আর_আমি_আকাশকে_করেছি_সুরক্ষিত_ছাদ !

আর_আমি_আকাশকে_করেছি_সুরক্ষিত_ছাদ ! 
লিখেছেনঃ আফিফ আলী
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলছেন যে , " আর আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ, কিন্তু এ সবের নিদর্শন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় । " এখানে স্পষ্ট বলে দেয়া হচ্ছে যে , " কিন্তু এ সবের নিদর্শন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় । " আজকের আধুনিক বিজ্ঞান মতে আকাশ কখনই একটি শক্ত বা কঠিন পদার্থ নয় যে এটা ছাদ হবে । কিন্তু এই আয়াতের শেষে বলা আছে যে , , " কিন্তু এ সবের নিদর্শন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় । " অর্থাৎ এই আয়াতে নিশ্চয়ই নিদর্শন আছে । সেটাই দেখতে যাচ্ছি । তার আগে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল ।
প্রথমত সুরা আম্বিয়ার ৩২ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ,
⦁ وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَحْفُوظًا ۖ وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ
⦁ আর আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ, কিন্তু এ সবের নিদর্শন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এখন এই আয়াতে উল্লিখিত একটি শব্দ পাওয়া যাচ্ছে যেটা হচ্ছে ( سَقْفًا ) সাক্কফান । এই শব্দের দুটি অর্থ আছে সেই দুটি অর্থ নিম্নরূপঃ
⦁ ছাদ , চাল , ছাউনি
⦁ আচ্ছাদান , আবরণ
বেশিরভাগ অনুবাদকেরা ছাদ , চাল ছাউনি অনুবাদ করেছেন । কিন্তু এর আরেকটি অর্থ আচ্ছাদান বা আবরণ ও হয় । আমরা যদি দ্বিতীয় পয়েন্টের অর্থ গুলো আয়াতে যোগ করি তাহলে আয়াতটি দাড়াবে ,
⦁ আর আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত আবরণ , কিন্তু এ সবের নিদর্শন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এখন আধুনিক বিজ্ঞান মতে আমরা জানি যে , আকাশ হচ্ছে পৃথিবীর উপর একটি আবরণ বা ঘনস্তর যা ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে যেকোনো বিন্দু নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। এতটুকু ঠিক আছে । এরপরে বলা হচ্ছে ( مَحْفُوظًا ) মাহফুযন বা সুরক্ষিত । এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে , আকাশ তো কোন ঢাল না বা মহাকাশ থেকে কোন ইট পাটকেল এসে পরে না পৃথিবীতে যে , আকাশ সুরক্ষা প্রদান করবে । তাহলে এখানে কেন সুরক্ষিত বলা হল আকাশ কে ?
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে , এখানে সুরক্ষিত বলা হয়েছে একটি কারণে । এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে , আকাশ কিভাবে সুরক্ষা প্রদান করে ? তাহলে এর উত্তর টা বেশ সহজ । আমরা জানি আকাশকে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু স্তরে ভাগ করেছেন এইসকল স্তরগুলো হচ্ছে ,
⦁ ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)
⦁ স্ট্রেটোস্ফিয়ার (Stratosphere)
⦁ ওজোন স্তর ( Ozone Layer )
⦁ মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)
⦁ থার্মোস্ফিয়ার(Thermosphere)
⦁ আয়নোস্ফিয়ার(Ionosphere)
⦁ এক্সোস্ফিয়ার( Exosphere)
এখন প্রশ্ন হল এইসকল স্তর কিভাবে পৃথিবীকে সুরক্ষতি রাখবে ? আসলে স্তরসমূহ পৃথিবীর জন্য ঢালের ( Shield ) এর মত কাজ করে । এই স্তরের মধ্যে ওজোন স্তর (Ozone layer) হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের একটি স্তর যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর থাকে প্রধানতঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কমবেশি ২০-৩০ কিমি উপরে অবস্থিত । বায়ুমণ্ডলে ওজোনের প্রায় ৯০ শতাংশ স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওজোনস্তরে ওজোনের ঘনত্ব খুবই কম হলেও জীবনের জন্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি এটি শোষণ করে নেয়। ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর মধ্যম মাত্রার(তরঙ্গদৈর্ঘ্যের) শতকরা ৯৭-৯৯ অংশই শোষণ করে নেয়, যা কিনা ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থানরত উদ্ভাসিত জীবনসমূহের সমূহ ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম। ঠিক এভাবে বিভিন্ন স্তর আকাশের অর্থাৎ এককথায় আকাশ পৃথিবীকে সুরক্ষিত করে রেখেছে আচ্ছাদিত করে ।
এখন দেখে আসি যে , সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি জীবজগতের কি কি ক্ষতি করতে পারে ,
