তাকিয়া , তাকিয়া অতঃপর তাকিয়া ...

তাকিয়া , তাকিয়া অতঃপর তাকিয়া ...
লিখেছেনঃ আফিফ আলী সাদাফ
প্রশ্ন হল ইসলামে কি তাকিয়ার কোন জায়গা আছে ? এর সহজ উত্তর যদি দিতে হয় তাহলে উত্তর হচ্ছে না ইসলামে তাকিয়ার কোন অস্তিত্ব নাই । আমাদের আগে জানতে হবে যে , তাকিয়া মূলত কি জিনিস । তাকিয়া হল দ্বীনের স্বার্থে মিথ্যা বলা । কিন্তু ইসলামে মিথ্যা বলা একদম নাজায়েজ এবং হারাম কাজ । তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে , কেন অমুসলিমরা বিশেষ করে খ্রিষ্টান রা মুসলিমদের তাকিয়াবাজ বলে । আসলে ব্যাপারটা হল এই তাকিয়া জিনিসটি এসেছে শিয়াদের থেকে । আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতে তাকিয়ার কোন অস্তিত্ব নেই ।
প্রফেসর ডক্টর সুলাইমান বিন সালিহ আল গুসন তাঁর মাসালা গ্রন্থ যার নাম ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতী শিয়াদের আসল চেহারা বিস্তারিত বিবরন এর মাঝে তাদের বিবরণ তুলে ধরেছেন এবং সেটার সাত নম্বর পয়েন্টে তিনি বলেন ,
⦁ ‘তাকিয়া’ (চরম গোপনীয়তা রক্ষা) নীতি অবলম্বন করা। এরা আহলে সুন্নাহর প্রতি ভয়ানক শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে কিন্তু বাহ্যিক আচরণে সেটা প্রকাশ করে না।[1]
এছাড়া শিয়াদের থেকে হাদিস এর বর্ণনা শোনার আগেও যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে যেমন ,
সুনানে ইবনে মাজাহ , ভূমিকা পর্ব (كتاب المقدمة) , হাদিস নাম্বার:৭০ এর তাহক্কিক এর মধ্যে শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানি এই হাদিসকে জয়ীফ তাখরীজ আলবানী: তালীকুরগীব ১/২৩। উক্ত হাদিসের রাবী ১. আবু জা'ফার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আলী বিন মাদীনী তাকে সিকাহ বলেছেন। আবু হাতিম তাকে সত্যবাদী বলেছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, হাদিস বর্ণনায় তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, মুগীরাহ কতৃক হাদিস সংমিশ্রণ করেছেন। ২. রাবী বিন আনাস সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী ও আজালী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমাস্যা নেই। ইবনু হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি শিয়া মতাবলম্বী হওয়ার হাদীস বর্ণনায় বাড়াবাড়ি করেছেন। অধিকাংশ মুহাদ্দিস শিয়াদের অনির্ভরযোগ্য বলেছেন । [2]
প্রফেসর ডক্টর সুলাইমান বিন সালিহ আল গুসন এর লেখা সেই বই যার নাম ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতী শিয়াদের আসল চেহারা সেটার বিস্তারিত বিবরণ অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন
⦁ যায়দিয়া সম্প্রদায়ের কিতাবাদী রাফেজী-ইমামিয়া-ইসনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের সমালোচনায় ভরপুর..বরং তাদেরকে সুষ্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট ও কাফির হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে ইমামিয়াদের কিতাবাদী যায়দিয়াদের সমালোচনা ও কুফুরীর ফতোয়ায় পরিপূর্ণ।[1] এমন পরষ্পর বিরোধী মতবাদে বিশ্বাসী হওয়ার পরও ইরানী বিপ্লব ‘তাকিয়া’ (তথা চরম গোপনীয়তা রক্ষা) নীতির অন্তরালে যায়দিয়াদের কাতারে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয় এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী হুতী জারুদীদের চিন্তা-চেতানার মাঝে তাদের হারানো মানিকের সন্ধান পায়। [3]
এই থেকে বুঝা যায় যে , শিয়ারা কাফের এবং বাতিল ফিরকা এবং সুন্নি আক্কিদায় তাকিয়ার কোন অস্তিত্ব নেই

শিয়ারা বলে সুন্নিরা কাফের সুন্নিরা বলে শিয়ারা কাফের এখন কাদের কথা বিশ্বাস করবো ?
