তারকারাজির অবস্থান নিকটবর্তী আসমানে ?

তারকারাজির অবস্থান নিকটবর্তী আসমানে ?
লিখেছেনঃ আফিফ আলী সাদাফ
আগে জানতে হবে মহাশূন্য বা মহাকাশ কি ?
মহাশূণ্য অথবা মহাকাশ বলতে সাধারণভাবে মাথার উপরকার অনন্ত আকাশ বোঝানো হলেও বস্তুত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলসমৃদ্ধ আকাশকে পৃথিবীর আকাশ বলা হয় [ 1 ]। তাই কুরআনে যেটা ব্যাবহার হয়েছে সেটা মহাকাশ নাকি পৃথিবীর বায়ুমন্ডল সেটা আমাদের বুঝে নিতে হবে ।
আসিফ মহিউদ্দিনের মহান মহান মিথ্যাচারের মধ্যে এটি একটি মিথ্যাচার যে , আল্লাহ নাকি কুরআনে বলেছেন নক্ষত্র বা তারাসমূহের অবস্থান পৃথিবীর বায়ুমন্ডল তথা আমরা যাকে আকাশ বলি সেখানে । সে এই রেফারেন্স হিসেবে দিয়েছে পবিত্র কুরআন মাজিদের সুরা আস সাফফাতের ৬ নাম্বার আয়াত । সেই আয়াতে বলা হয়েছে ,
⦁ إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ
⦁ আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজির সৌন্দর্য দ্বারা সুশোভিত করেছি,[2]
এই আয়াতে ব্যাবহার করা ( السَّمَاءَ ) আসসামা ই এই শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়েছে । এই শব্দের অনেক অর্থসমূহের মধ্য থেকে কিছু অর্থ উপস্থাপন করছি ,
⦁ ( السَّمَاءَ ) - আকাশ , মহাবিশ্ব , মহাকাশ [3]
⦁ ( السَّمَاءَ ) - মহাজ্যোতির্ময় , আলোকময় বস্তু , গোলকধাম , আলোকিত বস্তু
অর্থাৎ এই ( السَّمَاءَ ) আসসামা ই এই শব্দটি দিয়ে আকাশ কেও বুঝানো যেতে পারে , মহাকাশ কেও বুঝানো যেতে পারে আবার নক্ষত্রকেও বুঝানো যেতে পারে । অর্থাৎ , আরবি ( السَّمَاءَ ) এই শব্দ দিয়ে উঁচু কোন কিছু বুঝানো হয় । অর্থাৎ উঁচু এমন কিছু যা আমাদের মাথার উপর বা উঁচু স্থানে অবস্থিত । হোক সেটা স্থির বা চলমান । । অনেক ইংরেজি অনুবাদ আছে যেমন Sahih International , Pickthall এরা এই ( السَّمَاءَ ) এই শব্দকে Sky বলে আখ্যায়িত করেনি বরং করেছে ( Heaven ) । এখানে আল্লাহ নিকটবর্তী আসমান দিয়ে ৭ আসমানের প্রথম আসমান তথা নিকটবর্তী আসমান কে বুঝিয়েছেন । পৃথিবীর বায়ুমন্ডল কে না ।
এছাড়া এই কথা শুধু সুরকা আসসাফফাতেই নয় অন্যান্য সুরাতেও এসেছে যেমন সুরা মূলকের তিন এবং পাঁচ নাম্বার আয়াত পড়লেই পুরো ( Concept ) ক্লিয়ার হয়ে যাবে । সেখানে বলা হচ্ছে ,
⦁ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا ۖ مَا تَرَىٰ فِي خَلْقِ الرَّحْمَٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍ ۖ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَىٰ مِنْ فُطُورٍ
⦁ যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?[3]
আবার পাঁচ নাম্বার আয়াতে বলা হচ্ছে ,
⦁ وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
⦁ আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব।[4]
অর্থাৎ আল্লাহ নিকটবর্তী আসমান দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন এটা বুঝার জন্য এই দুই আয়াত যথেষ্ট । কুরআন হল Puzzle এর মত এই কুরআনের সকল আয়াত একবারে নিয়ে যদি মিলান তাহলে খুব সহজেই সমীকরণ মিলে যাবে । আর সুরা আস সাফফাতের আয়াতের সাথে আমার দেয়া আয়াতের মিল এখানেই যে , এখানে ( السَّمَاءَ ) দিয়ে সাত আসমানের প্রথম আসমান তথা মহাকাশ বুঝানো হয়েছে । এই সম্পর্কে তাফসির ইবনে কাসিরে ইমাম ইবনে কাসির বলেছেন ,
⦁ আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, দুনিয়ার আকাশকে তারকামণ্ডলী দ্বারা তিনি সুশোভিত করেছেন । আকাশের নক্ষত্ররাজি এবং ওর সূর্যের কিরণ। যমীনকে আলোকোজ্জ্বল করে তুলে ।
কুরআন আল্লাহর বানী এখানে প্রতিটা জিনিস ইঙ্গিতাকারে দিয়ে দেয়া হয়েছে । যা আমাদের গবেষণা করে বের করতে হবে । তাই যথেষ্ট পড়ালেখা না করে চট করে কোন কিছু বলে ফেলাটা উচিত না আমার মতে । আল্লাহ এদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক ।
তথ্যসূত্রঃ
1. Wikipedia - মহাশূন্য
2. সুরা আস সাফফাত আয়াত ৬
3.wiktionary.org/wiki/سماء
4. সুরা মূলক আয়াত ৩
5.সুরা মূলক আয়াত ৫


No comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Powered by Blogger.