মৌমাছি ফল থেকে মধু খায়
মৌমাছি ফল থেকে মধু খায় ?
লিখেছেনঃ রাজ হোসেন চৌধুরী
নাস্তিকদের অভিযোগের এক অন্যতম বিষয় হচ্ছে সুরা নাহালের আয়াত অর্থাৎ ৬৯ । এই আয়াতের মধ্যে তারা নাকি অনেক অবৈজ্ঞানিক তথ্য আছে ।
আয়াতে বলা হয়েছে ,
আয়াতে বলা হয়েছে ,
⦁ ثُمَّ كُلِي مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
⦁ অতঃপর তুমি প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চল। তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। [ 1 ]
মূলত লেখা এগিয়ে যাবার আগে কিছু কথা বলে নিতে চাই । যারা নিজেদের মুক্তমনা , মুক্তমনা বলে চিল্লাতে থাকে তারা মূলত মুক্তমনা নয় । বরং তারা ইসলাম বিদ্বেষী । এবং তাদের এইসব প্রোপাগান্ডাসমূহ আসে কিছু মেইন মাথা থেকে সেই মাথারা আবার প্রোপাগান্ডা কুড়িয়ে আনে মিশনারী আর হিন্দু দাদাদের থেকে । এই চক্রের মাঝেই তাদের সীমাবদ্ধতা এর বাহিরে তারা চিন্তা করতে সক্ষম না । এবং এদের বেশিরভাগই আরবি জানেনা । আরবি সাহিত্য সম্পর্কে বুঝেনা । এমনকি এদের ৯০% এর চেয়েও বেশি আরবিটাই পড়তে জানেনা । তাই আজকে তাদের এই করুণ অবস্থা । এই আয়াতে বলা হয়েছে " অতঃপর তুমি প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর " এতটুকু দেখেই তাদের শুরু হয়ে যায় । এই আয়াতের মধ্যে ফল হিসেবে যে আরবি শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে সেটা হল ( الثَّمَرَاتِ ) এর অনেক অর্থ বা প্রকাশের দিক থেকে অনেক অর্থ আছে সেগুলোর মধ্যে থেকে উপস্থাপন করছি ,
⦁ ( الثَّمَرَاتِ ) - যা গাছে ধরে
এছাড়া তাফসীরে আহসানুল বায়ানে স্পষ্ট বলা আছে যে , এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ ফল , ফুল আহরণ করতে বলেছেন তাফসীরে আহসানুল বায়ানের কথাটা এখানে উপস্থাপন করছি ,
⦁ আহসানুল বায়ান
মৌমাছি প্রথমে পাহাড়ে, গাছে, মানুষের ঘরের উঁচু ছাদে এমনভাবে মৌচাক তৈরী করে যে, মাঝে কোথাও ফাঁক থাকে না। তারপর বাগান, জঙ্গল, পাহাড় ও উপত্যকায় (অনুরূপ ফুলে ভরা শস্যক্ষেতে) ঘুরে বেড়ায় এবং প্রত্যেক ফুল-ফলের মধু ও রস আহরণ করে পেটে জমা করে। [ তাফসীরে আহসানুল বায়ান ]
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদেও এই কথাটা এসেছে সেখানে বলা হয়েছে ,
⦁ ফাতহুল মাজীদ
অতঃপর আল্লাহ মৌমাছিদের আরও আদেশ দিলেন তারা যেন ফল , ফুল , ঘাসপাতা থেকে রস আহরণ করে এবং যেখানে ইচ্ছা সেখানে গমন করে । কিন্তু প্রত্যাবর্তনের সময় যেন সরাসরি নিজের মৌচাকেই আসে । [ তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ ]
এছাড়া আরবি এই শব্দ ( الثَّمَرَاتِ ) দিয়ে এমন কোন কিছু বুঝানো হয় যা গাছে ধরে এটি দিয়ে ফুলও বুঝানো যেতে পারে আবার ফলও বুঝানো যেতে পারে ।
আর যদিও ধরে নেই যে , আক্ষরিক ভাবে সেখানে ফল বলা হয়েছে তাও একে মিথ্যা বলে প্রমাণ করা যাবেনা । কেননা ,
মৌমাছি অবশ্যই ফল থেকে মধু খায় প্রথমত আমাদের জানতে হবে ফল জিনিস টা কি ? ফল হচ্ছে একটি বীজের "Ovari Wall" যেটা ধীরে ধীরে বিজের চারপাশে Wall তৈরি করে; বীজ যখন বড় হয় তখন সেটা "অক্সিন" নামক হরমোন নিঃসরণ করে যেটা সেই বীজটাকে 'ফল"-এ পরিণত করে ।