এইটা হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে , আমরা মানে সুন্নিরা শিয়াদের কাফের বলে তাদের আক্কিদা কে ছুড়ে মারি পক্ষান্তরে তারাও আমাদের আক্কিদাকে ছুড়ে মারে এখান থেকে দুজনই নিজ নিজ আক্কিদা নিয়েই আছে এবং দুই দলি নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করছে । এখন সুন্নিরা যদিও বলে ইসলামে তাকিয়া জায়েজ নাই পক্ষান্তরে শিয়ারা বলবে জায়েজ আছে । এখন কে সত্যি বলছে কে মিথ্যা বলছে তা কিভাবে জানবো ? এখন অনেক মুসলিম বলবে হাদিস কি বলে তা দেখবেন । পক্ষন্তরে ইসলাম বিদ্বেষীরা বলে উঠবে যে , সুন্নি শিয়াদের হাদিসও আলাদা ইরান , ইরাকে বুখারি - মুসলিম হাদিস কে Banned করে দেয়া হয়েছে ।
এইরকম প্রশ্নের সম্মুখীন অনেকের হতে হয় । এইক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় শিয়াদের আক্কিদা এবং সুন্নিদের আক্কিদার মাঝে কাদের আক্কিদা কুরআন বিরোধী এবং কাদের আক্কিদা কুরআন এর সাথে বা কুরআনের পক্ষে সেটা পর্যবেক্ষণ করলেই সব পানির মত ফুটে উঠবে । কেননা , শিয়ারা যদিও মনে করে যে , কুরআন ৯০ পারা কিন্তু এটি তাদের ধারণা মাত্র তারা আজও সেই ৩০ পারার কুরআনই পড়ে থাকে । [4] ; [5] ;
তাহলে আমাদের দেখতে হবে কুরআনের আলোকে যে , কাদের আক্কিদা ঠিক আছে ।
কুরআনের আলোকে কাদের আক্কিদা সঠিক এবং কারা বাতিল ফিরকা ?
শিয়ারা আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে যেমন ,
রাফেযীরাই সর্ব প্রথম আল্লাহর ব্যাপারে জিসম ( অবয়ব ) এর কথা বলে । শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন আল্লাহর ব্যাপারে এরকম বলার মধ্যে প্রথম হলেন হিশাম ইবনুল হাকাম । [6]
ইবনে বাবওয়াইহ সত্তরের বহুত বর্ণনা আছে এবং তাতে শিয়ারা বলে রেখেছে যে , " আল্লাহ কোন সময় , স্থান কোন প্রকার ধরন - গঠনের সাথে সম্পৃক্ত না । " নাউজুবিল্লাহ ! আল্লাহর কোন নাড়াচাড়া নেই স্থানান্তর এর সাথেও তাঁর কোন সম্পর্ক নেই [7] । অনুরূপভাবে তারা আল্লাহর নুযুল তথা নিচের আসমানে নেমে আসার কোথাও অস্বীকার করে । আল্লাহর কুরআন কে মাখলুক বলে এবং সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে পরকালে আল্লাহর সাক্ষাৎ কে অস্বীকার করে । তাদের কিতাব বেহারুল আনোয়ার গ্রন্থে এসেছে যেখানে বলা হয়েছে যে , পরকালে আল্লাহ কে দেখা যাবেনা বরং তিনি সবকিছুর উপরে [8] । যা কুরআন বিরোধী কথা কেননা কুরআনে বলা হয়েছে ,
⦁ وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ
⦁ সেদিন কতক মুখমন্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল।
⦁ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
⦁ তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।[9]
আর আমরা জানি যে , কুরআন এর একটা আয়াত অস্বীকার করলে সে সেই মুহূর্তে মুরতাদ হয়ে যায় । আর তারা নিজের অজান্তেই এইসব কথা বলে বাতিলের খাতায় নাম লেখিয়েছে ।