বাতাসে অতিবেগুনী রশ্মি- ‘বি’ (UV-B)-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, মৃত পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে বর্দ্ধিত পরিমাণ কার্বন মনোক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডস উৎপন্ন হয়ে থাকে। ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী ওজোন গ্যাস এবং কার্বন মনোক্সাইড এসিড রেইন (এসিড বৃষ্টি) সৃষ্টি করে। এসিড রেইন জীব কোষের ক্ষতিসাধন করে। অতিবেগুনী রশ্মি (Ultra violet rays)(UV rays) গুলোর মধ্যে, অতিবেগুনী রশ্মি- ‘সি’(UV-C) ওজোন স্তরে সম্পূর্ণভাবে শোষিত হয়, অতিবেগুনী রশ্মি- ‘বি’ (UV-B) এর মাত্র ৫% ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে এবং অতিবেগুনী রশ্মি- ‘এ’ (UV-A) এর ৯৫% ভাগই বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহ ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে। অতিবেগুনী আলোকরশ্মি (Ultra violet rays)(UV rays) গুলো গাছপালা, তরুলতা, প্রাণি, অনুপ্রাণি সকলের উপরই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে., ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৃথিবীকে মাত্রাতিরিক্ত উত্তপ্ত করবে। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, নিম্নভূমি প্লাবিত হবে, পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে, আকস্মিক বন্যা, নদী ভাঙন, খরা, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রকট হবে। মানুষের ত্বকের ক্যান্সার ও অন্ধত্ব বৃদ্ধি পাবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। উদ্ভিদের জীবকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সমুদ্রে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাবে, ফাইটোপ্লাংকটন উৎপাদন কমে যাবে। এতে ( Eco System ) মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে ।
পৃথিবীকে ঘিরে থাকা আকাশের সবচেয়ে নিকটবর্তী বলয়ে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সেই বায়ু মণ্ডল (Atmosphere)-এ চারটি স্তর রয়েছে যা তাপমাত্রার পরিবর্তন দ্বারা পৃথক। এই স্তরগুলো হচ্ছে— ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার। ওজোন স্তরের পাশাপাশি এইসকল স্তরের কাজের বর্ণনা দেখে নেই , ট্রোপোস্ফিয়ার এর কারণে আল্লাহর ইচ্ছায় আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে নাহলে আবহাওয়া একই থাকতো যার কারণে জীবজগতে অনেক সমস্যা দেখা দিত । মেসোস্ফিয়ার অধিকাংশ উল্কা (Meteors) এখানে ভস্ম হয়। অর্থাৎ এই স্তর উল্কাপিন্ডকে ভস্ম করে দেয় ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে , প্রত্যেকটি স্তর আকাশের প্রতিটা স্তর পৃথিবীকে সুরক্ষা প্রদান করছে এককথায় আকাশ ই সুরক্ষা প্রদান করছে কেননা এইসকল স্তর আকাশেরই অন্তর্ভুক্ত । অর্থাৎ একটি ঢালের মত কাজ করছে আর এই নিয়ে BBC বাংলায় একটি আর্টিকেল লিখা হয় যার নাম ছিল ( মেরামত হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিরক্ষার ঢাল ওজোন স্তর ) । আর এই কারণেই আল্লাহ বলেছেন ,
⦁ وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَحْفُوظًا ۖ وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ
⦁ আর আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ, কিন্তু এ সবের নিদর্শন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
কতটা নিখুঁতভবে আল্লাহ কুরআন লিখেছেন । যেখানে বিজ্ঞানীরা ওজোন স্তর নিয়ে লিখতে গিয়ে এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটা বই লিখে ফেলেছেন সেখানে আল্লাহ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এক লাইনেই এর ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ( সুবহানাল্লাহ ) । আর যারা এই সব নিদর্শন অর্থাৎ কুরআন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাদের জন্য আল্লাহ বলে দিয়েছেন ,
⦁ ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ
⦁ এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত।
বিজ্ঞান্মনস্কদের উচিত সংকীর্ণ বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে বর্জন করে মুক্তভাবে পজিটিভ মেন্টালিটি নিয়ে চিন্তা করা ।
তথ্যসূত্রঃ
* সুরা আম্বিয়া আয়াত ৩২
* সুরা বাকারা আয়াত ২
* Wikipedia / ওজোন স্তর
Dainikjessore.com - [ বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর : জীব-জগতের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ঢাল ]
* BBC বাংলা - [ মেরামত হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিরক্ষার ঢাল ওজোন স্তর ]

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.