মুসলিম নারীদের কর্মক্ষেত্র যখন গৃহের বাইরে...

 মুসলিম নারীদের কর্মক্ষেত্র যখন গৃহের বাইরে...
লিখেছেন আহমেদ আলী
.
.
[বিঃদ্রঃ আমার কথাগুলোকে কোনো ফতোয়া হিসেবে নেবেন না। ভাল কোনো আলিম এর শরণাপন্ন হোন, তাঁর কাছ থেকে ফতোয়া নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।]
.
.
সাধারণত আমরা বলে থাকি, শিক্ষার উদ্দেশ্য সুন্দর আচরণ করতে শেখা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ইসলামে শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু এতটুকু নয়। এর সাথে আরেকটি বিষয় রয়েছে যেটা ব্যতীত একজন মুসলিমের শিক্ষা সম্পূর্ণ নয় আর সেটা হল প্রকৃত ঈমান অর্জন করা। আর প্রকৃত মুমিন ব্যক্তির নিকট বিচারের মানদণ্ড সমাজকে সন্তুষ্ট করা না, বরং আল্লাহর বিধানের নিকট আত্মসমর্পণের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তাআলারই ইবাদত করা।
هُوَ ٱلَّذِى بَعَثَ فِى ٱلْأُمِّيِّۦنَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبْلُ لَفِى ضَلَٰلٍ مُّبِينٍ
"তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাদের একজনকে পাঠিয়েছেন রাসূল রূপে যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁর আয়াত, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত; ইতোপূর্বে তো তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।" (আল-কোরআন, ৬২:২)
তাই যদি কেউ ইসলামের এই মানদণ্ড প্রত্যাখান করে, তবে সে আর প্রকৃত মুসলিম থাকল না।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হুকুম দিচ্ছেন,
وَلَا تَقْرَبُوا۟ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةً وَسَآءَ سَبِيلًا
"তোমরা অবৈধ যৌন সংযোগের নিকটবর্তীও হয়ো না, ওটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।" (আল-কোরআন, ১৭:৩২)
এই আয়াতে কেবল বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কেই নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং যে সকল পথ অবলম্বন করলে এহেন অশ্লীলতা ও অবৈধ হারাম সম্পর্কের নিকটবর্তীও হওয়া যায়, সেই সকল পথ ও কাজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে তাই যে সকল স্থানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সেই সকল স্থানে যদি নারী ও পুরুষ ক্রমাগত গমন করে সেটা যেকোনো কারণেই হোক না কেন, তবে এরূপ কাজের অনুমতি ইসলামে নেই।
এখন বর্তমানের ইহুদি-তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখা যাবে যে, সমান অধিকারের নামে তারা কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অবাধে মেলামেশাকে এক প্রকার বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। ইসলামিক নিয়মের বাইরে আপনি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে গেলেই সেখানে কাজ করতে হলে আপনাকে পুরুষের সাথে অবাধে মেলামেশা করতে হবে। এই অবস্থায় এরূপ মেলামেশা হারাম!