মৌমাছি অবশ্যই ফল থেকে মধু খায় প্রথমত আমাদের জানতে হবে ফল জিনিস টা কি ? ফল হচ্ছে একটি বীজের "Ovari Wall" যেটা ধীরে ধীরে বিজের চারপাশে Wall তৈরি করে; বীজ যখন বড় হয় তখন সেটা "অক্সিন" নামক হরমোন নিঃসরণ করে যেটা সেই বীজটাকে 'ফল"-এ পরিণত করে ।
মৌমাছি ফুলে বসে ঠিকই কিন্তু নজর থাকে ভিতরের ওই বীজের (Ovari Wall) চারপাশে, মানে ফলের দিকে! মধু সংগ্রহ করে কিন্তু ঐ ফল থেকেই! অর্থাৎ মৌমাছি সেই ফল থেকেই মধু গ্রহণ করে ফুল থেকে না। [ 5 ]
আরেকভাবে যদি বলা যায় হুম মৌমাছি আম , কাঠাল , পাকা বড়ই থেকে মধু খায় কেননা সেগুলোতে গ্লুকজ , ফ্রুক্টক বিদ্যমান নিচের ভিডিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন :
https://www.youtube.com/watch?v=_Ryx9TL3C4E
আরেকভাবে যদি বলা যায় হুম মৌমাছি আম , কাঠাল , পাকা বড়ই থেকে মধু খায় কেননা সেগুলোতে গ্লুকজ , ফ্রুক্টক বিদ্যমান নিচের ভিডিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন :
https://www.youtube.com/watch?v=_Ryx9TL3C4E
সুতরাং প্রমাণিত যে মৌমাছি ফল থেকেও মধু সংগ্রহ করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সব ফল থেকেই গ্রহণ করে ? এখানে সকল শব্দটি আরবি যে শব্দের অনুবাদ, সেটি হলো- কুল্লুন(كُلٌّ )। প্রখ্যাত এরাবিক ডিকশনারি লিসান আল আরবে আছে যে, ‘কুল্লুন(كُلٌّ )’ শব্দটির অর্থ ‘সকল’ বা কোন কোন ক্ষেত্রে ‘কিছু’ অর্থাৎ ‘مَعَنَى الْبَعَضْ’। [ 6 ]
আবার আল-ফিকহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ নামক একটি গ্রন্থে বলা হয়েছে, এখানে ‘কুল্লুন’ শব্দটি ‘আধিক্য’ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। সহিহ বুখারীর এই হাদিসের টীকায় বলা আছে, যদিও এই হাদিসে ‘مِنْ كُلِّ دَاءٍ’ বা ‘সকল ফল’ কথাটি ‘ব্যাপক’ কিন্তু এর দ্বারা উদ্দেশ্য ‘খাস’ বা ‘নির্দিষ্ট’। [ 7 ]
তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, এই আয়াতে‘সকল ফল’ বলতে একদম পৃথিবীতে যত ফল আছে, সকল ফলের কথা বলা হয়নি বরং নির্দিষ্ট প্রকারের বিভিন্ন ফলের কথা বলা হয়েছে।
আর কুর’আন এবং হাদিসের আমি বা আপনি নিজের মতো করে পড়ে অর্থ বুঝলে হবেনা। আমাদের পূর্ববর্তী ‘আলিমগণ বা সলফে সালেহীনরা যেভাবে বুঝেছেন সেভাবেই বুঝতে হবে।
আর কুর’আন এবং হাদিসের আমি বা আপনি নিজের মতো করে পড়ে অর্থ বুঝলে হবেনা। আমাদের পূর্ববর্তী ‘আলিমগণ বা সলফে সালেহীনরা যেভাবে বুঝেছেন সেভাবেই বুঝতে হবে।
আয়াতে ব্যাবহার করা আরবি শব্দ ( مِنْ كُلِّ ) এর অনেক অর্থ আছে যার মধ্যে দুটো অর্থ সকল ফল বা ইংরেজিতে Every আর দ্বিতীয় অর্থটি হল Any বা ( কিছু ) , ( যাহা কিছু ) , ( নির্দিষ্ট কিছু ) এর আলোকে আয়াতটা ঠিক এরকম দাঁড়াচ্ছে :
অতঃপর তুমি কিছু ফল থেকে আহার কর এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চল। তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।
অতঃপর তুমি কিছু ফল থেকে আহার কর এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চল। তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।
উল্লেখিত আয়াত এ কুল্লুন শব্দের দুটি অর্থ।
এর ব্যাখ্যা দুইভাবে সম্ভব এবং দুইভাবেও বিজ্ঞান দ্বারা ভুল প্রমাণ হয় না বরং সঠিক বলে প্রমাণিত হয় ।
