নাস্তিকব্রেনের error: ঈশ্বর অদৃশ্য তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই

নাস্তিকব্রেনের error: ঈশ্বর অদৃশ্য তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই 
=====================================
লেখক: Farhad Hossain Mithu
========================
[পোস্টটা একটু জটিল মনে হতে পারে।তবে কয়েকবার পড়ে যদি বিষয়টা বুঝতে পারেন তাহলে আপনারই উপকার হবে,ইনশা'আল্লাহ ]
মানুষের ব্রেনকে বলা হয় মহাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জটিল বস্তু।ব্রেন আল্লাহ্‌ তাআলার এক অসাধারণ সৃষ্টি যার রহস্য এখনো মানুষ সমাধান করতে পারেনি। এই ব্রেন দিয়েই একদল মানুষ আল্লাহ্‌ তাআলার আনুগত্য করতে শিখে আরেকদল শিখে আল্লাহ্‌ তাআলার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর নাফরমানী করতে।
আমাদের ব্রেন পৃথিবীটাকে দেখে True/False এক্সাম হিসেবে।এই জন্য সাইকোলজিস্ট Daniel Gilbert বলেছেন কোন তথ্যকে প্রসেস করতে হলে আমাদের ব্রেনকে অবশ্যই সেই তথ্যটাকে প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে। ১ সেকেন্ডের অর্ধেক হলেও সে তথ্যটা ব্রেন বিশ্বাস করবে। যেমন ধরুন আমি আপনাদের 'গোলাপি' রংয়ের হাতিদের সম্পর্কে চিন্তা করতে বললাম।আপনারা সবাই জানেন যে 'গোলাপি হাতি' বলতে কিছু নেই। কিন্তু যখন আপনি 'গোলাপি রংয়ের হাতি' শব্দগুলো পড়লেন তখন অল্প সময়ের জন্য আপনার ব্রেনে গোলাপি রংয়ের হাতির একটা ছবির সৃষ্টি হয়েছিল।অর্থাৎ কোন বিষয়কে অস্তিত্বহীন প্রমাণ করার জন্য আপনার ব্রেনকে প্রথমে সেই বিষয়টার অস্তিত্ব আছে বলে বিশ্বাস করতে হয়।
বেশীরভাগ নাস্তিকরা যখন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করে তখন তার ব্রেন স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টিকর্তার একটা ইমেজ তৈরী করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার ব্রেন 'Error' সাইন দেখায় ।কারণ সৃষ্টিকর্তার সঠিক ইমেজ মানুষের দ্বারা সৃষ্টি করা সম্ভব না। এই জন্য নাস্তিকরা প্রশ্ন করে ' আমরা সৃষ্টিকর্তাকে কেন দেখি না?' ।এমনকি একজন আস্তিকও যখন সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কে চিন্তা করে , আরশকে ধরে রাখা ফেরেশতাদের সম্পর্কে চিন্তা করে কিংবা জান্নাতের প্রাসাদ সম্পর্কে চিন্তা করে তখন তার ব্রেনে একধরনের ইমেজ তৈরী করে,কিন্তু যারা ভাল প্রাক্টিসিং মুসলিম তারা জানে যে এইসব কল্পনা করা সম্ভব না।
ব্রেনের ডাটা প্রসেসিং এর এই পদ্ধতি হল ধ্রুবক , সব মানুষের ব্রেনেই এই বৈশিষ্ট্য ছিল , থাকবে। এটাকে নিউরোলজিক্যাল কন্সট্যান্টও বলা যায়। আর তাই আমরা দেখি ব্রেনের দ্বারা ধোঁকা খেয়ে যুগে যুগে ভ্রান্তরা ' আমরা সৃষ্টিকর্তাকে কেন দেখি না?' এই প্রশ্নটা করেছে। বনী ঈসরাইলরাও এই প্রশ্নটা করেছিল। পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন--
" আর যখন তোমরা বলেছিলে , 'হে মুসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনো বিশ্বাস করব না ।' তখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে এবং নিজেরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে।" [সূরা বাক্বারাহ, আয়াত-৫৫]
মূর্তিপূজারীদের ভ্রান্ত হবার অন্যতম কারণও হল এটা।
