দুধের উৎপত্তি স্থল নিয়ে কি কুরআন ভুল ব্যাখ্যা দেয় ?

মাতৃস্তনে দুধ কোথেকে আসে ?
কুরআন কারীম বলছে প্রাণীর বর্জ্য ও রক্তের মধ্য থেকে দুধ আসে। বিষয়টি জেনে নেয়া যাক -
মূলত প্রাণী যে খাবার খায় তার মধ্যেই আছে দুধের কাঁচামাল অর্থাৎ বিভিন্ন প্রোটিন। দুধ তৈরির জন্য মাতৃদেহে আছে বিশেষ যন্ত্র। যাকে আমরা ম্যামারি গ্ল্যান্ড বা স্তনগ্রন্থি বলতে পারি। খাদ্য থেকে কাঁচামাল এই স্তনগ্রন্থিতে পৌঁছতে পারলেই দুধ তৈরি হবে। কিন্তু কাঁচামাল কিভাবে পৌঁছবে যন্ত্রস্থলে ?
আপনার কারখানায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিভাবে আসে ? বিদেশ থেকে শিপে, তারপর বন্দর থেকে মালগাড়িতে কিংবা লরি, ট্রাকে সোজা কারখানায়। দুধের কাঁচামাল লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে দুটো বিগ জার্নি করতে হয়। প্রথম জার্নি প্রকৃতি থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ পর্যন্ত। দ্বিতীয় জার্নিটা ঘটবে দেহের ভিতরে। দুটো জার্নিই অত্যন্ত জটিল ও বিস্ময়কর।
প্রথম জার্নি : বিভিন্ন রকম মূল্যবান প্রোটিন, যা আবার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র, প্রোটিনগুলো জমিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে সব ধরণের প্রাণীর পক্ষে তা সংগ্রহ করা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। প্রাণীর দেহে পৌঁছানোর জন্য প্রথম মাধ্যম হিসেবে আকর্ষণীয় আকৃতি, রঙ, ঘ্রাণ, স্বাদ যুক্ত, তুলনামূলক বড় প্যাকেট ব্যবহার করা হয়। প্যাকেটে থরে থরে সাজানো থাকে মূল্যবান প্রোটিন। প্রোটিন বহনের কাজে ব্যবহৃত এই প্যাকেটগুলোই খাদ্য হিসেবে পরিচিত। চাল, ডাল, গম, ফলমূল, শবজি, গোশত, মাছ যা কিছুই প্রাণী খায় এই সবই মূলত প্রোটিন বহনকারী প্যাকেট এবং প্রোটিনের বাহন।
দ্বিতীয় জার্নি : প্রোটিনবাহী খাদ্য দেহে প্রবেশ করার পর দ্বিতীয় জার্নিটি শুরু হয়। পরিপাক যন্ত্রের মাধ্যমে মূল্যবান প্রোটিনগুলো বাহক থেকে আলাদা হয়ে যায়। এ পর্যায়ে প্রাথমিক বাহনটির কার্যকরিতা শেষ। এটি এখন স্রেফ আবর্জনা। এই আবর্জনা দেহ থেকে বেরিয়ে যায় বর্জ্য হিসেবে। এরপর কাজ শুরু করে দেহের আভ্যন্তরীন বাহন ‘রক্ত’ ।
রক্তের কোষগুলোয় প্রোটিন বহন করার জন্য কোটি কোটি কামরা বা বগি (প্রকোষ্ঠ) আছে। প্রোটিনগুলো এসব ‘বগিতে’ আরোহন করে প্রথমে হৃৎপিণ্ডে পৌঁছায়। সেখান থেকে কিছুটা অক্সিজেন গ্রহণ করে রক্তে আরোহন করেই কারাখানা বা দুধ উৎপাদন যন্ত্র ’স্তনগ্রন্থিতে’ পৌঁছে যায়। স্তনগ্রন্থি রক্ত নামের বাহনটি থেকে তার দরকারি সব কাঁচামাল বা প্রোটিন নিজের কাছে রেখে দেয়। এদিকে রক্তের যাতায়াত (প্রবাহ) থামে না। অনবরত সে প্রোটিন আনা নেয়া করতে থাকে প্রাণীটির মৃত্যু পর্যন্ত।
দুটো জার্নি বোঝার পর আমরা কী পেলাম ? দুধ তৈরির প্রোটিনগুলো ঠিক জায়গায় পৌঁছায় দুটি বাহনে চড়ে। প্রথম বাহন যার শেষ পরিণতি জৈবিক বর্জ্য বা মল। দ্বিতীয় বাহন হল রক্ত। প্রথমবার দুধের উপাদান বর্জ্যের উপাদান থেকে পৃথক হয়ে রক্তে মিশ্রিত হয়। দ্বিতীয়বার রক্ত থেকে পৃথক হয়ে স্তনগ্রন্থীতে পৌঁছে। দেখা গেল বর্জ্য আর রক্তের মধ্য দিয়েই দুধের উপাদানগুলো দুধে পরিণত হওয়ার সুযোগ পেল।
এখন আপনি দেখুন কুরআন কী বলছে -
আননাহল (১৬) : ৬৬ -
তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যকার, গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।
And verily in cattle (too) will ye find an instructive sign. From what is within their bodies between excretions and blood, We produce, for your drink, milk, pure and agreeable to those who drink it.
সাড়ে ১৪০০ বছর আগে অবতীর্ণ গ্রন্থে রক্ত এবং গোবরের যৌথ ভূমিকায় দুধ উৎপাদনের কথাই রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের আর কিছু বলার নেই। শুধু এই আয়াতটি বলা যায় - আল মুরসালাত (৫৭): ৫০ - “ এরপর আর কোন্ কথায় তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে?”


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.