এসব আয়াতের বিশ্লেষণে মনে হয়না কারও আর কোন সমস্যা থাকতে পারে । কুরআনের আয়াতের অনেক কথা আছে যার কোন ব্যাখ্যা হয় না । কিংবা আমাদের চিন্তার বাহিরে অথবা আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা । পৃথিবীতে ৯ টি গোত্রের মধ্যে ২০ হাজার প্রজাতির মৌমাছি আছে । তার মধ্যে বেশিরভাগই বিজ্ঞানীদের জানা নেই । তাই সে জায়গায় আমাদের না জেনে এইসব আয়াতের উপর আঙ্গুল তোলা নেহায়েত একটা বোকামি । [ 8 ]
আরও বলা হয়েছে ------
⦁ তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। [ 9 ]
এখানে ,
" তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে । "
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রঙ বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই কোন বিশেষ অঞ্চলে কোন বিশেষ ফল-ফুলের প্রাচুর্য থাকলে সেই এলাকার মধুতে তার প্রভাব ও স্বাদ অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়। মধুর রঙ একেক সময় ঘন লাল আরেক সময় হালকা বর্ণের হয় । বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে মধুর মূল উপাদানগুলো হচ্ছে পানি, শর্করা বা চিনি,এসিড,খনিজ,আমিষ এবং বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন । অনেক প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানও আছে। যেমন- এনজাইম বা উৎসেচক, খনিজ পদার্থ (যথা পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ), এছাড়াও প্রোটিন আছে। আর এইসব কারণেই বিশেষ করে ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রঙ বিভিন্ন হয়ে থাকে ।
উপসংহারঃ
এসব আয়াতের বিশ্লেষণে আমার মনে হয়না কারও আর কোন সমস্যা থাকতে পারে । কুরআনের আয়াতের অনেক কথা আছে যার কোন ব্যাখ্যা হয় না । কিংবা আমাদের চিন্তার বাহিরে অথবা আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ।
তথ্যসূত্রঃ
1. সুরা আন নাহাল আয়াত ৬৯
2. সুরা আন নাহাল আয়াত ৬৮
3. তাফসীরে আহসানুল বায়ান
4. তাফসীর ফাতহুল মাজীদ
5. www. honeybeesuit . com
6. [লিসান আল আরব; খন্ডঃ ০৭; পৃষ্ঠাঃ ৭১৮]
7. [সহিহ বুখারী(মূল আরবি ছাপা); খন্ডঃ ০২; পৃষ্ঠাঃ ৮৪৯; টীকাঃ ০২]
8. [Danforth, B.N., Sipes, S., Fang, J., Brady, S.G. (2006) The history of early bee diversification based on five genes plus morphology. Proceedings of the National Academy of Sciences 103: 15118-15123]
9. সুরা নাহাল আয়াত ৬৯
2. সুরা আন নাহাল আয়াত ৬৮
3. তাফসীরে আহসানুল বায়ান
4. তাফসীর ফাতহুল মাজীদ
5. www. honeybeesuit . com
6. [লিসান আল আরব; খন্ডঃ ০৭; পৃষ্ঠাঃ ৭১৮]
7. [সহিহ বুখারী(মূল আরবি ছাপা); খন্ডঃ ০২; পৃষ্ঠাঃ ৮৪৯; টীকাঃ ০২]
8. [Danforth, B.N., Sipes, S., Fang, J., Brady, S.G. (2006) The history of early bee diversification based on five genes plus morphology. Proceedings of the National Academy of Sciences 103: 15118-15123]
9. সুরা নাহাল আয়াত ৬৯
মৌমাছি ফল খায় প্রমান দেখুনঃ
https://www.youtube.com/watch?v=_Ryx9TL3C4E
No comments
Note: Only a member of this blog may post a comment.