তাই কাদের আক্কিদা সহিহ ার কাদের আক্কিদা গলত সেটা আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম । যেখানে তারা এই একই কুরআনে বিশ্বাস রেখে এই একই কুরআনের বিপরীত কথা বলে তাদের কাছে মিথ্যা কে জায়েজ করা বড় কিছুনা আর আল্লাহ স্পষ্ট মিথ্যা কথার ব্যাপারে কুরআনে বলে দিয়েছেন । আল্লাহ বলেন ,
⦁ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا
⦁ এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও না। বড় মারাত্মক কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হয়। মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না![10 ]
⦁ ذَٰلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ ۗ وَأُحِلَّتْ لَكُمُ الْأَنْعَامُ إِلَّا مَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ ۖ فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
⦁ এটিই বিধান আর কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয়সমূহকে সম্মান করলে তার রবের নিকট তা-ই তার জন্য উত্তম। আর তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু; তবে যা তোমাদের কাছে পাঠ করা হয় সেগুলি ছাড়া। সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর[11 ]
অর্থাৎ মিথ্যা বলা যে , সম্পূর্ণ হারাম এতে কোন সন্দেহ নেই হোক সেটা যেটার জন্যই । আর শিয়ারা নিজের অজান্তেই এইসব আবল তাবল ফতুয়া দিয়ে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাচ্ছে । যেমনটা আগে আমরা দেখেছি কিভাবে তারা কুরআন বিরোধী ফতুয়া দিয়েছে আল্লাহর সিফাতের ব্যাপারে আশা করি বুঝতে পেরেছেন
তথ্যসুত্রঃ
1. গ্রন্থের নামঃ ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতী শিয়াদের আসল চেহারা , বিভাগ/অধ্যায়ের নামঃ বিস্তারিত বিবরন , লেখক/সংকলক/অনুবাদকঃ প্রফেসর ডক্টর সুলাইমান বিন সালিহ আল গুসন
2. https://www.hadithbd.com/hadith-link.php?hid=9780
3. গ্রন্থের নামঃ ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতী শিয়াদের আসল চেহারা বিভাগ/অধ্যায়ের নামঃ বিস্তারিত বিবরন এবং আল ইমামাতুল ইসনা আশারিয়া লিয যায়দিয়া বাইনা আ”দায়িল আমস ওয়া তকিয়াতুল ইয়াওম,মুহাম্মদ আল খুযার।
4. স্টেট্মেন্ট অব ডঃ শাবির আলী - https://www.youtube.com/watch?v=2BwiHJmQQLc ; এবং http://www.islamquest.net/en/archive/question/fa310 এবং https://www.quora.com/Do-the-Sunni-Shia-worship-from-the-ex…
5. শী ' আদের ধর্মীয় বিশ্বাস আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সালাফি অনুবাদ মুহাম্মাদ আব্দুল হাই বিন শামসুল হক পৃষ্ঠা নম্বর ১৫ এবং শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াঃ মিনহাজুস সুন্নাহ - (১/২০) এবং ইবনে
6. ইবনে বাবওয়াইহঃ আত তাওহিদ পৃষ্ঠা ৫৭
7. আল মাজলেসিঃ বেহারুওল আনোয়ার - ৪/৩১
8.সুরা আল কিয়ামাহ আয়াত ২২-২৩
9.সুরা নাহাল আয়াত ১১৬
10. সুরা কাহাফ আয়াত ৫
11. সুরা হাজ্জ আয়াত ৩০
সহায়ক গ্রন্থঃ শী ' আদের ধর্মীয় বিশ্বাস আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সালাফি অনুবাদ মুহাম্মাদ আব্দুল হাই বিন শামসুল হক

No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.