এখানে ইসলামে নারী কাজ করতে পারবে না, এমন নয়। নারী কাজ করতে পারবে, কারণ আমরা দেখেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী খাদিজা (রা) ব্যবসাও করেছেন আর তিনি ছিলেন ধার্মিক একজন নারী। এখানে তাই নারী কাজ করতে পারবেন না, আলিমরা এমনটা বলেন না। আলিমরা যেটা বলেন সেটা হল নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা করা যাবে না। কারণ এটা ব্যভিচারের পথ খুলে দেয়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার (ইন্তেকালের) পরে আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য নারী অপেক্ষা অধিক ফিতনার শঙ্কা আর কিছুতেই রেখে যাইনি।"
[সহীহ : বুখারী ৫০৯৬, মুসলিম ২৭৪০, তিরমিযী ২৭৮০, ইবনু মাজাহ ৩৯৯৮, সহীহাহ্ ২৭০১, সহীহ আল জামি‘ ৫৫৯৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=68412]
সেক্ষেত্রে যদি এমন প্রতিষ্ঠান খোলা যায় যেখানে শুধু নারীরা কাজ করবে অথবা পুরুষ-নারীর কর্মক্ষেত্র আলাদা আলাদা হবে, সেক্ষেত্রে অনেকে এটাকে বৈধতা দিয়ে থাকেন। তবে এখানে দুটি বিষয় রয়েছে -
১) পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন,
২) সঠিক হিজাব বজায় রাখা।
এক্ষেত্রে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ইসলামে এটা বাধ্যতামূলক যে, পুরুষ পরিবারের জন্য উপার্জন করবে। আল্লাহ বলেন,
"পুরুষেরা নারীদের উপর তত্ত্বাবধানকারী ও ভরণপোষণকারী, যেহেতু আল্লাহ তাদের মধ্যে একের উপর অপরকে বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এই হেতু যে, তারা স্বীয় ধন সম্পদ হতে তাদের জন্য ব্যয় করে থাকে..." (আল-কোরআন, ৪:৩৪)
নারীদের জন্য এটা তাই বাধ্যতামূলক নয় যে, তারা উপার্জন করবে, এটা তাদের ইচ্ছা তারা উপার্জন করতেও পারে, নাও পারে। তবে তারা যদি বাইরে কাজ করতে না চায়, তবে তাদেরকে জোর করা যাবে না। কিন্তু পুরুষকে কাজ করতে হবে, আর উপার্জন করাই লাগবে। এক্ষেত্রে যেহেতু এটা নারীর জন্য বাধ্যতামূলক নয়, তাই ইসলামে নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গৃহের রক্ষণাবেক্ষণ করা আর এই কাজটি পালন করা তাদের জন্য আবশ্যিক।
"‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। একজন শাসক সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
**একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।**
**একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের রক্ষক, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।**
একজন গোলাম তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে।"
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়ে (كتاب النكاح)
হাদিস নম্বরঃ ৫১৮৮
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=29751]
সেক্ষেত্রে নারী যদি গৃহের দায়িত্ব পালন করে, সন্তানকে সঠিকভাবে লালন-পালন করে, স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন সঠিকভাবে করে আবার বাইরেও কাজ করতে পারে আর হারাম বিষয়ে না জড়ায়, তবে এখানে আশা করি কেউ বাধা দেবে না।
এর সাথে আর যে বিষয়টি জড়িত সেটা হল সঠিক হিজাব পালন করা। হিজাব মানে শুধু মাথা থেকে পা অবধি ঢাকা নয়। মাথা থেকে পা অবধি ঢেকেও যদি অশ্লীল আকর্ষণ না যায়, তবে সেখানে হিজাবের উদ্দেশ্যই পূরণ হয়নি। হিজাবের উদ্দেশ্যই হল অবৈধ আকর্ষণ থামানো। সেক্ষেত্রে বাহ্যিক হিজাব হল পোশাকে আর চিন্তা, কথা বলা, চলার ভঙ্গি প্রতিটিতেই হিজাব আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী; যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে আসবে।) প্রথম শ্রেণী (অত্যাচারীর দল) যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দ্বারা তারা লোককে প্রহার করবে।
**আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারীদল;** যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা বস্তুতঃ উলঙ্গ থাকবে, যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, যাদের মস্তক (খোঁপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।’’
(আহমাদ ৮৬৬৫, মুসলিম ৫৭০৪, সিঃ সহীহাহ ১৩২৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=66411
সেক্ষেত্রে যদি গৃহের বাইরে কাজের কারণে কেউ সঠিকভাবে হিজাব পালন না করতে পারে আর এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বা ব্যভিচার বা সমকামিতাও তৈরি হয়, তবে এক্ষেত্রে ইসলাম এগুলোর অনুমতি দেয় না।
আল্লাহই ভাল জানেন।
আমি আবারও বলছি, আমার কথাগুলোকে কোনো ফতোয়া হিসেবে নেবেন না। ভাল কোনো আলিম এর শরণাপন্ন হোন, তাঁর কাছ থেকে ফতোয়া নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
===================
#আহমেদ_আলি


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.