এখন প্রশ্ন হল , তাহলে আমরা কিভাবে স্রষ্টার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করছি? এর উত্তর হল যে, ব্রেন শুধু উপরিউক্ত সিস্টেমেই ডাটা এনালাইজ করে না। ডাটা যত জটিল হবে এনালাইসিসের পদ্ধতিও জটিল হবে। যেমন ধরুন আমি বললাম 'ধসূর 'রংয়ের হাতি আছে। তখন আপনার ব্রেন 'গোলাপি রংয়ের হাতি' ডাটাকে এনালাইজ করতে যতটুকু সময় নিয়েছিল তার থেকে অল্প সময়ের মধ্যে 'ধসূর রংয়ের হাতি' ডাটাকে এনালাইজ করতে পারবে কারণ আপনি ধসূর রংয়ের হাতি দেখেছেন। কিন্তু আমি যদি বলি আর্কিমিডিসের গণিতের সমস্যা Problema Bovinum এর সমাধান করতে গেলে যে ফার্মার সমীরকরণ , V^2 - du^2 = 1 পাওয়া যায় সেখানে d=410286423278424 হবে , এটা কি সত্য নাকি মিথ্যা যাচাই করুন । তাহলে কিন্তু ব্রেনকে খুব সময় নিতে হবে এবং খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে ডাটাটাকে প্রসেস করতে।
নাস্তিকদের সমস্যাই হল এটা যে এদের ব্রেন প্রথম পদ্ধতিতে ডাটা এনালাইজ করে ,অর্থাৎ এরা অলস মস্তিষ্কের অধিকারী। এরা অনেক তথ্য-প্রমাণকে ইগনোর করে, ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায় না ,সীরাহ্‌ পড়তে চায় না পড়লেও বিধর্মীদের লেখা সীরাহ্‌ পড়ে।
কিন্তু বিশ্বাসীরা ধৈর্য ধরে আল্লাহ্‌ তাআলার নিদর্শনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে। ক্বুরআন ও সীরাহ্‌ থেকে জ্ঞান অর্জন করে ঈমানকে মজবুত করে।
তাই বলব, যারা এখনো সন্দেহে আছেন আল্লাহ্‌ তাআলার অস্তিত্বের বিষয়ে , কবরের আযাবের বিষয়ে , জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়ে, ফেরেশতাদের অস্তিত্বের বিষয়ে তারা জেনে রাখুন আপনারা আপনাদের ব্রেনের চিন্তা করার অলস পদ্ধতির কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আপনাদের চিন্তা করার পদ্ধতি পাল্টান না হলে হয়তো আপনি সারা জীবন আল্লাহ্‌ তাআলার নাফরমানী করে কাটাবেন নাহলে মূর্খ নাস্তিকদের মত কাটাবেন।
আমি পূর্বে আলোচনা করেছি যে কোন কিছুকে অস্তিত্বহীন প্রমাণ করার আগে সেই বিষয়টার অস্তিত্ব আছে বলে ব্রেনকে বিশ্বাস করতে হয় আর এই সাময়িক বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য ব্রেনকে সেই বস্তুর ইমেজ তৈরী করতে হয়। কিন্তু মানুষের ব্রেন স্রষ্টার ইমেজ তৈরী করতে সক্ষম নয় বলে ব্রেন Error সাইন দেখায় এবং বলে যে এই পদ্ধতিতে এই ডাটা এনালাইজ করা সম্ভব না , অন্য পদ্ধতিতে এই ডাটা এনালাইজ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু নাস্তিকরা যেটা করে সেটা হল তারা Error সাইন দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে 'স্রষ্টা বলতে কেউ নেই বা স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই যেহেতু স্রষ্টাকে দেখা যায় না' ।
" Seeing is Believing " এই নীতিতে এরা বিশ্বাসী। কিন্তু যারা Laws Of Optics সম্পর্কে জানে তারা বুঝে যে " Seeing is NOT Believing " । কারণ বর্তমানে এমন সব Optical illusion এর সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে যাতে করে প্রমাণ করা গিয়েছে যে মানুষের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ।
Optical illusion গুলো ম্যাজিশিয়ানরা খুব বেশি ব্যবহার করে।যেমন ধরুন-- খাঁচায় বন্ধী একটা হাতিকে একজন ম্যাজিশিয়ান গায়েব করে দিতে পারে।এখন দর্শক কি এটা দেখেই বিশ্বাস করে ফেলবে? না করবে না কারণ দর্শকের ব্রেন জানে যে সে একটা ম্যাজিক শোতে এসেছে এবং ম্যাজিশিয়ানরা ট্রিক ইউজ করে ম্যাজিক দেখায়। অর্থাৎ ব্রেন আগে থেকেই এই ব্যাপারে জানার কারণে সে এই ম্যাজিকের ডাটা এনালাইজ করে সিদ্ধান্ত দেয় যে এটা সত্য নয়।
