হাদিসে বলা আছে আল্লাহ নাকি শেষ রাতে নিকটতম আসমানে আসেন এটা অসম্ভব ?

অভিযোগঃ 

//প্রশ্ন - ধার্মিকের কাছে!
হাদিসে বলা আছে আল্লাহ নাকি শেষ রাতে নিকটতম আসমানে আসেন।
আধুনিক যুগে আমরা জানি যে, সব সময়েই পৃথিবীর সব স্থানেই কখনো না কখনো ‘শেষ রাত’ চলে। তাহলে আল্লাহ কীভাবে শেষ রাতে অবতরণ করেন?
আল্লাহ কি তাহলে সব সময়েই নিকটতম আসমানে থাকেন? তিনি তাহলে কখন ও কীভাবে আরশের উপরে থাকেন?
আমরা আধুনিক বিজ্ঞান যুগে আরো জানি যে " আসমান বলতে কিছুই নাই! যা আছে তা হলো ধূসর?
ধার্মিকরা আসমান কুথায় পাইলো । ধার্মিকরা কি আসমান প্রমাণ করে দেখাতে পারবে?
//
👉জবাব দিবেন সামিউল আলিম 
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছ যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দান করব। কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’। (বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮)
👉এখন আমাদের বুঝতে হবে হাদিসে শেষ রাত্রিতে দুনিয়ার আকাশে বা নিকটতম আকাশে অবতরণ করা বা আসা বলতে কি বোঝানো হয়েছে।
👉অনেকেই ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি পৃথিবীর যেখানে শেষ রাত্রি সেখানে কিভাবে আসেন তা আমরা জানি না, তিনি তাঁর মতো করে আসেন।
কিন্তু আমার ব্যাখ্যাটি আলাদা। তিনি নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন বা আসেন বলতে বোঝানো হয়েছে তিনি বান্দার নিকটে আসেন। অর্থাৎ ওই সময় বান্দার ডাক আল্লাহ তায়ালা বেশি শুনেন বা বেশি কবুল করেন।
তিনি নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন বলতে বোঝানো হয়নি যে তিনি প্রকৃত অর্থে আসলেই অবতরণ করেন। এটা রূপক অর্থে। এটা ভাষা বা সাহিত্যক। এরকম অনেক আয়াত বা হাদিস রয়েছে। অর্থাৎ ওই সময় বান্দার প্রতি বেশি নজর দেন বা বান্দার বেশি নিকটে আসেন।
কারণ আমরা জানি মহান আল্লাহ তায়ালা সবসময় আরশের উপরেই রয়েছেন। (আ‘রাফ ৭/৫৪) (ইউনুস ১০/৩) (রা‘দ ১৩/২) (ত্ব-হা ২০/৫) (ফুরক্বান ২৫/৫৯) (সাজদাহ ৩২/৪) (হাদীদ ৫৭/৪)
👉তাই বান্দার নিকট আসা বলতে বুঝায় এই না যে সত্যিই নিজের অস্তিত্ব নিয়ে বান্দার কাছাকাছি বা দুনিয়ার আকাশে নেমে পড়েন। যেমন,
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তোমরা যেখানেই থাক না কেন- তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন’। (হাদীদ ৫৭/৪)
‘আমি তার ঘাড়ের শাহ রগ অপেক্ষাও নিকটতর’। (ক্বাফ ৫০/১৬)।
‘আর আমি তোমাদের অপেক্ষা তার নিকটতর, কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না’। (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৮৫)
‘তুমি কি লক্ষ্য কর না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসাবে তিনি থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসাবে তিনি থাকেন না। তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ (জ্ঞানের দিক দিয়ে) তাদের সাথে আছেন। অতঃপর তারা যা করে, তিনি তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত’। (মুজাদালাহ ৫৮/৭)
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং আরশের উপর সমাসীন, আর তাঁর জ্ঞান, ক্ষমতা, দেখা-শুনা সবার সাথে। এটাই উক্ত আয়াতগুলোর অর্থ।
যেমন আমরা বলি, "অমুক ভাই তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে।" এখানে তোমার সাথে আছি বলতে বোঝায় না যে ঘেষে ঘেষে আছি। বুঝাচ্ছেন তাকে আমরা সাপোর্ট করি। বিপদে এগিয়ে আসব। ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে তোমার নিকট জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) নিকটেই, আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই; সুতরাং তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়। (বাকারাহ ২/১৮৬)
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সবসময় আমাদের সাথে আছেন কিন্তু সর্বত্র বিরাজমান নন বা আমাদের সাথে ঘেষে ঘেষে নন। তাঁর উপরই একমাত্র ভরসা থাকবে। তিনি আরশের উপরেই আছেন। সেখান থেকেই তিনি সবকিছু দেখেন, শুনেন এবং আমাদের সাহায্য করেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘আকাশ ও যমীনে তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর সেটাও তিনি অবগত আছেন’ (আন‘আম ৬/৩)।
‘তিনিই ইলাহ নভোমন্ডলে, তিনিই ইলাহ ভূতলে এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ’ (যুখরুফ ৪৩/৮৪)।
👉সেরকম মহান আল্লাহ তায়ালা শেষ রাত্রিতে দুনিয়ার আকাশে বা নিকটতম আকাশে আসেন বলতে বোঝানো হয়েছে বান্দার নিকটে আসেন। আর বান্দার নিকটে আসা মানে বান্দার ডাক ওই সময় বেশি শুনেন। ওই সময়টাকে আরো জোর বা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ ওই সময় এতো গভীর রাত্রে বান্দা কষ্ট করে আল্লাহকে ডাকে এবং তাঁর কাছে দোয়া চায়।
অর্থাৎ তিনি শেষ রাত্রিতেও আরশের উপরেই থাকেন।কিন্তু পৃথিবীর যেসব স্থানে শেষ রাত্রি হয় সেখানকার মানুষদের প্রতি ওই সময় তিনি বেশি গুরুত্ব দেন এবং ডাকেন 'কে আছ যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দান করব। কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিব'।
👉🌟অনেকে আবার এই হাদিসটা থেকে বলে থাকে পৃথিবীতে এক জায়গায় রাত আবার আরেক জায়গায় দিন এটা আল্লাহ তায়ালা জানতেন না। (নাউযুবিল্লাহ)
এই কথাটা আসলে চরম ভুল। অথচ তিনি তা জানতেন এবং কোরআনেও তা উল্লেখ্য করেছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তিনিই রাতকে প্রবেশ করান দিনে আর দিনকে প্ৰবেশ করান রাতে এবং তিনি অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত। (আল-হাদীদ ৫৯/৬)
আর তাদের জন্য এক নিদর্শন রাত, তা থেকে আমরা দিন অপসারিত করি, তখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। (ইয়া-সীন ৩৬/৩৭)
তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন, তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে। (আল-আ'রাফ ৭/৫৪)
অর্থাৎ এক জায়গায় রাত আরেক জায়গায় দিন এটা আল্লাহ জানতেন এবং কোরআনে বলেও দিয়ে গেছেন যাতে আর সন্দেহই না থাকে।
👉আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বুঝার তৌফিক দান করুক। আমিন।


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.