাগরে ডুবে আছি। কেউ সতর্ক করলে, তাকে মিথ্যে দলিল শুনিয়ে বলছি—‘আরে যাও যাও! আমার মন পরিষ্কার! মন পরিষ্কার রেখে প্রেম করলে সমস্যা নেই! আমার প্রেম পবিত্র! জানোনা, আল্লাহ নিজেই কোরানে ইউসুফ-জুলেখার পবিত্র প্রেম-কাহিনি বর্ণনা করেছেন? (কত বড়ো মিথ্যে অপবাদ আল্লাহ ও তার নবি ইউসুফের নামে!)
.
এরা নিজেদের ফাহেশা কাজকে ভালো প্রমাণ করার জন্যে আল্লাহর ওপর অপবাদ দিতেও দ্বিধা করে না। অথচ আল্লাহ তাআলা সকল ফাহেশা কাজ হতে মুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, “বল, আল্লাহ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না। আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা কি এমন কথা বলছো, যা তোমরা জানো না?” (সূরা আ’রাফ : ২৮)
.
.
.
রাসূল (স) বলেছেন, “যে-ব্যক্তি আমার জন্যে তার দু-চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহ্বা) ও দু-রানের মধ্যবর্তী বস্তু (লজ্জাস্থান) হিফাজত করবে, আমি তার জন্যে জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো।” (বুখারি, কোমল হওয়া অধ্যায়, হাদীস : ৬০৩০)

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.