এখন ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখি। ধরুন একদল মানুষ চিড়িয়াখানায় গিয়েছে হাতি দেখতে।কিন্তু যখন সে একটা বড় হাতির খাঁচার সামনে আসল তখন দেখল হাতিটা গায়েব হয়ে গিয়েছে। তখন সেই মানুষগুলোর ব্রেন ডাটা এনালাইজ করতে পারবে না যথাযথভাবে যেমনটা ম্যাজিক শোতে পেরেছিল এবং অজ্ঞরা হয়তো বিশ্বাস করেও ফেলতে পারে যে হাতিরা আসলেই গায়েব হয়ে গিয়েছে কিন্তু যারা তুলনামূলকভাবে জ্ঞানী তারা জানে যে এটা সম্ভব না আর যদি সম্ভবও হয় তাহলে হাতিকে Teleportation এর মাধ্যমে অন্য কোথায়ও Teleport করতে হবে।কিন্তু Teleportation এর জন্য শরীরের প্রতিটা অণুর সঠিক অবস্থান জানতে হবে কিন্তু এটা Heisenberg Uncertainty Principleকে (একটা ইলেক্ট্রনের সঠিক অবস্থান ও গতি একইসাথে জানা সম্ভব নয়) ভায়োলেট করে ।এছাড়া এটা যদি সম্ভবও হয় তাহলে এর জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজি এখনো আবিষ্কার হয়নি আর তাই জ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নিবে যে এটা কোন একধরনের Optical illusion। (আসলে খাঁচার শিকগুলোতে আয়না লাগিয়ে এই illusion সৃষ্টি করা হয়)
এজন্য কোন কিছু দেখলেই সেটার প্রতি বিশ্বাস আসবে কিনা সেটা নির্ভর করে Intellectual Development এর উপর।
চিন্তা করুন একবার , রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ ) যখন চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করলেন তখন একদল লোক বলেছিল সেটা নাকি জাদু এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় ! কিন্তু আরেকদল লোক ঠিকই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কারণ তাঁরা এই ঘটনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন । তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন এটা জাদু হতেই পারে না কারণ তাঁরা রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) কে নবুওতের আগে কখনই জাদু শিখতে কিংবা জাদু দেখাতে তাঁরা দেখেননি। এছাড়া এই ধরনের ঘটনা ইতিপূর্বে কেউই কখনোই দেখাতে পারেনি ।ফলে Logical Reasoning এর মাধ্যমে তাঁরা বুঝেছিলেন যে এটা মু'জিযা ।
আরেকটা ঘটনা আছে মূসা (আঃ) এর। যখন মূসা (আঃ) এর লাঠি সাপে পরিণত হয়ে অন্য যাদুকরদের সাপগুলোকে খেয়ে ফেললো তখন যাদুকররা বিস্ময়ে অভিভূত পড়েছিল এবং জাদুকররা Logical Reasoning এর মাধ্যমে বুঝেছিলেন যে এটা আসলে জাদু না। কিন্তু ফেরাউন মূসা (আঃ) কে জাদুকরদের সর্দার বলে অভিযোগ করল। ক্বুরআনে এই সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে--
" তারপর জাদুকররা সিজদাবনত হল ও বলল , 'আমরা হারুন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম।' ফিরআউন বলল : 'কী , আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা মূসাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে!দেখছি ,সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে।" (সূরা তা-হা )
এই ঘটনা দুটো দেখলে বুদ্ধিমান ও অজ্ঞের মধ্যে পার্থক্যগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। যেখানে বুদ্ধিমানরা Logical Reasoning এর মাধ্যমে শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে অগ্রাহ্য করে আল্লাহ্‌ তাআলার নিদর্শন দেখে আল্লাহ্‌ তাআলার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে সেখানে অজ্ঞরা নিজেদের গোঁড়ামির কারণে Logical Reasoning করতে অলসতা দেখায় এবং শয়তানের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়।
বিভিন্ন যুগের অজ্ঞদের ব্রেনের ব্যবচ্ছেদ করলে এই ঘটনাই দেখতে পারবেন, ইনশা'আল্লাহ্‌ ।
(এখানে বলে রাখি Logic দেখিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার বিধান অমান্য করা হল একধরনের অজ্ঞতা।তাই আল্লাহ্‌ তাআলার উপর বিশ্বাস আনার পর ' শুনলাম এবং মানলাম' নীতি ফলো করাই হল Intellectual Development এর লক্ষণ। )



No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.